পৃথিবীর সবচেয়ে দামী মোবাইল ফোনের দাম কতো হতে পারে? প্রযুক্তি দুনিয়া সম্পর্কে একটু অতিরিক্ত আগ্রহ না থাকলে এটা ধারণা করা খুবই স্বাভাবিক যে, পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ফোন হচ্ছে, কিছুদিন আগে বাজারে আসা আইফোন এক্সএস, নয়ত স্যামসাং গালাক্সি এস টেন প্লাস! আর এমন ধারণা হবে নাই বা কেন? ছোট্ট একটা মোবাইল ফোনের দাম লাখ টাকার উপরে হলে যে কোন মানুষেরই তাই মনে হবে।
তবে স্বাভাবিক হলেও আপনার ধারণা যদি আমার মতোই এরকম হয়, তাহলে একটু নড়ে চড়ে বসতে পারেন। কারণ, কম দামে ভাল স্মার্টফোন সম্পর্কে আগে আপনি জেনেছেন আর আজ জানবেন বর্তমান পৃথিবীর ১০টি সবচেয়ে দামী ফোন সম্পর্কে। যা আপনার কাছে রীতিমতো ভিমড়ি খাওয়ার মতো তথ্য বলে মনে হবে!
সবচেয়ে দামী ফোন
সবচেয়ে দামী ফোনের তালিকায় রয়েছে মিলিয়ন ডলারের সব ফোন! দেশীয় টাকায় হিসেব করলে কয়েক কোটি থেকে শুরু করে শত কোটি টাকা দাম সেসব ফোনের। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, কী এমন আছে এর মধ্য আছে যে একটা ফোনের দাম কোটি টাকার উপরে হতে পারে? এটা কী সোনায় মোড়ানো? উত্তরটা আসলে খুব সহজ, হ্যাঁ। আসলে এসব ফোন আক্ষরিক অর্থেই সোনা কিংবা তার থেকেও দামী কোন বস্তু দিয়ে অলংকৃত হয়ে থাকে।
নিজের ব্যবহারের জন্যে অল্প দামে ভাল কিছু স্মার্টফোন সম্পর্কে জেনেছি। এবার চলুন কৌতুহল মেটানোর জন্যে দেখে নিই পৃথিবীর সবচেয়ে দামী দামী ফোনগুলো।
১০. iPhone Princess Plus
এই তলিকার শুরুতেই যে ফোনটি আছে সেটি একটি আইফোন। বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান ডিজাইনার পিটার অ্যালোসন এর ডিজাইন করা এই ফোনটির বডি পুরোপুরি সোনার তৈরী। চাইলে চারপাশের বর্ডারে ৩১৮টি হীরে বসিয়ে নেওয়ার সুযোগও ছিল ফোনটি অর্ডার করার সময়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বাড়তি আরও বেশ কিছু অর্থ গুনতে হতো ক্রেতাকে।
সৌখিন ধনকুবেরদের জন্য তৈরী এই ফোনটির দাম মোটামুটি ১,৭৬,৪০০ ইউএস ডলার বা প্রায় ১ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা থেকে শুরু।
০৯. Black Diamond VIPN Smartphone
Sony Ericson এর পৃষ্ঠপোষকতায় VIPN নামক কোম্পানির এর এই ফোনটি তৈরি করা হয়েছে অত্যান্ত মূল্যবান কালো হীরে ব্যবহার করে। এর চমৎকার স্মার্ট আউটলুক দেখে সিম্পলের মধ্য গর্জিয়াস কথাটিই মাথায় আসবে আপনার।
ফোনটি রিলিজ পায় ২০০৭ সালে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, এখন আমরা স্মার্টফোন বলতে যা বুঝি এটি মোটেই তা ছিলো না। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম যুক্ত এই ফোনটির দাম ছিলো ৩,০০,০০০ ইউএস ডলার। বাংলাদেশী টাকায় যা প্রায় ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার মতো। সবমিলিয়ে মাত্র পাঁচটি Black Diamond VIPN Smartphone তৈরি করা হয়েছিলো।
০৮. Vertu Signature Cobra
পৃথিবীর ব্যবহুল ফোন নির্মানতা প্রতিষ্ঠান হিসেবেই Vertu পরিচিত। বেশ অনেকদিন ধরেই সাফল্যের সাথে কোম্পানি সৌখিন ধনকুবেরদের জন্য নানা রকম সৌখিন মোবাইল ফোন তৈরী করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সাল মুক্তি পায় Vertu Signature Cobra নামের এই ফোনটি।
