গত কয়েক বছর আগেও মানুষ কেবল বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করে স্মার্টফোন কিনতো। কিন্তু বর্তমানে এই ট্রেন্ড পরিবর্তন হয়েছে। এখন অধিকাংশ মানুষ তার শখের স্মার্টফোন সম্পর্কে সচেতন। ফোন ক্রয়ের আগে ক্রেতারা অবশ্যই ফোনের ফিচারগুলো দেখে নিতে ভুলেন না, যদিও কোয়াডকোর নাকি অক্টাকোর এ নিয়ে কিছুটা সংশয় থেকেই যায়।
স্মার্টফোনের স্পিড এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রসেসর মৌলিক ভূমিকা রাখে এটা সার্বজনীন সত্য। তবে এই প্রসেসর নিয়েই বেশী সমস্যা এবং গোলক ধাঁধায় পড়তে হয়। আসলে কোন্ প্রসেসর ভাল কোয়াডকোর নাকি অক্টাকোর? আসুন, জানি।
কোয়াডকোর নাকি অক্টাকোর
গত কয়েক বছর আগেও অক্টাকোর প্রসেসর থাকতো দামি সব স্মার্টফোনে। হাতে গোনা কিছু ফোনে এই প্রসেসর পাওয়া যেত। কিন্তু এই ধারা পরিবর্তণ হয়েছে, এখন বাজারের অনেক বাজেট ফোনেও অক্টাকোর প্রসেসর পাওয়া যাচ্ছে। তাই মোটামুটি সবার মাথায় ঘুরপাক খায় কম দামে যদি অক্টাকোর পাই, তবে কোয়াডকোরের স্মার্টফোন কিনবো কেন?
আপনার মাথায় যদি এমন চিন্তা থাকে, তবে এই লেখাটি আপনার জন্য অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি স্মার্টফোন কেনার গাইডলাইনটি দেখে নিতে পারেন যা আপনাকে আরো ক্লিয়ার করে তুলবে।
কোয়াডকোর এবং অক্টাকোর কি
যদি বলি বর্তমান সময়ের স্মার্টফোন কম্পিউটারের মিনি ভার্সন, তবে এটা অতিরঞ্জন হবে না। কেননা কম্পিউটারের মতো স্মার্টফোনেও আপনি একটি প্রসেসর পাবেন। প্রসেসর হলো আপনার ফোনের মাদারবোর্ডে লাগানো ছোট ছোট অনেকগুলো চিপসেটের সমষ্টি। সহজ ভাষায় বললে, আপনি আপনার ফোনে যে গান শোনেন, ভিডিও দেখেন, গেমস খেলেন কিংবা অনান্য যেসব কাজ করেন, তা যে অংশ সম্পাদন করে তাকেই প্রসেসর বলে।
প্রসেসর ছাড়া আপনি এসব কাজ করতে পারবেন না। প্রসেসর ফাস্ট হলে এসব কাজ খুব ফাস্ট করতে পারবেন আর প্রসেসর স্লো হলে আপনার এসব কাজও স্লো হবে। এছাড়া মাঝে মাঝে আপনার ফোন হ্যাং করতে পারে। এবার নিশ্চয়ই মাথায় প্রশ্ন আসছে! প্রসেসর যদি প্রসেসিংয়ের কাজ করে, তবে অক্টাকোর, কোয়াডকোর কিংবা ডুয়ালকোর কি?
প্রথমে একটা বিষয় চিন্তা করুন? আপনি যখন আপনার স্মার্টফোন দিয়ে হৈচৈ বাংলার এই লেখাটি পড়ছেন, তখন হতে পারে আপনি আপনার ফোনে হেডফোন লাগিয়ে গানও শুনছেন। অর্থাৎ একটি ফোনে আপনি দুটি কাজ করছেন ইন্টারনেট ব্রাউজিং আর গান শোনা। আসলে স্মার্টফোনগুলোতে এরকম বহুমুখী কাজ করার জন্যই এত ধরণের প্রসেসর।
কোয়াডকোরে থাকে ৪টি কোর অর্থাৎ এর প্রসেসর এক সাথে ৪টি কাজ অনায়াসে এবং দ্রুত করতে পারবে। অপরদিকে অক্টাকোর হলো কোয়াডকোরের ডাবল অর্থাৎ এটা একসাথে ৮টি কাজ করতে পারে। এতটুকু পড়েই অক্টাকোরের ভক্ত হয়ে পড়লেন নাকি! আরও অনেক ব্যাপার রয়েছে।
কোয়াডকোর এবং অক্টাকোরের পার্থক্য
আপনি ইতিমধ্যেই জেনেছেন পাওয়ারের দিক থেকে অর্থাৎ কার্য্যক্ষমতা অনুযায়ী কোয়াডকোর ও অক্টাকোরের বড় একটা পার্থক্য রয়েছে। এবার জানুন, আরো কিছু ছোট-খাট পার্থক্য।
কোয়াডকোর প্রসেসর
কোয়াডকোর প্রসেসর ৪টি কাজ একসাথে করতে পারে এর অর্থ এই নয় এই ৪ প্রসেসর সবসময় কাজ করে। যেমন আপনি যখন ইন্টারনেট ব্রাউজ করবেন কিংবা মেসেজ আদান প্রদান করবেন তখন আপনার সবগুলো কোর কাজ করবে না। কিন্তু যখন হাই গ্রাফিক্সের গেম খেলবেন কিংবা ভিডিও দেখবেন, তখন এই ৪টি কোরই কাজ করবে।
