গ্রাফিক্স কার্ড শব্দটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত গেমার আর ভিডিও এডিটরদের নিকট। সিপিউ ছাড়া যেমন কম্পিউটার কল্পনা করা যায় না, তেমনি গ্রাফিক্স বা ভিডিও কার্ড ছাড়া মনিটরের ছবি কল্পণা করা যায় না। গ্রাফিক্স শব্দের মধ্যে রয়েছে এর পরিচয়।
গ্রাফিক্স কার্ড আসলে কি? এটি কিভাবে কাজ করে? এ ধরণের প্রশ্ন যদি আপনার মনে আসে, তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাফিক্স কার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে আজকের এই লেখায়।
প্রথমে বলে নেই, বই কিংবা গতানুগতিকভাবে নয়, বরং বাস্তব জীবনের উদাহরণের মাধ্যমে প্রযুক্তির জটিল বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করাটা আমার অধিক পছন্দ। তাই, এই লেখাটি একদম সহজভাবে উদাহরণ সহকারে আলোচনার চেষ্টা করা হবে। আর আপনি যদি কম দামে ভাল গ্রাফিক্স কার্ড কেনার কথা ভাবেন, তাহলে এই লেখাটি পড়ে নিতে পারেন।
গ্রাফিক্স কার্ড কি?
গ্রাফিক্স কার্ড সাধারণত গ্রাফিক্স অ্যাডাপ্টর, গ্রাফিক্স কন্ট্রোলার, গ্রাফিক্স এক্সেলেটর বা গ্রাফিক্স বোর্ড নামেও পরিচিত। টেকনোপিডিয়ার দেয়া তথ্য মতে, গ্রাফিক্স কার্ড হল কম্পিউটিং ডিভাইসের মধ্যে থাকা এমন একটি ডিসপ্লে অ্যাডাপ্টর যা ছবির মধ্যে স্বচ্ছতা, সঠিক রঙ এবং সামগ্রিক গ্রাফিকাল তথ্য প্রদর্শন করতে সক্ষম।
গ্রাফিক্স কার্ড ছাড়া আপনার পিসির মনিটরে কিছু আসবে না। গ্রাফিক্স কার্ড হল কম্পিউটারের এমন একটি কম্পোনেন্ট, যা কম্পিউটার ও মনিটরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। VGA, DVI বা HDMI পোর্ট থেকে ক্যাবলের মাধ্যমে মনিটরে লাইন যায়। গ্রাফিক্স কার্ড কম্পিউটারের বাইনারি কোডকে ডিজিটাল কোডে রূপান্তর করে। তারপর, মনিটরকে নির্দেশ করে কি ধরণের ছবি বা ভিডিও দেখাবে।
গ্রাফিক্স কার্ড ইমেজ প্রসেসিং, থ্রিডি ইমেজ রেন্ডারিং এবং ভিডিও গেমের মত কাজে স্মুথ ছবি প্রদান করতে সক্ষম। আর এ-সব কাজ করার জন্য গ্রাফিক্স কার্ডের মধ্যে রয়েছে নিজস্ব প্রসেসর ও র্যাম।
এখন অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, আমার পিসিতে তো গ্রাফিক্স কার্ড লাগাইনি, তাহলে আমি ছবি দেখি কি করে! আসলে আপনার পিসিতে বিল্ট ইন গ্রাফিক্স কার্ড রয়েছে। বিল্ট ইন গ্রাফিক্স কার্ড দিয়ে আপনি সাধারণ কাজগুলো করে নিতে পারবেন। কিন্তু, হাই গ্রাফিক্সের গেম কিংবা ভিডিও এডিট করতে পারবেন না। কেননা, এসব কাজ আপনার বিল্ট ইন গ্রাফিক্স কার্ড প্রসেস করতে পারবে না। গ্রাফিক্স কার্ডের কাজের পদ্ধতি জানার পর গ্রাফিক্স কার্ড সম্পর্কে আপনার ধারণা আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে।
গ্রাফিক্স কার্ড কিভাবে কাজ করে?
