আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের তৃতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় দেশ। অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কথা আসলেই এমন কিছু শব্দ আসে যেগুলো অস্ট্রেলিয়ার এডুকেশনকে মর্যাদা দিয়েছে। শব্দগুলো হল উদ্ভাবন, আধুনিক প্রযুক্তি, গুণগতমান, বৈচিত্র্য এবং শ্রেষ্ঠত্ব। অর্থাৎ, অস্ট্রেলিয়ার যে কোন ইউনিভার্সিটিতে আপনি এই গুণগুলো পাবেন।
আমরা জানি, অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশুনা করাটা কতটা ব্যয়বহুল হতে পারে। তার উপর, বাইরের দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে এ ব্যয়টা আরো বেশি। কারণ, তাদেরকে একদিকে যেমন ভার্সিটির টিউশন ফি দিতে হয়, অন্যদিকে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থার জন্যে ব্যয় করতে হয়। তবে, আনন্দের খবর হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার কিছু অনলাইন ইউনিভার্সিটি যেগুলোতে আপনি দেশে থেকেই পড়াশুনা করতে পারেন। নিশ্চয়ই এটা বুঝতে পারছেন যে, দেশে থেকে পড়ার চেয়ে সরাসরি সেখানে গিয়ে পড়ার মধ্যে প্রচুর পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সেখানকার খরচ।
না, আপনাকে খরচ নিয়ে ভাবতে হবে না, খরচ ছাড়াই কিভাবে অস্ট্রেলিয়ায় যাবেন ও সেখানকার ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবেন, সে-সব নিয়েই আজ কথা হবে। জেনে রাখুন, অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার জন্যে বিভিন্ন ফি কমানোর প্রচুর বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। বলতে গেলে, বিনা খরচেই অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশুনা করার উপায় আছে। আর এর মাঝে সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে স্কলারশিপ বা বৃত্তি।
বৃত্তির জন্যে অস্ট্রেলিয়া অনেক ভাল। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটিগুলো আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে প্রতি বছর প্রচুর বৃত্তি অফার করে। বৃত্তিগুলো সাধারণত ডিপার্টমেন্ট বেইজড্ বা কোর্স বেইজড্ হয়ে থাকে। বৃত্তি ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগে পড়াশুনার জন্যে ফি’র ক্ষেত্রে আলাদা ছাড় থাকে। উদাহরণস্বরূপ, এমন কিছু বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেগুলোতে আপনার পরিবারের কোনও সদস্য আগে থেকেই অর্ধ্যায়নরত থাকলে, আপনি ২৫% পর্যন্ত এমনিতেই ছাড় পাবেন, তার উপর বৃত্তির ব্যবস্থা তো রয়েছেই।
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটিগুলো শুধু বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে বৃত্তিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সে দেশের সরকারের পক্ষ বিদেশীদের জন্যে রয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে বিনামূল্যে বিমানের টিকেটের ব্যবস্থা।
শিক্ষার্থীদের জন্যে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভিসা পাওয়া অনেক সহজ। এমনকি, ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশুনার পাশাপাশি চাকরি করতে পারে, অস্ট্রেলিয়ান সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে অনুমতি রয়েছে।
যাইহোক, আসুন জানা যাক কিভাবে অস্ট্রেলিয়ায় বিনা খরচে পড়াশুনা করবেন।
অস্ট্রেলিয়ায় বিনা খরচে পড়াশুনা করার উপায়
অস্ট্রেলিয়ায় বিনা খরচে পড়াশুনার অনেক উপায় রয়েছে। এর মাঝে সবচেয়ে সহজ ও ভাল উপায় হচ্ছে স্কলারশিপ। এ বিষয়টি নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা হবে। অন্যান্য উপায়ের মধ্যে রয়েছে পার্ট টাইম জব যা বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে উন্মুক্ত।
অস্ট্রেলিয়ান স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে যা যা লাগবে
এটা অনেকটাই নির্ভর করে আপনি যে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবেন, সেই ইউনিভার্সিটির নিজস্ব নিয়ম-কানুনের উপর। তবে, জানা আবশ্যক যে বেশিরভাগ স্কলারশিপ ছাত্র-ছাত্রীদের একাডেমিক মেধার ভিত্তিতে দেয়া হয়।
একাডেমিক পেপার: আপনি যদি স্নাতক শিক্ষার্থী হন, তবে আপনার পূর্ববর্তী শিক্ষা, আপনার রেজাল্ট এবং উচ্চ বিদ্যালয়ে বা কলেজে আপনি যে রেজাল্ট করেছেন, সে সম্পর্কে আপনাকে অবশ্যই বিশদ তথ্য সরবরাহ করতে হবে। অর্থাৎ, প্রয়োজনীয় সকল কাগজ-পত্র জমা দিতে হবে।
ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা: ইংরেজি ভাষার প্রয়োজনীয়তাও বাধ্যতামূলক। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারী বৃত্তি আপনাকে এ থেকে অব্যাহতি দেবে যদি আপনি প্রমাণ করতে পারেন যে আপনার আগের শিক্ষাটি ইংরেজিতে পড়ানো হয়েছিল। অর্থাৎ, আপনি ইংলিশ মিডিয়ামের স্টুডেন্ট ছিলেন। ইংরাজী ভাষার দক্ষতার পরীক্ষাও দিতে হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে IELTS, TOEFL, CAE, CPE ইত্যাদি। তবে, অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ ইউনিভার্সিটিই IELTS নিয়ে থাকে। আর উত্তীর্ণের জন্যে প্রয়োজনীয় স্কোর একেক ইউনিভার্সিটিতে একেক রকম।
নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট: যেহেতু এই বৃত্তিগুলি কেবলমাত্র আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য এবং কিছু ক্ষেত্রে সেগুলি কেবলমাত্র নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকদের জন্য, আপনার নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে। আর এর জন্যে আপনাকে নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। আবার কিছু ক্ষেত্রে, আপনার পাসপোর্টই যথেষ্ট হতে পারে।
কিভাবে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করবেন?
