গ্রাফিক্স ডিজাইন আমাদের কাছে অতি পরিচিত শব্দ। সময়ের সাথে সাথে এর ক্ষেত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রাফিক্স ডিজাইনের উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র: ইউ আই বা ইউ এক্স, মার্কেটিং বা অ্যাডভারটাইজিং ডিজাইন, ভিজুয়াল আইডেন্টিফাই ডিজাইন, প্যাকেজিং গ্রাফিক ডিজাইন ইত্যাদি।
তবে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটি হচ্ছে ইউ আই বা ইউ এক্স। যদিও ইউ আই এবং ইউ এক্স দুটি ভিন্ন বিষয় কিন্তু একটি আরেকটির সাথে সম্পর্কযুক্ত। যাই হোক আজকের বিষয় হল, একজন ইউ আই বা ইউ এক্স ডিজাইনার হওয়ার ধাপগুলো কি?
ইউ আই বা ইউ এক্স ডিজাইনার হওয়ার ধাপ
১. ইউ আই নীতির সাথে নিজেকে পরিচিত করুন
যে কোন ডিজাইন শুরু করার পূর্বে তার নীতি সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিৎ। ডিজাইনের নীতি সম্পর্কে ধারণা থাকলে আপনি ডিজাইনের সাগরে সাঁতার কাটতে এবং চিন্তা ভাবনায় হতে পারবেন সৃজনশীল।
তবে একজন ডিজাইন হিসাবে, যে সকল নীতি সম্পর্কে আপনার ধারণা নেয়া উচিৎ:
- রং – রংয়ের অর্থ এবং সাইকোলজি বুঝতে হবে। কোথায় কোন রং দিতে হবে তার নীতি জানতে হবে।
- ভারসাম্য – ডিজাইনে ভারসাম্য রাখতে হবে।
- সামঞ্জস্য – প্রতিটি ডিজাইনের উপাদানের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে হবে।
- টাইপোগ্রাফি – ডিজাইনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান টাইপোগ্রাফি। তাই ফন্ট ব্যবহারের নীতি সম্পর্কে ধারণা নিন। টাইপোগ্রাফি রিলেটেড ১০টি টিপস মেনে চলুন, ডিজাইন হবে আরো দারুণ।
- আকর্ষণ – মানুষের আকর্ষণ তৈরি করা জন্য যা দরকার তার নীতি সম্পর্কে জানুন।
২. ইউ এক্সের ক্রিয়েটিভ প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানুন
কি ভাবে ইউ এক্সের ক্রিয়েটিভ প্রসেস সম্পন্ন হয় তা সম্পর্কে জানুন। এর সাধারণত ৪টি প্রক্রিয়া, যথা:
- আবিষ্কার – এই প্রক্রিয়া থেকে প্রজেক্ট শুরু হয়। ডিজাইনার এখান থেকে রিসার্চ শুরু করে এবং আইডিয়া নেয়।
- নির্ধারণ – তার বিক্ষিপ্ত আইডিয়াগুলোকে বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারণ করে।
- বিকাশ – এই ধাপে সমস্যার সমাধান বা ধারণা তৈরি করা হয়, প্রোটোটাইপ এবং টেস্ট করা হয়। এছাড়া ত্রুটি কিংবা পরিমার্জন এই ধাপেই করা হয়।
- সম্পন্ন – এটা সর্বশেষ ধাপ। এই ধাপে প্রজেক্ট তৈরি করা শেষ হয় এবং লন্চ করে।
আপনি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হোন আর ওয়েব ডিজাইনার হোন, ৫টি গুরুত্বপূর্ণ ইউএক্স টিপস অনুসরণ করুন, দারুণ কাজে দেবে।
৩. নিজের চোখকে ডিজাইনের জন্য তৈরি করুন
ডিজাইনের টুলস ব্যবহার হয় হাতে, তবে আইডিয়া না থাকলে হাত কাজ করে না। তাই নিজের চোখকে ডিজাইনের জন্য তৈরি করুন। কোন ডিজাইনটি ভাল, কোন ডিজাইনটি খারাপ কিংবা ডিজাইনের দুর্বলতা চিহ্নিত করার ক্ষমতা তৈরি করুন।