ফোনটির দিকে তাকালেই নামকরনের কারণ বোঝ যায়। খুবই সাধারণ একটি ফিচার ফোন এটি, থ্রিজি নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা পর্যন্তও এতে নেই। কিন্তু ৪৩৯ টি রুবি দ্বারা তৈরি কিংকোবরার প্রতিমূর্তি দিয়ে অলংকৃত হওয়াতেই এর দাম হয়েছে আকাশচুম্বি।
সারা পৃথিবীতে Vertu Signature Cobra তৈরি হয় মাত্র আট কপি। প্রত্যেকটি বিক্রি হয় ৩,৬০,০০০ ইউএস ডলার বা প্রায় ২ কোটি ৯০ লক্ষ টাকায়।
০৭. Gresso Laxor Las Vegas Jackpot
২০০ বছরের পুরাতন দুর্মূল্য আফ্রিকান কাঠে তৈরি পিছনের অংশ এবং কালো হীরের তৈরী সামনের অংশ ফোনটিকে এই তালিকার সবগুলো ফোনের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে। ক্লাসিক ডিজাইনের এই ফোনটি বাজারে আসে ২০১০ সালে।
ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটি একটি ফিচার ফোন। তবে ফিচার ফোন হলেও এটি কেনার জন্য আপনাকে গুনতে হতো ১ মিলিয়ন ইউএস ডলার বা প্রায় ৮ কোটি টাকা! সব মিলিয়ে Gresso Laxor Las Vegas Jackpot তৈরি করা হয়েছিলো মাত্র তিনটি ইউনিট!
০৬. Goldvish Le Million
দেখতে অদ্ভুত এস আকৃতির এই ফোনটির তৈরি করেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান Goldvish। সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক Goldvish কোম্পানিটিও Vertu এর মতো মূল্যবান ফোন তৈরীর জন্য বিখ্যাত। ইউরোর হিসেবে দাম, আর সেই দামের সাথে মিল রেখেই এরকম নামকরণ করা হয় ফোনটির।
১ মিলিয়ন ইউরো যা ইউ এস ডলারের হিসেবে দাঁড়ায় ১.১২ মিলিয়ন অর্থাৎ বাংলাদেশী টাকায় এর একদম নীট দাম হয় প্রায় ৯ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকার মতো। ১৮ ক্যারোট হোয়াইট গোল্ড আর ১২০ ক্যারোট ভিভিএস-১ হীরে দিয়ে তৈরী এই ফোনটি।
০৫. Diamond Crypto
পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ১০টি ফোনের তালিকায় থাকা এই ফোনটির ডিজাইনারও পিটার অ্যালিসন। রাশিয়ার নিমার্তা প্রতিষ্ঠান JSC Ancort এটি তৈরি করেছে। সম্পূর্ণ ফোনটিই প্লাটিনামে তৈরী, তবে নেভিগেশন কী এবং Ancort লোগোটি তৈরি করা হয়েছে ১৮ ক্যারোট রোজ গোল্ড দিয়ে। সেই সাথে হীরে দিয়ে অলংকৃত করা হয়েছে ফোনটিকে।
রাশিয়ান ভিআইপিদের জন্য তৈরী এই ফোনটির দাম শুধু মাত্র সোনা, হীরে কিংবা প্লাটিনামের জন্য নয়, বরং এসবের সাথে ফোনটিতে যুক্ত হয়েছে শক্তিশালী এনক্রিপশন প্রযুক্তি। যার ফলে এতে থাকা যে কোন ডাটাই একদম নিরাপদ, হ্যাক করা প্রায় অসম্ভব। ফোনটির দাম ১.৩ মিলিয়ন ইউএস ডলার বা ১০ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা!
০৪. iPhone 3G Kings Button
মিলিয়ন ডলারের জমকালো এই আইফোনটি ক্রেতাদের জন্য তৈরী হয় ২০০৯ সালে। পিটার অ্যালিসনের ডিজাইন করা আরও একটি ফোন এটি। ফোনটি তৈরীতে ব্যবহৃত হয়েছে ১৮ ক্যারোট ইয়ালো গোল্ড এবং ১৩৮ টি চমৎকার হীরের টুকরো।
সাধারণ আইফোন থ্রিজির হোম বাটন যেখানে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরী সেখানে এইফোনটির হোম বাটন পুরোটাই হীরের তৈরী, নামটাও সেকারণেই “কিংস বাটন”। ফোনটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিলো ২.৫ মার্কিন ডলার বা প্রায় ২০ কোটি টাকা!
০৩. iPhone 3GS Supreme Goldstriker Advence
আইফোনের বাজার কতোটা উঁচু সেটা ২০০৯ সালের আইফোন ৩ এর সংস্করণগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়। এই ফোনটিও হোম বাটন হীরের তৈরী। এছাড়াও ফ্রণ্টে স্ক্রিনের চারপাশে রয়েছে ৫৩ হীরে। ২২ ক্যারোট গোল্ড দ্বারা তৈরী হয়েছে সম্পূর্ণ বডি।
৩.১৪ মিলিয়ন ইউ এস ডলার বা প্রায় আড়াই কোটি টাকা দামের এই ফোনটি ডিজাইন করেছে বিখ্যাত ব্রিটিশ ডিজাইনার স্টুয়ার্ট হিউজেস।
০২. iPhone 4 Diamond Rose Editon
চারপাশে ৫০০টি ক্ষুদ্র হীরে দিয়ে অলংকৃত এই আইফোনটির হোম বাটন তৈরী হয়েছে দুর্লভ গোলাপি হীরে দিয়ে। পিছনের অ্যাপলের লোগোটিতেও ব্যবহৃত হয়েছে ৫৩ টি হীরের টুকরো।
৬.৫২ মিলিয়ন ইউএস ডলার বা প্রায় ৫৫ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা দামের এই ফোনটি মাত্র দুইটি ইউনিট তৈরী করা হয়েছিলো।
০১. Falcon Supernova iPhone 6 Pink Diamond
সাধারণ আইফোন আসলে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ফোন না হলেও আইফোনের বিশেষ ভার্সনগুলোই সেই জায়গা দখল করে আছে। তাই আমাদের এই তালিকার শীর্ষে ফোনটিও একটি আইফোন। অর্থাৎ বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ফোন হচ্ছে, আইফোন ৬ এর এই বিশেষ সংস্করণ যার নাম Falcon Supernova iPhone 6 Pink Diamond.
এই ফোনটি বাজারে আসে ২০১৪ সালে, Falcon Luxury নামের একটা কোম্পানির হাত ধরে (যেটা এখন বন্ধ হয়ে গেছে)। ২৪ ক্যারোট গোল্ড, রোজ গোল্ড এবং প্লাটিনাম ব্যবহার করা হয়েছে এটি তৈরীতে। তবে ফোনটির মূল আকর্ষণ ছিলো এর পিছনে থাকা বিশাল আকারের হীরের টুকরটি। মূলত এর কারণেই ফোনটি দাম শতকোটির ঘর স্পর্শ করেছে। হ্যাক প্রটেক্টেড এই ফোনটির দাম ৪৮.৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার, টাকার হিসেবে যা প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।
প্রচন্ড সম্পদশালী বা বিত্তবান মানুষদের নানা রকম অদ্ভুত খেয়াল থাকে, শখও বলা যায় একে। আর এই শখগুলো থেকে মাঝে এমন কোন বিষয়ের জন্ম নেয় যা সাধারণ মানুষের জন্য বেশ কৌতুহলের। আর সেই কৌতুহলের কিছুটা অংশ মেটাতেই আমাদের এই আয়োজন। এগুলো কিনতে আপনাকে উৎসাহিত করা আমাদের লক্ষ্য নয় এবং আমার মতো হয়তো আপনারও সে ক্ষমতা নেই। আমরা আমাদের সাধ্যের ভেতরেই ফোন কিনবো। কিনতে যাওয়ার আগে স্মার্টফোন কেনার গাইডলাইন দেখে নেবো যাতে আমাদের কোথাও ঠকতে না হয়।
সবশেষে একটি কথা বলে নেওয়া ভালো; আর তা হল, সবচেয়ে দামী ফোন এর এই তালিকায় যে দশটি ফোন আমরা দেখলাম, তার কোনটিই কিন্তু প্রচলিত অর্থে বাজারে আসেনি। তৈরী হয়েছে অর্ডারে কিংবা হাতে গোনা কয়েকটি কপি, বিশেষ কিছু মানুষের আগ্রহকে কেন্দ্র করে।
Md Shamim Hosen says
Awesome পোস্ট, পৃথিবীতে এত দামী মোবাইলফোন আছে, তাই তো জানতাম না, আজ জেনে ভাল লাগলো। আশা করি, অন্যদেরও ভাল লাগবে এত দামী দামী মোবাইলফোনের খবর জেনে।