আপনি যদি একজন শিক্ষানবিশ ক্রিকেটার হয়ে থাকেন, কিংবা হয়ে থাকেন একজন ক্রিকেট অনুরাগী, তবে আপনার অবশ্যই ওয়ানডে ক্রিকেটের নিয়ম-কানুন জেনে রাখা প্রয়োজন। সব ক্রিকেটারই নিয়মগুলো জানেন। কিন্তু ক্রিকেট খেলায় যারা নতুন, তাদের সবাই কিন্তু সব নিয়ম না’ও জানতে পারেন।
যদি না জানেন, কোন সমস্যা নেই; এই লেখা পড়ে আজই ওয়ানডে’র ওয়ান্ডারফুল নিয়মগুলো জেনে যাবেন।
ক্রিকেট খেলা তিন ফরমেটে বিভক্ত। যথা-
- টেস্ট ক্রিকেট
- ওয়ানডে ক্রিকেট
- টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট
আমাদের আলোচ্য বিষয় যেহেতু ওয়ানডে, তাই চলুন ওয়ানডে ক্রিকেট বলতে কি বোঝায় সেটা আগে জানা যাক।
ওয়ানডে ক্রিকেট কি?
ওয়ানডে ক্রিকেটের অফিসিয়াল নাম ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল বা ওডিআই। ওয়ানডে ক্রিকেট মানেই হচ্ছে লিমিটেড ওভার ক্রিকেট যেখানে দুই দলের মধ্যে আন্তর্জাতিক স্টেটাস অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট ওভারের খেলা সংঘঠিত হয়ে থাকে। আর এই খেলা একদিনেই শেষ করতে হয়। এ জন্যেই এর নাম ওয়ান ডে।
ওয়ানডে ক্রিকেট সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া গেল। এবার আসুন, এই ওয়ানডে ক্রিকেটের কিছু জানা-অজানা নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জানা যাক।
ওয়ানডে ক্রিকেটের নিয়ম-কানুন
১. টাইমড আউট
একজন ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার পর নতুন ব্যাটসম্যান পিচে এসে গার্ড নিবেন। তবে, সেই গার্ড নেওয়ার সময় থাকে মাত্র ৩ মিনিট। কোন ব্যাটসম্যান এই ৩ মিনিটের মধ্যে পিচে আসতে ব্যর্থ হলে সে টাইমড আউট বলে গণ্য হবে।
বিখ্যাত ব্যাটসম্যান রিচার্ড পাইবাসের বেলায় একবার এমন হয়েছিল। আপনার ব্যাটিংকে আরো শাণিত করতে রিচার্ড পাইবাস এর ১০টি ব্যাটিং টিপস ফলো করতে পারেন।
২. ব্যাটের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ
ব্যাটের দৈর্ঘ্য ৩৮ ইঞ্চি ও প্রস্থ ৪.২৫ ইঞ্চির বেশি হওয়া চলবে না।
৩. ইচ্ছাকৃতভাবে হাত দিয়ে বল ধরা
কোন ব্যাটসম্যান যদি ইচ্ছাকৃতভাবে হাত দিয়ে বল ধরে বা বাধা প্রদান করে, তবে ব্যাটসম্যানকে আউট বলে বিবেচনা করা হবে। তবে, এক্ষেত্রে বিপক্ষ দলের ফিল্ডারদের অবশ্যই আম্পায়ারের নিকট আবেদন করতে হবে।
৪. দুইবার বলে আঘাত করা
এই নিয়ম ক্রিকেটীয় অভিধানে ‘Hit the ball twice‘ নামে খ্যাত। ব্যাটসম্যানের শরীরে বা ব্যাটে বল লাগার পর ব্যাটসম্যান পুনরায় বলে আঘাত করলে তা ফিল্ডার ও বোলারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আউট বলে বিবেচিত হয়।
৫. বিনা আপিলে নট আউট বিবেচিত
একজন ব্যাটসম্যান যতো’ই পরিষ্কারভাবে আউট হোক না কেনো, বোলারকে তার জন্য আপিল করতে হবে। সুনিশ্চিত ক্যাচ, স্ট্যাম্পিং বা এলবিডব্লিউ হওয়ার পরেও যদি বোলার বা ফিল্ডার আবেদন না করে, তাহলে আম্পায়ার ব্যাটসম্যানকে আউট দিবেন না। এই নিয়মটি আইসিসি নির্ধারিত ২৭ নং নিয়মে উল্লেখ রয়েছে।
৬. নো বল
বোলার নিয়ম অনুসারে বল না করলে তা নো বল হিসেবে গণ্য হবে এবং এ-জন্য ব্যাটিং টিম অতিরিক্ত একটি বল ও রান পাবে। সাধারণত কনুই ভেঙ্গে বল করলে, ডেলিভারির সময় বোলারের পা পপিং ক্রিজ অতিক্রম করলে, বল সরাসরি ব্যাটসম্যানের কাধের উপর দিয়ে গেলে তা নো বল হিসেবে বিবেচিত হবে।
৭. হিট উইকেট
ব্যাটিং করার সময় যদি ব্যাটসম্যানের শরীর, ব্যাট বা পোষাক লেগে স্ট্যাম্পের বেল পড়ে যায়, তবে ব্যাটসম্যান হিট উইকেট নিয়মে আউট হবে। এক্ষেত্রে, উইকেটকিপারের কোনও ভূমিকার প্রয়োজন নেই। আপনি যদি একজন দক্ষ উইকেটকিপার হতে চান, তবে এই ৬টি টিপস মেনে চলুন।
৮. ফ্রি হিট
বর্তমানে বোলারের একটি নো বল হলে তার পরের বলটি ব্যাটসম্যান ফ্রি হিট হিসেবে পায়। এই বলে ব্যাটসম্যান রান আউট ব্যাতীত অন্য কোন আউট হবেন না। তাই, ফ্রি হিটকে সব ব্যাটসম্যানই স্কোর করে কাজে লাগাতে চায়।
