সহজে সিভি তৈরি করার প্রক্রিয়াটা সবারই জানা প্রয়োজন। কারণ, পড়াশোনার পর্ব শেষ হয়ে গেলেই মাথায় চলে আসে চাকরির চিন্তা-ভাবনা। আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী একটি ভাল চাকরি পেতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন একটি ভাল মানের সিভি। অর্থাৎ, আপনার জীবন বৃত্তান্ত। ভাল মানের একটি জীবন বৃত্তান্ত তৈরী করতে অবশ্যই আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
আপনি যে পদে আবেদন করতে যাচ্ছেন সেখানে স্বাভাবিকভাবেই আরো অনেক প্রতিযোগী থাকবে যারা আপনার মতই আবেদন করবে। এক্ষেত্রে, যিনি আপনার সিভিটি দেখবেন তার কাছে খুব কম সময় থাকবে আপনার সিভিটি পর্যবেক্ষন করার জন্য। আপনার সিভিটি যদি বাকিদের থেকে একটু আলাদা না হয়, তাহলে নিঃশ্চই নিয়োগকর্তা আপনার সিভিটি ভালো করে দেখবে না।
ইন্টারনেট ঘেঁটে খুব সহজেই আপনি অনেক ধরনের সিভি বা বায়োডাটা ফরমেট পেয়ে যাবেন। যদি ঘাঁটাঘাটি করার ঝামেলা এড়াতে চান, তবে দেখে নিন ১০টি ফ্রি বায়োডাটা ডিজাইন টেমপ্লেট আর এখান থেকে বেছে নিন পছন্দ মতো যে কোনটি।
এছাড়া, এই ফরমেটগুলো থেকে ধারনা করে নিয়ে নিজেই সিভি তৈরি করে নিতে পারেন। সরাসরি ফরমেট থেকে কপি পেস্ট না করে নিজে থেকে সিভি বানানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া ভাল। কারন, আপনার সিভিটি যিনি দেখবেন, তিনি কিন্তু প্রথম দেখাতেই বুঝে যাবেন সেটা কি কপি পেস্ট করে লিখা নাকি আপনার নিজের বানানো।
সেক্ষেত্রে আপনার নিজের বানানো সিভি ই কিন্তু প্রাধান্য পাবে। আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে সাবলীল এবং আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরাটাই কিন্তু সিভির মূল উদ্দেশ্য। কাজেই, দেখে নিন সহজে কিভাবে সিভি তৈরি করতে হয়, আর সিভিতে কি কি রাখতে হয়।
সহজে সিভি তৈরি – সিভিতে যা যা থাকবে
আসলে সিভি তৈরি করা কঠিন কিছু নয়। এমনকি, স্মার্টফোনেই সিভি বানানোর সহজ উপায় আছে। তাই, খুব বেশি চিন্তা না করে দেখে নিন একটা সিভিতে মূলত কি কি বিষয় থাকা দরকার।
নাম এবং যোগাযোগের ঠিকানা
সিভির শিরোনামেই আপনার সম্পূর্ন নাম এবং ঠিকানা দিতে হবে। এটা আপনার সিভির একদম উপরে থাকবে। সিভির শিরোনামে কখনই CV অথবা Curriculum Vitae লিখতে যাবেন না। শিরোনামে সবসময় আপনার নাম ব্যবহার করবেন।
সিভিতে ডাক নাম ব্যবহার না করে সার্টিফিকেটের নাম ব্যাবহার করুন। নামের নিচে আপনার সঠিক ঠিকানা দিতে হবে যাতে আপনার সাথে সেই ঠিকানায় যোগাযোগ করা যেতে পারে। আপনার বর্তমান অথবা স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করতে পারেন।
আপনার সচল মোবাইল নাম্বার এবং ইমেইল এড্রেস ব্যবহার করুন। আপনার ইমেইল এড্রেসটি হতে হবে আপনার নিজের নামের সাথে মিল রেখে। যাতে বোঝা যায় ইমেইল এড্রেসটি আপনারই। আপনার যদি একটি লিঙ্কডইন প্রোফাইল এবং গুগল সাইট লিঙ্ক থাকে, তাহলে আপনার সিভিটি নিয়োগকর্তার কাছে একটি মানসম্মত সিভি হিসেবে বিবেচিত হবে।
পেশাগত লক্ষ্য
এটি আপনার সিভির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনার নাম এবং ঠিকানার নিচে সংক্ষিপ্ত আকারে পেশাগত লক্ষ নিয়ে অনুচ্ছেদ লিখুন যা নিয়োগকর্তার কাছে আপনাকে সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করে। আপনার পেশাগত লক্ষ্য লেখার সময় তিনটি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখুন।
- আপনি কে?
