মাইক্রোওয়েব ওভেনের সুবিধা-অসুবিধা জেনে রাখা ভাল। কারণ, মাইক্রোওয়েভ ওভেন আমাদের ব্যস্ত জীবনের সঙ্গী হলেও এর সুবিধা অসুবিধা অনেকেই জানি না। বর্তমান সময়ে যারা সময় বাঁচিয়ে রান্না করে ঐ বাঁচানো সময়টাকে ইফেক্টিভলি কাজে লাগাতে চান, তাদের জন্য মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করা এক চমৎকার উপায়।
সহজে কম সময়ে স্বাদ-গুণাগুন অক্ষুন্ন রেখে রান্না করার আধুনিক পদ্ধতি হলো মাইক্রোওয়েভ ওভেন। এটি দিয়ে একই সাথে খাবার রান্না, বেকিং, গ্রিলিং, রোস্টিং, টোস্টিং করা যায়। অর্থাৎ, একের ভিতর অনেক সুবিধা পাচ্ছেন এই যন্ত্রটি দিয়ে।
এর আগে আমরা কম দামে কিছু ভাল মাইক্রোওয়েভ ওভেন সম্পর্কে আপনাদের জানিয়েছিলাম যেখানে মূলত ৮ হাজার থেকে ১৬ হাজারের ভেতর ১০টি ওভেন ছিল।
এই আর্টিকেলে জানবেন মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ৫টি সুবিধা ও ৪টি অসুবিধা।
মাইক্রোওয়েব ওভেনের সুবিধা-অসুবিধা
সুবিধা-১: রান্নার সময় কম লাগে
স্বাভাবিক রান্নার সময় থেকে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্নার সময় কম লাগে। কারণ,মাইক্রোওয়েভের প্রতিফলিত রশ্মির জন্য রান্নার উপাদানগুলোতে প্রচুর ভাইব্রেশন হয় এবং দ্রুত রান্না হয়ে যায়।
সাধারনত, মাইক্রোওয়েভ রে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০ লক্ষ বা ১ মিলিয়ন বার রান্নার উপাদানগুলোকে কম্পিত করে যার ফলশ্রুতিতে দ্রুত রান্না হয়।
সুবিধা-২: স্বাদ ও পুষ্টিগুণ অপরিবর্তিত থাকে
দ্রুত রান্নার ফলে এবং টেস্পারেচার ও সময় নির্ধারণ করে দেবার ফলে খাবার পুড়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটি খাবারের স্বাভাবিক গন্ধ, পুষ্টিগুন বজায় রাখে। পুষ্টিগুন এবং স্বাদের গ্রহনযোগ্যতা বিবেচনা করলে স্বাভাবিক রান্না আর মাইক্রোওয়েভে রান্নার মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই।
সুবিধা-৩: সহজে পরিষ্কার করা যায়
মাইক্রোওয়েভ ওভেনের অন্যতম সুবিধা হলো এটি পরিষ্কার করা সহজ। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে যে পাতিলের মধ্যে রান্নার জন্য খাবার রাখবেন, রান্না হবার পর ঐ পাতিলের চারপাশে খাবারটা লেগে যাবে না।
কারণ, মাইক্রোওয়েভ রশ্মি শুধুমাত্র খাবারের উপর ক্রিয়া করে। সুতরাং, যা একটু লাগবে তা আপনি সহজেই পরিষ্কার করতে পারবেন।
সুবিধা-৪: ডিফ্রোস্ট করে
অনেকসময় ফ্রিজে রাখা খাবারগুলো দ্রুত সময়ে রান্না করতে হয়। মাইক্রোওয়েভ ওভেন ফ্রিজে রাখা ফ্রোজেন খাবারগুলোকে কম সময়ের মধ্যে স্বাদ ও গুণাগুণ অক্ষুন্ন রেখে গলিয়ে রান্না করে।
সাধারণ ওভেনগুলো ডিফ্রোস্টিং করতে পারে না। এটা তাদের সীমাবদ্ধতা। তবে মাইক্রোওয়েভ ওভেন এই ব্যাপারে পারফেক্ট।
সুবিধা-৫: কম শক্তি খরচ
সাধারণ ওভেন থেকে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে শক্তি কম খরচ হয়। সাধারণত মাইক্রোওয়েভ ওভেনের শক্তি থাকে ৬০০-১২০০ ওয়াটের মাঝামাঝি।