৯. ইনজুরড খেলোয়াড়ের পুনরায় মাঠে প্রবেশ
কোন খেলোয়াড় ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে গিয়ে সে যদি পুনরায় মাঠে আসতে চায়, তাহলে সবার আগে তাকে আম্পায়ারকে অবহিত করতে হবে। আম্পায়ারকে অবহিত না করে মাঠে প্রবেশ করলে ফিল্ডিং দলের ৫ রান মাইনাস করা হবে।
১০. টসের আগেই মূল একাদশ নির্ধারণ
টসের আগেই দুই দলের অধিনায়ককে তাদের মূল একাদশ ম্যাচ অফিশিয়ালদের কাছে লিখিত আকারে জমা দিতে হবে। যদি কোন কারণবশত একাদশে কোন অধিনায়ক পরিবর্তন আনতে চায়, তাহলে তা কেবলমাত্র বিপক্ষ দলের অধিনায়কের সম্মতিতেই সম্ভব।
১১. ম্যাচ রেফারি
প্রতিটি ম্যাচ সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য একজন আইসিসি রেফারি থাকেন, যিনি আম্পায়ারদের সাহায্যে খেলা সঠিকভাবে পরিচালনা করেন। তবে, যে দুই দেশের খেলা হচ্ছে, ম্যাচ রেফারী সেই দুই দেশের কেউ হতে পারবেন না।
১২. আম্পায়ারদের স্বাধীনতা
ক্রিকেট ম্যাচে আম্পায়ার সর্বদা স্বাধীনভাবে কাজ করে থাকেন। কোন ম্যাচে কে বা কারা আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করবেন তা সম্পূর্ণ আইসিসির উপর। কোন দল বা খেলোয়াড় এতে দ্বিমত প্রকাশ করতে পারবেন না।
১৩. স্লো ওভার রেট
প্রতি ঘন্টায় একটি দলের বোলারদের সর্বনিম্ন ১৪ ওভার গড়ে বল করা লাগবে। যদি কোন দল প্রতি ঘন্টায় গড় হিসেবে এই ১৪ ওভার বল করতে না পারে, তাহলে সেই দলের অধিনায়ককে জরিমানা করা হয়ে থাকে বা কিছু ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধও করা হয়।
১৪. ম্যাচ সময়সীমা
একটি ওয়ানডে ম্যাচের জন্য আইসিসি মূলত ৭ ঘন্টা বরাদ্দ রাখে (ইনিংস বিরতি ব্যাতীত)। তবে অনিশ্চয়তার এই খেলা অনেক সময়ই নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায় না।
১৫. ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে রিভিউ
দুই দলের হাতেই দুইটি করে রিভিউ থাকে। এই রিভিউ নিয়ে তারা আম্পায়ারের নেওয়া সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ পায়। তবে, আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঠিক ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে রিভিউ নেওয়া লাগে।
১৬. পিচের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ
ক্রিকেট খেলায় এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পিচ। পিচের দৈর্ঘ্য হবে ২২ গজ, প্রস্থ হবে ১০ ফুট। পিচের দুই প্রান্তে তিনটি করে মোট ৬টি স্ট্যাম্প বসানো থাকবে। প্রতিটি স্ট্যাম্পের উচ্চতা হবে ২৮ ইঞ্চি, তিন স্ট্যাম্পের প্রস্থ হবে ৯ ইঞ্চি।
১৭. ম্যানকাডিং আউট
এই নিয়মটি বেশ মজার, বিতর্কিতও বটে। বোলার বল ডেলিভারির আগেই যদি নন স্ট্রাইকের ব্যাটসম্যান পপিং ক্রিজ ছেড়ে বের হয়ে পড়ে, তাহলে বোলার স্ট্যাম্পের বেল বল দিয়ে আঘাত করে ফেলে তাকে আউট করতে পারবে। কিছু সিজন পূর্বে আইপিএলে আশ্বিন – বাটলার ম্যানকাডিং আউটের পরে এই নিয়মটা অনেকের চোখে আসে।
১৮। সুপার ওভার
আলোচনার শেষাংশে এসে কথা বলবো সুপার ওভার নিয়ে। দুই দলই যদি সমান রান করে, তাহলে জয় পরাজয় নির্ধারণ হয় সুপার ওভারের মাধ্যমে। সুপার ওভার মানে এক ওভারের খেলা। এই এক ওভারে যে দল বেশি রান করবে সে দল জয়ী হবে। যদি সুপার ওভারেও দুই দল সমান রান করে, তাহলে যে দল বেশি সংখ্যক বাউন্ডারী মেরেছে সে দল জয়ী হয়।
আইসিসি দ্বারা অনুমোদিত বেশ কিছু নিয়মের মধ্যে এই ছিলো ওয়ানডে ক্রিকেটের উল্লেখযোগ্য ১৮টি নিয়ম। ওয়ানডে ক্রিকেটের নিয়ম-কানুন আইসিসি দ্বারা অনুমোদিত ও সর্বজনস্বীকৃত। এই নিয়মগুলো দ্বারাই ওয়ানডে ম্যাচ পরিচালিত হয়।
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি দর্শকরাও কমবেশি এই সব নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জ্ঞাত। তবে ক্রিকেট খেলাকে দর্শক হিসেবে উপভোগ করতে হলেও এই নিয়ম-কানুনগুলো সকলের জন্যই জানা আবশ্যক।
Leave a Reply