ফ্যাশন ম্যাগাজিন না থাকলে, হোক সেটা অনলাইন বা অফলাইন (প্রিন্টেড কপি), আমরা কিভাবে জানতাম যে অ্যামেরিকার মেয়েরা এখন কোন স্টাইলের জামা-কাপড় পরিধান করছে? কিভাবে জানতাম অস্ট্রেলিয়ায় এখন কি ট্রেন্ড চলছে? কিভাবে বুঝতাম ইন্ডিয়ার ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রির নায়িকাদের চলতি ফ্যাশন কি?
আসলে কোন দেশের লাইফ স্টাইল কেমন, পোশাক-আশাকের ধরণ কি, সামাজিক চিন্তা-চেতনা, মানুষের ভাবনা, ইত্যাদি সবকিছুই আমরা জানতে পারি ফ্যাশন রিলেটেড ম্যাগাজিনের মাধ্যমে। গ্লোবাল ট্রেন্ড আমাদের জীবন-যাত্রার মান বদলায় আর সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ম্যাগাজিন।
ম্যাগাজিন আমাদের ভ্রমণের সঙ্গীও বটে, একাকী সময়গুলোকে উপভোগের উপায়। ধরুণ, আপনি একটি লং জার্ণিতে যাচ্ছেন, হতে পারে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম। যদি সেটা বিমানে হয়, তাহলে হয়তো অল্প সময়েই পৌঁছে যাবেন। তবু হাতে যদি একটা ম্যাগাজিন থাকে, সময়টা দারুণ উপভোগ্য হবে। আর যদি বাসে যান, তাহলে কী পরিমাণ বোরিং লাগবে ভেবেছেন! এই বোরনেসটা কাটিয়ে জার্নিটাকে উপভোগ করতে চাইলে আপনার হাতে থাকা চাই একটি ফ্যাশন বা লাইফ স্টাইল ম্যাগাজিন।
ফ্যাশন ম্যাগাজিন কি?
এমন একটি ম্যাগাজিন যা ফ্যাশনের প্রতি ডেডিকেটেড, ফ্যাশন বিষয়ক সব ধরণের খবরাখবর, প্রবন্ধ নিবন্ধ ছাপিয়ে থাকে, তাই ফ্যাশন ম্যাগাজিন। যে ম্যাগাজিন ফ্যাশন বিষয়ক ট্রেন্ড, বিশেষ করে বিশ্ব জুড়ে চলমান পোশাক ও প্রসাধনী এবং মানুষের লাইফ স্টাইলকে তুলে ধরে, তাকেই আমরা ফ্যাশন ম্যাগাজিন বলতে পারি।
ফ্যাশন ম্যাগাজিনে কি থাকে?
ফ্যাশন নিয়ে প্রকাশিত ম্যাগাজিনে জীবন-যাপন রিলেটেড প্রায় সবকিছুই থাকে। বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ড সম্পর্কে আর্টিকেল থাকে। যেমন, আমেরিকার বিখ্যাত ৫টি কসমেটিক ব্র্যান্ড, ফ্রান্সের সেরা ১০টি পারফিউম, ইত্যাদি। যাইহোক, ফ্যাশন ম্যাগাজিনে যা যা থাকে তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা-
- চলতি ফ্যাশন বিষয়ে বিভিন্ন আর্টিকেল
- ট্রেন্ডিং স্টাইল নিয়ে তারকাদের ছবি ও তথ্য
- বডি ফিটনেস ঠিক রাখার জন্যে প্রয়োজনীয় পরামর্শ
- পুরুষের স্বাস্থ্য সম্পর্কে নানা রকম লেখা
- মহিলাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক অনুচ্ছেদ
- ভ্রমন বিষয়ক তথ্য উপাত্ত
- ফ্রি সময় উপভোগের জন্যে বিনোদন
- মিডিয়া রিলেটেড খবরা-খবর
- হোম ডেকোরেটিং
- সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইত্যাদি
- বিশ্ব সেরা ফ্যাশন ম্যাগাজিন
বিশ্ব সেরা ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইল ম্যাগাজিন