মনিটরে আপনি যে ছবিগুলো দেখেন, তা হল মিলিয়ন মিলিয়ন পিক্সেলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দু দিয়ে তৈরি। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ছোটবেলায় নিশ্চয়ই পাজল খেলেছিলেন! এই খেলাটা মূলত, এলোমেলো ছবির অংশগুলোকে সাজিয়ে, পরে একটি পূর্নাঙ্গ ছবি তৈরি করা। পিক্সেলের বিষয়টি, এখানে পাজলে থাকা ছবির অংশগুলোর মত। মনিটরে এ-রকম অসংখ্য পিক্সেল থাকে। এ-সব পিক্সেলের উপর বিভিন্ন রঙের আলো পড়ে এবং তারপর সেই বিভিন্ন রঙের আলোর সমন্বয়ে তৈরি হয় ছবি।
কম্পিউটারে একটি ইমেজ বা ছবি তৈরি করার জন্য কোথায় কি রঙ হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু কম্পিউটারতো এতো রঙ টং কিছু বোঝে না, সে শুধু বোঝে ০ আর ১। ০ আর ১ কে আমরা বাইনারি নামে চিনি। তো এই বাইনারি ডাটাকে ট্রান্সলেট করে আমাদের দেখার উপযুক্ত ছবি তৈরি করে গ্রাফিক্স কার্ড।
বাইনারি ডাটা থেকে ইমেজ তৈরি করা বেশ জটিল প্রক্রিয়া। একটি থ্রিডি ইমেজ তৈরি করার জন্য গ্রাফিক্স কার্ড প্রথমে ওয়্যারফ্রেম তৈরি করে। তারপর, এটি পিক্সেলগুলো পূরণ করে। পিক্সেলগুলোতে আলো, টেক্সটচার এবং রঙ যোগ করে। দ্রুত কাজ করার জন্য কম্পিউটারকে প্রতি সেকেন্ডে ষাট বার এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
আপনার কম্পিউটারের সাথে, একটি আর্ট ডিপার্টমেন্টের কথা চিন্তা করুন। যখন কোন মানুষ আপনার প্রতিষ্ঠানের নিকট কোন আর্ট চায় তখন আপনি কি করনে? নিশ্চয়ই অনুরোধটি আর্ট ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়ে দেন। আর্ট ডিপার্টমেন্ট সিদ্ধান্ত নেয়, কিভাবে ছবি বা আর্ট তৈরি করতে হবে। তারপর তা বাধাই করতে হবে। তারপর চূড়ান্ত কাজ শেষে, তারা গ্রাহকের নিকট তা প্রেরণ করে।
গ্রাফিক্স কার্ড একই নীতি বরাবর কাজ করে। সফটওয়্যার সিপিইউর মাধ্যমে গ্রাফিক্স কার্ডের নিকট তথ্য পাঠায়। ইমেজ তথা ছবি তৈরির জন্য গ্রাফিক্স কার্ড কিভাবে পর্দায় পিক্সেল ব্যবহার করতে হয়, তা নির্ধারণ করে। তারপর, এই তথ্য একটি ক্যাবলের (তারের) মাধ্যমে মনিটরে পাঠায়।
গ্রাফিক্স কার্ড চারটি প্রধান উপাদান ব্যবহার করে এই কাজটি করে। যথা:
- ডাটা ও পাওয়ারের জন্য মাদারবোর্ড সংযোগ। অতিরিক্ত হিসেবে জেনে নিতে পারেন মাদারবোর্ড কি ও কিভাবে কাজ করে।
- মনিটরের প্রতিটি পিক্সেল দিয়ে কি করা যায়, তা নির্ধারণ করার জন্য প্রসেসর। বাড়তি পাওনা হিসেবে প্রসেসর কি আর কিভাবে কাজ করে তা জেনে রাখতে পারেন।
- প্রতিটি পিক্সেলে অস্থায়ীভাবে ছবি ধরে রাখার জন্য র্যাম।
- একটি মনিটর সংযোগ, যাতে ফলাফল ডিসপ্লে হয়।
গ্রাফিক্স কার্ডে যা যা থাকে
জিপিউ
জিপিউ হল গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট। এটা গ্রাফিক্স কার্ডের প্রধান অংশ। সিপিউতে যদিও ২ থেকে ১৬ পর্যন্ত কোর থাকে। কিন্তু জিপিউতে এর পরিমাণ ১০০ থেকে ১,০০০ পর্যন্ত। গ্রাফিক্স কার্ডে মূল কাজ এখানে সম্পন্ন হয়।
মেমরি
গ্রাফিক্স কার্ডে মেমরি থাকে। এর আরেক নাম ভিডিও মেমরি। গ্রাফিক্স কার্ডের মেমরির উল্লেখ যোগ্য বিষয় DDR যার অর্থ ডাবল ডাটা রেট। বর্তমানে প্রায় ৫ ধরণের DDR দেখা যায়। যথা:
- DDR
- DDR2
- GDDR3
- GDDR3
- GDDR5
গ্রাফিক্স কার্ড কত দ্রুত ডাটা আদান প্রদান করে তা নির্দেশ করে এই DDR। DDR যত বেশি হবে, ডাটা ততো দ্রুত আদান প্রদান হবে।
বায়োস
মাদারবোর্ডে যেমন বায়োস থাকে, তেমনি গ্রাফিক্স কার্ডেও বায়োস থাকে। বায়োসে গ্রাফিক্স কার্ড সেটিং সেভ করা থাকে। যেমন, ভোল্টেজ, ফ্যানের স্পিড, মেমরি ইত্যাদি। গেমাররা এখান থেকে সিপিউর মত অভারক্লক করে স্পিড ও পারফরমেন্স বৃদ্ধি করতে পারে।
আউটপুট
জিপিউতে কাজ সম্পন্ন করার পর তা মনিটরে পাঠানোর কাজ করে আউটপুট। এই আউটপুট বিভিন্ন ইন্টারফেসের হয়ে থাকে। ইন্টারফেসের পার্থক্য ভেদে এর পারফরমেন্সর পার্থক্য রয়েছে। বর্তমানে তিনটি জনপ্রিয় আউটপুট ইন্টারফেস হল।
- HDMI
- DVI
- VGA
এছাড়া হিট সিঙ্ক, ফ্যান, পাওয়ার কানেক্টর সহ আরও অনেক কিছু গ্রাফিক্স কার্ডে থাকে।
শেষ কথা
এই ছিল গ্রাফিক্স কার্ড নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আপনি যদি আপনার পিসিতে আলাদা গ্রাফিক্স কার্ড লাগাতে চান। তাহলে অবশ্যই একটি ভাল মানের পাওয়ার সাপ্লাই লাগিয়ে নিবেন। অন্যথায় আপনার পিসি নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকবে।
Raj Rubel says
I Love Hoicoi Bangla Website.
ওমর ফারুক says
ধন্যবাদ
হুমায়ুন কবির says
ধন্যবাদ “হৈচৈ বাংলা”। গ্রাফিক্স কার্ড নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারলাম।