ল্যাপটপ হোক কিংবা মোবাইল ইউজার, জিপ ফাইল শব্দটির সাথে কমবেশি সবাই পরিচিত। এসব ফাইলগুলোর শেষে .zip (ডট জিপ) লেখা থাকে। নতুনরা অনেক সময়ই হিমশিম খেয়ে যায়- এটা আবার কী? আমি নিজেও এই অবস্থায় পড়েছি।
আবার অনেক পুরাতন ইউজার জিপ ফাইলের ব্যবহার জানেন, কিন্তু জিপ ফাইল মানে কী, কেন এর প্রয়োজন সে-সব জানেন না। তাই, নতুন-পুরাতন সকলের জন্যেই জিপ ফাইলের পূর্নাঙ্গ পরিচয় ও সার্বিক ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা থাকছে আজকের পোস্টে।
জিপ ফাইল অর্থ
জিপ শব্দটি একটি সংকোচিত শব্দ (এক্রোনিম) যার পূর্ণরূপ হচ্ছে জোন ইম্প্রুভমেন্ট প্ল্যান (zone improvement plan)। এটি ছিল মূলত আমেরিকার পোস্টাল এরিয়ার একটি প্ল্যান। এর সাহায্যে পোস্ট অফিসগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়েছিল। আর জিপ ফাইলের উদ্ভাবক হলেন ফিল কাটয নামক এক আমেরিকান ভদ্রলোক। তিনি ১৯৮৯ সালে এটি উদ্ভাবন করেন এবং সে বছরই এটি মার্কেটে ছাড়েন। কিন্তু তিনি এর নাম জিপ ফাইল রাখলেন কেন? কারণ, এই ফাইলের মাধ্যমেও জোন ইমপ্রুভ করা হয়েছে। কীভাবে, সেটা বলছি যথাস্থানে।
জিপ ফাইল মূলত কমপ্রেসড ডাটার একটি প্রকার। কমপ্রেসড ডাটা হল অল্প জায়গায় অনেক ফাইল ঢুকিয়ে রাখা। এগুলোকে আর্কাইভ ফাইলও বলা হয়। যেমন, আমরা সবাই .mp4 এর সাথে পরিচিত। ডট এমপি ফোর (.mp4) ভিডিও আমরা সবাই দেখি। এটি একটি কমপ্রেসড ডাটা, এর ভিতর অডিও, ভিডিও, কখনো কখনো টেক্সটও থাকে। তো একটি ফাইলের ভিতর অনেক রকম তথ্যের সমাহার, একেই বলে কমপ্রেসড ডাটা। আমাদের আজকের টপিক জিপ ফাইলও কমপ্রেসড ডাটার একটি প্রকার।
জিপ ফাইলের উপযোগিতা
আমরা ডাটা রাখার জন্য একটি ফোল্ডার তৈরি করি। সেই ফোল্ডারের ভিতর অনেক ফাইল রাখি। ফোল্ডার কখনো সেন্ড, আপলোড কিংবা ডাউনলোড করা যায় না। আপনি কোনো ফোল্ডার মেইলে সেন্ড করতে চাইলে সেটা পারবেন না। বরং, ফোল্ডারে রাখা ফাইলগুলো একটি একটি করে সেন্ড করতে হবে। কারণ, ফোল্ডার হচ্ছে একটি ডিরেকটরি। সহজে বললে নানারকম তথ্য রাখার একটি স্থান। ভেতরের তথ্যগুলো ট্রান্সফার করা যায়। কিন্তু স্থান ট্রান্সফার করা যায় না।
সহজ উদাহরণ দিলে- আমরা দোকান থেকে পণ্য কিনি, দোকান হচ্ছে সে-সব পণ্য রাখার প্লেস। সচরাচর আমাদের এলাকার দোকান কিনি না। অবশ্য দোকান বিক্রি হলে এটা আর প্লেস থাকে না, পণ্য হয়ে যায়।
এক্সাক্টলি এই জিনিসটাই ঘটে জিপ ফাইলের ক্ষেত্রে। যখন আপনি কোনো ফোল্ডারকে জিপ করবেন, সেটি আর ফোল্ডার থাকবে না, বরং ফাইলের মত আচরণ করবে। এখন একে মেইলে সেন্ড করতে পারবেন, আপলোড-ডাউনলোড সবই করতে পারবেন ফাইলের মত।
জিপ ফাইল কেন ব্যবহার করা হয়?
