বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফার্মেসী ব্যবসার সিদ্ধান্ত আপনার জন্য খুলে দিতে পারে সাফল্যের দরজা। কেননা, বিনিয়োগ ও ফলাফলের আনুপাতিক হারের দিক থেকে এটি অন্যতম একটি লাভজনক ব্যবসা। তবে, অবশ্যই আপনাকে ফার্মেসী ব্যবসার লাইসেন্স নিতে হবে, সেই সাথে আরো কিছু কাগজ-পত্র জমা দিতে হবে।
আর এই ব্যবসার ভবিষ্যতের কথা বলতে গেলে আপনাকে দুটি বিষয় বলতেই হয়।
প্রথমটি হল, সম্প্রতি DATABD এর একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে যে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের এই সেক্টর থেকে মোট রপ্তানি হয় ১০৩ মিলিয়ন ডলার যা দেশের জিডিপিতে ১.৮৫% অবদান রাখে। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো, ২০১৮ সালে ফার্মাসিউটিক্যালস্ দেশের সেরা পণ্যের খ্যাতি লাভ করে। এ থেকেই বোঝা যায় দেশে ফার্মেসী ব্যবসা কতটা লাভজনক হতে পারে।
এখন আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে –
- ফার্মেসী ব্যবসা শুরু করব কিভাবে? কিছুই তো জানি না।
- ফার্মেসীর ব্যবসার লাইসেন্স নামে একটা জিনিস শুনেছিলাম সেটাই বা কি?
চিন্তা নেই আজকের এই আলোচনায় ফার্মেসী ব্যবসার লাইসেন্স এবং শুরু থেকে যা যা লাগবে তা নিয়ে আলোচনা করব। তো চলুন শুরু করা যাক-
প্রথমেই আসুন এ বিষয়ে আপনার কতটুকু অভিজ্ঞতা আছে সেটা দেখা যাক।
- আপনি কি ডাক্তার?
- ডাক্তার না হলে আপনি কি এ জাতীয় কোনও কোর্স করেছেন? যেমন, পল্লী চিকিৎসক কোর্স?
- আপনি কি কোনও ফার্মেসীতে চাকরি করেছেন?
যদি যে কোনও একটি প্রশ্নের উত্তর “হ্যাঁ” হয়, তবে আপনি অনায়াসেই এই ব্যবসা করতে পারেন। আর যদি প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরই “না” হয়, তবু আপনি ফার্মেসী ব্যবসা করতে পারেন। আপনার কোনও ফার্মেসী রিলেটেড অভিজ্ঞতা নেই, কোনও সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে, আপনাকে যেটা করতে পারেন, সেটা হচ্ছে এ সম্পর্কিত একটা কোর্স করে নেয়া।
সবচেয়ে ভাল হয়, আপনি যদি বাংলাদেশ সরকারের ফার্মেসী সার্টিফিকেট কোর্স করে নেন। এতে আপনি দুটি সুবিধা পাবেন, একদিকে আপনার ফার্মেসী ব্যবসার খুঁটিনাটি সব জানা হয়ে যাবে, অন্যদিকে আপনার কাছে এই সার্টিফিকেট থাকায় আপনি দেশের যে কোনও জায়গায় যে কোনও ধরণের ফার্মেসী দিতে পারবেন। এবার আসুন, মূল টপিক অর্থাৎ প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র সম্পর্কে কথা বলা যাক।
ফার্মেসী ব্যবসার লাইসেন্স এবং অন্যান্য কাগজ-পত্র
যে ৫টি ব্যবসা সাধারণত কখনো ফ্লপ খায় না, তার মাঝে ফার্মেসী বা ঔষধের দোকান একটি। এই ব্যবসা অত্যন্ত সন্মানজনক এবং ভদ্র ও মার্জিত মানুষের জন্যে এর চেয়ে ভাল কিছু হতে পারে না। তাই, ফার্মেসী ব্যবসা করার আগে অবশ্যই লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজ-পত্র তৈরি করে নিন। আর জেনে নিন সেগুলো কি কি ও কিভাবে করবেন।
বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিলের অনুমোদন প্রাপ্তি
অন্যের বাসায় ঢুকতে গেলে আপনার যেমন অনুমতি নিতে হয়, ঠিক তেমনি ফার্মেসী ব্যবসায় শুরুর প্রথম ধাপই হচ্ছে বাংলাদেশ ফার্মসী কাউন্সিলের অনুমোদন পাওয়া। আর এই অনুমোদন আপনাকে এমনি এমনি দেয়া হবে না। কেননা, বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল আপনাকে দক্ষ না করে জনগণের সেবায় নিয়োজিত করবে কি করে বলুন?
তাই তারা আপনাকে ৩/৬ মাসের একটি কোর্স করিয়ে দক্ষ করে তুলবে ও পাশাপাশি আপনার ব্যবসার অনুমোদন দিবে।
ড্রাগ লাইসেন্স অর্জন
দ্বিতীয়ত আপনার ব্যবসার জন্য যে বিষয়টি জরুরি তা হলো ড্রাগ-লাইসেন্স অর্জন। এখন হয়তো বলতে পারেন লাইসেন্স কেন?
