দিনের অধিকাংশ সময়ই আমরা ইন্টারনেট নিয়ে পড়ে থাকি। এরই মাঝে কোনো না কোনো সময় হয়তো কুকিজ কথাটি চোখে পড়েছে। কিন্তু কখনো কি জানতে চেয়েছি ইন্টারনেট কুকিজ জিনিসটা আসলে কি?
হয়তো বা কখনো জানতে চাইনি বা জানার আগ্রহ হয়ে উঠেনি। কিন্তু তাই বলে কি জানা উচিত নয়?
হ্যাঁ অবশ্যই জানা উচিত। একজন সচেতন ইন্টারনেট ইউজার হিসাবে এটি জানা আপনার জন্য অত্যাবশ্যক। চলুন দেরি না করে জেনে আসি-
ইন্টারনেট কুকিজ কি?
না এটি কোনো খাওয়ার কুকিজ নয়। ইন্টারনেট কুকিজ মূলত স্বল্প সংখ্যক ডাটা যা আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিং উপর ভিত্তি করে আপনার ব্রাউজারে ক্যাশ মেমোরিতে জমা হয়।
এখানে তাহলে আরেকটি বিষয় উঠে আসে যা জানা দরকার। সেটি হলো-
ক্যাশ মেমোরি কি?
আসলে ক্যাশ মেমোরি হচ্ছে একটা দ্রুত কাজ করা মেমোরি যা আপনার সিপিইউকে প্রতিনিয়ত দেয়া নির্দেশনাগুলো এক জায়গায় জমা করে রাখে। যার মাধ্যমে আপনি একবার কোনো অ্যাপ বা সফটওয়্যার আপনার ফোনে চালালে দ্বিতীয়বার সেটির জন্য নির্দেশনা দিতে হয় না।
উদাহরণস্বরূপ ধরুন, আপনি ফেসবুক অ্যাপটি প্রথমবার চালাচ্ছেন। এই ক্ষেত্রে এখন যে সময় লাগবে, দ্বিতীয়বার ব্যবহারে তার চেয়ে কম সময় লাগবে। আর এর কারণ হচ্ছে, আপনার ক্যাশ মেমোরি বিষয়টি প্রথমবারেই সিপিইউকে জানিয়ে রেখেছে।
এবার আমাদের আসল বিষয়ে ফিরে আসি। আসলে সোজা কথায় বলতে গেলে ধরুন আপনি কোনো জায়গায় ঘুরতে গেছেন। এতে করে প্রথমবার জায়গাটি ঘুরতে আপনার যে সময় লাগবে দ্বিতীয়বার কিন্তু ততটা লাগবে না। কারণ, আপনি জানেন কোন জিনিসগুলো কোন জায়গায় আছে। ইন্টারনেট কুকিজও ঠিক এমনিভাবে কাজ করে।
অর্থাৎ, প্রথমবার কোনো ওয়েবসাইট ভিজিটে আপনি যদি কুকিজ সক্রিয় করে রাখেন, সেক্ষত্রে আপনার দ্বিতীয় ভিজিটে খুব দ্রুত সাইটে ঢুকতে ও ব্রাউজ করতে পারবেন।
ইন্টারনেট কুকিজ কিভাবে কাজ করে?
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে এটি কিভাবে কাজ করে। হ্যাঁ সে দিকেই আসছি। কোনো ওয়েবসাইট ভিজিটে অনেকবারেই লক্ষ করে থাকবেন আপনি যদি কোথাও প্রথমবার লগ ইন করেন, তবে দ্বিতীয়বার সেখানে কষ্ট করে লগইন করতে হয় না। আবার, অনেক সাইটে বারবারই লগইন করতে হয়। কখনো কি ভেবে দেখেছেন কেন এমনটা হয়?
উত্তর হয়তো, না।
আসলে ইন্টারনেট কুকিজের কাজটা ঠিক এই জায়গাতেই। প্রথম ক্ষেত্রে আপনার যখন দ্বিতীয়বার লগইন করা লাগছে না, ওই ক্ষেত্রে সেই ওয়েবসাইট লগইন এর সময় হয়তো আপনি কুকিজ ইনেবল করে রেখেছিলেন অথবা Remember Me নামক কোনো বাটনে টিক দিয়েছিলেন।
আবার, অনেকেই হয়তো পাসওয়ার্ড রিমেম্বার অপশনটির সাথে পরিচিত আছেন যা এই কুকিজেরই অংশ।
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক উলটো। আবার অনেক ওয়েবসাইটে কুকিজ পার্মিশন চায়ও না। যার জন্য আপনাকে প্রতিবার লগইন করতে হয়। এই ধরনের কুকিজকে Authentication Cookies বলা হয়ে থাকে। আবার অন্য এক ধরনের কুকিজ রয়েছে যা আপনি কি সার্চ করছেন তার উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, আপনি ব্রাউজারে কোনো কিছু সার্চ করার জন্য যখন যে বিষয়ে সার্চ করবেন, তার প্রথম অক্ষরটি লেখেন সাথে সাথে অনেক সার্চ অপশন চলে আসে। এটা মূলত আপনার সার্চ হিস্টোরি পর্যবেক্ষণ করে তৈরি করা। সার্চ ইঞ্জিনে কুকিজ ঠিক এভাবেই কাজ করে। জেনে নিন সার্চ ইঞ্জিন কি আর এটি কিভাবে কাজ করে, তাহলে কুকিজের বিষয়টি বুঝতে আরো সুবিধা হবে।
ইন্টারনেটের কুকিজের উপকারিতা ও অপকারিতা-
ইন্টারনেট কুকিজ কি সেটা তো জানা হলো। এর উপকারিতা বা অপকারিতা সম্পর্কে কি জানবেন না? চলুন তবে জেনে নেয়া যাক এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। প্রথমে আসি উপকারিতা নিয়ে-