জিপ ফাইলের বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। তন্মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হচ্ছে ভাইরাস আক্রমণ প্রতিরোধ করা, ডাটা ব্যাকআপ রাখা, ডাটা এনক্রিপ্ট করা ইত্যাদি। যেকোন ফাইল জিপ করে রাখলে এতে ভাইরাস আক্রমণ করতে পারে না। তাই, সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, বিশেষত সফটওয়্যার জিপ করে রাখা হয়।
তাছাড়া, অনেক সময় প্রয়োজনীয় ফাইলগুলো ব্যাকআপ রাখতে হয়। তখন জিপ করার মাধ্যমে ফাইলের সাইজ অনেক কমিয়ে অল্প জায়গায় সেগুলো স্টোর করা যায়। এজন্যই মূলত জিপকে জোন ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান বলা হয়। কারণ, এর দ্বারা অল্প জায়গায় প্রচুর তথ্য রাখা যায়। এই কাজটা মূলত বাইনারি কোডের মাধ্যমে হয়ে থাকে। সেটা একটু এডভান্স লেভেলের, তাই আজকে সেটা বাদ দিলাম।
ডাটা এনক্রিপ্ট করার জন্য জিপ একটি ভাল পদ্ধতি। এনক্রিপ্ট মানে হচ্ছে আপনার স্পর্শকাতর কোন ফাইল যেন অন্য কেউ আপনার অগোচরে পড়তে না পারে, সেজন্য ডাটাগুলো সাংকেতিক কোড আকারে রাখা। এই কোড ভেঙ্গে ডাটাগুলো আগের রূপে ফিরিয়ে আনাকে বলা হয় ডিক্রিপ্ট। তো আপনি জিপ করলে সেগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় ডিক্রিপ্ট করা ছাড়া কেউ উদ্ধার করতে পারবে না।
zip বনাম rar
rar হচ্ছে ডাটা কম্প্রেস করার আরেকটি পদ্ধতি। জিপের মতই। রাশিয়ান ইঞ্জিনিয়ার রোশাল এটি উদ্ভাবন করেন। এর পূর্ণরূপ হচ্ছে রোশাল আর্কাইভ (Roshal Archive)। কথা হল এ দুটোর মাঝে পার্থক্য কী? rar ফাইল একটু উন্নত এনক্রিপশন মেথড ইউজ করে। কিন্তু এর প্রব্লেম হচ্ছে এটি ডিক্রিপ্ট করার জন্য আলাদা সফটওয়্যার লাগে। পক্ষান্তরে, ১৯৯৮ থেকে উইন্ডোজে জিপ ব্যবহার শুরু হয়। বিল্ট ইন দেওয়াই থাকে, তাই আলাদা কোনো সফটওয়্যারের দ্বারস্থ হতে হয় না।
অ্যান্ড্রয়েড ও উইন্ডোজে জিপ ফাইল আনজিপ করার পদ্ধতি
যদিও এটি কোনো টিউটোরিয়াল না, কিন্তু আপনি প্রবন্ধটি ধৈর্য্যসহ পড়ার কারণে আপনাকে বলে দেওয়া উচিৎ কিভাবে জিপ ফাইল আনজিপ করবেন। যদি জেনে না থাকেন আরকি। উইন্ডোজে আপনি জাস্ট জিপ ফাইলটি সিলেক্ট করে তার উপর মাউসের রাইট বাটন ক্লিক করবেন, দেখবেন (extract) এক্সট্রাক্ট অপশন আসবে। সেখানে ক্লিক করলেই ফাইলটি আনজিপ হয়ে যাবে। আপনি এখন এটি ইউজ করতে পারবেন।
অ্যান্ড্রয়েডে আপনার মোবাইলে যদি ইএস ফাইল এক্সপ্লোরার (ES file explorer) থেকে থাকে, তো সেখানেও শুধু জিপ ফাইলটির উপর প্রেস করুন। দেখুন, নিচে এক্সট্রাক্ট অপশন আসবে। আনজিপ ফাইলটা কোন ফোল্ডারে বা কোথায় রাখতে চান সেটা ঠিক করে দিলেই সেখানে ফাইলটি আনজিপ হয়ে যাবে। আর যদি আপনার মোবাইলে ইএস ফাইল এক্সপ্লোরার না থাকে, তবে আজকেই ডাউনলোড করে নিন। অনেক কাজের কাজি এই অ্যাপস। যে-সব অ্যাপস ছাড়া আপনার অ্যান্ড্রয়েড লাইফ রঙহীন, তন্মধ্যে এটি একটি।
জিপ ফাইল এর পরিচিতি ও এর ব্যবহার আমি যথাসম্ভব সহজ ভাষায় বুঝানোর চেষ্টা করেছি। যেন নবীন ইউজাররা, যারা মোবাইল কম্পিউটারের টার্মগুলোর সাথে পরিচিত না, সহজেই বুঝতে পারে। মূলত তাদের জন্যই লেখাটি, তবে প্রবীন ইউজার হলেও আশা করি আপনি কিছু তথ্য হলেও জেনেছেন। হৈচৈ বাংলার সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
SOYEB says
জিপ ফাইল করাপ্টেড হয়ে গেলে ডাটাগুলো পূনরুদ্ধার করার উপায় আছে কি?