প্রযুক্তি জীবন যাত্রাকে আগের থেকে আরও বেশী সহজ করে দিয়েছে। মানুষ এখন হাতের মুঠোয় সব কিছু পেয়ে যাচ্ছে। দৈনন্দিন সব কাজেই প্রযুক্তির ছোঁয়া রয়েছে। বর্তমানে আমাদের অবসর সময় কাটে এই প্রযুক্তির মাধ্যমেই। প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতারা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে কিভাবে মানুষ প্রযুক্তিকে আরও সহজভাবে ব্যবহার করতে পারে।
যার ফলে এখন স্মার্টফোন চালানোর জন্য আর কোন ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং নিতে হয় না। বরং দেখা যায় একটি ছোট বাচ্চাও অনায়াসে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু তাই বলে আমাদের বদ অভ্যাস থেমে থাকেনি। টেক তথা প্রযুক্তি জগতে আমাদের বদ অভ্যাস অনেক বেশী। প্রথম দিকে আপনার কাছে এই গুলো সমস্যা মনে হবে না কিন্তু বাস্তবে এসব বদ অভ্যাস আপনার জন্য ভয়ংকর সমস্যা তৈরি করবে। তাই টেকনোলোজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু বদ অভ্যাশ জেনে রাখুন।
টেক জগতের বদ অভ্যাস
১. লগ আউট না করা
হঠাৎ বন্ধুর কম্পিউটার, মোবাইল কিংবা সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্টে লগ আউট না করে চলে আসলেন! পরের ঘটনা কি হতে পারে ভাবুন তো একবার! যদিও এসব কাজ এখন আর কেউ করে না। তবে কিছু কাজ আছে অনিচ্ছা সত্ত্বেও হয়ে যায়। যেমন আপনি কারও কম্পিউটারে লগ ইন করলেন কিন্তু বিদ্যুৎ চলে গেলো। এদিকে আপনার দ্রুত অন্য কোথাও যেতে হবে, এক্ষেত্রে কি করবেন?
এরকম সমস্যা পরিহার করতে হলে অবশ্যই ইন্টারনেট ব্রাউজার থেকে Private Window/Incognito Mode চালু করে নিবেন। ফলে লগ আউট না করলেও উইন্ডো বন্ধ করার সাথে সাথে অটো সব লগ আউট হয়ে যাবে। আর আপনার বাসায় বা অফিসে ফোন বা পিসি চালু রেখে বাহিরে বা দূরে কোথাও গেলে অবশ্যই পিসি বা ফোন লক করে যাবেন।
২. ব্যাকআপ না রাখা
কম্পিউটার বা ফোনে আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল থাকে। হার্ডওয়্যার কিংবা অন্য কোন কারণে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল গুলো হারাতে পারি। এক্ষেত্রে ফাইলের ব্যাকআপ রাখা খুব জরুরি।
আমাদের অলসতা এবং বদ অভ্যাসের কারণে আমরা ফাইলের ব্যাকআপ রাখি না। যার জন্য পরবর্তীতে এই ভুলের কারণে অনেক বড় মাশুল দিতে হয়।
৩. একই পাসওয়ার্ড বারবার ব্যবহার
প্রথমত আমরা অলসতার কারণে একই পাসওয়ার্ড দীর্ঘ দিন ব্যবহার করি। এছাড়া সব সাইটে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করি। এটা খুব বাজে একটা অভ্যাস। এ ধরণের অভ্যাস পরিহার করা জরুরি।
ধরুন, কোন হ্যাকার আপনার ইমেইলে পাসওয়ার্ড পেয়ে গেলে। এখন আপনি যদি আপনার বাকি সব ওয়েবসাইটে এই একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন তাহলে চিন্তা করুন পরবর্তী অবস্থা কিরূপ হতে পারে!
৪. দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা
দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করাটা আমাদের একটা বড় বদ অভ্যাস। আমাদের ধারণা আমরা তো খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি না। তাই আমারা হ্যাকিংয়ের শিকার হবো না। আপনার যদি এমন ধারণা থেকে থাকে, তবে এখনই এই ধারণা পরিহার করুন। আপনি হতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ কেউ নন কিন্তু আপনার তথ্য গুরুত্বপূর্ণ।
ধরুন, আপনার ফেসবুক আইডিটি হ্যাক হলো এবং হ্যাকার প্রত্যেককে একটি করে ম্যাসেজ দিলো যে আপনার খুব টাকার প্রয়োজন এবং সবার কাছে টাকা ধার চাইলো। তার পরের অবস্থা চিন্তা করুন!
