ইন্টারনেটে গান ও মিউজিক বিক্রয় করে টাকা আয় করার মত অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে, যা সম্পর্কে অনেকেই এখনও অবগত নয়। গান বিক্রি করার ওয়েবসাইট থাকতে পারে তা অনেকেরই ধারণার বাইরে।
চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী আমরা সবাই এটাই ভেবে বসে থাকি যে, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যারিয়ার গড়তে হলে ভালো কোন ব্যান্ড সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে। তারপর বিভিন্ন কনসার্ট, রেকর্ডিং বা মিউজিক অ্যালবাম প্রকাশের মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
কিন্তু আজকের দিনে এ ধরনের ধারণাকে কোনভাবেই পুরোপুরি সত্য বলা যায় না। ইন্টারনেটের কল্যাণে বর্তমানে এমন অনেক শিল্পী রয়েছেন, যারা বিভিন্ন ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে রাতারাতি জনপ্রিয় তারকা বনে যাচ্ছেন।
পাশাপাশি তাদের এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে তাদের রেকর্ড করা গান ও মিউজিক বিক্রয় করে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন।
গান বিক্রি করার ওয়েবসাইট
গান ও মিউজিক বিক্রয় করে টাকা আয় করার সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো নিজের অরিজিনাল কম্পোজিশনগুলিকে অনলাইনে বিক্রি করা। পৃথিবীতে অসংখ্য ব্যক্তি এবং কোম্পানী রয়েছে যারা নিজেদের কাজের প্রয়োজনে এ ধরনের গান বা মিউজিক ক্রয় করে থাকেন।
অনলাইন মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে যারা সফল, তাদের অধিকাংশই এ ধরনের ওয়েবসাইটগুলিতে নিজেদের কম্পোজিশন বিক্রয় করে থাকেন। তাই দেরি না করে চলুন জেনে নিই এমন ওয়েবসাইটগুলি সম্পর্কে যেখানে আপনি আপনার কম্পোজকৃত গান এবং মিউজিক বিক্রয় করতে পারবেন।
LuckStock.com
বিভিন্ন কোম্পানী, মাল্টিমিডিয়া প্রযোজকদের কাজের প্রয়োজনে সব সময় মিউজিক ও গানের প্রয়োজন হয়ে থাকে। আর এই ধরনের ব্যক্তি বা কোম্পানীগুলির কাছে নিজের কম্পোজিশন বিক্রয় করার জন্য লাকষ্টক একটি আদর্শ প্লাটফর্ম। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, মুভি, কমার্শিয়াল ভিডিও, কর্পোরেট প্রেজন্টেশন, রেডিও ব্রডকাস্ট, পডকাস্ট, ইউটিউব ভিডিও ইত্যাদি সবখানেই রয়েলটি ফ্রি মিউজিকের চাহিদাকে পূরণ করার মাধ্যমে এই ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে বিপুল পরিমাণ ক্লায়েন্ট যারা হরহামেশাই এখান থেকে গান এবং মিউজিক ক্রয় করে থাকেন।
কি নেই এখানে! বিভিন্ন ধরনের অডিও ট্র্যাকের পাশাপাশি এখানে এমনও অনেক টিউন বিক্রি হতে দেখা যায় যা গতানুগতিক বাদ্যযন্ত্রের পরিবর্তে সম্পূর্ণ ডিজিটালভাবে সফট্ওয়্যারের মাধ্যমে তৈরী করা হয়ে থাকে। তাই কোন ব্যান্ড বা বাদ্যযন্ত্র বাজানোর পারদর্শিতা ছাড়াও এখানে খুব সহজেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব। আপনি আপনার কম্পোজিশন সাবমিট করলে লকষ্টক সেটি রিভিউ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রহণ করে থাকে। এছাড়া প্রতি ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ও কম্পোজিশন অনুযায়ী তারা ৬ থেকে ৩০ ডলার পর্যন্ত মূল্য দিয়ে থাকে।
SOUNDOTCOM
