কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে প্রসেসর শব্দটি জড়িত। কেননা প্রসেসর ছাড়া কোন স্মার্টফোন কিংবা কম্পিউটার চলবে না। তাই, কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ এই অংশটি সম্পর্কে প্রত্যেকের ধারণা থাকা জরুরি।
প্রসেসর কম্পিউটারের মস্তিষ্ক। মানুষের মস্তিষ্ক যেমন সকল অঙ্গকে নির্দেশ দিয়ে কাজ করায়, কম্পিউটার ও স্মার্টফোনের প্রসেসরও একইভাবে কাজ করে। তবে, কম্পিউটারের প্রসেসর আর স্মার্টফোনের প্রসেসরের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। যাই হোক, আজকে আমরা এই প্রসেসর নিয়ে আলোচনা করবো।
প্রসেসর নিয়ে বই কিংবা ইন্টারনেটে কম বেশী সব জায়গায় লেখা আছে। তাই, আজকে আমি গতানুগতিকভাবে নয়, বরং বাস্তব জীবনের সাথে তুলনা করে প্রসেসর সম্পর্কে সহজভাবে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো। তার আগে প্রসেসরের দাম ও পরিচিতি জেনে নিতে পারেন। এতে সহজেই বুঝতে পারবেন কোন প্রসেসর ভাল আর আপনি ঠিক কোনটি কিনবেন?
প্রসেসর কি?
বই পুস্তকের ভাষায় প্রসেসর হল সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা CPU। কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ করার সকল কাজ এই যন্ত্রাংশটি করে থাকে। ১৯৭১ সালে ইন্টেল কোম্পানি ৪০০৪ নামে একটি মাইক্রো প্রসেসর বাজারজাত শুরু করে। এই প্রসেসরগুলো সিলিকনের উপর হাজার হাজার ট্রানজিস্টারের সমন্বয়ে তৈরি করা।
সময়ের সাথে সাথে প্রসেসর বিবর্তন হওয়া শুরু করে। বর্তমানে সুপার কম্পিউটারের জন্যেও প্রসেসর রয়েছে যা অনেক দ্রুত কাজ করতে সক্ষম। বর্তমানে কম্পিউটারের জন্যে জনপ্রিয় ২টি প্রসেসর প্রস্তুতকারী কোম্পানি হল যথাক্রমে:
- ইন্টেল
- এএমডি
আর স্মার্টফোনের জন্য-
- কোয়ালকম
- মিডিয়াটেক
প্রসেসর কিভাবে কাজ করে?
এবার আসুন জানা যাক প্রসেসর কিভাবে কাজ করে। বাস্তব একটি উদাহরণ দেই, ক্রিকেটের ব্যাটসম্যান যখন ব্যাট করার জন্য দাঁড়ায় এবং অপর ভাগ থেকে যখন দ্রুত গতিতে বল করা হয়, তখন ব্যাটসম্যান কিন্তু খুব দ্রুত ঠিক করে ফেলে যে, বলটা এখন কোন এঙ্গেলে কিভাবে খেলতে হবে। আর এই হিসাব নিকাশটা কিন্তু মস্তিষ্ক কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে করে ফেলে।
একইভাবে কম্পিউটারের সিপিউ এইভাবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হিসাব নিকাশ করে ফেলে। যেমন, এখন আপনি হৈচৈ বাংলার লেখাটি পড়তে পড়তে নিচে স্ক্রল করছেন আর এই যে মাউস কিংবা টাচ করে স্ক্রল করতে কম্পিউটার বা মোবাইলকে যে নির্দেশ দেয়া হল, সেই নির্দেশটা কিন্তু প্রসেসর পালন করেছে। আর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার ফলাফল আপনাকে দেখিয়ে দিয়েছে।
কম্পিউটারের কাজগুলোর এই নির্দেশ যায় ০ ও ১ এর মাধ্যমে। অর্থাৎ, ০ মানে বন্ধ আর ১ মানে হল চালু। আর এর প্রত্যেকটিকে ১ বিট হিসাবে ধরা হয়। কম্পিউটারকে যখন ০ নির্দেশ করা হয়, তখন প্রসেসরের কোটি কোটি ট্রানজিস্টারের কোন একটি বন্ধ হয়ে যায় আবার ১ দিলে চালু হয়ে যায়।