- আপনি আবেদনকৃত কোম্পানিটির জন্য কতটুকু অবদান রাখতে পারবেন।
- আপনি এই পদটির জন্য নিজেকে কেন যোগ্য মনে করেন।
আবেদনকৃত পদ সম্পর্কে ধারণা রেখে তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন পেশাগত লক্ষ্য লিখুন। খেয়াল রাখবেন যেন সেটা সংক্ষিপ্ত হয়, অতিরঞ্জিত কোন কিছুই লিখবেন না। সহজে সিভি তৈরি করার এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ছবি
নিজের সম্প্রতি তোলা ছবি ব্যবহার করুন। কয়েক বছর আগের ছবি দিবেন না। স্পষ্ট এবং ফরমাল ছবি ব্যবহার করুন। সাদাকালো ছবি ব্যবহার না করে রঙিন ছবি ব্যবহার করুন। এতে আপনার সিভিটি চাকুরীদাতার কাছে আরো আকর্ষনীয় হয়ে উঠবে।
ব্যাক্তিগত যোগ্যতা
আপনার ব্যাক্তিগত যোগ্যতা লিখুন । আপনি কতটা পরিশ্রমি, উদ্যমী এবং আপনার কাজের ক্ষেত্রে নিজেকে কতটা উৎসর্গ করতে পারবেন সেই তথ্যগুলো কয়েকটি পয়েন্ট আকারে দেয়ার চেষ্টা করুন।
কাজের অভিজ্ঞতা
পূর্বে কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে থাকলে অথবা কর্মরত থাকলে তা উল্লেখ করুন। প্রতিষ্ঠানের নাম, কাজে যোগদানের তারিখ উল্লেখ করুন। সেখানে কোন পদে চাকুরিরত ছিলেন, কত সময়কাল পর্যন্ত চাকুরীরত ছিলেন এবং পদোন্নতির ব্যপারেও পয়েন্ট আকারে লিখুন। যেমন:
- প্রতিষ্ঠানের নাম
- পদবী
- কাজে যোগদান এবং পদত্যাগের তারিখ
- সময়কাল
- দ্বায়িত্ব
- পদোন্নতি
আজকাল সব প্রতিষ্ঠানই কাজের অভিজ্ঞতাকে বেশি প্রাধান্য দেয়। যে ক্ষেত্রে আবেদন করবেন, সেই কাজের অভিজ্ঞতা আপনার চাকরী পাওয়ার সম্ভাবনা আরো বাড়িয়ে দিবে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
শিক্ষাগত যোগ্যতা তুলে ধরুন। আপনার শিক্ষাগত জীবনের প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ন অধ্যায় উল্লেখ করুন। মাধ্যমিক থেকে শুরু করে সকল বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্ট, কোন বোর্ড এবং একাডেমি থেকে কত সালে পাশ করে বের হয়েছেন তার সঠিক তথ্য দিন। এই তথ্যগুলো একটি টেবিল আকারে সাজিয়ে দিলে আরো ভাল হয়। যেমন:
ডিগ্রির নাম | কোর্স সময়কাল | বোর্ড/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান | পরীক্ষার বছর | ফলাফল |
প্রশিক্ষণ
আপনি যদি কোন সংস্থা অথবা কোন কোম্পানি থেকে কোন ধরনের কাজের প্রশিক্ষন নিয়ে থাকেন, তাহলে তা উল্লেখ করুন। যে বিষয়ে আবেদন করতে যাচ্ছেন, সেই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত কোন প্রশিক্ষণ নেয়া থাকলে সেটা হবে আপনার জন্য একটি প্লাস পয়েন্ট। চাকরিক্ষেত্রে সাধারনত প্রশিক্ষন প্রাপ্তরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে।
ভাষা দক্ষতা
মাতৃভাষা ছাড়া আপনি কোন কোন ভাষায় দক্ষ তা তুলে ধরুন। যে কোন চাকরীতে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা আপনাকে চাকরী প্রাপ্তিতে অনেক বেশি সহায়তা করবে। দেশের বাহিরে যদি কোন জায়গায় চাকরির আবেদন করেন সেক্ষেত্রে সেই দেশের ভাষা দক্ষতা আপনার প্লাস পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
কম্পিউটার দক্ষতা
আপনি কম্পিউটারের যে যে বিষয়ে পারদর্শি তা কয়েকটি পয়েন্ট আকারে উল্লেখ করুন। যেমনঃ MS Word, MS Excel, PowerPoint, MS Office etc.
