এক সময় বাংলাদেশে “ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যান” গেমের খুব প্রচারণা ছিল। চারিদিকে সবাই এটি নিয়ে মাতামাতি করছিল। কিন্তু পাবজি মোবাইল গেম প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে আর অন্য গেমের নাম শোনাই যায় না। সব গেমারের মুখেই শুধু পাবজি, সব গেমিং আড্ডার প্রসঙ্গই কেবল পাবজি।
কেন পাবজি এত জনপ্রিয়?
- পাবজি গেমের ‘ব্যাটাল রয়্যাল’ ধারণাটি গেমারদের কাছে নতুন। মাল্টি-প্লেয়ার গেমের ক্ষেত্রে এই কনসেপ্ট তাদেরকে সহজে আকৃষ্ট করেছে।
- কারেক্টার, ব্যাটাল গ্রাউন্ড ও গ্রাফিক্সের সমন্বয়ে রিয়েলিস্টিক গেম-প্লে গেমারদেরকে বাস্তবে গেম খেলার অভিজ্ঞতা দেয়ায় সবাই এটাতে আকৃষ্ট হয়েছে।
- পাবজি পুরোপুরি স্ট্র্যাটেজিক্যাল গেম যা প্লেয়ারদের ব্রেনে এক ধরণের কেমিক্যাল রিঅ্যাকশন ঘটায় এবং তাদেরকে প্ল্যান সাজাতে ব্যস্ত রাখে।
- অত্যাধুনিক অস্ত্রের সহজলভ্যতা এবং শত্রুর সঙ্গে এনগেজ হওয়ার আগেই রিলোড করার সুবিধা অনেককেই আকৃষ্ট করেছে।
- টান টান উত্তেজনা পাবজি খেলায় সবাইকে বুঁদ করে রাখে।
- স্পিড, প্রোটেকশন এবং কাভার নেয়ার মতো ডেসিয়ার কারের প্রাপ্যতা অনেকের ভাললাগায় পরিণত হয়েছে।
এগুলো ছাড়াও এই গেমের দ্রুত জনপ্রিয়তার পেছনে আরো অনেক কারণ রয়েছে। যে কেউ দ্রুত এ গেমটি খেলা শিখে নিতে পারে। আর নতুনদের জন্যে পাবজি টিপস্ তো রয়েছেই। কাজেই, দিন দিনই এই গেমের প্লেয়ার সংখ্যা বাড়ছে। যাইহোক, চলুন গেমটির কিছু অজানা বিষয় জানি।
পাবজি মোবাইল গেম : জানা-অজানা বিষয়
বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে মাল্টিপ্লেয়ার মুডে খেলা যায় বলে পাবজি খেলায় রয়েছে দারুণ মজা। অবসর সময় কাটানোর জন্যে অত্যন্ত অ্যাডিক্টিভ গেম এটি।
১. পাবজির স্রষ্টা
পাবজি গেমটি সম্পর্কে সবাই জানে। তবে আমরা যদি তাদের এই গেমটির স্রষ্টার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি, তাহলে খুব কম লোকই সেই ব্যাক্তি নাম বলতে সক্ষম হবে। সেই ব্যাক্তিটি হল ব্রেন্ডন গ্রিন। কোন গেম ডিজাইনার ছিলেন না ব্রেন্ডন গ্রিন। তিনি ছিলেন একজন আইরিশ ফটোগ্রাফার এবং ওয়েব ডেভেলপার।
২. পাবজি কিভাবে সৃষ্টি হল
পাবজি গেমের কনসেপ্ট মূলত ২০০০ সালে প্রকাশিত একটি জাপানি মুভি থেকে নেয়া। মুভিটির নাম ছিল ব্যাটেল রয়েল। এই মুভিতে কয়েকজনকে একটি আইল্যান্ডে ছেড়ে দেয়া হয়। আর তাদের বলা হয় একে অন্যকে মেরে ফেলতে। যে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে সেই কেবল বেঁচে থাকতে পারবে।
