আইসক্রিম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে মানুষের মাঝে নানান রকম কথা বলাবলি হয়ে থাকে। আইসক্রিমের ভালো-মন্দ সম্পর্কে মানুষ কথা বলে। কিন্তু আইসক্রিম দেখলে জিভে লালা আসে না এমন মানুষ খুব কম দেখতে পাওয়া যায়। আইসক্রিম বিক্রেতারা আইসক্রিম খাওয়ার নানা উপকারিতা প্রচার করেন।
প্রচণ্ড গরমে বা শীতে যখনই আপনি আইসক্রিম খাবেন, আপনি পাবেন নির্ভেজাল আনন্দ এবং মজা। তাই তো, শিশু-বৃদ্ধ-যুবক কেউই আইসক্রিম খাওয়ার লোভ সামলাতে পারে না। আইসক্রিম খাওয়া বর্তমান দুনিয়ায় ফ্যাশন হয়ে গেছে। যে লোক আইসক্রিম খায় না, তাকে সবাই সেকেলে লোক বলে রসিকতা করতে পিছপা হয় না। ভদ্র সমাজের হাবভাব রক্ষা করার জন্য হলেও মানুষ আইসক্রিম খায়। তবে, যে যে-কারণেই খাক না কেন, আইসক্রিমের কিছু উপকারিতা রয়েছে।
তবে, আমার মতে আইসক্রিমসহ যে কোনো মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার পরিমিত মাত্রা সম্পর্কে সচেতন থাকা দরকার। আইসক্রিমের ভক্ত, আইসক্রিমও খাদ্য-পুষ্টিবিদরা আইসক্রিম খাওয়ার নানান উপকারিতার কথা জানিয়েছেন। সেখান থেকে প্রধান ৮টি উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
আইসক্রিম খাওয়ার উপকারিতা
আইসক্রিমে থাকা ভিটামিন এবং মিনারেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা
আইসক্রিম তৈরিতে ব্যবহার করা হয় দুধ, দুধের ননি বা ক্রিম। এ-সব উপকরণে থাকে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন এ ও ডি, রিবোফ্লাভিনসহ অনেক খণিজ পদার্থ। এ-সব উপকরণ দেহে শক্তি দেয়, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং দেহের বিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে।
আইসক্রিম দেহ-মনকে চাঙ্গা বা উদ্দীপ্ত করে
আইসক্রিম খাওয়ার উপকারিতা বিষয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তবে আইসক্রিমে থাকা ভিটামিন ও খণিজ উপাদান দেহ-মনকে চাঙ্গা বা উদ্দীপ্ত করে বলে শোনা যায়। এ-সব উপকরণ দেহে ডোপামিন (Dopamine ) নামক কেমিক্যাল বাড়িয়ে দেয় এবং ফলে ব্রেনের অলসতা দূর হয়ে ব্রেনকে সজাগ ও শাণিত করে।
জাপানের রাজধানী টোকিওতে অবস্থিত “ কিওরিন বিশ্ববিদ্যালয় ( Kyorin University in Tokio )” পরিচালিত একটি গবেষণা থেকে যানা যায় যে, সকালে আইসক্রিম খাওয়া লোকেরা ব্রেনের দিক থেকে বেশি কর্মক্ষম থাকে। আর সকালে আইসক্রিম না খেয়ে কেবল এক গ্লাস শীতল পানি খাওয়া লোকেদের ব্রেন কিছুটা নিস্ক্রীয় থাকে। তাই বলে যে আইসক্রিম খেতেই হবে এমন নয়। ব্রেন পাওয়ার বা স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কিছু বৈজ্ঞানিক উপায় রয়েছে যা ব্যবহার করে আপনি আপনার নিস্ক্রিয় ব্রেনকে সক্রিয় করতে পারেন।
আইসক্রিম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
গাঁজানো খাবার সম্পর্কে আপনি কেমন ধারণা রাখেন? প্রচার আছে আইসক্রিমে থাকা গাঁজানো দুধ এবং গাঁজানো খাবার দেহের পরিপাকতন্ত্র ও শ্বাসতন্ত্র প্রদাহ প্রতিরোধ করে। আর পরিপাকতন্ত্র ও শ্বাসতন্ত্র সুস্থ্য থাকলে দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। সুতরাং আইসক্রিম বিষয়ে আপনার আগের ধারণা এবং এই লেখা পড়ে ধারণার মধ্যে কি বিরোধ তৈরী হচ্ছে?