ব্যাক্তিগত তথ্য
আপনার ব্যক্তিগত তথ্যে আপনার বাবা মায়ের নাম, স্থায়ী ঠিকানা, জন্ম তারিখ, জাতীয়তা, ধর্ম, বৈবাহিক অবস্থা উল্লেখ করুন। খেয়াল রাখবেন কোন ভুল তথ্য যেন না দেয়া হয়। এতে করে আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরি হাতছাড়া হতে পারে। আপনার সার্টিফিকেট অনুযায়ী সব সঠিক তথ্য দিবেন।
শখ ও আগ্রহ
নিজের কয়েকটি সৃষ্টিশীল শখের কথা লিখুন। আপনার শখ এবং আগ্রহ যেন আপনার মননশীল চিন্তাধারা প্রকাশ করে।
রেফারেন্স
রেফারেন্সে কোন আত্মীয়স্বজনের নাম না দিয়ে আপনি যেই প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করেছেন সেখানকার শিক্ষকের নাম পদবি এবং মোবাইল নাম্বার দিতে পারেন। খেয়াল রাখবেন যার রেফারেন্স দিচ্ছেন, তিনি যেন আপনাকে ভালভাবে চিনেন। আপনার পরিচয়ের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য অনেক সময় রেফারেন্স নাম্বারে ফোন দেয়া হয়।
অঙ্গীকারনামা
সিভিতে দেয়া সকল তথ্য যে সঠিক সেই জন্য সিভির একদম শেষে আপনার পূর্ণ সাক্ষর থাকতে হবে। চাকরিদাতা আপনার তথ্যের সত্যতা যাচাই করার আইনগত অধিকার রাখেন। তাই, ভালভাবে সকল তথ্য পর্যবেক্ষন করে তবেই অঙ্গিকারনামায় সাক্ষর দিবেন।
সিভি তৈরী সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
সিভিতে অবশ্যই দুই পৃষ্ঠার বেশি ব্যবহার করা যাবে না। এক পৃষ্ঠার মধ্যে হলে ভালো হয়। সিভিতে বিস্তারিত কোন কিছু না লিখে বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করুন। সিভিতে অতিরঞ্জিত কোন কিছু যাতে না দেখা হয় সেই ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। সিভির কাগজ হতে হবে সাদা অথবা অফ হোয়াইট রঙের A4 সাইজের। কালো কালির বলপয়েন্ট কলম ব্যবহার করতে হবে। এক সিভি সব চাকরির ক্ষেত্রে দিবেন না। চাকরির পোস্ট অনুযায়ী সিভির ক্যরিয়ার অবজেক্ট পরিবর্তন করুন। চাকরিদাতা আপনার কাছে কোন বিষয়ের পারদর্শিতা চাচ্ছে, সেই বিষয় মাথায় রেখে সিভি তৈরী করুন।
যদি ইমেইল এর মাধ্যমে সিভি পাঠাতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে সিভির সাথে কভার লেটার যুক্ত করতে হবে। আপনি কেন তাদের চাকরির জন্য যোগ্য, কেন আবেদন করেছেন এবং তাদের প্রচারকৃত কোন বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করছেন তা সংক্ষিপ্ত আকারে লিখে কভার লেটার তৈরী হবে।
যাইহোক, এই ছিল সহজে সিভি তৈরি করার উপায় নিয়ে আজকের লেখা। আগামীতে হয়তো ক্যারিয়ার বিষয়ক কোনও নতুন লেখা নিয়ে হাজির হবো আপনাদের সামনে। আর যদি এত কিছু নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সিভি তৈরি করতে চান, তবে এই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারেন অনলাইনে সিভি তৈরির ৮টি ওয়েবসাইট এর উপর। আবার, একদম ছেড়ে দেয়া নয়, মূলত এই ওয়েবসাইটগুলো ব্যবহার করে আপনি অনলাইনেই স্মার্ট সিভি তৈরি করতে পারেন।
SOYEB says
ধন্যবাদ, সিভি তৈরি করার উপর খুব ভাল একটি লেখা উপহার দেয়ার জন্যে। সিভিতে কি কি থাকা উচিৎ আর কি কি থাকা উচিৎ নয়, সর্বোপরি সিভিকে কিভাবে আকর্ষণীয় করা যায়, তার উপরে আর্টিকেলটি বেশ কাজের।
সাজেদা রহমান সেতু says
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে Soyeb.