প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখা পড়তে গিয়ে নিশ্চিতভাবে অসংখ্যবার “সার্ভার” শব্দটি পেয়েছেন। বর্তমান পৃথিবীতে সার্ভার খুবই পরিচিত একটি শব্দ। ইন্টারনেট নিয়ে কথা বলতে গেলে সেখানে কোন না কোনভাবে এই কথাটি ঢুকে পড়ে। অনেকেই আমরা সার্ভার কী সে সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানি না, যার ফলে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও প্রযুক্তি বিষয়ক কোন আলোচনায় অনেক সময় অনেক কথাই দুর্বোধ্য থেকে যায়।
তাই আজকে আমরা চেষ্টা করব, খুব সহজভাবে সার্ভার সম্পর্কে মৌলিক কিছু তথ্য তুলে ধরার।
সার্ভিস প্রদান করে এমন কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে আভিধানিকভাবে সার্ভার বলা হলেও বর্তমান সার্ভার শব্দটি বলতে ওয়েব সার্ভারকেই বোঝানো হয়। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে ওয়েব সার্ভার কী? অবশ্যই আজ আমরা সেটি জানবো। তার আগে আপনাকে ডিপ ওয়েব সম্পর্কে ৪টি মারাত্মক ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সার্ভার কী?
সাদা কথায়, সার্ভার আসলে একটি কম্পিউটার যেটি অন্য কোন কম্পিউটার বা ডিভাইস থেকে কোন রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে এবং সেই অনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করে থাকে। অর্থাৎ একটি সার্ভারে বিপুল পরিমাণ তথ্য জমা থাকে। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (LAN) বা ইন্টারনেট দুইটি মাধ্যমের যে কোন একটি ব্যবহার করেই সার্ভার কাজ করতে পারে। বলা বাহুল্য, সার্ভারের এই রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট এবং তথ্য আদান প্রদানের জন্য ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকা জরুরী নয়। ইন্টারনেট সম্পর্কে ১৫টি অজানা তথ্য আপনাকে যদিও অবাক করবে, সার্ভারের ক্ষেত্রে এটি জরুরী নয়।
তবে ওয়েব সার্ভার এর ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকাটা জরুরী। কেননা এখানে সার্ভার একজন ইউজারের কাছে থেকে যে রিকোয়েস্টটি গ্রহণ করবে এবং যে তথ্যটি আদান প্রদান করবে, তার জন্য মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট এবং একটি ওয়েব ব্রাউজার। ওয়েব সার্ভার এবং এর কাজের প্রক্রিয়াটিকে আরও একটু সহজভাবে বলা যাক।
আপনি যেহেতু এই লেখাটি এইমুহূর্তে পড়ছেন, তাই এর আগে আপনাকে কয়েকটা কাজ করতে হয়েছে। প্রথমত আপনাকে ইন্টারনেট কানেকশন আছে এমন একটি ফোন বা কম্পিউটারের ওয়েব ব্রাউজার ওপেন করতে হয়েছে। তারপর সেখানে কোন লিংকে ক্লিক অথবা সরাসরি হৈচৈবাংলা ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস লিখতে হয়েছে। এবার অল্প কিছু সময় আপনাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে এবং তারপর আপনি লেখাটি আপনার ওয়েব ব্রাউজারে দেখতে পেয়েছেন। কথা হচ্ছে লেখাটি কোথা থেকে আপনার ব্রাউজারে চলে এলো?
নিশ্চয়ই এটি হাওয়ায় ভেসে বেড়ায় না, কোথাও না কোথাও ডিজিটালি লেখাটিকে স্টোর করে রাখতে হয়েছে। আরও ভালো করে বললে কোন না কোন কম্পিউটারের মেমোরিতে লেখাটিকে রাখা হয়েছে। যেন আপনি যে কোন মুহূর্তে রিকোয়েস্ট করলেই সেই কম্পিউটার আপনাকে লেখাটি দেখাতে পারে।
আপনি যখন ব্রাউজার ওপেন করে কোন লিংকে ক্লিক করলেন অথবা ওয়েব অ্যাড্রেসটি লিখলেন তখন মূলত ব্রাউজার থেকে সেই নির্দিষ্ট ওয়েবপেজটি দেখানোর জন্য একটি কম্পিউটারে রিকোয়েস্ট পাঠানো হলো। সাথে সাথে সেই কম্পিউটার আপনার রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে ব্রাউজারকে ওয়েবপেজটি দেখার অনুমতি দিলো, যেটি আগে থেকেই তার মেমরিতে বা হার্ড ড্রাইভে সংরক্ষণ করা আছে। তখন ব্রাউজার সেই কম্পিউটারে থাকা ওয়েবপেজটি আপনাকে দেখাতে সক্ষম হলো।
আর এই কম্পিউটারটিকেই বলা হয় সার্ভার বা ওয়েব সার্ভার। সহজ কথায় এটিই আসলে একটি সার্ভার কী তার উত্তর অর্থাৎ সার্ভারের পরিচয় এবং তার কাজের পদ্ধতি।
প্রচলিত কয়েক ধরণের সার্ভারঃ