এছাড়াও মাইক্রোওয়েভ ওভেনে অটোমেটিক অন/অফ সিস্টেম চালু থাকায় আপনার সেট করে দেয়া নির্দিষ্ট সময় ও তাপমাত্রার পরে অটোমেটিকালি অফ হয়ে যায়। ফলে অতিরিক্ত শক্তি খরচ হওয়া হওয়া থেকে বেঁচে যায়।
অসুবিধা-১: নষ্ট হয়ে গেলে রেডিয়েশন লিকেজ
দীর্ঘ সময় ব্যবহারের ফলে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের যে তল অর্থাৎ যেখানে খাবার পাত্র রাখা হয়, ওভেনের দরজাতে ছোট্ট হোল তেরি হয় বা ঠিকঠাকভাবে কাজ করে না। তখন রেডিয়েশন লিকেজ হয়৷ দীর্ঘ সময় ধরে রেডিয়েশন লিকেজ হলে যে সমস্যাগুলো হতে পারে-
- ইমিউনিটি দুর্বল হতে পারে
- হার্ট রেট এ পরিবর্তন ঘটে
- ক্যান্সার কোষ গঠন
- চোখে সমস্যা দেখা দেয়
অসুবিধা-২: অনেক সময় ফুড পয়জনিং হয়
মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবারের উপর মাইক্রোওয়েভ রে লম্বালম্বিভাবে পড়ে। ফলে, দুইটা স্পটে খাবার ভাগ হয়ে যায়। যেটাতে সরাসরি রে/ রশ্মি পড়ে, তাকে বলে হটস্পট আর যেটাতে পড়ে না, তাকে বলে কোল্ডস্পট।
হটস্পটগুলোতে ভালো করে হিট পড়ে আর কোল্ডস্পটগুলোতে কম হিট পড়ে। ফলে ফুড পয়জনিং হয়।
আবার, মাইক্রোওয়েভ রে দেড় ইঞ্চিের বেশি সাইজের খাবার ভেদ করতে পারে না। অনেকে এর চেয়ে বড় সাইজের খাবারও মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম করে। যার জন্য ফুড পয়জনিং হয়।
অসুবিধা-৩: খাবারকে শুষ্ক করে ফেলে
এই ওভেন মূলত পানির অণুগুলো নিয়ে কাজ করে এবং দীর্ঘ কম্পনের ফলে পানির পরিমান কমে যায়। ফলে, খাবার শুষ্ক হয়ে পড়ে। রেস্টুরেন্টে এ-জন্যই বেশি সময় ধরে বার্গার গরম করলে খাবার সময় শুষ্ক মনে হয়।
অসুবিধা-: কিছু খাবার তৈরি করা যায় না
বেকিং, গ্রিলিংয়ের মতো স্পেশাল আইটেম করা গেলেও এটি দিয়ে রুটি, ডিপ ফ্রাইং, চাপাটি (রুটির মতো খাবার) এগুলো করা যায় না।
অধিকাংশ মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহারকারীর অভিযোগ এটি। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে এ-সব সুবিধা সম্বলিত মাইক্রোওয়েব ওভেন আসবে।
অতিরিক্ত অসুবিধা: প্লাস্টিকের পাত্রে খাবার রেখে ওভেনে রাখলে খাবারের সাথে Bisphenol ও Dioxins নামক কেমিক্যাল মিশে যায় যা আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকারক।
সতর্কতা: শিশুদের খাদ্য মাইক্রোওয়েভে গরম করাও ঠিক নয়।
মাইক্রোওয়েব ওভেনের সুবিধা-অসুবিধা জানলেন। আশা করি, এতে মাইক্রোওয়েব ওভেন ব্যবহারে আপনার সতর্কতা বেড়ে যাবে। আপনি এই ওভেনে আগের চেয়ে আরো ভাল রান্না করতে পারবেন। আসলে, সব ইলেকট্রোনিক্স পণ্যেরই সুবিধা যেমন থাকে, তেমনই অসুবিধাও থাকে। তাই বলে তো আর সেটির ব্যবহার বন্ধ করা যায় না! বরং, এগুলো জানা থাকলে ব্যবহারের সুবিধা বাড়ানো যায় আর অসুবিধা থেকে সতর্ক থাকা যায়।
Leave a Reply