বিট কয়েন থেকে আয় করা যায় এই কথাটি হয়তো আপনি ইতোমধ্যে শুনেছেন। বিট কয়েন হল ক্রিপ্টোকারেন্সির জগতে সর্বাধিক জনপ্রিয় নাম। আজ থেকে ১০ বছর আগে সাতোশি নাকামোটোর চালু করা বিট কয়েন খুব দ্রুত মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে।
এই মুহূর্তে আমি যখন আর্টিকেলটি লিখছি তখন এক বিট কয়েনের বাংলাদেশি মূল্য ৯ লক্ষ ৬৫ হাজার ৬২০ টাকা। আর এই হার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ১ বিট কয়েনের মূল্য ছিল ৩ লক্ষ ৪৬২ টাকা। একবার চিন্তা করুন তো আপনি যদি ১ বিট কয়েন ক্রয় করে রাখতেন, তবে আজকে আপনার অবস্থা কি হতো!
আপনি নিশ্চয়ই চিন্তা করছেন ১ বিট কয়েন তো অনেক টাকা। সুতরাং আমার পক্ষে বিট কয়েন কেনা সম্ভব নয়! আসলে ভয় পাবার কোন কারণ নেই, কেননা আমাদের বাংলাদেশের টাকার ক্ষুদ্র অংশ যেমন পয়সা ঠিক তেমনি বিট কয়েনের ক্ষুদ্র অংশ হচ্ছে সাতোশি (১০ হাজার সাতোশি = ১ বিট কয়েন)। বিট কয়েন নিয়ে এরকম অনেক অদ্ভূত তথ্য রয়েছে যা আপনাকে অবাক করে দেবে।
ছোট এই ভূমিকা পড়ে কিংবা পূর্বের বিট কয়েন সম্পর্কে জ্ঞান থেকে আপনার মনে যদি বিট কয়েন থেকে আয় করা নিয়ে সামান্য আগ্রহ জন্মে থাকে, তবে বলব আপনি সম্পূর্ণ লেখাটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। এই লেখাতে বিটকয়েন আয়ের বিভিন্ন কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হবে। যদিও বিট কয়েন মাইনিং করে আয় করা নিয়ে ইতোমধ্যে একটি লেখা পাবলিশ হয়েছে, চাইলে লেখাটি পড়ে নিতে পারেন।
বিট কয়েন থেকে আয়
বিট কয়েন আয়ের পূর্বে করণীয়
- বিট কয়েন আয়ের পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা।
- বিট কয়েন আয়ের পদ্ধতির সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং লাভ সম্পর্কে পূর্ব পরিকল্পনা করা।
- মূলধন না থাকলে মাইক্রো জব কিংবা পিটিসির মতো ছোটখাটো কাজ করে প্রথম দিকে বিট কয়েন সম্পর্কে ধারণা লাভ করা।
- বিট কয়েন নিয়ে পূর্বে যারা কাজ করেছে কিংবা করছে তাদের থেকে ধারণা নেয়া। এক্ষেত্রে বিভিন্ন বিট কয়েন ভিত্তিক ফোরাম সাইট গুলোতে নজর রাখা যেতে পারে।
১. বিট কয়েন ট্রেডিং
বিট কয়েন ট্রেডিংয়ে বড় অঙ্কের আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। বিট কয়েন ট্রেড করার অর্থ, আপনি কম দামে বিট কয়েন ক্রয় করে আপনার নিকট জমা রাখা আবার যখন দাম বৃদ্ধি পাবে তখন বেশি দামে এগুলো বিক্রি করা। এর জন্য অবশ্য বিট কয়েন মার্কেট সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকা প্রয়োজন। যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট তুলনামূলক কঠিন তাই বিট কয়েন সম্পর্কে যারা অভিজ্ঞ তাদের জন্য এটা অর্থ উপার্জনের এর সবচাইতে বড় মাধ্যম। নতুন এবং অনভিজ্ঞদের জন্য এই পদ্ধতিটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ। তাই নতুনদের এই পদ্ধতিটি এড়িয়ে যাওয়াই নিরাপদ।
বিটকয়েন ট্রেডিং করার জনপ্রিয় কিছু ওয়েবসাইট:
২. বিট কয়েন অ্যাফিলিয়েট
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মূলত কোন কোম্পানির পণ্য বিক্রির মাধ্যমে কমিশন পাওয়া। অর্থাৎ আপনার মাধ্যমে যদি কেউ উক্ত কোম্পানির পণ্য বা সেবা কিনে তবে আপনি ওই পণ্য বা সেবার লাভের উপর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন লাভ করবেন। বিট কয়েনেও এরকম অ্যাফিলিয়েট পদ্ধতি রয়েছে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট এই ধরনের কাজ দিয়ে থাকে।
এ ধরনের কাজ সাধারণত ৩ টি পদ্ধতিতে করা হয়ে থাকে:
