বর্তমান সময়ে একজন মার্কেটারের সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং টুল সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। একটা পরিসংখ্যানের দিকে নজর দেয়া যাক, ২০১০ সালে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকারী সংখ্যা ছিল মাত্র ০.৯৭ বিলিয়ন আর ২০১৯ সালে সেই সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৩.৯৭ বিলিয়নে। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৩০% লোক ফেসবুক ব্যবহার করে। আর ফেসবুক সোশ্যাল মিডিয়ার একটি মাত্র অংশ, অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকারীর সংখ্যা যোগ করলে তো আরও বেশী হবে।
আপনি যদি একজন প্রফেশনাল মার্কেটার হয়ে থাকেন, তবে স্বাভাবিকভাবে আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের গুরুত্ব বোঝানোর প্রয়োজন নেই। কেননা শুধু ফেসবুকেই ৬০ মিলিয়ন সক্রিয় বিজনেস পেজ রয়েছে এবং বিশ্বের নামি দামি ৭৫% ব্রান্ড তাদের পোস্ট টাকা দিয়ে প্রমোট করে থাকে।
আপনি নিশ্চয়ই আগে থেকেই জানেন যে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি আর কেন করবেন। এবার জেনে রাখুন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের জন্য বেশ কিছু কৌশল এবং পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। আর সেই কৌশল এবং পদ্ধতির কাজগুলো আপনি খুব সহজেই করতে পারবেন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের টুলের মাধ্যমে।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং টুল
Sendible
Sendible অসাধারণ একটি মার্কেটিং টুল। যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়া সাইট শুধুমাত্র ফেসবুক নয় বরং ফেসবুকের পাশাপাশি আরও অসংখ্য সোশ্যাল মিডিয়া রয়েছে। আর এইসব সোশ্যাল মিডিয়া একসাথে ব্যবহার করতে পারবেন এই টুলের মাধ্যমে। অর্থাৎ এই টুলের মাধ্যমে আপনার সকল সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে পোস্ট, কমেন্ট, ম্যাসেজ, কি-ওয়ার্ড রিসার্চ সহ সব ধরণের মার্কেটিং কাজ করতে পারবেন।
যদিও এর মত আরও বেশ কিছু টুল রয়েছে যেমন: Agorapulse, Postplanner, Sproutsocial, Buffer ইত্যাদি। এখান থেকে আপনি যেটা ইচ্ছা সেটা ব্যবহার করতে পরবেন। কিন্তু ব্যবহার করার জন্য অবশ্যই অর্থ প্রদান করতে হবে। তবে আমার পরামর্শ হল প্রথমে ফ্রি ব্যবহার করে যদি ভাল লাগে, তবেই পরে টাকা দিয়ে ক্রয় করবেন, যদি প্রয়োজন ফিল করেন।
Google Trends
গুগল ট্রেন্ড সম্পূর্ণ ফ্রি একটি মার্কেটিং টুল। এর মাধ্যমে অনলাইনের ট্রেন্ডিং বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বর্তমানে বিশ্বের ভাইরাল বিষয়গুলি পর্যবেক্ষণ করতে এটি ব্যবহার করা হয়। এই মুহূর্তে সর্বাধিক জনপ্রিয় বিষয় আবিষ্কারের জন্য অধিকাংশ মার্কেটেরার এটি ব্যবহার করে।
আপনার কি-ওয়ার্ডগুলি ট্রেন্ডিং হচ্ছে কিনা এবং পূর্ববর্তী মাস এবং বছরের কি-ওয়ার্ড সাথে তুলনা ও পর্যবেক্ষণ করতে আপনি গুগল ট্রেন্ড ব্যবহার করতে পারেন।
Canva
মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে ইমেজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইমেজ এডিটিং, টেক্সট যোগ করা, সঠিক সাইজ নেয়াসহ অনেক কাজ করার জন্য অনলাইনে অনেক সফটওয়্যার পাওয়া যায়। কিন্তু সেসব সফটওয়্যারে কাজ করা বেশ ঝামেলা পূর্ণ এবং সময় সাপেক্ষ।
তবে মজার ব্যাপার হলো কোন ধরনের সফটওয়্যার ছাড়া শুধুমাত্র অনলাইনে আপনি ফটো এডিট, টেক্সট অ্যাড, সঠিক সাইজ নেয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করতে পারবেন Canva ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। ক্যানভার অধিকাংশ টুল সম্পূর্ণ ফ্রি।
Venngage
মার্কেটিংয়ের জন্য অধিকাংশ সময় ইনফোগ্রাফিক্স প্রয়োজন হয়। একজন মার্কেটারের হাতে অত অলস সময় নেই যে বসে বসে নিখুঁত ইনফোগ্রাফিক্স তৈরি করবে। আর এই নিখুঁতভাবে ইনফোগ্রাফিক্স তৈরি করার সুবিধা দিয়ে থাকে Venngage ওয়েবসাইট।
