সবাই জানে ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকাতে পড়াশোনা করা খুবই ব্যায়বহুল। আমেরিকান ছাত্ররাই ইউনিভার্সিটিতে পড়তে গিয়ে ঋণের পাহাড় বানিয়ে ফেলে। কিন্তু তারপরও আমেরিকায় অল্প খরচে, এমনকি টিউশন ফি ছাড়াই পড়াশোনা করার কিছু সুযোগ ঠিকই রয়েছে। এই ফ্রিতে পড়ার সুযোগটা কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জন্যও প্রযোজ্য, অর্থাৎ বাংলাদেশের ছাত্ররাও এটি কাজে লাগাতে পারে।
এর জন্য আপনাকে সম্পূর্ণ খরচ বহন করে এমন একটা স্কলারশিপ যোগাড় করতে হবে। কিংবা বিনা খরচে পড়াশোনা করার সুযোগ আছে এমন একটা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে হবে। কাজটা কঠিন, কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই অসম্ভব কিছু নয়।
টিউশন ফি ছাড়াই পড়া যায় এমন দশটি ইউনিভার্সিটির নাম আমরা যোগাড় করেছি আপনারই জন্য। স্কলারশিপ না পেলেও এই ইউনিভার্সিটিগুলোতে ভর্তি হয়ে আপনার আমেরিকায় পড়ার স্বপ্ন সফল করতে পারেন আপনি। আপনাদের সুবিধার জন্য ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইটের লিঙ্কও যোগ করে দেয়া হল।
টিউশন ফি ছাড়াই পড়ুন আমেরিকায়
আমেরিকার ইউনিভার্সিটিগুলোতে আমাদের দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে পড়াশুনার সুযোগ নেয়ার মূল বাধা টিউশন ফি। আর এ বাধা পেরিয়ে আপনি যাতে আমেরিকায় গিয়ে পড়তে পারেন, সে জন্যেই আমাদের এ আয়োজন। আর আপনি যদি আমেরিকায় না গিয়ে দেশে থেকেই সেখানকার ইউনিভার্সিটিতে পড়তে চান, তবে অ্যামেরিকার এই ১০টি ইউনিভার্সিটি ঘুরে দেখতে পারেন যেগুলোতে আপনি অনলাইনে পড়াশুনা করতে পারবেন।
১। বেরেয়া কলেজ
১৮৮৫ সালে স্থাপিত কেন্টাকির এই প্রাইভেট কলেজটি মূলত লিবারেল আর্টসের উপর কোর্স অফার করে। এখানের প্রত্যেক ছাত্রের সম্পূর্ণ টিউশন খরচ সহ ২৫,০০০ ডলারের সমপরিমাণ স্কলারশিপ পাওয়ার সুযোগ আছে।
এছাড়া থাকা-খাওয়ার জন্য এখানে কাজ করার সুযোগ আছে। একে ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে “লেবার প্রোগ্রাম” বলা হয়। এই প্রোগ্রামের অধীনে আপনি সপ্তাহে দশ ঘন্টা কাজ করতে পারেন, এবং ৪,০০০ ডলার পর্যন্ত “লেবার গ্র্যান্ট” পেতে পারেন। কাজভেদে ঘন্টাপ্রতি বেতন তিন থেকে সাত ডলার হতে পারে।
২। এলিস লয়েড কলেজ
এই ইউনিভার্সিটিতে বিজনেস, হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট, ম্যানুফ্যাকচারিং ইত্যাদি সহ আরো অনেক বিষয়ের ওপর চার বছরের কোর্স করার সুযোগ আছে।
সপ্তাহে অন্তত দশ ঘন্টা কাজ করলে আপনি এখানে টিউশন ফি ছাড়াই পড়তে পারবেন। ফ্রি থাকার ব্যাবস্থার জন্য অন্তত পনেরো ঘন্টা কাজ করতে হবে। এভাবে পড়ার জন্য ৫৫০টি আসন বরাদ্দ করা আছে।
এই ইউনিভার্সিটির সব ছাত্র একটি ফ্রি ল্যাপটপ পায়। এছাড়াও এখানে স্কলারশিপ সহ অন্যান্য ফিনানশিয়াল সাহায্যের জন্য আবেদন করা যাবে। এই ইউনিভার্সিটিটি কেন্টাকির “পিপ্পা পাস” নামক জায়গায় অবস্থিত।
৩। ওয়েব ইনস্টিটিউট
নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডে অবস্থিত এই কলেজটি আমেরিকার প্রথম সারির কলেজগুলোর একটি। এটি অনেক পুরানো প্রতিষ্ঠানও বটে, ১৮৮৯ সালে এটি স্থাপিত হয়। এখানে মূলত মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ও নেভাল কনস্ট্রাকশন পড়ানো হয়, কাজেই একে খুবই স্পেশালাইজড একটি কলেজ বলতে হবে।
এখানে ছাত্রদের যে শুধু সম্পূর্ণ স্কলারশিপ সহ পুরো চার বছরের কোর্স করার সুযোগ আছে তাই নয়, কোর্স শেষ করে বেরিয়ে চাকরি পাওয়ার হার ১০০ পারসেন্ট।
৪। কলেজ অফ দা ওজারকস
মিসৌরিতে অবস্থিত এই কলেজটি হল একটি ক্রিশ্চিয়ান কলেজ, অর্থাৎ এটি খ্রিস্টীয় ধর্মবিশ্বাস ও মূল্যবোধ দ্বারা গভীরভাবে পরিচালিত। তাই বাংলাদেশের খ্রিস্টান ছাত্রদের জন্য কলেজ অফ দা ওজারকস একটা ভাল আইডিয়া হতে পারে। বিজনেস, শিক্ষা, ক্রিমিনাল সায়েন্স সহ অনেক ধরনের বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে এখানে।
