অ্যাপার্টমেন্ট কেনার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরী। নৈলে কেনার পর আফসোস করতে হতে পারে। তাই, আগে থেকেই প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখলে পরে পস্তাতে হবে না।
আমরা যারা রাজধানী ঢাকা কিংবা জেলা শহরগুলোতে বাস করি, তাদের প্রায় প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে ভাড়া অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে থাকতে প্রায়ই মনে হয় যদি নিজের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থাকতো! তবে কতই না সুন্দর করে সাজাতাম, স্বপ্নের মতো!
অনেকের ক্ষেত্রেই একদিন সেই স্বপ্নের দিন এসে পড়ে। চাকরি হোক, ব্যবসা হোক, কিংবা অন্যে কোনও মাধ্যম থেকেই হোক, অ্যাপার্টমেন্ট কেনার মতো টাকার ব্যবস্থা হয়ে যায়। এদের মাঝে কেউ কেউ আবার কিনতে গিয়ে সঠিক গাইড লাইনের অভাবে ধরা খেয়ে যায়। তাই, কেনার আগে কিছু সাধারণ ও কিছু আইনগত বিষয় জেনে রাখা জরুরী।
যদিও বাংলাদেশের নামকরা ১০টি রিয়েল এস্টেট কোম্পানি থেকে যদি আপনি অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন, তবে আপনার কোনকিছুতেই ধরা খাওয়ার তেমন একটা চান্স থাকবে না। বিশেষ করে, প্রতারিত না হওয়ার বিষয়ে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। কারণ, সুনামধন্য এই সব রিয়েল এস্টেস্ট কোম্পানী তাদের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার জন্যেই কোনও রকম প্রতারণা করবে না। তবু, অ্যাপার্টমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকাই ভাল।
বাড়ি কেনা আর অ্যাপার্টমেন্ট কেনার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে যার কারণে অনেকেই প্রসেসিং কনফিউশনে পড়ে যায়। তবে, অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনার আগে এই লেখাটি পড়ার পর আপনার সব কনফিউশন কেটে যাবে এবং কিনতে গিয়ে ঠকবেন না।
এই লেখায় আমরা প্রথমে সাধারণ কিছু বিষয় আলোচনা করবো যেগুলো আপনার বায়িং গাইড হিসেবে কাজ করবে। এরপর, আলোচনা করবো কিছু আইনগত বিষয় যেগুলো জানা থাকলে আপনি কোনও আর্থিক ক্ষতির সন্মুক্ষীণ হবেন না, এমনকি প্রতারণার খপ্পরেও পড়বেন না।
অ্যাপার্টমেন্ট কেনার আগে সাধারণ বিবেচ্য বিষয়সমূহ
১. লোকেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিয়ের লোকেশন এবং তার আশে পাশে থাকা দোকান-পাট, শপিং সেন্টার, হাসপাতাল, পার্ক, খোলা জায়গা, ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, চেষ্টা করুন, আপনার অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি এলাকায় অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে।
দ্বিতীয়ত, গুরুত্ব দিন চারপাশে থাকা হাসপাতালসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার প্রতি। আর যদি দূরের লোকেশনেই নেয়ার চিন্তা করেন, তবে অবশ্যই রাস্তা-ঘাট এবং ট্রান্সপোর্ট সুবিধার দিকে নজর দিন।
লোকেশনসহ আরো নানা বিষয়ে অগ্রিম জানার জন্যে অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনা-বেচার সেরা কিছু ওয়েবসাইট দেখে নিন যেগুলো থেকে আপনি লোকেশনে যাওয়ার আগেই অনেক কিছু যাছাই বাছাই করে নিতে পারবেন।
২. শব্দ দূষণ থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন
আপনি যে লোকেশনেই অ্যাপার্টমেন্ট কিনুন না কেন, কোলাহলপূর্ণ স্থানে, বিশেষ করে মেইন রোডের পাশে অ্যাপার্টমেন্ট নেয়া ঠিক হবে না। এতে আপনি প্রতিনিয়তই শব্দ দূষণের মাঝে থাকবেন। এমনকি, রাতেও গাড়ি-চলাচলের শব্দ পাবেন যা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে এবং ধীরে ধীরে আপনাকে অসুস্থ্য করে তুলবে।