অনেক ধরণের সার্ভার রয়েছে, এদের মধ্য কোনটি ডেডিকেটেড বা শুধু মাত্র কোন একধরণের কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই সার্ভারগুলো অনেকটাই সেকেলে, বৃহৎ পরিসরে বর্তমানে এদের ব্যবহার নেই বললেই চলে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এসব সার্ভার ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। বাকিগুলোকে হাইব্রিড বা কম্বাইন্ড বলতে পারেন, যেগুলো আসলে অনেকগুলো ডেডিকেটেড সার্ভারের সমষ্টি। আমরা এখানে কয়েকটি প্রচলিত কয়েক ধরণের সার্ভার সম্পর্কে জানব, যেগুলো প্রত্যেকটিই ডেডিকেটেড সার্ভার।
ওয়েব সার্ভারঃ
এটা সম্পর্কে উপরেই বলেছি; মূলত এখানে ওয়েবপেজ বা ওয়েব কন্টেন্টগুলো স্টোর করে রাখা হয়, এবং ইউজারের রিকোয়েস্ট অনুযায়ী সেগুলো দেখানো হয়। ক্ষেত্র বিশেষে ইউজারও কন্টেন্ট আপলোড করার সুযোগ পায়। আমরা ইন্টারনেটে যতো ধরণের সার্ভার দেখি সবই আসলে কোন না কোনভাবে ওয়েব সার্ভার।
ইমেইল সার্ভারঃ
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটি ইমেইল সংক্রান্ত একটি সার্ভার। হ্যাঁ, এটি শুধুমাত্র ইমেইল আদান প্রদান এবং সংরক্ষণের কাজটিই করে থাকে। যেহেতু প্রতিটি ইমেইল কোন না কোন ইউজার তৈরী করে থাকে, তাই এই সার্ভারের দায়িত্বে যিনি বা যারা থাকেন তাদেরকে নতুন কোন কন্টেন্ট সার্ভারে যুক্ত করতে হয় না, তারা শুধু মাত্র এই সার্ভারের মেইনটেন্সের কাজগুলো করে থাকেন।
আইডেন্টি সার্ভারঃ
এই ধরণের সার্ভারগুলো ইউজারের লগ-ইন এবং সিকিউরিটি মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, অনেকটা ডাটাবেস ধরণের।
এফটিপি সার্ভারঃ
দ্রুতগতিতে ফাইল ট্রান্সফারের জন্য এফটিপি সার্ভার ব্যবহার করা হয়। যারা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তারা এটি সম্পর্কে ভালো করে জানেন। বিভিন্ন আইএসপি অর্থাৎ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানি তাদের ইউজারদের দ্রুত গতিতে মুভি বা গেমের মতো বড় সাইযের ফাইল ডাউনলোড করার সুবিধা দেওয়ার জন্য এফটিপি সার্ভার ব্যবহার করে থাকে।
বিশেষভাবে ডিজাইন করা এই সার্ভার ইউজারের অপেক্ষাকৃত কাছাকাছি এরিয়ায় থাকায় এবং অল্প সংখ্যক ইউজার হওয়ায় সাধারণ ওয়েব সার্ভারের তুলনায় অনেক দ্রুত গতিতে ফাইল ট্রান্সফার কতে পারে।
যেহেতু ডেডিকেটেড সার্ভারের ব্যবহার কমে গেছে, তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ওয়েব সার্ভার, ইমেইল সার্ভার, আইডেন্টি সার্ভার ইত্যাদি একত্রিত করে কম্বাইন্ড বা হাইব্রিড সার্ভার ব্যবহার করতে। বাণিজ্যিকভাবে যে সব প্রতিষ্ঠান হোস্টিং সেবা দিয়ে থাকে তারা সর্বদাই এধরণের কম্বাইন্ড বা হাইব্রিড সার্ভার ব্যবহার করে থাকে।
সার্ভার সম্পর্কিত আরও কিছু তথ্যঃ
সারা পৃথিবী থেকে যে কোন মুহূর্তে চাইলেই একটি ওয়েবসাইট দেখে নেওয়া যায়। তাই সার্ভারকেও সারাক্ষণ সচল থাকতে হয়। একটি সার্ভার কম্পিউটার সাধারণত একবার চালু হলে একদম নিরবিচ্ছিন্নভাবে অর্থাৎ সপ্তাহের সাতদিন এবং দিনের ২৪ ঘন্টাই এটি চালু থাকে।
পাশাপাশি যেহেতু একই সাথে অসংখ্য রিকোয়েস্ট প্রসেস করতে হয় তাই সার্ভার কম্পিউটারগুলো আমাদের পরিচিত সাধারণ কম্পিউটারের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী হয়ে থাকে। শক্তিশালী এই সার্ভার কম্পিউটারগুলোকে সারাক্ষণ সচল রাখার জন্য জন্য নিরবিচ্ছিন্ন পাওয়ার সাপ্লাই সহ শীতলরাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়।
তবে মেইনটেইন্স এর জন্য মাঝে মাঝে সার্ভারকে শিডিউল অনুযায়ী অফলাইনে নেওয়া হয়, সে সময়ে সাধারণত ঐ সার্ভারে থাকা ওয়েবসাইটগুলোতে ঢুকলে সংক্ষিপ্ত একটি মেসেজের মাধ্যমে ইউজারকে মেইনটেইন্সের ব্যাপারটি জানিয়ে দেওয়া হয়।
সবসময় মেইনটেইন্সের জন্যই যে সার্ভার ডাউন হয়ে যায় বা অফলাইনে চলে যায় এরকম নয়, হ্যাকের কারণেও একই রকম ঘটনা ঘটতে পারে।
TANGIL says
আমি নেট জ্যন কাজ করতে পারব, কোন ভাল কাজ করতে পারব?
Shah Jamal Dhali says
সার্ভার নিয়ে সার্বিক আলোচনা সম্বলিত একটি পোস্ট যা পড়ে সার্ভার সম্পর্কে দারুণ কিছু তথ্য পেলাম।
Shahin singer says
সার্ভার সম্পর্কে সার্বিকভাবে সবকিছু জানলাম।