বিশ্বের সব দেশেই কোন না কোন ম্যাগাজিন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে রয়েছে। আবার গ্লোবাল্লি অর্থাৎ আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় ম্যাগাজিনের সংখ্যাও নেহাৎতই কম নয়। এ তালিকটা বড়ই বটে। আর এ তালিকা থেকে বাছাই করে সেরা ১০টি ম্যাগাজিন নিয়ে আজকে আমাদের এই আয়োজন।
১. Elle
গোটা পৃথবিী জুড়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ফ্যাশন ম্যাগাজিন Elle। এটি শুধু ট্রেন্ডিং ফ্যাশনের দিকেই ফোকাস করে না, বরং মহিলাদের প্রকাশ্য ও গোপণ সমস্ত বিষয়ের উপর অনেক গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকে।
প্রায় ৭০ বছর ধরে এই ম্যাগাজিনের পাঠকরা ট্রেন্ডিং ক্লথিং, জুয়েলারী ও নানা রকম অ্যাক্সেসরিজের উপর অত্যন্ত কালারফুল ছবি পাচ্ছে। সেই সাথে পাচ্ছে চলতি ফ্যাশনের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ফ্যাশন রিলেটেড প্রয়োজনীয় আর্টিকেল ছাড়াও, এই ম্যাগাজিনটি স্বাস্থ্য, বিনোদন, নিউজ, রাজনীতি, ক্যারিয়ার অ্যাডভাইস ও নর-নারীর সম্পর্ক কাভার করে থাকে। অর্থাৎ, এই সকল বিষয়ের উপরে এই ম্যাগাজিনের প্রতিটি সংখ্যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখা প্রকাশ করা হয়।
ফ্যাশনের বৈচিত্র্য আর প্রয়োজনীয়তার কথা ভাবলে, Elle একটি মাস্ট-রিড পাব্লিকেশন। এই ফ্যাশন ম্যাগাজিনটি প্রকাশিত হয় যুক্তরাজ্য থেকে আর এর পাবলিকেশন রিলেটেড সকল কাজ পরিচালনা করেন ফ্রান্সের লাগারডিরি ক্লাসটার।
নর্থ অ্যামেরিকায় ম্যাগাজিনটি দেখভাল করছে কন্টিনেন্টাল মিডিয়া। ব্রাজিলে ম্যাগাজিনটির পরিচালনায় রয়েছে গ্রুপো এডিটোরা অ্যাব্রিল। আর্জেন্টিনায় এটির জন্যে রয়েছে গ্রুপো ক্লারিন। সিঙ্গাপুরে রয়েছে মিডিয়া কর্পোরেশন। সাইবেরিয়া ও ক্রোয়েশিয়ায় ম্যাগাজিন দেখাশুনা করছে এড্রিয়া মিডিয়া। তুর্কিতে আছে ডুগান বুর্ডা পাবলিকেশন। রোমানিয়ায় কাজ করছে রিঙ্গিয়ার। আর গ্লোবাল ব্র্যান্ড পরিচালনা করছেন রেন্ডল্প হাসর্টস্ ম্যাগাজিন গ্রুপের কর্ণধার ইউলিয়াম।
চায়নাসহ এশিয়ার কিছু কিছু দেশ এবং ইউরোপের প্রায় সকল দেশেই Elle ম্যাগাজিনের প্রকাশনা রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন হিসেবে এর হেড কোয়ার্টার রয়েছে প্যারিসে।
২. Vogue
বিশ্ব জনপ্রিয় ফ্যাশন ম্যাগাজিনের চার্টে সবসময়ই Vogue থাকে শীর্ষে। এটি ১৮৯২ সালে প্রথমে একটি সাপ্তাহিক নিউজপেপার হিসেবে বাজারে আসে। পরবর্তীতে এটি ধীরে ধীরে ব্রিটেনের জনপ্রিয় ফ্যাশন ম্যাগাজিনে পরিণত হয়। ১৯০৯ সালে কনডি নেস্ট পাবলিশার্স এটি কিনে নেয়। আর এর কন্টেন্টে কিছুটা পরিবর্তণ আনে। বিশেষ, করে ম্যাগাজিনটি তখন মহিলাদের উপর ফোকাস করতে শুরু করে। মহিলাদের যাবতীয় সমস্ত বিষয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ লেখা ও ছবি ছাপাতে শুরু করে।