মোট কথা, আপনি যদি নয়েজ ফ্রি থাকতে চান, নিরিবিল পরিবেশে বসবাস করতে চান, তবে মেইন রোডের পাশে অ্যাপার্টমেন্ট না নিয়ে আশে-পাশের গলিতে নিন। অন্তত এতটুকু দূরত্বে যান, যতটুকু গেলে মেইন রোডের গাড়ির শব্দ থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
৩. বাজেট নিয়ে কয়েকবার ভাবুন
যদিও বাজেট নির্দিষ্ট করে সবসময় কেনা-কাটা করা যায় না, তবু অ্যাপার্টমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে যদি আপনার আগে থেকেই বাজেট ঠিক করা থাকে, তবে আপনি পরবর্তী নানা রকম বাড়তি চিন্তা থেকে বেঁচে যাবেন। তাছাড়া, আপনার বাজেটের উপরও নির্ভর করছে আপনি কোন লোকেশনে এবং কেমন মানের অ্যাপার্টমেন্ট পাবেন।
আপনার বাজেট যদি হাই হয়, তবে আপনি যে কোনও লোকেশনেই হাই-ফাই টাইপের অ্যাপার্টমেন্ট কেনার প্ল্যান করতে পারেন। আর যদি মাঝারি মানের হয়, তবে মোটামুটি ভাল লোকেশনে যেতে পারেন এবং ভাল মানের অ্যাপার্টমেন্টই পেতে পারেন। আর যদি বাজেট হয় অত্যন্ত কম, তবে আপনাকে চিন্তাও করতে একটু কমিয়ে। যাইহোক, মূল কথা হচ্ছে বাজেট ঠিক করা থাকলে অনেক কিছু সহজ হয়ে যাবে।
৪. মার্কেট প্রাইস রিসার্চ করে নিন
অ্যাপার্টমেন্টের দামের ক্ষেত্রে ক্রস চেক করুন, মার্কেট প্রাইস রিসার্চ করুন। অর্থাৎ, একই সাইজ ও ফ্যাসিলিটির মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানীর অ্যাপার্টেমেন্টের দামের তারতম্য দেখুন। এতে, আপনি প্রকৃত দামের মধ্যেই অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে পারবেন, বেশি দামের ভিরমি খাওয়া থেকে বাঁচবেন।
যে লোকেশনে অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে চাইছেন, সেই এলাকায় আপনার পরিচিত কেউ যদি থেকে থাকে, তবে তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করুন। সবচেয়ে ভাল হয় যদি এমন কাউকে পেয়ে যান, যে কিনা সম্প্রতি ওই এলাকায় অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছে। এ-রকম লোকের অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করুন।
৫. অ্যাপার্টেন্টের সাইজ বিবেচনায় নিন
দেখে নিন, আপনার বাজেটের মধ্যে কোন সাইজের অ্যাপার্টমেন্ট পাচ্ছেন। সাইজের বিষয়টার ক্ষেত্রে যদিও স্কয়ার ফিটই মূল বিবেচ্য বিষয় হয়, তবু আরো কিছু বিষয় রয়েছে যা আপনার জানা থাকলে ভাল হয়। যেমন, ২ হাজার স্কয়ার ফিটের একটা অ্যাপার্টমেন্ট থেকেও ১৮শ স্কয়ার ফিটের অ্যাপার্টমেন্টকে অনেক সময় বড় দেখাতে পারে।
কারণ, যে জমিটির উপর অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংটি তোলা হয়েছে সে জমিটি যদি স্কয়ার সাইজ হয়, তখন অ্যাপার্টমেন্টের সাইজ এবং লুক এক রকম হয়। আবার, জমিটি যদি কোনাকুনি কিংবা একটু বাঁকানো হয়, তখন অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে ফিলার বেশি কিংবা এলোমেলো থাকার কারণে, স্কয়ার ফিট বেশি হলেও স্পেস কম থাকে। কাজেই, উভয় দিক বিবেচনায় রেখেই দেখে-শুনে অ্যাপর্টমেন্ট কিনতে হবে।
৬. অ্যাপার্টমেন্টের ভিউ ও লে-আউট দেখে নিন
অ্যাপার্টমেন্টের সাইজের সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে ভিউ ও লে-আউট। এটি সাইজের বাইরেও গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে দেখতে হবে, অ্যাপার্টমেন্টের সামনের ভিউ কেমন, বাইরের পৃথিবীটাকে কেমন দেখায় পেছনের দিক থেকে। কিংবা, ডানের ও বামের দিক থেকে কি দেখা যাচ্ছে! ইত্যাদি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। কারণ, একটি সুন্দর ভিউ আপনার মুড অন করে দিতে পারে, বাইরের একটি সুন্দর দৃশ্য অনায়াসে আপনার মন ভাল করে দিতে পারে।
