গুগল পে হচ্ছে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড ভিত্তিক পেমেন্ট সেবা যা পূর্বে অ্যান্ড্রয়েড পে নামে পরিচিত ছিল। এই পেমেন্ট সেবা ব্যবহার করে খুব সহজেই বিভিন্ন জায়গায় পেমেন্ট করা সম্ভব হয়। এনএফসি চিপ রয়েছে এবং অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড ৪.৪ কিটক্যাট বা তার উপরে এমন সকল ডিভাইসে এটি কাজ করতে সক্ষম।
আমরা জানি, গুগল কিভাবে কোটি কোটি ডলার আয় করে থাকে। গুগলের অধিকাংশ সেবাই থাকে ফ্রি আর এটাই গুগলের ইনকামের মূল জায়গা। ভাবছেন কিভাবে? তাহলে, লেখাটি পড়েই আসুন। যাইহোক, আমাদের মূল গুগলের নতুন এই পেমেন্ট মেথড।
গোটা বিশ্ব জুড়ে লক্ষ লক্ষ মার্চেন্ট এই পেমেন্ট মেথডকে সমর্থন করেন। মূলত পেমেন্ট প্রক্রিয়াকে আরো সহজ করে তোলার উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট জায়ান্ট গুগল এটি তৈরী করেছে। প্রতিনিয়ত অ্যাপটিতে নতুন নতুন ফিচার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা যোগ হয়ে চলেছে যা একে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের কাছে আরও বেশি নির্ভরযোগ্য করে তুলেছে।
যেভাবে গুগল পে ব্যবহার করা হয়
গুগলের এই পেমেন্ট সিস্টেম তার ব্যবহারকারীদের পূর্বের পেমেন্ট করার অভ্যাস এবং ধারণা দুটোকেই বদলে দিয়েছে। মুভি টিকেট কিংবা নতুন গাড়ী ক্রয় করা, ইত্যাদি যে কোন ক্ষেত্রেই এটি দ্বারা পেমেন্ট করা সম্ভব। সবচেয়ে মজার ব্যাপারটি হলো এটি যারা ব্যবহার করেন, তাদের ফোনই তাদের কাছে একটি ব্যক্তিগত ব্যাংকিং সিস্টেমে পরিণত হয়।
গুগল পে যেভাবে কাজ করে:
এটি দ্রুত সময়ে সাবলিলভাবে লক্ষাধিক জায়গাতে পেমেন্ট করার সবচেয়ে সহজ একটি প্রক্রিয়া। এটির দ্বারা পেমেন্ট করার জন্য আপনাকে এটির সাথে আপনার ক্রেডিট কার্ড সংযুক্ত করতে হবে। কার্ড সংযুক্ত করার পর এটি দ্বারা আপনি-
- বিভিন্ন দোকানে পণ্য ক্রয়ের জন্য বা ভ্রমণ সংক্রান্ত টিকেট ক্রয়ের জন্য এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
- বিভিন্ন অ্যাপ এবং ওয়েবাসাইটে গুগল পে ব্যবহার করে পেমেন্ট দিতে পারবেন।
- আপনি পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিত মানুষদের টাকা পাঠাতে পারবেন। যদিও এই মুহুর্তে এই সুবিধাটি শুধুমাত্র আমেরিকা এবং ইন্ডিয়ার জন্য প্রযোজ্য রয়েছে। তবে, খুব দ্রুতই অন্যান্য দেশেও এই সুবিধা চালু করবে গুগল।
সেটআপ প্রক্রিয়া:
ইনষ্টল ও সেটআপ করা খুবই সোজা। মোবাইল যারা খুব ভালোভাবে চালাতে পারেন না, তারাও এটিকে কোন ধরনের বাধা ছাড়াই সেটআপ করে ফেলতে পারবেন। এটি এত বেশি পরিমাণে ইউজার ফ্রেন্ডলি যে, যে কোন বয়সের মানুষই এটিকে ব্যবহার করতে পারেন সাবলীলভাবে। এটি সেটআপ করার জন্য আপনাকে-
- প্রথমে অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে। আপনি যদি অ্যান্ড্রয়েড ইউজার হন, তবে গুগল প্লে ষ্টোর আর যদি আইফোন ইউজার হন, তাহলে অ্যাপল অ্যাপ ষ্টোর থেকে এটি ডাউনলোড করে ইনষ্টল করে নিতে পারবেন।
