মশা এক ধরণের ছোট পোকা যা মাছিরই একটি প্রজাতি, বিশেষ করে নেমাটোসেরা মাছির একটি জাত। নেমাটোসেরা মাছির আরেকটি নাম হচ্ছে ক্রেন। আর মশা মূলত এই ক্রেন পরিবারেরই সদস্য। আজ আমরা জানবো মশা আসলে কেমন প্রাণী আর মশা কিভাবে কামড়ায় ও কামড়ানোর জন্যে কি কি ইউজ করে।
প্রকৃতিতে মশার হাজারো রকমের প্রজাতি আছে যেগুলো মূলত মানুষ ও স্তন্যপায়ী জীব-জন্তুর রক্ত খেয়ে জীবন ধারণ করে থাকে। তবে, পুরুষ মশা সাধারণত রক্ত খায় না, খায় স্ত্রী মশা।
রক্ত খাওয়ার জন্যে শিকার খুঁজে বের করতে অর্থাৎ মানুষ বা প্রাণী ট্র্যাক করতে মশা এক ধরণের ব্যাটারি সেন্সর ব্যবহার করে থাকে। যখনই শিকার খুঁজে পায়, তখন আরেক ধরণের ভিজ্যুয়াল সেন্সর ইউজ করে উত্তপ্ত রক্ত আছে এমন জায়গা খুঁজে নেয়। আর সেখানেই কামড় বসিয়ে দেয় অর্থাৎ হুল ফুটায়।
মশা সম্পর্কে বেশ কিছু মজার তথ্য হয়তো আপনার জানা আছে। আজ আসুন মশা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানি। বিশেষ করে মশা কি আর কিভাবে আমাদের কামড়ায় সে সম্পর্কে ডিটেইল নলেজ নেয়া যাক।
মশা কি?
মশা কি সে সম্পর্কে ভূমিকাতেই জেনেছেন। আরো যা জানতে পারেন তা হল পৃথিবীতে প্রায় ৩ হাজার ৫শ প্রজাতির মশা রয়েছে। প্রতিটি মশারই একটি সরু বা পাতলা দেহ থাকে। উড়ার জন্যে ২টি ডানা, চলার জন্যে ৩ জোড়া লম্বা পা, রক্ত আছে এমন প্রাণী ডিটেক্ট করার জন্যে পালকযুক্ত একটা অ্যান্টেনা আর একটি প্রসারিত মুখ থাকে। হুল ফুটিয়ে কামড় দিয়ে মশা আমাদের রক্ত খায় আর মশার কামড় থেকে ১০টি মারাত্মক রোগ হয়।
প্রায় ২শ ২৬ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে প্রথম মশার আবির্ভাব ঘটে। আদিম মশার যে জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে তা’ও প্রায় ৯০ মিলিয়ন বছর আগের। প্রাণী বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানিয়েছেন এত বছর আগে পাওয়া জীবাশ্ম একদম আধুনিক মশার জীবাশ্মের মতোই। মশার জীবনচক্র শুরু হয় ডিম দিয়ে, এরপর লার্ভা, তারপর লার্ভা থেকে পিউপা এবং পিউপা থেকে অ্যাডাল্ট মশা যা রক্ত খেয়ে জীবন ধারণ করে।
মশা কিভাবে কামড়ায়?
মশা প্রথমে তার শিকারের খোঁজ করে। শিকার ট্র্যাক করার জন্যে মশাদের রয়েছে ব্যাটারি অব সেন্সর। আর এই ব্যাটারি অব সেন্সর ৩ ভাগে বিভক্ত-
- ১. কেমিক্যাল সেন্সর
- ২. ভিজ্যুয়াল সেন্সর
- ৩. হিট সেন্সর
১. কেমিক্যাল সেন্সর: মানুষ কিংবা পশু-পাখির শরীর থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং লেকটিক অ্যাসিডের মতো কেমিক্যাল বোঝার জন্যে মশাদের রয়েছে দারুণ সেন্স। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সর্বোচ্চ ১০০ ফিট বা ৩৬ মিটার উপর থেকেও মশারা এইসব কেমিক্যালের আভাস পায়। স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পশু-পাখি তাদের শরীর থেকে নি:শ্বাসের সঙ্গে এসব গ্যাস বের করে দেয় আর মশার উপরোক্ত দূর থেকেও এসব গ্যাসের গন্ধ পায় এবং গন্ধ ধরেই কাছে চলে আসে।
২. ভিজ্যুয়াল সেন্সর: আপনি যদি এমন কোনও জামা-কাপড় পরিধান করেন যা আপনি যেখানে আছেন সেখানকার ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে বিপরীত, অর্থাৎ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আলাদা করে সহজে বোঝা যায়, তবে মশারা আপনাকে অনায়াসেই দেখতে পায়। যখন আপনি মুভ করেন, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় হাঁটা-চলা করেন, তখনও মশারা তাদের ভিজ্যুয়াল সেন্সর দিয়ে সহজেই আপনার মুভমেন্ট বুঝতে পারে। কাজেই, মশাদের থেকে আপনার পালানোর পথ নেই। মশারা যে কোন জীবন্ত প্রাণীর, বিশেষ করে যাদের শরীরে রক্ত আছে, তাদেরকে ভিজ্যুয়াল সেন্সরের মাধ্যমে ট্র্যাক করতে পারে।
হিট সেন্সর: মশারা অনায়াসেই উষ্ণতা ডিটেক্ট করতে পারে। কাজেই, তারা উষ্ণ রক্ত আছে এমন যে কোনও স্তণ্যপায়ী প্রাণী এবং পশু-পাখিকে হিট সেন্সর দিয়ে ট্র্যাক করে নেয় এবং কাছাকাছি চলে আসে।
বুঝতেই পারছেন মশাদের এইসব সেন্সর অনেক সময় সামরিক বিমানের মতো কাজ করে। আর এ জন্যেই মশারা সহজেই শিকার খুঁজে পায় এবং কামড় বসিয়ে রক্ত শুষে নেয়।
যাইহোক, আপনি জেনেছেন মশা কি আর মশা কিভাবে কামড়ায়। এটা যদিও জানার মতো তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়, তবু জেনে রাখতে তো দোষ নেই। এই জানাটা আপনার কেমন লাগলো, তা আমাদেরও জানান নিচের কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে।
Leave a Reply