ইউটিউবে আয় তার বছরে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১১২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা যা প্রতি মাসে ৯ কোটি ৩৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ভিডিও দুনিয়া কাঁপানো এই ইউটিইব স্টারের আসল নাম Felix Kjellberg, ইউটিউব চ্যানেলের নাম PewDiePie. তার চ্যানেলের বর্তমান সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৬ কোটি ১৩ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬৩৭। চ্যানেলটা এতই জনপ্রিয় যে, মানুষ তার আসল নাম ভুলে গিয়ে তাকে এখন তার চ্যানেলের নাম PewDiePie নামেই চেনে।
PewDiePie এর ইউটিউবে আয় এর গল্প
কী করে ইউটিউব থেকে এত টাকা আয় করেন PewDiePie! কিছুই না, শুধু মাত্র দুষ্টুমি করে। কী বলেন, এটা ক্যামনে! হ ভাই, সত্যি কইতাছি, দুষ্টুমি করেই মাসে ৯ কোটি ৩৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আয় করেন PewDiePie. তবে তার দুষ্টুমি শুধুই দুষ্টুমি নয়, তার ভেতর রয়েছে অসাধারণ সৃষ্টিশীলতা, অদ্ভূত হিউমার আর আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গি যা ভিডিও গেমারদের পাগল করে ছাড়ে, হাসাতে হাসাতে পেটে খিল ধরিয়ে দেয়। PewDiePie ভিডিও গেম খেলেন আর খেলার সঙ্গে নিজের হিউমার জুড়ে দিয়ে ভিডিও বানান। এটাই তার কারিশমা।
ভিডিও গেম তো আপনিও খেলেন! কিন্তু PewDiePie এর মত এভাবে চিন্তা করেছেন কখনো? গেমের প্রত্যেকটা চরিত্রের সঙ্গে এমন মজা করে কথা বলেন PewDiePie যা ইউটিইব দুনিয়ায় তাকে করে তুলেছে অন্যতম অসাধারণ ব্যক্তি। শুধু ভিডিও গেমাররাই নয়, এর বাইরেও তৈরি হয়েছে তার হাজার হাজার ভক্ত, যারা তাদের অবসর সময় কাটায় PewDiePie এর ভিডিও দেখে।
ফুটবল, ক্রিকেট কিংবা অন্যান্য খেলায় একজন কমেন্টর যা করেন, PewDiePie ঠিক সেই কাজটিই করেন ভিডিও গেম খেলা নিয়ে। এখানে তিনি নিজেই খেলোয়াড, নিজেই কমেন্টর। তার ভিডিওগুলোর মূল স্ক্রিনে থাকে তার খেলা, খেলার কারেক্টার আর এক কর্ণারে ছোট্ট একটি বক্সে হেডফোন কানে PewDiePie তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন অনেক মজা করে। এক অসাধারণ আইডিয়া। আর এই একটা আইডিয়া দিয়েই গত কয়েক বছর ধরে ইউটিউবকে ডমিনেট করছেন তিনি। করবেন না কেন, ইউটিউবে সর্বোচ্চ ইনকামের খেতাবটি যে তারই।
PewDiePie ১৯৮৯ সালে সুইডেনে জন্ম গ্রহন করেন। বাবা-মা দুইজনই পারিবারিক ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় PewDiePie বড় হন তার বোনের আঁচলে। ছেলে-বেলা থেকেই তার আগ্রহ শুধু আর্ট আর ভিডিও গেম খেলায়। অনেক বাংলাদেশী ছেলের মতই পিউ প্রায়ই স্কুল ফাঁকি দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ইন্টারনেট ক্যাফে বসে ভিডিও গেম খেলতেন।
২০০৮ সালে PewDiePie গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন। তারপর সুইডেনের সেরা ইউনিভার্সিটিতে ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ইকোনোমিক্স এন্ড টেকনোলোজি ম্যানেজমেন্টে ভর্তি হন। ২০১১ সালে তিনি ইউটিউবের জন্য ভিডিও বানানো শুরু করেন এবং ৬ মাসের মাথায় প্রায় ৬০ হাজার সাবস্ক্রাইবার পেয়ে যান। ফলে ভিডিও মেকিং নিয়ে তিনি এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে পড়ালেখার পাঠ চুকে যায়।
শুরুর দিকে PewDiePie শুধু The Dark Decent And Amnesia এর মত হরর গেমগুলো খেলতেন আর সেগুলো নিয়েই মজার মজার ভিডিও বানাতেন। ক্রমে তার ভিডিও গেমের তালিকা বাড়তে থাকে, সেই সাথে বাড়তে থাকে তার ভক্ত এবং আয়। ২০১৪ সালে আইফোন কোম্পানী PewDiePie এর সঙ্গে চুক্তি করে তার ভিডিও গেম নিয়ে আইফোন ইউজারদের জন্যে একটি অ্যাপ তৈরি করে।
ইউটিউবে হাজার হাজার ভক্তের মধ্যে অনেক মেয়েই PewDiePie এর প্রেমে পড়ে। কিন্তু তিনি সাড়া দেন শুধু ইটালির ভক্ত Marzia Bisognin এর প্রেমে। আর এই মেয়েটির প্রেমে তিনি এতই বিভোর হয়ে যান যে, তাকে ছাড়া তার জীবনই বৃথা মনে হয়। সুতরাং ২০১৩ সালে তিনি Marzia Bisognin কে কাছে পেতে ইটালি চলে যান। বর্তমানে তারা দু’জনই দারুণ সুখের জীবন কাটাচ্ছেন। Marzia Bisognin শুধু তার কাজে অনুপ্রেরণাই দেন না, সহযোগীতাও করেন সাধ্যমত, যতটা সময় পান।
কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ PewDiePie এ যাবৎ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে, সুইডেন সোশাল স্টার অ্যাওয়ার্ড, স্টার কাউন্ট সোশাল স্টার অ্যাওয়ার্ড, শর্টি অ্যাওয়ার্ড ফর গেমিং, টিন চয়েস অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়েব স্টার গেমিং, স্ট্রিমিং অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট গেমিং চ্যানেল ইত্যাদি। বিশ্ববিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন ২০১৬ সালের পৃথিবীর ১০০ প্রভাবশীলী ব্যক্তির তালিকায় তার নাম অর্ন্তভূক্ত করে।
PewDiePie এর এত এত সফলতার পেছনে রয়েছে এক মাত্র ইউটিউব ভিডিও তৈরি। ইউটিউবের জন্য ভিডিও তৈরি করে আপনিও পেতে পারেন সফলতা। ইউটিউব ভিডিও তৈরির সেরা ১০টি আইডিয়া দেখুন। আর ইউটিউব থেকে কিভাবে আয় করবেন জেনে নিন। এছাড়াও জেনে নিতে পারেন ইউটিউবে ভাইরাল ভিডিও তৈরী করার সবচেয়ে সহজ উপায় যা আপনার ইনকাম বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
Leave a Reply