কয়েক হাজারের উপরের আইকন রয়েছে। এছাড়া আপনি আপনার ইচ্ছামত ছবি ও আইকন আপলোড করতে পারবেন। সম্পূর্ণ ড্রাগ এবং ড্রপ করে খুব সময়ের মধ্যে প্রফেশনাল মানের ইনফোগ্রাফিক্স তৈরি করতে পারবেন। ইনফোগ্রাফিক্স তৈরির পর সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে শেয়ার করতে পারবেন এই ওয়েবসাইট থেকে।
Unsplash
মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করার অন্যতম হাতিয়ার হলো ছবি। মার্কেটিংয়ের জন্য প্রতিদিন অসংখ্য ছবি আপলোড করতে হয়। সবগুলো ছবি টাকা দিয়ে কেনা বেশ কষ্টসাধ্য। হতাশ হওয়ার কিছু নেই Unsplash ওয়েবসাইট থেকে সম্পূর্ণ ফ্রিতে হাজার হাজার ছবি প্রতিদিন ডাউনলোড করতে পারবেন। এছাড়া কপিরাইট ফ্রি ছবির জন্যে সেরা ২০টি ওয়েবসাইট এর তালিকা দেখে নিতে পারেন।
Bit.ly
অনলাইনে প্রায় সবকিছুই ট্র্যাক করা হয়। আর একজন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটের হিসাবে তো আপনাকে ট্র্যাকিং করতেই হবে। আপনি কোন লিংক শেয়ার করলেন তো সেই লিংকটিতে কতজন মানুষ ক্লিক করছে সে সম্পর্কে অবশ্যই অবগত থাকা জরুরী। আর এই সহজ কাজটি করতে পারবেন আপনি Bit.ly ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
আপনার লিংকে কতজন ক্লিক করলো, কোথা থেকে ক্লিক করলো সব কিছুই জানতে পারবেন এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। আপনি অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে আপনার লিংকটি পেস্ট করলেই তাদের ওয়েবসাইট থেকে একটি শর্ট লিংক পাবেন। সেই লিংকটি আপনাকে শেয়ার করতে হবে। এই লিংকে ক্লিক করার সাথে সাথে আপনার কাঙ্ক্ষিত ওয়েবসাইটে চলে যাবেন। কিন্তু এই লিংকে ক্লিক করার ফলে আপনি তাদেরকে ট্র্যাক করতে পারবেন।
Video Maker
বর্তমান সময় মার্কেটিংয়ের সবচাইতে বড় টুল হচ্ছে ভিডিও মার্কেটিং। বিশ্বের সব বড় বড় কোম্পানি তাদের মার্কেটিংয়ের অর্ধেক অর্থ খরচ করে মার্কেটিং ভিডিও তৈরির পেছনে। আগে টিভিতে আমরা ভিডিও বিজ্ঞাপন দেখতাম আর বর্তমানে আমরা দেখি অনলাইনে। ভিডিওর প্রতি মানুষ কতটা আগ্রহী সেটা আমরা ইউটিউবের দিকে তাকালেই বুঝতে পারবো।
যাইহোক অনলাইনের বিভিন্ন ওয়েবসাইট আপনাকে অ্যানিমেশন কিংবা ভিডিও এডিটিং এর সুবিধা দিয়ে থাকে এর মধ্যে অন্যতম হলো:
IFTTT
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে সময় নষ্ট করার দিন শেষ। এখন আপনি একটা সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করবেন, অটোমেটিকলি সেটি অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট হয়ে যাবে। আর এই কাজটি করে দেবে IFTTT ওয়েবসাইট।
রেডিট কিংবা অন্য কোন ওয়েবসাইটে আপনাকে কেউ মেনশন করলে আপনি ইমেইল পেয়ে যাবেন। ফেসবুক বা টুইটারে পোস্ট করলে অটোমেটিক ইনস্টাগ্রামে পোস্ট হয়ে যাবে। এই ওয়েবসাইটে গেলে এরকম আরও অনেক সুবিধা পাবেন।
Buzzsumo
সোশ্যাল মিডিয়াতে এখন ভাইরাল কোন টপিক চলছে এ সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য Buzzsumo দারুণ একটি ওয়েবসাইট। শুধুমাত্র কয়েকটি কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আপনি জানতে পারবেন অডিয়েন্স কোন বিষয় ভালোবাসে, কোন ধরণের পোস্ট বেশি আগ্রহী এবং শেয়ার করে।
অধিকাংশ সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার ভুল কি-ওয়ার্ড নিয়ে কাজ করার কারণে কাজে ব্যর্থ হয়। কিন্তু আপনি যখন এইভাবে মানুষের চাহিদা মোতাবেক কাজ করবেন, তবে সফলতা আপনার হাতের মুঠোয় চলে আসবে।
Reply
Reply টুলের কাজ হল সকল সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে আসা ম্যাসেজ, কমেন্টের উত্তর প্রদান করা। এর মাধ্যমে আপনি একসাথে সকল সোশ্যাল মিডিয়ায়র অডিয়েন্সের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন। এর জন্য ভিন্ন ভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে লগইন করতে হবে না।
শেষ কথা
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং টুল নিয়ে এই ছিল আজকে আমাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা। এসব টুল ব্যবহার করে আপনি আপনার কাজের গতি বৃদ্ধি করতে পারবেন, পাশাপাশি হতে পারবেন একজন প্রফেশনাল সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার।
Leave a Reply