উপকারিতা
এটা মানতে হবে যে ইন্টারনেট কুকিজ আপনার আমার সবার ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ে অন্যতম ভূমিকা পালন করছে। কেননা আমরা প্রতিদিন কত জিনিস নিয়ে সার্চ করি, তা হয়তো আমাদের মনেই থাকে না। আর কোন জিনিস নিয়ে শেষবার সার্চ করেছিলাম বা কি জন্য করেছিলাম তাও মনে থাকে না।
এক্ষেত্রে আপনার যদি শুধু আপনার সার্চ করা বিষয়টির মূল শব্দটি মনে থাকে, তাহলে খুব সহজেই শেষবার কি নিয়ে কোথায় সার্চ করছিলেন সব পেয়ে যাবেন নিমেষেই। আর আপনি যাই সার্চ করেন না কেন সে বিষয়ে আপনার জন্য যা উপযুক্ত, তাই আপনাকে দেখানো হবে।
আবার, অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে আপনার প্রতিদিন একবার হলেও ঢুকতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রতিবার লগইন করা একটা মাথাব্যাথার মতো যা এড়াতে আপনি Authentication Cookies অর্থাৎ পাসওয়ার্ড রিমেম্বার অপশনটি চালু করে রাখতে পারেন।
এ তো গেল কিছু ব্যক্তিগত দিক। বড় বড় অনেক ওয়েবসাইটও তাদের ক্লায়েন্টের জন্য Session Management এর মাধ্যমে ক্লায়েন্টের সার্চ করা জিনিসগুলোর উপর ভিত্তি করে ক্লায়েন্টকে উপযুক্ত জিনিস দেখানোর চেষ্টা করে থাকে। যার উদাহরণ আপনি দেখতে পাবেন যেকোনো ই-কমার্স সাইটে। সেখানে যদি আপনি কোনো জিনিস নিয়ে সার্চ করতে যান, তবে আপনার পূর্ববর্তী সার্চ রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে শুরুতে আপনাকে কিছু অপশন দেয়া হবে।
এই ছিল কুকিজের কিছু উপকারিতা। এবার, তবে চলুন জেনে আসি কুকিজের অন্ধকার দিকটি-
অপকারিতা
ইন্টারনেট কুকিজের আবার অপকারিতাও আছে? আমি তো এটা নিয়ে জানতামই না তার উপর আবার অপকারিতা?
বিচলিত হবেন না। আপনি জানতেন না তো কি হয়েছে আজ জানবেন। ইন্টারনেট কুকিজের যে বিষয়টি আমার কাছে সবচেয়ে ক্ষতিকর বা খারাপ মনে হয়েছে তা হলো থার্ড পার্টি কুকিজ। থার্ড পার্টি কুকিজ মূলত আপনি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কন্টেন্টের বাইরেও যে অ্যাডগুলো দেখে থাকেন সেগুলোকে বুঝায়। এক্ষেত্রে, অনেক ওয়েবসাইটে এই অ্যাড এর জায়গায় বিভিন্ন পপ-আপ থাকে, যেখানে ক্লিক করলে ৫-৬ টি উইন্ডো একসাথে খুলে যায়।
এতে করে যে ক্ষতিটা হতে পারে তা হলো আপনা-আপনি খুলে যাওয়া উইন্ডোগুলো যদি আপনার ব্রাউজারে কোনো থার্ডপার্টি কুকিজ প্লান্ট অর্থাৎ সেভ করে দেয়, সেক্ষত্রে আপনার ইন্টারনেট নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
আবার, থার্ডপার্টি কুকিজ এর আরেকটি খারাপ দিক হলো এটি আপনার সব ধরনের তথ্য অর্থাৎ আপনি কি ভিজিট করছেন, কি নিয়ে সার্চ করছেন তা চুরি করে থার্ডপার্টি ওয়েবসাইটে পৌছে দেয়, যা সত্যি অনেক ক্ষতিকর। ভাবলেই যে কেমন লাগে আপনার তথ্য অন্য কেউ নিয়ে যাচ্ছে।
এবার আসুন আমাদের শুরুর পয়েন্টটির কথায় যেখানে বলেছিলাম অনেক কুকিজই আপনার নেটওয়ার্ক প্রোভাইডাররা পর্যবেক্ষণ করতে পারে। গুগল প্রোজেক্ট জিরো এর একজন গবেষক জান হর্ন বলেন যে, আমাদের ইন্টারনেট কুকিজ আমরা যে নেটওয়ার্ক দিয়ে ব্যবহার করি, তার মালিক আমাদের এই কুকিজে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। যার জন্য তিনি সবাইকে ব্রাউজারে ইনকগনিটো ট্যাবটি ব্যাবহারের জন্য উৎসাহিত করেন।
কুকিজের খারাপ ভালো দুটো দিকই রয়েছে। তাই বলে কি ব্যবহার করবেন না? অবশ্যই করবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে কোনদিকে গেলে আমার কি হতে পারে।
Jasmin Hasan says
ইন্টারনেট কুকিজ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম এই পোস্টের মাধ্যমে। উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কেও সম্যক ধারণা পেলাম।