ইউনিভার্সিটি এবং স্কলারশিপের ধরণের উপর নির্ভর করছে আবেদন করার নিয়ম। তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে একই রকম হলেও, অল্প কিছু ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে, এনরোলমেন্ট বা তালিকাভুক্তির আবেদন এবং স্কলারশিপ বা বৃত্তির আবেদন একই।
তবে, সাধারণত আপনাকে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে যে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে চাইছেন, সে ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটে দেয়া আবেদনের নিয়ম-কানুন ভাল করে পড়ে নিন। এরপর, সাবধানতা ও সতর্কতার সঙ্গে সেগুলো ফলো করুন। একই সাথে, যে স্কলারশিপের জন্যে আবেদন করছেন, সেটির তথ্য ওয়েবসাইটের যে পেজে রয়েছে, সেটিও ভাল করে পড়ুন। প্রতিটি স্কলারশিপেরই গাইডলাইন দেয়া থাকে, সেটি সতর্কতার সঙ্গে পড়ুন।
বিশেষ করে, ভাল করে পড়ে দেখুন যে, বৃত্তির জন্যে আপনাকে কি কি কাগজ-পত্র জমা দিতে বলেছে। আর যদি আবেদন প্রক্রিয়াটি অনলাইনে হয় (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনলাইন), তবে গুরুত্ব সহকারে ফরম পূরন করুন, প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র অ্যাটাস্ট করুন।
সরকারী বৃত্তির ক্ষেত্রে, আপনি অবশ্যই কোন বিশ্ববিদ্যালয়টি পড়তে চান তা অবশ্যই বেছে নিতে হবে এবং যে বিষয়ে পড়তে চান, সেটিও উল্লেখ করতে হবে। আবার এমন কিছু সরকারি বৃত্তি রয়েছে, যেগুলো দিয়ে আপনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়তে পারবেন। সেক্ষেত্রে, তাদের কোনও স্বীকৃতি পত্রের প্রয়োজন হয় না। কারণ, তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সাথে অংশীদারি হয়, তবে আপনার সেমিস্টার অধ্যয়ন শুরু করতে হবে, যার জন্য বৃত্তি দেওয়া হয়। তাই অবশ্যই সবকিছু পরিষ্কার হতে হবে।
প্রাথমিক যাছাইয়ের পর অনেক সময় পরবর্তী প্রক্রিয়া হিসেবে ইন্টারভিউতে অংশ নিতে হতে পারে। সুতরাং, প্রস্তুত থাকতে হবে। তবে, ভয়ের কিছু নেই। কারণ, ইন্টারভিউ খুব একটা কঠিন হয় না।
আরেকটা কথা, আপনি কিন্তু যত খুশি ততগুলো স্কলারশিপের জন্যেই আবেদন করতে পারবেন। এতে, অস্ট্রেলিয়ার সরকার কিংবা এডুকেশন বোর্ডের পক্ষ থেকে কোন বাধা নেই। তবে, প্রশ্ন হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায় কি কি স্কলারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে আর আপনি কোনগুলোর জন্যে আবেদন করবেন। চিন্তার কিছু অস্ট্রেলিয়ার সেরা কিছু সরকারি স্কলারশিপ নিয়ে আসছে আমাদের পরবর্তী লেখা। চোখ রাখুন আমাদের এডু-এইড বিভাগে।
Leave a Reply