মেডিকেল সায়েন্সের তথ্য মতে, আইসক্রিম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এরপরও আপনার যদি বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, তবে আইসক্রিম না খেয়ে খেতে পারেন এমন ৭টি খাবার যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় অত্যন্ত কার্য্যকরভাবে।
মেজাজ ভালো রাখবেন তো আইসক্রিম খান
আপনি মন ভালো করা গানের কথা শুনেছেন কি? আইসক্রিমকেও সে রকম গানের মতো ভাবা হয়।আইসক্রিমকে অনেকে বলে থাকেন মন বা মুড ভালো রাখার যাদুমন্ত্র। আমাদের দেহের সেরাটোনিন হরমোন আমাদেরকে খোশ মেজাজে রাখে।
বলা হয় যে, আইসক্রিম মানব দেহে সেরাটোনিন হরমোন উৎ্পাদনে সাহায্য করে। এই ব্যাপারে আইসক্রিমের এমন গুণ আছে যে কিছু পেশাদার চিকিৎসকগণ লোকদেরকে সাময়িক মন-মরা অবস্থায় শীতকালে হাতে একটু বরফ খণ্ড রাখতে বলেন মন-মেজাজ পুনরায় ভালো করার আশ্চর্য ওষুধ হিসেবে।
আইসক্রিম খেয়ে ওজন কমাতে চেষ্টা করতে পারেন
আইসক্রিম খাওয়ার উপকারিতা যা শোনা যায় তা লিখে শেষ করা কষ্টের ব্যাপার। আইসক্রিম ওজন কমাতে সাহায্য করে। আইসক্রিমের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম ওজন কমায়। আপনি কি ভাবছেন যে, আপনি যা পড়ছেন তা সঠিক নয়?
এ বি সি নিউজ-এর একটি আর্টিকেল অনুযায়ী মহিলাদের প্রতিদিন এক চামচ (আইসক্রিম স্কুপার) ও পুরুষদের দেড় চামচ কম ফ্যাটের আইসক্রিম খাওয়ালে তারা ২৬% বেশি ওজন কমাতে পারে এ ধরণের আইসক্রিম না খাওয়া লোকদের চেয়ে।
আইসক্রিম আমাদের দাঁত ও হাড় মজবুত করে
আমাদের দাঁত ও হাড়ের ৯৯%ই ক্যালসিয়াম। আর ক্যালসিয়াম আমাদের দেহে তৈরী হয় না। ফলে ক্যালসিয়াম আমাদের খাবারের সাথে গ্রহণ করতে হয়। এই ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত ও হাড় শক্তিশালি করে। আইসক্রিম খেয়ে আমরা এই ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ কতে পারি।
আইসক্রিম খেলে আপনার সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে
লো ফ্যাট দুগ্ধজাত আইসক্রিম আপনার গর্ভধারণ সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে। আর হাই ফ্যাট দুগ্ধজাত আইসক্রিম আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ায়। কারণ, হাই ফ্যাট দুগ্ধজাত আইসক্রিম আপনার সন্তান জন্মদানের হরমোনকে উর্বর করে তোলে। একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, হাই ফ্যাট দুগ্ধজাত আইসক্রিম দিনে এক থেকে দুইবার যে-সব মহিলা খেয়েছেন, তাঁদের ডিম্বোস্ফোটন সমস্যা ২৭% কম থাকে।
আইসক্রিম মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
ক্যালসিয়ামের অভাব মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের একটি কারণ মনে করা হয়। কারণ ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগীদের দেহে প্রায়ই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা যায়। আপনি যদি মহিলা হন এবং আপনার দেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকে, তবে দেরী না করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এর সাথে আপনি আপনার খাবারের তালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ আইসক্রিম রাখুন। কারণ, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ আইসক্রিম ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
আইসক্রিম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে পরিশেষে বলা যায়, যে কোনো ভালো খাবারই প্রয়োজনের বেশী খাওয়া ঠিক না। আইসক্রিম খাওয়ার ব্যাপারেও এই কথা মনে রাখা উচিৎ। অন্য সব খাবারের যেমন কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে, আইসক্রিমেরও তেমনি কিছু কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। যার মধ্যে আছে মুটিয়ে যাওয়া, উচ্চ ব্লাড সুগার এবং মস্তিষ্কের জড়তা অন্যতম।
এই পোস্টটি লেখা হয়েছে আইসক্রিম সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা শেয়ার করার জন্য। পোস্টটি পড়ে আপনি এই পেজের নিচের বক্সে আপনার মূল্যবান মতামত পাঠকদের জানাতে পারেন। এছাড়া, আপনি ইচ্ছা করলে ফেইসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই পোস্টটি শেয়ার করে সকলকে আইসক্রিমের উপকারিতা জানাতে পারেন।
Leave a Reply