তারপর একই কনসেপ্ট নিয়ে আরো একটি মুভি বের হয় ২০১২ সালে। সেটি হল দি হাঙ্গার গেম। মুভিটি খুবই জনপ্রিয় হয়ে যায়। কিন্তু এই কনসেপ্ট নিয়ে কোন গেম ছিল না। তখন ব্রেন্ডন গ্রিনের এমন একটি গেম বানানোর ইচ্ছা হল। তারপর তার সাথে পরিচয় হল ব্লু হোলের গেম ডিজাইনার চ্যাং হ্যান কিমের। তারা দুইজন এবং ব্লু হোলের সদস্যরা মিলে তৈরি করে আমাদের সবার প্রিয় পাবজি।
৩. পাবজি কোম্পানি ও পাবজি প্লাটফর্ম
পাবজি গেমটি প্রকাশ করে পাবজি কর্পোরেশন, যা দক্ষিণ কোরিয়ার ভিডিওগেম কোম্পানি ব্লু হোলের একটি অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান। পরে টেনসেন্ট গেমস কোম্পানির সাহায্যে পাবজি কর্পোরেশন অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস প্লাটফর্মের জন্য পাবজি মোবাইল তৈরি করে ।
তারপর গেমটি বিভিন্ন কোম্পানির সাহায্যে সকল প্লাটফর্মের জন্য প্রকাশ করা হয়।পাবজির ৪টি প্লাটফর্মের জন্য তৈরি করা রয়েছে। সেগুলো হল- উইন্ডোজ, এক্সবক্স ওয়ান, মোবাইল ভার্সন এবং প্লে-স্টেশন ৪।
৪. পাবজি মোবাইল গেম রিলিজ ডেট
উইন্ডোজ: পাবজি প্রথম প্রকাশিত হয় উইন্ডোজের জন্য। ২৩ মার্চ, ২০১৭ সালে প্রথম বেটা ভার্সন প্রারম্ভিক অ্যাক্সেস হিসেবে প্রকাশিত হয়। তারপর ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭ ফুল ভার্সন হিসেবে সারা বিশ্বে প্রকাশিত হয়।
এক্সবক্স ওয়ান: এক্সবক্স ওয়ানের প্রারম্ভিক অ্যাক্সেস সংস্করণ ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়। অফিশিয়ালি প্রকাশিত হয় ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সালে।
মোবাইল ভার্সন (অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস): মোবাইল ভার্সন প্রারম্ভিক অ্যাক্সেস প্রকাশিত হয় ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ এবং বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত হয় ১৯ মার্চ, ২০১৮।
প্লেস্টেশন ৪: প্লেস্টেশন ৪ এ প্রকাশিত হয় ৭ ডিসেম্বর, ২০১৮।
পাবজি লাইট: পাবজি লাইট জানুয়ারি ২০১৯ এ প্রথম থাইল্যান্ডে প্রকাশিত হয়।
৫. পাবজি নামের রহস্য
আমাদের অনেকের কাছেই পাবজি নামটি অদ্ভুত লাগে। কিন্তু এর পেছনেও একটি কারণ রয়েছে। পাবজির ফুল ফর্ম হল ” প্লেয়ার আননোন ব্যাটেল গ্রাউন্ড” অথাৎ অপরিচিত খেলোয়াড়দের সাথে যুদ্ধ করা।
পাবজি গেমে আমরা শুধু নিজেকে অথবা নিজের দলের প্লেয়ারদের চিনি। কিন্তু বাকি যে ৯৯ অথবা ৯৬ জন প্লেয়ার থাকে, তাদের আমরা চিনি না। এই কনসেপ্ট থেকেই মূলত পাবজির নাম হয়েছে প্লেয়ার আননোন।
৬. পাবজির বিশ্ব রেকর্ড
পাবজি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই একের পর এক বিশ্ব রেকর্ড করেই চলেছে। ২০১৭ সালে ডিসেম্বরের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাবজি গেমটি এক দিনে ৩৫৮ জন প্লেয়ার ৩১০৮ বার খেলেছে। যা তখন প্রকাশ পাওয়া অন্যান্য গেমগুলোর থেকে অনেক বেশি।