১৯১৬ সালে আসে Vogue এর ইটালিয়ান ভার্সণ এবং সেটি শুধু ইটালিই নয়, বরং পৃথিবী ব্যাপী পরিচিতি পেয়ে যায়। বর্তমানে Vogue এর ২৩টি ইন্টারন্যাশনাল ভার্সণ রয়েছে অর্থাৎ ২৩টি দেশে এটি একযোগে প্রকাশিত হচ্ছে।
৩. Harper’s Bazaar
আমেরিকার প্রথম ফ্যাশন ম্যাগাজিন Harper’s Bazaar যা স্টাইল ও পেনাকির জন্যে বিশ্ব জুড়ে সমাদৃত। ১৮৬৭ সালে শুরু করা এই ম্যাগাজিন পার করে এসেছে দেড়’শ বছর এবং অর্জণ করেছে অনেক সাফল্য। নিউ ইয়র্কে অবস্থিত Hearst Communication এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই ম্যাগাজিন সবচেয়ে বেশি পড়ে মেয়েরা। এছাড়া, মডেল, ফটোগ্রাফার, রাইটার এবং সাধারণ মানুষসহ সবার কাছেই রয়েছে এর বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা।
Harper’s Bazaar এর ফাউন্ডিং এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিখ্যাত লেখক ও অনুবাদক Mary Louise Booth যিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ম্যাগাজিনের প্রধান এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে, Harper’s Bazaar এর এডিটর ইন চিপ হিসেবে আছেন Glendy Bailey যিনি ২০০১ সালে এটিতে জয়েন করেন।
৪. Marie Claire
১৯৩৭ সালে Marie Claire প্রথম ফ্রান্সে প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় ল্যাংগুয়েজ অর্থাৎ ইরেজী ভার্সণ নিয়ে এটি ইউনাইটেড কিংডম বা ইউকেতে প্রকাশিত হয়। আর বর্তমানে এটি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষায় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে।
Marie Claire শুধু মাত্র ফ্যাশন আর বিউটি রিলেটেড ইস্যুই কাভার করে না, বরং বিশ্ব জুড়ে মহিলাদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এটি নিয়মিত আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকে। এইক সাথে এই বিশ্ব নন্দিত ম্যাগাজিনটি মহিলা ও পুরুষ উভয়েরই হেলথ্ রিলেটেড নানা টপিক প্রকাশ করে থাকে। এছাড়াও ম্যাগাজিনটি ক্যারিয়ার অ্যাডভাইসও কাভার করে থাকে।
৫. W
সংস্কৃতি, ফ্যাশন, সেলেব্রিটি নিউজ, লাইফস্টাইলসহ আরো নানা বিষয় নিয়ে প্রকাশিত W আমেরিকার একটি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন। ১৯৭২ সালে Fairchild Publication এই ম্যাগাজিনটি প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে প্রিন্ট এবং অনলাইন দুই ভার্সণেই প্রকাশিত হচ্ছে নিয়মিত। তবে, এটির আর আগের মালিকানা নেই। ২০০০ সালে Conde Nast এটি কিনে নেন। আর চলতি বছরের মে মাসে Conde Nast এটি বিক্রি করে দেন Future Media Group এর কাছে।
এত হাত বদলের পরও কিন্তু ম্যাগাজিনটির জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি, বরং দিন দিনই এই ফ্যাশন ম্যাগাজিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
৬. Allure