এই নির্দেশ কিন্তু আপনি মাউস কিংবা কিবোর্ড দিয়ে দিচ্ছেন। আর নির্দেশগুলো অনেক সময় বাক্য আকারে যায়। যেমন, আমরা মানুষেরা বলি, “যাও বাজার নিয়ে আসো”। অথচ কম্পিউটারকে এটা বোঝানোর উপায় হল ১০০১০০১১। যাই হোক, এ নিয়ে পরে অন্য কোন সময় আলোচনা করা যাবে। এবার চলুন জানা যাক, প্রসেসরের এই কাজগুলো সম্পাদন করার ধাপ ও প্রক্রিয়ার নাম সম্পর্কে।
কোর
কোর অনেকটা মানুষের হাতের মত। মানুষের হাত তো ২টা, এখন এই ২টা হাত দিয়ে যা কাজ করবে, এখন যদি ৪টা হয়, তাহলে তো আরও দ্রুত কাজ করতে পারবে। একইভাবে, কম্পিউটারের কোর এই কাজটি করে। যদিও মানুষের হাত সংখ্যা বাড়ানো যায় না, তবে কম্পিউটারের কোর সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায়। সাধারণত ৫ ধরনের কোর দেখা যায়। যথা:
- ডুয়েল কোর – ২ টি কোর
- কোয়াড কোর – ৪টি কোর
- হেক্সা কোর – ৬টি কোর
- অকটা কোর – ৮টি কোর
- ডেকা কোর – ১০টি কোর
কোর বৃদ্ধি পেলে আপনি একসাথে অনেকগুলো কাজ করতে পারবেন। যেমন, মিউজিক প্লেয়ারে গান চালু করে আপনি অনায়াসে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু, যদি ১টি কোর থাকে, তবে গান চালু করে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গেলে যে কোনো একটি বন্ধ হয়ে যাবে।
ক্লক স্পিড
প্রসেসরের বক্সে দেখবেন লিখা আছে 2.3 GHz বা 3.4 GHz অথবা অন্য কিছু। আসলে এই স্পিডটাই হল ক্লক স্পিড। প্রসেসর প্রতি সেকেন্ডে কতবার হিসাব নিকাশ করতে পারে, তার পরিমাণ এই ক্লক স্পিড দিয়ে চেক করা হয়। এটা প্রসেসরের স্পিড নির্দেশ করে। এটা যত বেশী হবে, আপনার কম্পিউটার তত দ্রুত রেসপন্স করতে পারবে।
ক্যাশ মেমোরি
কম্পিউটারের যে-সব কাজ বারবার করতে হয়, সে-সব কাজ এই ক্যাশ মেমোরিতে জমা রাখে। ক্যাশ মেমোরিতে জমা রাখার ফলে একই কাজ ২য় বার করতে গেলে দ্রুত হয়। সাধারণত ৮ এমবি পর্যন্ত ক্যাশ মেমোরি দেখা যায়।
FSB
প্রসেসরের সব তথ্য ক্যাশ মেমোরিতে থাকে না, অধিকাংশ তথ্য র্যামে থাকে। আর র্যামের সাথে প্রসেসর কত দ্রুত যোগাযোগ করতে পারছে, সেটা FSB দ্বারা বোঝা যায়। কিন্তু, বর্তমানের প্রসেসরগুলোতে এটার পরিবর্তে QPi ব্যবহার করা হয়।
32-bit আর 64-bit
পূর্বে আমরা আলোচনা করেছিলাম যে কম্পিউটার বাইনারি পদ্ধতিতে কাজ করে। যেখানে প্রতিটি বাইনারিকে বিট হিসাবে ডাকা হয়। আর এই বিটগুলো একসাথে কে কত বেশী সংখ্যায় ক্যালকুলেশন করতে পারে, সেটা নির্দেশ করে 32-bit আর 64-bit। স্বাভাবিকভাবে 64-bit দ্রুত হিসাব করতে পারে, তাই এটা ফাস্টও কাজ করবে।
শেষ কথা
এই ছিল প্রসেসর নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। আমরা চেষ্টা করেছি প্রসেসর কিভাবে কাজ করে তা বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে আলোচনা করার, যাতে করে আপনারা খুব সহজে বুঝতে পারেন। আশা করি প্রসেসর নিয়ে আপনারা নতুন কিছু জেনেছেন।
Leave a Reply