তাই পাসওয়ার্ড শক্তিশালী করুন। পাসওয়ার্ড দেয়ার ক্ষেত্রে ছোট হাতের অক্ষর ও বড় হাতে অক্ষর দিন এবং নাম্বার ও সিম্বল (# & @ %) ব্যবহার করুন। এছাড়া শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দেয়ার পদ্ধতি জেনে নিন এবং সব সময় এই পদ্ধতি অবলম্বণ করুন।
৫. ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহারে সর্তক না হওয়া
বর্তমান সময়ে মার্কেট, রেস্টুরেন্ট, পার্ক সহ মোটামুটি সব জায়গায় ফ্রি ওয়াই-ফাই পাওয়া যায়। ফ্রি ওয়াই-ফাই খুব ভাল, আপনার ডাটা খরচ বাঁচানোর জন্য। তবে এই ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সর্তক থাকতে হবে। মনে রাখাতে হবে এটা ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক। তার মানে আপনি আপনার তথ্য অন্যের সাথে শেয়ার করছেন।
এসব পাবলিক ওয়াই-ফাইতে অনেক সময় হ্যাকারও থাকে এবং তারাও সহজে কানেক্ট হতে পারে, যেহেতু এটা ফ্রি ওয়াই-ফাই। মাঝে মাঝে কিছু হ্যাকার ফেইক পাবলিক ওয়াই-ফাই তৈরি করে। যদি এটাতে আপনি কানেক্ট হন, তখন তারা আপনার সব তথ্য দেখতে পারবে।
তাই ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সময় ব্যাংক, স্যোশাল মিডিয়া কিংবা অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ ওয়েব সাইটে লগ ইন না করাই ভাল। তবে পাবলিক তথা ফ্রি ওয়াই-ফাইতে কিভাবে নিরাপদ থাকবেন তা জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন।
৬. উচ্চ শব্দে গান শোনা
আজকাল তরুণ প্রজন্মের একটা বদ অভ্যাস হলো উচ্চ শব্দে গান শোনা। উচ্চ শব্দে গান শুনলেই স্মার্ট হওয়া যায় না। শুধু মাত্র গান নয়, যেকোন কিছুই কম আওয়াজে শোনা উচিত। যেসব কারণে উচ্চ শব্দ পরিহার করা উচিত:
- আশে পাশের মানুষের কষ্ট হতে পারে। এছাড়া বয়স্ক এবং শিশুরা যদি কাছাকাছি থেকে ২০০ ডিবি মাত্রার শোনার দ্বারা শ্রবণ শক্তি হারাতে পারে।
- নিজের শ্রবণ শক্তি হ্রাস পাবে।
- অন্তঃকর্ণের ভয়ংকর ক্ষতি হতে পারে।
- কানের টিস্যু অকেজো হয়ে যেতে থাকবে।
- মস্তিষ্কের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।
- উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ হতে পারে।
৭. আপডেট করতে অনীহা
আমাদের অনেকেরই ফোন, কম্পিউটার কিংবা সফটওয়্যার আপডেট করতে ব্যাপক অনীহা। কিন্তু আপডেট সর্বদাই নতুন কিছু নিয়ে আসে। অধিকাংশ সময় লেটেস্ট আপডেট সিকিউরিটি বৃদ্ধি করে। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন সফটওয়্যার নির্মাতারা প্রতিটি আপডেট দেয়ার পূর্বে তারা নতুন কি কি যোগ করেছে বা পরিবর্তন করেছে তা বলে দেয়। তাই আপনার নিকট যদি মনে হয় এই আপডেট আপনার জন্য জরুরি নয়, তবে না দিলেও সমস্যা নেই।
শেষ কথা
উপরে উল্লেখিত বদ অভ্যাস ব্যতীত আরও অনেক বদ অভ্যাস আমাদের রয়েছে। যেমন অধিক ব্রাইটনেস এবং মনিটরের খুব সামনে থেকে পিসি বা মোবাইল ব্যবহার করা, স্যোশাল মিডিয়াতে সব কিছু শেয়ার করা, অতিরিক্ত গেমস খেলা ইত্যাদি। আপনার মধ্যে যদি এসব বদ অভ্যাস থেকে থাকে, তবে তা অবশ্যই পরিহার করা উচিত।
Leave a Reply