এছাড়া, আপনার অ্যাপার্টমেন্টে শীতের রোদ কতটা ঢুকবে, কতটা জ্বালাবে গ্রীষ্মের দাবদাহ হাওয়া, কিংবা কতটা প্রবেশ করবে বসন্তের বাতাস, এসব আপনাকে আগেই ভাবতে হবে। বিশেষ করে, বেড রুমগুলোতে প্রকৃতির শান্ত বাতাস প্রবেশ করবে কিনা নাকি পুরোপুরি আবদ্ধ থাকছে, এসব দেখে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
৭. অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং সুবিধাগুলো যাছাই করে নিন
অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিয়ে কমিউনিটি স্পেস রয়েছে কিনা, সেটা দেখে নিন। এটা দেখে নিতেও ভুলবেন না যে, ইন্টারকম, মেল বক্স, সিকিউরিটি, ইত্যাদি সব ব্যবস্থা মান-সন্মত কিনা। আর একটা বিষয় তো আপনাকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে যে অ্যাপার্টমেন্টের ময়লা-আবর্জণা প্রতিদিন পরিস্কার করার ব্যবস্থা আছে কিনা। অর্থাৎ, দিনের ময়লা দিনে নিয়ে যাওয়া হয় কিনা।
হঠাৎ করে ইন্টারনাল বৈদ্যুতিক সমস্যা হতেই পারে, বিদ্যুৎ লাইনে ডিস্টার্ব দেখা দিতে পারে। আবার, সমস্যা হতে পারে পানির লাইনেও। এই সব ক্ষেত্রে অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিয়ের নিজস্ব সার্ভিসিং ব্যবস্থা আছে কিনা অর্থাৎ প্রয়োজনের মুহূর্তেই ইলেকট্রিশিয়ান, মেথর-সুইপার, ইত্যাদি বিভিন্ন কাজের মানুষ অ্যাভেলেইবল কিনা, তা জেনে রাখা প্রয়োজন।
৮. অ্যাপার্টমেন্টের সার্ভিস চার্জ জেনে নিন
অ্যাপার্টমেন্ট কেনার আগে সার্ভিস চার্জ জেনে নেয়া অত্যন্ত জরুরী। কেননা, বিভিন্ন লোকেশনে সার্ভিস চার্জ বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আবার, একই লোকেশনে কোম্পানী ভেদেও সার্ভিস চার্জ ব্যতিক্রম হতে দেখা যায়। সার্ভিস চার্জ জানা থাকলে আপনি বাজেটের সাথে ম্যাচ করতে পারবেন এবং আপনার মাসিক খরচ সম্পর্কেও আইডিয়া পেয়ে যাবেন।
সার্ভিস চার্জের সাথে আরেকটা বিষয়ও আপনার জেনে নেয়া প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে বিল্ডি এর ভেতরে সাধারণ কমিউনাল এরিয়ায় হঠাৎ হঠাৎ নষ্ট হয়ে যাওয়া রিপেয়ারিংয়ের চার্জ কে বহন করবে। যেমন, লিফট্ এ কোনও সমস্যা দেখা দিল এবং সেটি সার্ভিসিং করতে হলো। এই সার্ভিস চার্জ কি কোম্পানী বহন করবে, না প্রত্যেক অ্যাপার্টমেন্ট মালিক থেকে কেটে নেয়া হবে, সেটা জেনে রাখা উত্তম হবে।
৯. অ্যাপার্টমেন্ট রি-ডেকোরেশন করা যাবে কিনা জিজ্ঞেশ করুন
কোম্পানীগুলো যখন অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করে, তখন তারা তাদের নিজস্ব ডিজাইনকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে, এটাই স্বাভাবিক। এক্সটার্নাল ডিজাইনের ক্ষেত্রে আপনার কিছু করার না থাকলেও, ইন্টারনাল ডিজাইনের ক্ষেত্রে আপনি পরিবর্তণ করতে পারবেন কিনা, সেটা জেনে রাখতে পারেন।
যেমন ধরুন, আপনি চাইছেন, ড্রয়িং রুমের পাশ দিয়ে একটা দেয়াল তুলে ছোট্র একটা রুম বের করে নিতে যা আপনার অন্য কাজে লাগবে। কিংবা, চাইছেন, মাস্টার বেডের পাশের দেয়ালটা ভেঙ্গে দিলে রুমটিকে আরো অনেক সুন্দর করা যায়। এখন, আপনাকে জেনে নিতে হবে এ-রকম ইন্টারনাল পরিবর্তণের সুযোগ রয়েছে কিনা।
অ্যাপার্টমেন্ট কেনার আগে আইনগত বিবেচ্য বিষয়সমূহ
বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্ল্যাট, যাই বলুন না কেন, সবটাতেই বিবেচনায় রাখার মতো অনেক আইনগত বিষয় রয়েছে। আসুন, সে বিষয়গুলো জানা যাক-
১০. অ্যাপার্টমেন্টের জমিতে আইনগত জটিলতা আছে কি?
