বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়া যে কোন দেশের নিজস্ব শিক্ষা ব্যবস্থার অনুমোদিত একটি আকর্ষণীয় বিষয়। পৃথিবীর সব দেশের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার সুযোগ দিয়ে থাকে। অতি প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ শিক্ষার জন্য নিজ দেশের মায়া ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বিদেশি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুযোগ দিয়ে গৌরব বোধ করে থাকে।
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার ব্যবস্থা ও পরিবেশ আন্তর্জাতিক মানের না হলে সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে পারে না। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াতে সক্ষম হয়, তাহলে ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক উন্নত মানের শিক্ষার পরিবেশ আছে বলে ধরা হয়।
তাই বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী থাকা যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি গর্বের বিষয়। আবার, যোগ্য ছাত্র-ছাত্রীরা বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে পারে। তাই, বিদেশে পড়া-শুনা করাও যে কোনো ছাত্র-ছাত্রীর জন্য আনন্দের ও গর্বের বিষয়। শুধু তাই নয়, দেশের পাশাপাশি বিদেশে রয়েছে এমন কিছু উচ্চতর ডিগ্রি যা একজন ব্যক্তিকে বিত্তশালী করে তোলে।
নামকরা ও মানসম্পন্ন আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ আনন্দের সাথে বিদেশে স্কলারশিপ দিয়ে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ার সুযোগ করে দেয়। একদিকে ঐ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিতি পায়, আবার দেশি-বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীর সংমিশ্রণে ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নতি করে।
কিন্তু সব দেশে পড়ার খরচ সমান না। যেমন, এমন ১০টি দেশ রয়েছে যেগুলোতে বিনা খরচে কিংবা অল্প খরচে পড়াশুনা করা যায়। অন্যান্য দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার বিষয় মাথায় রেখেই ঐ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিদেশে স্কলারশিপ দিয়ে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় উৎসাহিত করে। তবে, সেক্ষেত্রে, ছাত্র-ছাত্রীদের কিছু অধিকার রয়েছে, যেগুলো বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগে কিংবা যাওয়ার পরে অবশ্যই জানা দরকার।
বিদেশে স্কলারশিপ – আপনার অধিকার
বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে লেখাপড়া করতে চাইলে আপনাকে বিদেশের ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদির সাথে খাপ খাওয়াতে হবে। এই সব বিষয় মাথায় রেখে আপনাকে আগেই কিছু বিষয় জানতে হবে। এ-সব বিষয়ে আপনার সঠিক ধারণা থাকলে বিদেশে লেখাপড়ার সময়টা আপনি উপভোগ করতে পারবেন এবং এর ফলে এই সময়টা আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হয়ে উঠতে পারে।
বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে আপনার যে সব বিষয় জানা থাকলে আপনার বিদেশে লেখাপড়ার জীবনটা সহজ হতে পারে তার কয়েকটি নীচে আলোচনা করা হলো-
বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে আপনার পছন্দের দেশটি ঠিক করে নিন
আপনি যে বিষয়ে পড়তে আগ্রহী সে সম্পর্কে ভালোভাবে ভেবে-চিন্তে নিন। কোন দেশ আপনাকে কি কি সুযোগ-সুবিধা দেবে এবং আপনার সামর্থ ও খরচ সম্পর্কে ভাবুন। এরপর ঠিক করে নিন আপনার পছন্দনীয় বিষয়ে কোন দেশে পড়বেন। এবার সেখানকার ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিন। শিক্ষার মান, পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো নানা বিষয় জেনে নিন।
একজন শিক্ষা-পরামর্শকের সাহায্য নিন
শিক্ষা-পরামর্শক আপনাকে ভালো সাহায্য করতে পারেন। তারা আপনার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই, ভর্তি প্রক্রিয়া, একজন ছাত্রের জন্য শিক্ষা লোন, শিক্ষ প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া, বৃত্তির জন্য সাহায্য করাসহ নানা কাজে তাদের সাহায্য আপনার কাজে লাগবে।
এজন্য একজন শিক্ষা-পরামর্শকের কাছে সাহায্য নিতে পারেন। যারা স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে লেখাপড়া করছে তাদের সাহায্য সহযোগিতা আপনি চাইতে পারেন। তারা আপনাকে অনেক বিষয় জানিয়ে আপনার বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়ার রাস্তা দেখিয়ে দিতে পারেন।
বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের স্বাস্থ্যবীমা
বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে গেলে যে কোন ছাত্র-ছাত্রীকে তার আপনজন ছেড়ে চলে যেতে হয়। বাবা-মাসহ আপনজনেরা তার স্বাস্থ্যসহ নানা বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকেন। বিশ্বের কিছু দেশ বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে স্বল্প খরচে যথেষ্ঠ স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করে থাকে।
বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা Overseas Students Health Cover-এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার সাহায্য গ্রহণ করতে পারে। বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের এই স্বাস্থ্যসেবা সব দেশে যদিও সমান না, তবু যে-দেশেই যান না কেন, আপনার স্বাস্থ্য-সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কাজেই, যে-দেশে যাচ্ছেন সে দেশের স্বাস্থ্য-সেবার এ ব্যাপারে ভালভাবে খোঁজ নিন।
আপনার ভিসার শর্তগুলো দেখে নিন
বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে আপনার স্টুডেন্ট ভিসা (student visa) লাগবে আর পূর্ব অনুমতি-পত্র ছাড়া আপনি ছাত্র/শিক্ষা ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। আবার অস্ট্রেলিয়াসহ কমনওয়েলথ দেশগুলোতে পড়তে আপনার কোর্সটি CRICOS-এর অধীন তালিকাভূক্ত থাকতে হবে। অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ড স্কলারশিপ ২০২১ এর অন্তর্ভূক্ত। আপনি চাইলে, এই স্কলারশিপের জন্যে আবেদন করতে পারেন।
যাইহোক, অস্ট্রেলিয়া যান আর অন্য দেশেই যান, আপনাকে আপনার ভিসার শর্তগুলো ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। আপনার ভিসার শর্ত মেনে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে আপনি পার্ট-টাইম জব করতে পারেন এবং দিনে কতো ঘণ্টা পার্ট-টাইম জব করতে পারবেন তা ভিসার শর্ত থেকে জানা যাবে।
আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সহায়ক আইন
আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীদের সাহায্যের জন্য প্রায় সকল দেশে প্রয়োজনীয় আইন রয়েছে। স্কলারশিপ পেপার, ভিসা, ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া, শ্রম অধিকার আইন ইত্যাদিতে আপনার প্রয়োজনীয় আইনসহ সকল তথ্য পাবেন। প্রয়োজনে আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটের সাহায্য নিতে পারেন।
আবাসিক সুযোগ-সুবিধা
বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে থাকা-খাওয়ার জায়গা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো দরকার নেই। প্রত্যেক দেশে ভাড়াটিয়া ও বাড়ির মালিকদের জন্য বাসা ভাড়ার চুক্তি, বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ, টুকিটাকি মেরামত ইত্যাদির জন্য আইনী সুযোগ রয়েছে।
বিদেশে শিক্ষাকালীন কাজের সুযোগ
বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়ার সময় আপনি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমান সময়ের জন্য পার্ট-টাইম কাজ করার সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন। এখান থেকে আপনি কিছু নিয়ম মেনে ইনকাম করতে পারেন। .
কমিউনিটি আইনী সহায়তা
“বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা সেবা (the Education Services for Overseas Students – ESOS)” সংগঠন থেকে আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীরা সহযোগিতা পেয়ে থাকে। গৃহশিক্ষা সহায়তা, ওয়ার্ক ভিসা তথ্যসহ যাবতীয় সাহায্য বিভিন্ন এন জি ও থেকেও পাওয়া যায়।
বীমা গ্রহণঃ
ভ্রমণবীমা, স্বাস্থ্যবীমাসহ অন্যান্য বীমা গ্রহণ করার সময় জেনে নিন বীমা প্রতিষ্ঠান বিদেশীদের জন্য কি কি সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে।
নতুন সমাজের সামাজিক রীতিনীতি
আপনি বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাওয়ার আগেই সেই দেশের সামাজিক প্রথা, শিষ্টাচার, ড্রাইভিং ও মাদক আইন জেনে নিন। সামাজিক প্রথা ভালো-মন্দ যা-ই হোক কঠোরভাবে মানার চেষ্টা করবেন। বিদেশি হিসেবে আপনার অতি ক্ষুদ্র ভুলও আপনাকে বড় ঝামেলায় ফেলে দিতে পারে।
ব্যাংকে টাকা-পয়সার লেন-দেন
আপনি আপনার কাছাকাছি ব্যাংকে কথা বলে টাকা লেনদেন ও নতুন ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যাপার বুঝে নিন।
বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে গিয়ে নতুন দেশের নিয়ম-আইন স্মরণ করে চলবেন। মনে রাখবেন, আপনি ভাষা যতো ভালোই জানেন না কেনো, নতুন দেশে ভাষা নিয়ে কিছু সমস্যা থাকবেই। নতুন দেশের জরুরী সেবা – ফায়ারসার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশ ইদ্যাদি সম্পর্কে জেনে রাখুন।
আপনার পরিচয়পত্র, ফোন নম্বর, ঠিকানা ইত্যাদি সবসময় সাথে যত্ন করে রাখবেন। যে কোনো প্রয়োজনে নিজ দেশের দূতাবাসের সাহায্য নিন। নিয়ম-কানুন যা-ই থাকুক না কেনো জীবনকে শিক্ষার পাশাপাশি উপভোগের সুযোগ পাবেন।
বিদেশে পড়তে যান এবং এই আর্টিকেলের কথা ভালো লাগলে এই পেজের ইনবক্সে কমেণ্ট করে প্রয়োজনে আমাদের পাঠকদের জানাতে পারেন। আর যদি মনে করেন এখানে হেল্প পাওয়ার মতো কিছু আছে, তাহলে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে আপনার বন্ধুবান্ধবব্দের জানাতে পারেন।
Leave a Reply