প্রাথমিকভাবে Allure বিউটি, স্বাস্থ্য ও উইমেন হেলথ্ এর উপর ফোকাস করলেও, বর্তমানে এটির মূল ফোকাস হচ্ছে ফ্যাশনের দিকে। আমেরিকার জনপ্রিয় এই ম্যাগাজিনটি প্রতিষ্ঠা করেন Linda Wells ১৯৯১ সালে। অল্প কয় বছরের মাঝেই Allure আমেরিকার নারীদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় ওঠে আর ৫’শ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার নিয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
৭. L’Officiel
আন্তর্জাতিক হাই-এন্ড ফ্যাশন এবং লাক্সারি লাইফ স্টাইল ম্যাগাজিন হিসেবে ৯০ বছর ধরে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে রয়েছে এটি। প্যারিস বেইজড্ L’Officiel ম্যাগাজিনটি বর্তমানে বিশ্বের ২০টি দেশ থেকে একযোগে প্রকাশিত হয়। উল্লেখযোগ্য দেশগুলো হচ্ছে ফ্রান্স, ইটালি, রাশিয়া, চায়না, ব্রাজিল, সিঙ্গাপুর।
৮. Cosmopolitan
Cosmopolitan শব্দটির মানে International বা আন্তর্জাতিক। আর নামের সাথে দারুণ মিল রয়েছে এটির, কারণ এটি আন্তর্জাতিকভাবেই সমস্ত মডেলদের কাছে সমানভাবে সমাদৃত। এই ম্যাগাজিনটির প্রায় পুরোটাই জুড়ে রয়েছে মহিলাদের নানা ইস্যু নিয়ে ছবি, আর্টিকেল, মতামত, ইত্যাদি।
Cosmopolitan পৃথিবীর ৩৫টি দেশ থেকে ১১০টি ভাষায় একযোগে প্রকাশিত হচ্ছে। ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ম্যাগাজিনটি গ্লোবাল মিডিয়াকে অনেকখানিই নিয়ন্ত্রণ করছে।
৯. InStyle
যদিও মেয়েদের স্টাইলকে ফোকাস করাই InStyle এর ধর্ম, তবু এটি লাইফ স্টাইল এবং ফ্যাশনকেও গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এই ম্যাগাজিনটি এইসব সম্পাদনারই অংশ যেগুলো একই সঙ্গে হার্ড বা প্রিন্ট কপি এবং ব্লগ বা ডিজিটাল কপি বের করে থাকে।
শুরুতে InStyle এর সম্পাদনার দায়িত্বে ছিল Ariel Foxman আর বর্তমানে এটি পরিচালনা করছেন Laura Brown যিনি মাত্র কয়েক বছর আগে এখানে এসেছিলেন।
১০. Jalouse
এটি সদ্য প্রকাশিত মানে বাজারে এসেছে যে খুব বেশি দিন হয়নি অর্থাৎ অন্য ম্যাগাজিনের তুলনায় এর বয়স কম। তবে, জনপ্রিয়তা কম নয়। অন্যান্য অনেক ম্যাগাজিনের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত গতিতে জনপ্রিয়তা অর্জণ করে Jalouse নামের এই জোস্ ম্যাগাজিনটি।
Jalouse এর অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা পাওয়ার প্রধান কারণ এটি L’Officiel গ্রুপের একটি পাবলিকেশন।
বিশ্বের সেরা এই ফ্যাশন ম্যাগাজিনগুলো সম্পর্কে অল্প স্বল্প জেনে আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে আমাদের জানান। এগুলোর বাইরে যদি আপনার পছন্দের তালিকায় অন্য কোন ম্যাগাজিন থাকে, সেটাও আমাদের জানাতে পারেন।
এম. এম. নবী says
বিশ্ব ফ্যাশন জগৎ সম্পর্কে প্রধান বিষয়গুলো আপনার উল্লেখিত ম্যাগাজিনগুলো থেকে জানা যায়। আপনি সুন্দর ফোকাস করেছেন। আপানার লেখা প্রসংশার দাবিদার।