ধরুন, একটি ব্যবসা চালাচ্ছেন হঠাৎ একদিন পুলিশ এসে আপনাকে বলল আপনি কি ব্যবসা আইনীভাবে করছেন? তার প্রমাণ দেখান।
তখন কি করবেন? আপনার মুখের কথায় কি তারা বিশ্বাস করবে?
না করবে না ।
আর এজন্যই বাংলাদেশ সরকার আপনার এই ব্যবসাকে আইনি আওতায় আনার জন্যই ড্রাগ-লাইসেন্স এর ব্যবস্থা করেছেন। এখন কিভাবে তা পাবেন তাই তুলে ধরছি।
এক্ষেত্রে, শুরুতেই আপনাকে Directorate General of Drug Administration (DGDA) এর কাছ থেকে ফর্ম-৭ সংগ্রহ করতে হবে এবং তা পূরণ করে নিমোক্ত জিনিসগুলোর সাথে জমা দিতে হবে-
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট
- লাইসেন্স ফি জমা দেয়ার ট্রেজারি চালান।
- দোকানের ভাড়া প্রাপ্তির চুক্তিপত্রের ফটোকপি। এক্ষেত্রে কেউ যদি নিজেই দোকানের মালিক হয় তবে মালিকানাপত্রের ফটোকপি।
- লাইসেন্সপ্রাপ্ত অন্য কোন ফার্মেসীস্ট (ফার্মসী ব্যবসায়ী) এর অঙ্গীকারপত্র।
- প্রথম ধাপে ৬ মাস কোর্স করে যে প্রাপ্ত সার্টিফিকিট দেয়া হয়েছে তার ফটোকপি।
- ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি। { বিঃদ্রঃ- এটি সবার জন্য আবশ্যক নয়। এটি শুধু মাত্র তাদের জন্য যারা পৌর-এলাকায় অবস্থান করছেন। }
ড্রাগ-লাইসেন্সের জন্য আপনাকে উক্ত বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। কেননা, ড্রাগ-লাইসেন্স অর্জনের কোনো বিষয়ের ত্রুটি হলেই আপনার লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।
এখন আপনাকে আরেকটি প্রশ্ন উতক্ত করতে পারে সেটির জন্য বলতে হয়তো বলতে পারেন- সবই বুঝলাম তবে দ্বিতীয় পয়েন্ট অর্থাৎ লাইসেন্স ফি জমা দেয়ার ট্রেজারি চালান জিনিসটা আসলে কি?
হ্যাঁ, তাই নিয়ে আসছিলাম। চালানপত্র কি ও প্রাপ্তির বিষয়টা নিয়ে নিচে আলোকপাত করা হয়েছে-
ট্রেজারি চালান কি ও কিভাবে পাবো?
ট্রেজারি চালান মূলত সরকারের এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে সাধারণ জনগণ সরকারি বিভিন্ন ফি যেমন চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ফি খুব সহজেই পরিশোধ করতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক এই ব্যবস্থার জন্য দেশজুড়ে সমাদৃত। তবে সচরাচর ট্রেজারি চালানের জন্য সোনালী ব্যাংকেই অগ্রাধিকার দেয়া হয়, যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা সর্বত্র নেই।
আপনি সোনালী ব্যাংকের যে-কোন শাখায় উক্ত ফর্মটি পেয়ে যাবেন। তাছাড়াও এখন তা অনলাইনে এটি সহজলভ্য। নিচের বাটনে ক্লিক করে ডাউনলোড করে নিয়ে সংগ্রহে রাখতে পারেন।
এ তো গেলো আমাদের ট্রেজারি চালান কি তা নিয়ে। এখন আসি কিভাবে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ফার্মেসির লাইসেন্স ফি জমা দিবেন তা নিয়ে।
ফার্মেসির লাইসেন্স ফি জমা দিব যেভাবে-
আপনার প্রাপ্ত ট্রেজানি চালানের মাধ্যমেই জিনিসটা খুব সহজেই করতে পারেন। এক্ষেত্রে, সাধারণ এলাকা ও পৌর এলাকার লাইসেন্স ফি এর ক্ষেত্রে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। তা হলো-
- আপনি যদি পৌর এলাকার বসবাস করেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে লাইসেন্স ফি হিসাবে ৩০০০৳ দিতে হবে।
- সাধারণ এলাকায় বসবাসরত হলে তা আপনার জন্য অর্ধেক হয়ে যাবে অর্থাৎ আপনাকে ১৫০০৳ দিতে হবে।
আমাকে এটা একবারই দিতে হবে? মানে এটা কি এককালীন?
একদিকে এককালীন, অন্যদিকে নয়। এককালীন নয়, কারণ আপনাকে প্রতি ২ বছর পর পর এটিকে নতুন করে নিতে হবে। যার জন্য পৌর এলাকার বাসিন্দাদেরকে ২০০০ টাকা ও সাধারণ এলাকার লোকেদেরকে ১০০০ টাকা করে দিতে হবে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে।
এখন আসি এককালীন বলতে কি বুঝিয়েছি ? আসলে শুরুর যে ৩০০০ টাকা তা আপনাকে একবারই দিতে হবে।
আশা করি, পুরো বিষয়টা আপনার বোধগম্য হয়েছে। আর ফার্মেসী ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলোর প্রতি আপনাকে মূলত খেয়াল রাখতে হবে। উক্ত বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে পারলে দেশের ও দশের সেবার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পারবেন।
Leave a Reply