যে জমির উপর অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং তোলা হয়েছে, সেই জমির মালিকানা নিয়ে কোনও আইনগত জটিলতা রয়েছে কিনা তা যাছাই করে নিন। যদি জমির ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে আইনগত সমস্যা না থাকে, তবে দেখে নিন সরকারী কোনও বিধি-নিষেধ রয়েছে কিনা। কোন কারণে এই জমির উপর কোর্ট থেকে কোন আদেশ বা নিষেধ রয়েছে কিনা তা জেনে রাখা প্রয়োজন।
জমি সংক্রান্ত যে কোনও তথ্য সেবা পাবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ে। কোন কিছু জানা বা কোন তথ্য সেবা পাওয়ার জন্যে সরকারের এই অফিসটিতে যাওয়ার আগে ভিজিট করতে পারেন, তাদের ওয়েবসাইট- ভূমি মন্ত্রণালয়। এছাড়াও, রয়েছে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, Department of Land Records and Surveys (dlrs)। প্রয়োজনে এখান থেকেও আপনি সহযোগীতা পেতে পারেন।
১১. রাষ্টীয় যথাযথ কতৃপক্ষের অনুমতি আছে কি?
রাজধানী ঢাকার ভেতর কোন সাধারণ বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করতে হলে অবশ্যই রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষ, রাজউক এর অনুমোদন থাকতে হবে। কারণ, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এর নির্মাণ বিষয়ক নীতিমালা রয়েছে, নকশার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা রকম বিধি-নিষেধ, এমনকি আরো আনুষঙ্গিক কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো না মেনে বাড়ি বা অ্যাপর্টমেন্ট ভবন নির্মাণ করা যায় না। করলে, শুধু জরিমানাই নয়, ভবনটি ভেঙ্গেও ফেলতে হয়।
ঢাকার বাইরের ক্ষেত্রেও রয়েছে যথাযথ কতৃপক্ষ। আপনাকে অবশ্যই দেখে নিতে হবে অ্যাপার্টমেন্ট কোম্পানীটি যথাযথ কতৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে ভবন নির্মাণ করেছে কিনা। কারণ, অনুমোদন নেয়া না থাকলে আপনার ইনভেস্টমেন্ট পুরোটাই এক সময় জলে যেতে পারে।
কাজেই, অ্যাপার্টমেন্ট কোম্পানীর কাছ থেকে রাজউক কিংবা যথাযথ কতৃপক্ষের অনুমতি পত্র চেয়ে দেখে নিন। অনেক সময় কিছু কোম্পানীর ব্রুশিয়ারেই এই অনুমোদন পত্র ছাপানো থাকে। যাদের ছাপা নেই, তাদের কাছ থেকে চাইলে ক্রেতা হিসেবে আপনাকে তারা মূল কপিটি দেখাতে বাধ্য। নৈলে তো আপনি কিনবেন না।
১২. অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিয়ের ডিজাইন ও গুণগত ঠিক আছে কি?
চাইলেই যে কেউ নিজের ইচ্ছে মতো যে কোন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিয়ের ডিজাইন করে ফেলতে পারবে না। এমনকি, যেন-তেনভাবেও ভবন নির্মাণ করতে পারবে না, গুণগত মান বজারয় রাখতে হবে। আর এই দু’টোই দেখার জন্যে রয়েছে বিএনবিসি যার পুরো মানে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড।
আপনি যে অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে ফ্ল্যাট কিনতে যাচ্ছেন, নির্মাণের সময় সেটি বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের নিয়ম-নীতি মেনেছে কিনা অর্থাৎ কোড অনুসারে নির্মাণ করেছে কিনা তা যাছাই করে নিন। এমনকি বিল্ডিং নির্মানের সময় বিএনবিসির নির্ধারিত গুণগত মান বজায় আছে কিনা, সেটাও দেখে নিন।
বিশেষ করে, ভূমিকম্পের কবলে পড়লে যে-সব ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়, সেগুলো মোকাবেলার জন্যে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের দেয়া অগ্রিম সতর্কতা অবলম্বণ করা হয়েছে কিনা যাছাই করে নিন। সেই সাথে আরো দেখে নিন অগ্নি দূর্ঘটনা থেকে বাঁচার জন্যে বিএনবিসির কোড ফলো করা হয়েছে কিনা।
অ্যাপার্টমেন্ট কেনার আগে যে-সব সাধারণ ও আইনগত বিষয় বিবেচনায় রাখা জরুরী সেগুলোর সবই আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি, এ লেখাটি পড়ার পর অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট কেনার জন্যে আপনার যা কিছু জানা প্রয়োজন তার সবই জেনেছেন। এরপরও, আপনার যদি আরো কিছু জানার বাকী থেকে থাকে, কিংবা অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় সংক্রান্ত কোনও প্রশ্ন থেকে থাকে, তবে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাদের জানান।
Leave a Reply