প্রতি বছরই এই ইউনিভার্সিটি থেকে অন্তত ১,৪০০ জন ছাত্রকে স্কলারশিপ দেয়া হয়। তবে এখানে ফ্রি পড়ার জন্য সপ্তাহে কম করে হলেও ১৫ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। কখনো এর চেয়ে বেশিও কাজ করতে হতে পারে। মন্দ কি যদি কাজ করে টিউশন ফি ছাড়াই পড়াশোনা করা যায় এখানে।
৫। কারটিস ইন্সটিটিউট অফ মিউজিক
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এই স্কুলে শুধু সঙ্গীত বিষয়ে পড়াশোনা করা হয়। এটি ফিলাডেলফিয়ায় অবস্থিত একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ইন্সটিটিউট-এ সঙ্গীতের ওপর ব্যাচেলর ও মাস্টারস করার সুযোগ আছে। যদি এটি আপনার আগ্রহের বিষয় হয়ে থাকে এবং আমেরিকাতে গিয়ে সঙ্গীতের উপর উচ্চশিক্ষা নেয়ার ইচ্ছা আপনার থেকে থাকে, তবে আপনি ভর্তি হতে পারেন কারটিস ইন্সটিটিউট-এ।
তবে প্রতি বছর মাত্র ১৬৫ জন ছাত্রকে এই ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ছাত্রসংখ্যা কম হবার কারণে শিক্ষকরা খুব মনোযোগ দিয়ে ছাত্রদের শেখানোর সুযোগ পান। মেধাবী ছাত্ররা এখানে সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়ার সুযোগ পায়।
৬। সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক
এটি আমেরিকার সবচেয়ে বড় শহর কেন্দ্রিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেম। গোটা নিউ ইয়র্ক শহর জুড়ে এর ২৪টি ক্যাম্পাস আছে। এর মধ্যে কমিউনিটি কলেজ, সিনিয়র কলেজ, আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও পোস্টগ্রাজুয়েট কলেজ অন্তর্ভুক্ত আছে। এই সিস্টেমের অন্তর্ভুক্ত হবার ফলেই সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক-এর পরিচালনা ব্যাবস্থা খুবই উন্নত।
১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ইউনিভার্সিটির টিচার একাডেমিতে ভর্তি হওয়া প্রত্যেক ছাত্রই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারে। শুধু তাই নয়, পাস করার পরে নিউ ইয়র্কের স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগও পেতে পারেন আপনি।
৭। ফ্রাঙ্কলিন ডব্লিউ ওলিন কলেজ অফ এঞ্জিনিয়ারিং
বোস্টন থেকে ১৪ মাইল উত্তরে, ম্যাসাচুসেটসের নিডহ্যামে এই এই এঞ্জিনিয়ারিং কলেজটি অবস্থিত। এই ইউনিভার্সিটির বৈশিষ্ট্য হল এখানে ভর্তি হওয়া ছাত্রদের মধ্যে ৫০ পারসেন্টই স্কলারশিপ পেতে পারে। আপনিও হতে পারেন সেই সৌভাগ্যবানদের একজন। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ২০১৮ সালের জরিপ মতে, ওলিন এমন একটি কলেজ যা আপনাকে টাকা ফিরিয়ে দেয়।
ওলিন মেরিট ও স্কলারশিপ প্রোগ্রামের আওতায় প্রতি বছর ভর্তি হওয়া ছাত্রের অর্ধেককে এই সুযোগটি দেয়া হয়। এই স্কলারশিপের মোট পরিমাণ এক লাখ ডলারেরও উপরে, প্রত্যেক ছাত্রের জন্য ২৫,০০০ ডলারের কিছু বেশি। এছাড়া প্রয়োজন অনুসারে এখানে নিড-বেসড স্কলারশিপেরও ব্যাবস্থা আছে।
৮। ডিপ স্প্রিংস কলেজ
ক্যালিফোর্নিয়ার ডিপ স্প্রিংসে, মরুভূমির মাঝে অবস্থিত এই কলেজে দুই বছরব্যাপী কোর্স অফার করা হয়। এখানে ভর্তি হলে আপনি ৫০,০০০ ডলার পর্যন্ত স্কলারশিপ পেতে পারেন। এছাড়া থাকা খাওয়ার ব্যাবস্থার জন্য আপনাকে কলেজের নিজস্ব ফার্মে সপ্তাহে অন্তত ২০ ঘন্টা কাজ করতে হবে। এবং এই সুযোগটি শুধুই পুরুষ ছাত্রদের জন্য সীমাবদ্ধ।
তবে মনে রাখতে হবে আমেরিকার মধ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য নিবেদিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে এই কলেজটিই সবচেয়ে ছোট । প্রতি বছর এখানে ত্রিশজনের বেশি ছাত্র ভর্তি করা হয় না। কাজেই এখানে ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতাটি খুবই কঠিন।
সুতরাং বাংলাদেশী হয়েও কম খরচে, এমনকি কোন টিউশন ফি ছাড়াই পড়াশোনা করতে পারেন আমেরিকার এই ৮টি ইউনিভার্সিটিতে। আমেরিকায় পড়তে যাবার জন্য যারা চিন্তা ভাবনা করছেন, আশা করি এই তালিকাটি তাদের কাজে লাগবে।
Abu Rayhan says
এটা কি আমার ইউটিউব চ্যানেলের জন্যে ইউজ করতে পারি, ভোকাল দিয়ে?
জেসিকা জেসমিন says
যদি ভিডিওর ডেসক্রিপশনে আমাদের সাইটের ইউআরএল (https://hoicoibangla.com/) দেন, তবে ইউজ করতে পারেন। না হয় কপিরাইট আইনে মামলা।