নিজের চোখকে দক্ষ করতে প্রয়োজন অন্য ডিজাইন থেকে অনুপ্রেরণা নেয়া। আর আপনি যদি নতুন ডিজাইনার হন তবে তো আপনাকে অবশ্যই অনান্য বিখ্যাত ডিজাইনারদের ডিজাইন দেখতে হবে।
ডিজাইনের অনুপ্রেরণা পেতে পারেন যে-সব ওয়েবসাইট থেকে:
৪. ডিজাইন সম্পর্কিত ব্লগ বা লেখা নিয়মিত পড়ুন
কোন বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে হলে সে বিষয় অবশ্যই জ্ঞান অর্জন করতে হবে। নিত্য নতুন ডিজাইনের সাথে নিজেকে পরিচিত করতে নিয়মিত ডিজাইন আর্টিকেল পড়ুন। এটাকে অভ্যাসে পরিণত করুন। অনলাইনে অসংখ্য আর্টিকেল রয়েছে ডিজাইন সম্পর্কিত।
ডিজাইন সম্পর্কিত আর্টিকেল পড়ার ওয়েবসাইট:
৫. ডিজাইন কপি করুন
ডিজাইন আইডিয়া এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করতে অন্যের ডিজাইন হুবহু কপি করুণ। তবে সাবধান এসব কপি ডিজাইন নিজের নামে চালিয়ে দিবেন না। কাজ শেষে ডিজাইনটি ডিলিট করে ফেলুন। কপি করার মৌলিক উদ্দেশ্য ডিজাইন অনুশীলন। এভাবে রি-ডিজাইনের দ্বারা এক সময় দেখবেন আপনি নিজেও ইউনিক ডিজাইন করতে পারছেন।
৬. লেটেস্ট ডিজাইন টুলস সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন
নিজেকে আপডেট রাখতে হলে, সব সময় আপডেট বিষয়ের সাথে নিজেকে জড়িত রাখতে হয়। অনলাইনে অসংখ্য ডিজাইন টুলস বা সফটওয়্যার রয়েছে, তবে আপনাকে সবগুলো জানতে হবে না। বরং জনপ্রিয় এবং আপনার পছন্দের সফটওয়্যার সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করুণ।
জনপ্রিয় কিছু টুলস:
- Balsamiq – ওয়ারফ্রেমিং এর জন্য
- Sketch – ইন্টারফেস ডিজাইনের জন্য
- Adobe XD – ইন্টারফেস ডিজাইনের জন্য
- Figma – ইন্টারফেস ডিজাইনে সহযোগিতা
- Marvel App – ইন্টারেক্টিভ মক আপ তৈরির জন্য
- Invision App – প্রোটোটাইপিং এর জন্য
৭. শিক্ষক তথা পরামর্শকের শরণাপন্ন হন
ডিজাইন শিখতে আরেকটি দুর্দান্ত উপায় হল ডিজাইন পরামর্শদাতা বা ডিজাইনার বন্ধুর (যিনি সাহায্য করতে ইচ্ছুক) শরণাপন্ন হওয়া। তারা আপনার শেখার গতিকে আরও দ্রুত এবং শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।
তাদের দেয়া কাজের পর্যালোচনা এবং মন্তব্য আপনার ডিজাইনের ত্রুটি দূর করবে। তাদের কাজের অভিজ্ঞতা বেশী, তাই তাদের দেয়া টিপস এবং কৌশল আপনাকে ডিজাইন জগতে আরও বেশী অগ্রসর করবে। আপনার ডিজাইন শিক্ষক বা বন্ধুকে নিয়মিত প্রশ্ন করুন এবং ডিজাইন নিয়ে আলোচনা করুন।
শেষ কথা
ইউ আই/ইউ এক্স এর জগৎ অনেক বিশাল, এই ছোট আর্টিকেলে এত কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে আমি চেষ্টা করেছি সংক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরার। উপরে উল্লেখিত ধাপ গুলো অনুসরণ করলে আপনি একজন ভাল মানের ইউ আই/ইউ এক্স ডিজাইনার হতে পারবেন।
Leave a Reply