কোয়াডকোরের সুবিধা:
- ৪টি কোর সমৃদ্ধ প্রসেসর
- মাল্টিটাস্কিং করার ক্ষমতা বৃদ্ধি
- ফোন হ্যাং হওয়ার সম্ভাবনা বেশী
- ব্যাটারির চার্জ কম খরচ করে
- ফোন কম গরম হয়
অক্টাকোর প্রসেসর
এটাতে ৮টি প্রসেসর কে ২টি অংশে ভাগ করা হয়। একটি অংশ থাকে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং অন্য কম ক্ষমতা সম্পন্ন। গুরুত্ব অনুধাবন করে এর দুটি অংশ কাজ করে। যেমন যখন ছোট খাট কাজ করবেন যেমন কল করা, ইন্টারনেট ব্যবহার করা, ইত্যাদি কাজে কম ক্ষমতা সম্পন্ন প্রসেসরের অংশটি কাজ করবে। আর যখন হাই লেভেলের গেমস বা অন্য কোন কাজ করবেন, তখন উচ্চ ক্ষমতার অংশটি কাজ করবে।
কথা হলো একে দুটি অংশে কেন ভাগ করা হলো! আসলে আমাদের মাথায় রাখতে হবে স্মার্টফোন কিন্তু ব্যাটারির মাধ্যমে চলে এখন খুব ছোট কাজেও যদি ৮টি কোর একসাথে কাজ করে কিংবা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন অংশ কাজ করে, তবে অনেক বেশী ব্যাটারি চার্জ ব্যবহৃত হবে। যা সুবিধার চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশী হবে। তবে আপনি চাইলে স্মার্টফোনের ব্যাটারি দ্রুত চার্জ করার পদ্ধতি জেনে নিতে পারেন।
অক্টাকোরের সুবিধা:
- কোয়াডকোরের থেকে বেশী কোর
- হাই গ্রাফিক্সের গেম বা কাজ করা যায়
কোয়াডকোর নাকি অক্টাকোর কোনটি ভাল
৮টি কোর থাকার অর্থ এই নয় যে এটি ৪টি কোর থেকে ফাস্ট হবে বরং এর সাথে আরও অনেক বিষয় জড়িত। যেমন আর্কিটেকচার, ফ্রিকোয়েন্সি এবং টেকনোলজি। আর্কিটেকচারের দিকে দিয়ে যদি অক্টাকোর থেকে কোয়াডকোর লেটেস্ট হয় তবে কোয়াডকোর অনেক বেশী ভাল হবে।
এছাড়া টেকনোলজি তথা ট্রানজিস্টার যত ছোট হবে প্রসেসর তত বেশী ভাল হবে। আর এইগুলো নির্দেশ করে 14nm, 16nm, 18nm ইত্যাদি দিয়ে। নাম্বার যত ছোট হবে ট্রানজিস্টার তত ছোট হবে।
এছাড়া রয়েছে প্রসেসরের ফ্রিকোয়েন্সি। ফ্রিকোয়েন্সি নির্দেশ করে 1.2GHz, 2GHz ইত্যাদি দ্বারা। এটা যত বেশী হবে প্রসেসর তত দ্রুত কাজ করতে পারবে।
উপর ফিচার গুলো যদি অক্টাকোর থেকে কোয়াডকোরে বেশী থাকে তবে কোয়াডকোর অক্টাকোরের থেকে বেশী ফাস্ট হবে। এতসব বিষয় বাদে আরও একটি বিষয় হলো আপনি যদি কোন হাই গ্রাফিক্সের গেম বা কাজ না করেন তাহলে অক্টাকোরের স্মার্টফোন ক্রয় করা আর অর্থ অপচয় করা একই কথা।
কেননা সাধারণ কাজে এবং অ্যাপ গুলো অক্টাকোর প্রসেসরের শক্তিশালী অংশ কাজে লাগাতে পারে না। এছাড়া বাকী অংশ চালু রাখতে ব্যাটারির চার্জও নষ্ট হয়।
শেষ কথা
কোয়াডকোর নাকি অক্টাকোর জানলেন তার বিস্তারিত। বলতে পারেন স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো মানুষকে ভুল বুঝিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্যই অক্টাকোর প্রসেসর বাজারে নিয়ে এসেছে। অবাক করা ব্যাপার হলো আইফোন এখনো তাদের ফোনে ডুয়েল কোর কিংবা থ্রিকোর ব্যাবহার করে এবং তাদের স্পিড নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন প্রশ্ন উঠেনি। সুতরাং, কোম্পানির গুজব আর সেলিব্রেটিদের বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে নয়, নিজের মেধাকে কাজে লাগান।
Leave a Reply