এছাড়া পাবজি গেমটি এখন পর্যন্ত ৫০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। বিশেষ করে মোবাইল ভার্সন প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে পাবজি আরও জনপ্রিয় হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত পাবজি মোবাইল ১০০ মিলিয়নেরও বেশি ডাউনলোড হয়েছে। এখন পাবজিতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন অ্যাকটিভ ইউজার রয়েছে।
৭. “উইনার উইনার চিকেন ডিনার” এর আবিষ্কার
পাবজিতে আমরা সবাই চাই উইনার উইনার চিকেন ডিনার পেতে। কিন্তু আমরা খুব কম মানুষই জানি যে, চিকেন ডিনারের রহস্য কি। কেন এই নাম আসল পাবজিতে।
১৯৩০ এর দশকে অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময় লোকেরা প্রচুর জুয়া খেলতেন। আর যদি তারা জিততেন, তবে তারা রাতের মুরগির দিয়ে খাবার খেতেন। এইভাবে এই শব্দটি পাবজি গেমে আসে। তবে, মজার বিষয়টি হল, আমরা চিকেন ডিনারের জন্য জুয়া খেলি না। চিকেন ডিনার পাওয়ার জন্য আমরা একে অন্যের সাথে লড়াই করি।
৮. “ইরাঞ্জেল” নামকরণের কারণ
পাবজি মোবাইল গেমের মানচিত্রের “ইরাঞ্জেল” নামটিকি কল্পিত?অবশ্যই হ্যাঁ! তবে এর নামকরণের পিছনে একটি কারণ রয়েছে। নামটি ব্রেন্ডেন গ্রিনের মেয়ে ইরিনের নাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দেয়া হয়।
ইরিন এবং অ্যাঞ্জেল একত্রিত করে ইরাঞ্জেল নামটি তৈরি হয়। ইরাঞ্জেলের বিল্ডিংগুলো ১৯৫০ এর সোভিয়েট ইউনিয়নের বিল্ডিংগুলোর আদলে তৈরি হয়েছে।
৯. পোচিংকি নামটি কি আসল?
পাবজি গেমারদের কাছে পোচিংকি নামটি খুব পরিচিত। ইরাঞ্জেলে খেলেছেন, অথচ পোচিংকি নামেন নি, এমন প্লেয়ার হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন কি , এই নামটি কি সত্য হতে পারে? সত্যটি হল, নামটি আসল। রাশিয়াতে বেশ কয়েকটি জায়গা রয়েছে পোচিংকি নামে।
১০. সবচেয়ে মজার তথ্য
পাবজির প্রচারণার জন্য ব্লু হোল কোম্পানি কোন অর্থ ব্যয় করেনি। পাবজি নিজে নিজেই মানুষের কাছে প্রচার হয়ে গিয়েছে। রেকর্ড অনুসারে, পাবজি নির্মাতাদের মধ্যে ৫৫% ছিলেন কাউন্টার-স্ট্রাইক জিও প্লেয়ার।
পাবজি মোবাইল গেম খেলা যেমন মজার, তেমনি তৈরির কাহিনীও অনেক মজার। আশা করি, এই আর্টিকেলটি পড়ে পাবজি লাভাররা অনেক মজা পেয়েছেন। তবে পাবজি গেমটি আমাদের মজা দেয়ার সাথে সাথে কিছু ক্ষতিও করে। পাবজি খেলার ৭টি ক্ষতিকর দিক রয়েছে যা নতুন-পুরনো সব গেমারদেরই জেনে রাখা দরকার। তাহলে আজ এ পর্যন্তই। অন্যদিন অন্য কোন আর্টিকেলে পাবজির নতুন নতুন কিছু তথ্য ও টিপস নিয়ে থাকব আপনাদের সাথে।
Leave a Reply