- ইনষ্টল হয়ে যাওয়ার পর আপনাকে আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট এর মাধ্যমে সাইন ইন করতে হবে। যদিও আমার মনে হয় না এই মুহুর্তে এমন মোবাইল ব্যবহারকারী রয়েছেন যার একটি গুগল অ্যাকাউন্ট নেই। তারপরেও যদি কারো না থাকে, তাহলে নতুন একটি অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে।
- অনলাইন পেমেন্ট করার পাশাপাপাশি আপনি যদি লোকাল শপগুলিতেও পেমেন্ট করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনার ফোনে এনএফসি চিপ থাকতে হবে।
ব্যাস হয়ে গেলো সেটআপ প্রক্রিয়া। এখন আপনি গুগল পে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত।
অর্থের উৎস:
আমরা বাংলাদেশে যারা বিকাশ ব্যবহার করি, তারা অনেকেই জানেন যে বিকাশের মাধ্যমে টাকা খরচের জন্য বা টাকা পাঠানোর জন্য প্রথমে সেই টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে ক্যাশ ইন করতে হয়। পরবর্তীতে বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে বা ইউএসডিডি কোড ডায়াল করে টাকা লেনদেন করা যায়।
তবে, গুগল পে সিস্টেমটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এর মাধ্যমে পেমেন্ট করার জন্য আলাদাভাবে আপনাকে কোন টাকা লোড করতে হয় না। আপনি স্বাভাবিকভাবে আপনার ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড এর সাথে সংযুক্ত করে পেমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে যেহেতু এই অ্যাপে আপনার ক্রেডিট কার্ড সংযুক্ত করা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে আপনার অর্থের নিরাপত্তা কতটুকু? প্রশ্নটা অযৌক্তিক নয়।
তবে, আপনি যেনে খুশি হবেন যে গুগলের এই অ্যাপ আপনার তথ্যকে মাল্টিলেয়ার সিকিউরিটি সিস্টেম এর মাধ্যমে নিরাপত্তা প্রদান করে। আপনার অর্থকে নিরাপদে রাখতে পৃথিবীর সবচাইতে অত্যাধুনিক নিরাপত্তা প্রযুক্তির ব্যবহার এই অ্যাপটিতে করা হয়েছে। যখন আপনি কোথাও পেমেন্ট করেন, তখন গুগল কখনওই সেখানে আপনার কার্ডের প্রকৃত নাম্বার দেখায় না, যার কারণে আপনার তথ্যটি গোপন ও নিরাপদ থাকে।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে, ফোন হারিয়ে গেলে কি হবে? ভাবার কোন কারণ নেই আপনার ফোন যদি হারিয়েও যায়, তবুও আপনার অর্থ সুরক্ষিত থাকবে। কারণ, গুগল পে ব্যবহার করার জন্য প্রতিবারই স্ক্রীন লক আনলক করতে হয় অর্থাৎ ফোনটি যদি কেউ চুরি করে বা আপনি ভুলে কোথাও ফেলে যান, তাহলেও অন্য কেউ সেটি ব্যবহার করতে পারবে না।
এছাড়া আপনি পৃথিবীর যে কোন স্থান থেকে আপনার গুগল অ্যাকাউন্টে লগ ইন করে আপনার ডিভাইস থেকে ওই অ্যাকাউন্টটি মুছে ফেলতে পারবেন যে কোন সময়ে।
আমেরিকাতে ১ হাজারেরও বেশি ব্যাংক গুগল পে সমর্থণ করে। যার মধ্যে ব্যাংক অব আমেরিকা, চেজ এবং সিটি ব্যাংকের মত স্বনামধন্য ব্যাংকও রয়েছে।
আমেরিকার পাশাপাশি বর্তমানে আরও ২৭টি দেশে গুগল পে এর কার্যক্রম চালু রয়েছে। এই মুহুর্তে বাংলাদেশ থেকে গুগল পে ব্যবহার করা সম্ভব না হলেও আমরা জানি যে গুগল তাদের পরিসেবাগুলো খুব দ্রুতই ছড়িয়ে দেয়। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে এটি চালু হয়েছে। তাই, এটি সহজেই অনুমেয় যে সেদিন খুব বেশি দুরে নয়, যেদিন আমরাও গুগল পে এর মাধ্যমে ক্যাশলেস ওয়ালেট ব্যবহার করতে পারবো।
Leave a Reply