নতুন কম্পিউটার কিনতে গেলে কম্পিউটারের অন্যান্য যন্ত্রাংশকে মানুষ যতটা গুরুত্ব সহকারে দেখে, মাউস কেনার আগে সেটাকে আসলে ততটা গুরুত্ব নিয়ে দেখে না। অথচ মজার ব্যাপার হল কম্পিউটারের সবচাইতে বেশি ব্যবহৃত হয় এই মাউসটি। আপনি অবশ্য চাইবেন না, বছরের পর বছর ধরে সস্তা এবং নিম্নমানের মাউস হাতে ধরে রাখতে। মনে রাখতে হবে হবে একটি ভাল মানের মাউস আপনার কাজের মান যেমন উন্নত করবে তেমনি এটি আপনার কব্জি এবং আঙ্গুলের ব্যাথা ক্ষতি রোধ করতে সহায়তা করে।
সময় এসেছে কম্পিউটারের এই ছোট যন্ত্রটিকে গুরুত্ব সহকারে দেখার। তাই যারা বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে নতুন কোন ভালো মানের মাউস কেনার চিন্তা ভাবনা করছেন, তাদের মাউস কেনার পূর্বে অবশ্যই কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত। অন্যথায় মাউস কেনার পর আপনাকে উল্টো বিভিন্ন ঝামেলা পোহাতে হতে পারে।
মাউস কেনার আগে
তাই আজকের এই লেখায় মাউস কেনার পূর্বে যেসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে তার একটা তালিকা প্রকাশ করেছি। আর আপনি যদি কম দামে ভাল মাউসের খোঁজ করে থাকেন, তবে কম দামে সেরা ৫টি ওয়্যারলেস মাউস দেখে নিতে পারেন।
১. প্রয়োজন অনুযায়ী মাউস নির্বাচন করুন
সত্যিকার অর্থে প্রথমে আপনার মাথায় রাখতে হবে, আপনি আসলে কম্পিউটারে কি ধরনের কাজ করতে চাচ্ছেন। কেননা আপনার কম্পিউটারের কাজ করার উপর নির্ভর করবে আপনার মাউসটি কি রকম হতে পারে। একজন গেমার এর জন্য যে ধরনের মাউস প্রয়োজন, একজন সাধারণ ইউজারের জন্য সে ধরনের মাউসের কোন প্রয়োজন নেই। তাই এসব দিক বিবেচনা করলে সাধারণত ৩ ধরণের কম্পিউটার ব্যবহারকারী দেখা যায়।
গেমিং: গেমাররা যদি সেরা মানের গেমিং ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, কিন্তু সেই মানের মাউসের ব্যাপারে সচেতন না হন, তবে গেম খেলার মজা অনেকখানিই কমে যায়। তাই তাদের সর্বদা সবচাইতে ভাল মানের গেমিং মাউসে কেনা উচিত। ভাল মাউস হয়তো আপনাকে আরও ভাল খেলোয়াড় তৈরি করবে না, তবে এটি আপনার গেমিং অভিজ্ঞতাকে পুরোপুরি সহজ করে তুলবে।
ভাল একটি মাউস অধিক সময় ধরে খেলা গেমকে আরও আরামদায়ক করে তুলবে। যেহেতু এর মধ্যে বাটন সংখ্যা বেশী তাই অনেক পুনরাবৃত্ত কাজগুলো আরও সহজ করে কনফিগার করতে পারবেন। আপনার স্লিনাপার রাইফেলটি মাত্র এক ক্লিকে লোড করে নিতে পারবেন। সর্বোপরি, উচ্চ-মানের সেন্সর এবং উচ্চতর ডিপিআই থাকার কারণে দ্রুত কার্সরের পরিচালনা করতে পারবেন।
ভ্রমণ: ভ্রমণ মাউস বলতে মূলত অফিসে, গাড়িতে কিংবা ভ্রমণের ক্ষেত্রে যদি মাউস ব্যবহার করে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে ল্যাপটপ থাকার কারণে মাউস খুব কম ব্যবহার হয়। তাই এক্ষেত্রে খেয়াল রাখা উচিত মাউস যেন তুলনামূলক ছোট হয়, যাতে বহনের সুবিধা হয়। একটি আদর্শ রাউটারে যে দুটি বাটন থাকা দরকার, সে দুটি বাটন থাকলেই যথেষ্ট।
সাধারণ: সাধারণ ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে আসলে সাইজ এবং সামান্য কিছু ফিচার থাকলেই যথেষ্ট। হাতের সাথে যেটা মানানসই অর্থাৎ দীর্ঘ সময় ব্যবহারে আপনার আঙুল কিংবা কব্জি ব্যাথা হবে না, এরকম মাউস নির্বাচন করাটাই ভাল।
২. সঠিক সাইজ নির্বাচন
