আপনি নিশ্চয়ই কম্পিউটার আবিস্কারক চার্লস ব্যাবেজ এর নাম শুনেছেন। যে কম্পিউটার দিয়ে আজ পৃথিবীর প্রায় সকল সাধারণ থেকে অসাধারণ, সহজ থেকে জটিল কাজ করা হয়, সে কম্পিউটারের কনসেপ্ট আসে যার মাথা থেকে তিনি চার্লস ব্যাবেজ। আসুন, আজ তার সম্পর্কে ১০টি অজানা তথ্য জানি।
অবশ্য তার আগে তিনি কে, সে সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা নিয়ে রাখলে মনে হয় মন্দ হয় না।
চার্লস ব্যাবেজ কে?
চার্লস ব্যাবেজ ১৭৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর লন্ডনে জন্ম নেয়া একজন গণিতবিধ, দার্শনিক, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং আবিস্কারক। তিনি ডিজিটাল প্রোগ্রামেবল কম্পিউটারের জনক। তিনিই প্রথম মেকানিক্যাল কম্পিউটার আবিস্কার করেন যা ধীরে ধীরে কমপ্লেক্স ইলেকট্রোনিক অগ্রগতির ফলে আধুনিক কম্পিউটার থেকে শুরু করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার পর্যন্ত রূপ লাভ করে। আসুন, তার সম্পর্কে কিছু অজানা বিষয় জানা যাক-
কম্পিউটার আবিস্কারক চার্লস ব্যাবেজ
১. কেউ জানে না চার্লস ব্যাবেজ কোথায় জন্ম গ্রহণ করেন
যদিও সবাই জানেন যে চার্লস ব্যাবেজ লন্ডনে জন্ম গ্রহণ করেন, কিন্তু কেউ-ই জানে না তিনি লন্ডনের ঠিক কোন জায়গায় জন্ম নেন। কেউ মনে করেন তিনি লন্ডনের মেলবোর্নে জন্ম গ্রহণ করেন, আবার কেউ মনে করেন সাউথওয়ার্কে জন্ম গ্রহণ করেন।
২. অসুস্থতার জন্যে চার্লস ব্যাবেজ স্কুলে পড়তে পারেননি
চার্লস ব্যাবেজের ছেলেবেলাটা একেবারেই খারাপভাবে কেটেছে। ছেলেবেলায় তিনি প্রায় সব সময়ই অসুস্থ থাকতেন। ৮ বছর বয়সে কান্ট্রি স্কুলে তাকে ভর্তি করানো হলেও দীর্ঘ দিনের গুরুতর জ্বরের কারণে ঠিক মতো উপস্থিত থাকতে না পারার কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে টিসি দিয়ে দেয়। এরপর আরো কয়েকটি স্কুলে তাকে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু তিনি মাসের প্রায় ৩০ দিনই অসুস্থ থাকতে। যারফলে, কোন স্কুলেই নিয়মিত ক্লাস করতে পারতেন না। পরবর্তীতে তাকে প্রাইভেট টিউটর রেখে বাড়িতেই পড়াশুনা করানো হয়।
৩. অল্প বয়সেই চার্লস ব্যাবেজ গণিতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন
চার্লস ব্যাবেজের বাবা ছিলেন একজন ব্যাংকার। গণিতের প্রতি ছেলের আগ্রহ দেখে তিনি তার জন্যে সবচেয়ে নামকরা গণিতের শিক্ষকদের উচ্চ বেতনে নিয়োগ দেন তার ছেলেকে বাসায় এসে প্রাইভেট পড়ানোর জন্যে। সেই সাথে বাবা তাকে গণিতের বই দিয়ে একটি লাইব্রেরী বানিয়ে দেন। আর আশ্চর্যের বিষয় যে চার্লস্ তার লাইব্রেরীর সব গণিতের বই-ই পড়ে শেষ করেন তার ছেলেবেলাতেই।
৪. কলেজের শিক্ষকদের কাছে চার্লস ব্যাবেজের শেখার কিছু ছিল না
কলেজে পড়াকালীণ চার্লস ব্যাবেজ উপলব্ধি করলেন যে, শিক্ষকদের কাছ থেকে তার কিছু শেখার নেই। ক্লাসে শিক্ষকরা যা পড়াতেন, তা তিনি আগেই শিখে ফেলেছেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেই কলেজে একটি ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটি গড়ে তোলেন যেখানে পরবর্তীতে প্রায় সব ছাত্র-ছাত্রীই জয়েন করে।
৫. অনেক সোসাইটির সদস্য ছিলেন তিনি
ক্যামব্রিজ ট্রিনিটি কলেজে পড়ার সময়ই ইংল্যান্ডের প্রায় সব কলেজেই ছড়িয়ে পড়ে চালর্স ব্যাবেজের নাম। ফলে, বিভিন্ন কলেজ থেকেই তিনি বিভিন্ন সোসাইটির সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ পান এবং সেগুলোতে জয়েন করেন।
৬. ধর্মীয় কারণে চার্লস ব্যাবেজে পিএইচডি ডিগ্রি পাননি
ক্যামব্রিজ ট্রিনিটি কলেজের পাঠ চুকানোর পর চার্লস ব্যাবেজ পিএইচডি ডিগ্রির জন্যে থিসিস জমা দেন। কিন্তু ক্যামব্রিজ কতৃপক্ষ তার থিসিস পেপারে সাইন করেনি। কারণ হিসেবে কলেজ কতৃপক্ষ তার থিসিসটিকে blasphemous বা ধর্মহীন হিসেবে উল্লেখ করে।
৭. অ্যাসট্রোনোমিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডন প্রতিষ্ঠা করেন চার্লস ব্যাবেজ।
৮. ডিফরেন্স নামে একটি অ্যাসট্রোনোমিক্যাল ক্যালকুলেট মেশিন তৈরি করেন চার্লস ব্যাবেজ।
৯. জীবনের অধিকাংশ সময়ই চার্লস ব্যাবেজ অভাব-অনটনে কাটিয়েছেন।
১০. মৃত্যুর পর চার্লস ব্যাবেজকে “ফাদার অব দ্যা কম্পিউটার” উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
এই ছিল কম্পিউটার আবিস্কারক চার্লস ব্যাবেজ সম্পর্কে ১০টি দারুণ তথ্য যেগুলোর সবটি আপনি হয়তো আগে থেকে জানতেন না।
Leave a Reply