- প্রথমত একটি বিশ্বস্ত বিট কয়েন অ্যাফিলিয়েট সাইটে একাউন্ট খোলা।
- একাউন্ট খোলার পর ওয়েবসাইট থেকে আপনাকে একটি লিংক দেয়া হবে। আপনার কাজ হল এই লিংকটি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইট, ফোরাম এবং ব্লগে প্রচার করা। এমনভাবে লিংক শেয়ার করা যাতে মানুষ লিঙ্কটিতে ক্লিক করতে আগ্রহী হয়।
- তারপর এই লিংকে প্রবেশ করে যদি কেউ অ্যাকাউন্ট খোলে এবং এর মাধ্যমে বিট কয়েন লেনদেন কিংবা বিট কয়েন ক্রয় করে থাকে তবে আপনি এর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পাবেন।
বিট কয়েন অ্যাফিলিয়েট করার জনপ্রিয় কিছু ওয়েবসাইট:
৩. পে টু ক্লিক (পিটিসি) ওয়েবসাইট
মূলত এসব সাইটের প্রধান কাজ হল বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে ক্লিক করা এবং ক্লিক করার পর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিট কয়েন আপনার একাউন্টে জমা হবে। যদিও এ বিট কয়েনের পরিমাণ খুবই সামান্য। তবে মজার ব্যাপার হলো এখানে আপনাকে কোন অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে না, শুধু পরিশ্রম করলেই হচ্ছে। এ ধরনের কাজ মূলত নতুনদের জন্য ভালো, অভিজ্ঞদের জন্য এগুলো সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই নয়।
জনপ্রিয় কিছু পিটিসি ওয়েবসাইট:
৪. মাইক্রো জব
অনলাইনে এমন কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যারা আপনাকে সামান্য কিছু কাজ করার মাধ্যমে বিট কয়েন প্রদান করবে। সামান্য কাজকে মাইক্রো ওয়ার্ক নামেও অবহিত করা হয়। এ ধরনের কাজ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ইউটিউবে ভিডিও দেখা কিংবা সার্ভে করার। তবে পিটিসি সাইট থেকে এ ধরনের সাইটে আয়ের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি।
জনপ্রিয় একটি মাইক্রো ওয়ার্ক ওয়েবসাইট হল:
৫. বিট কয়েন লেখক
যেহেতু বিট কয়েন মার্কেটে এসেছে খুব বেশি দিন হয়নি তাই বিট কয়েন সম্পর্কে অনেকেরই জ্ঞান শূন্যের কোঠায়। আর তাই বিভিন্ন ওয়েবসাইট তাদের ব্লগে বিট কয়েন সম্পর্কে লেখার জন্য লেখক ভাড়া করে থাকেন। আবার কিছু কিছু ব্লগ আছে শুধুমাত্র বিট কয়েন নিয়ে লেখা পাবলিশ করে থাকে। তাই আপনার যদি বিট কয়েন সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকে তবে আপনি এই সেক্টর থেকে খুব ভালো পরিমাণ আয় করতে পারবেন।
বিটকয়েন নিয়ে লেখার জনপ্রিয় কিছু ওয়েবসাইট হল:
শেষ কথা
বিট কয়েন থেকে আয় করার এই ছিল আজকে পাঁচটি পদ্ধতি। বিট কয়েন থেকে আয় করা নিয়ে অনলাইনে অনেক লেখায় অতিরঞ্জন করা হয়। বাস্তবতা আসলে অনেকটাই কঠিন, আয় করার জন্য আপনাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে এবং এই সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। উপরে উল্লেখিত প্রত্যেকটা পদ্ধতি কার্যকরী তাই বিট কয়েন থেকে আয় করার জন্য উপরের যে কোন একটি পদ্ধতি প্রথম দিকে নির্বাচন করতে পারেন। এসব পদ্ধতি ছাড়াও আরও অনেক পদ্ধতি আছে যা আপনি কাজ করতে করতে জানবেন।
Sohel says
বিট কয়েন থেকে আয় করার উপায় সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। উপায়গুলো অত্যন্ত সহজ আর অনেক সুন্দর করে লিখেছেন, ধন্যবাদ।
ওমর ফারুক says
ধন্যবাদ সোহেল ভাই আপনার মতামতের জন্য।
MD SANI says
ভাই আপনার ফোন নাম্বার পেলে খুব ভালো হতো
জেসিকা জেসমিন says
ধন্যবাদ, MD Sani। ওমর ফারুক ভাই এখন আর আমাদের সাইটে লিখছেন না। তিনি অনেক ভাল লিখতেন। কিন্তু, হয়তো ব্যক্তিগত কারণে তিনি দূরে আছেন। আমরা আশা করি, ওমর ফারুক ভাই আবার তার লেখনি শক্তি নিয়ে আমাদের কাছে ফিরে আসবেন।