আপনি যখন কম্পিউটারের মাউস কল্পনা করেন, আপনি সম্ভবত দুটি বোতাম এবং একটি স্ক্রল হুইল সহ চিরাচরিত মাউসটির কথা ভাবেন। কিন্তু বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন সাইজের মাউস পাওয়া যায়। তাই মাউস কেনার আগে খেয়াল রাখুন কোন সাইজের মাউস ব্যবহারে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখবেন বর্তমানে অনেক মাউস আছে যেগুলোর বাটনে ক্লিকের পর কোন ধরনের বিরক্তিকর শব্দ হয় না। তাই গেমিং কিংবা খুব বেশি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ ধরনের মাউস পছন্দের তালিকায় রাখবেন।
৩. মাউস কেনার আগে ডিপিআই দেখুন
মাউসের বক্সে কিংবা কোন অনলাইন মার্কেট থেকে মাউস কিনতে গেলে দেখবেন DPI লেখা আছে। আসলে আপনি যদি সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহারকারী হন, তবে এটা আপনার জন্য খুব একটা জরুরি নয়। তবে আপনি যদি গেমার, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, বড় সাইজের মনিটর কিংবা ডুয়েল মনিটর ব্যবহার করেন, তবে এটা দেখে নেয়া আপনার জন্য জরুরি। সহজ ভাবে বলতে গেলে, ডিপিআই মূলত আপনার মাউসটি কত কম নাড়িয়ে আপনার কার্সর সরাতে পারে সেটা বোঝায়।
সাধারণ ব্যবহারকারীদের মোটেই ডিপিআই নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। উচ্চ-রেজোলিউশন ডিসপ্লে বা মাল্টি-মনিটরের ক্ষেত্রে হাই ডিপিআই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনাকে দ্রুত দুটি স্ক্রিন ব্যবহার করার সুবিধা দিবে। আর গেমিংয়ের জন্য উচ্চ ডিপিআই তো অনেক বেশী জরুরি।
৪. পোলিং রেট দেখুন
আপনি যদি একজন নরমাল কম্পিউটার ব্যবহারকারী হন, তবে লেখার এই অংশটা আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন। আর যদি গেমার হয়ে থাকেন, তবে এই অংশটি আপনার জন্যই।
পোলিং রেট বলতে মূলত আপনার মাউসের অবস্থান কত সময়ের মধ্যে আপনার কম্পিউটারকে জানাতে পারছে। এটা পরিমাপ করা হয় সাধারণত Hz দ্বারা। যদি আপনার মাউসটির পোলিং রেট ২৫০ Hz হয়, তবে তা ৪ মিলি-সেকেন্ডে, ৫০০ Hz হলে ২ মিলি-সেকেন্ডে কিংবা ১০০০ Hz হলে ১ মিলি-সেকেন্ডের মধ্যে আপনার কম্পিউটারকে জানাতে পারে। তাই গেমারদের জন্যে ৫০০ Hz এর কমের মাউস না কেনাই ভাল।
৫. অপটিকাল নাকি লেজার
অপটিকাল এবং লেজার মাউসের যন্ত্রাংশ সব একই রকম। শুধু মাত্র মাউসের নিচের লাইটের পার্থক্য। অপটিকাল মাউসের নীচে এলইডি এবং লেজার মাউসে লেজার ব্যবহার করা হয় মাউসের নাড়াচাড়া বা চলাচল ট্র্যাক করার জন্য। যেহেতু লেজার উন্নত প্রযুক্তি, তাই চলাচল আরও সুনির্দিষ্টভাবে ট্র্যাক করতে পারে এবং দ্রুত স্ক্রিন জুড়েও যেতে পারে।
৬. তারবিহীন নাকি তারযুক্ত
তারবিহীন মাউস হিসাবে বর্তমানে ওয়্যারলেস এবং ব্লুটুথ এই দুই ধরণের মাউস প্রচলিত। তারযুক্ত মাউস ট্র্যাডিশনাল হলেও দামে সস্তা হওয়ায় এখনও বেশ জনপ্রিয়। তাই আপনার যদি বাজেট বেশী থাকে, তবে তারবিহীন মাউস কেনা ভাল এবং পাশাপাশি রিচার্জেবল ব্যাটারি আছে কিনা দেখে নেয়া জরুরি।
৭. অন্যান্য সুবিধা
মাউসের অন্যান্য সুবিধাগুলো দেখে নেয়া জরুরি। যেমন মাউসের বাটন সংখ্যা কতটি, মাউসের বাটন কোন কোন পাশে আছে, স্ক্রল হুইলে স্ক্রলিং ছাড়া আর কোন সুবিধা আছে কিনা? মাউস কন্ট্রোল করার কোন সুবিধা আছে কিনা ইত্যাদি বিষয় দেখে নিতে হবে।
শেষ কথা
এই ছিল আজকে মাউস নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। যে কোনো মাউস কেনার আগে উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা জরুরি। মাউস কেনার ক্ষেত্রে দামের দিকে বিবেচনায় রাখবেন, বাজেট কম হলে বেশী দামী মাউস কেনা খুব একটা জরুরি নয়।
Leave a Reply