রয়েলটি ফ্রি মিউজিক বিক্রয় করার জন্য এটিও একটি অসাধারণ ওয়েবসাইট। এটির কাজের প্রক্রিয়ায় লকষ্টকের সাথে অনেক সাদৃশ্য থাকলেও এখানে আপনি চাইলেই অডিও আপলোড করতে পারবেন না। এই ওয়েবাসাইটের ভেন্ডর পদ লাভের জন্য আপনাকে কমপক্ষে ৩০টি অডিও আপলোড করতে হবে। আপনি যদি তাদের অন্যান্য চাহিদা অনুযায়ীও যোগ্যতা সম্পন্ন হয়ে থাকেন, তবুও ৩০টি অডিও ট্র্যাক আপলোডের পূর্বে আপনি তা বিক্রয়ের অনুমোদন পাবেন না।
এই ওয়েবসাইটটি শিল্পীদের সাথে ৫০ শতাংশ রয়েলটি ভাগাভাগি করে থাকে। অর্থাৎ যে দামে আপনার মিউজিকটি বিক্রি হবে তার অর্ধেক তারা নেবে এবং বাকী অর্ধেক আপনাকে প্রদান করবে। অন্যান্য ওয়েবসাইটের তুলনায় তারা একটু বেশি সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করে। তবে, এর পরিবর্তে তারা আপনাকে সুবিধা দেয় তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করা অডিও অন্যান্য ওয়েবসাইটেও বিক্রি করার, যা আমার কাছে ভালো একটি সুযোগ বলে মনে হবে।
Fiverr
ফাইভার সম্পর্কে নতুন করে বলার মত কিছু নেই। আমরা সকলেই এটির কার্যাবলী এবং কাজের প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত। আপনি যদি কোন নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে আগে থেকে কম্পোজকৃত অডিও বিক্রি করতে না চান, তাহলে ফাইভারে গিগ দেওয়ার মাধ্যমে ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী অডিও কম্পোজ করে আপনি সেটি বিক্রয় করতে পারেন।
ফাইভারের একটি সুবিধা হচ্ছে অন্যান্য ওয়েবসাইটের তুলনায় প্রতিটি অডিও ট্র্যাকের জন্য এখানে অনেক বেশি অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। ফাইভারের সফল কম্পোজারগণ প্রতিটি অডিও ট্র্যাকের বিনিময়ে প্রায় ৪০ ডলারের মত পারিশ্রমিক গ্রহণ করে থাকেন।
Airbit
এয়ারবিট পূর্বে মাই ফাশ ষ্টোর নামে পরিচিত ছিল। এটি অনলাইনে গান, মিউজিক, টিউন বিক্রয় করার জন্য অনেক ভালো মানের একটি ওয়েবসাইট। তার কারণ হলো, ইতিমধ্যেই তারা কম্পোজার এবং মিউজিক ক্রেতা উভয়ের নিকটই সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
আপনি যদি অনলাইন মিউজিক ইন্ড্রাস্ট্রিতে নতুন হয়ে থাকেন, তাহলে এটি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। কারণ বেশিরভাগ ওয়েবসাইটেই মিউজিক বিক্রয়ের জন্য প্রথমে টাকা দিয়ে মেম্বারশীপ ক্রয় করতে হয়। কিন্তু এখানে প্রাথমিক পর্যায়ে ফ্রি অ্যাকাউন্ট দিয়েই মিউজিক বিক্রয় করা সম্ভব। পরবর্তীতে তাদের বিভিন্ন প্লান অনুযায়ী মেম্বারশীপ আপগ্রেড করার মাধ্যমে বিক্রয়ের ধারা আরো বেশি প্রসারিত করা সম্ভব।
SoundCloud
সাউন্ডকাউড বিল্ট ইন অডিও প্লেয়ার সমৃদ্ধ একটি ওয়েবসাইট হওয়ার কারণে অনেক কম্পোজারই তাদের টিউন এখানে আপলোড করে থাকেন। প্রচারের দিক থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার সমতুল্য না হলেও প্রকৃত মিউজিক ক্রেতাদের কাছে এটি অতি পরিচিত ওয়েবসাইট হওয়ার ফলে এখানে আপনার জন্য সফল হওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ।
কয়েক মিলিয়ন ইউজার এর সমন্বয়ে অনলাইনে তারা এমন বিশাল একটি কমিউনিটি তৈরী করেছে যেখানে প্রতিনিয়তই নতুন পুরাতন মিউজিক, গান, অডিও ট্র্যাক, টিউন ইত্যাদি বিক্রয় হচ্ছে। সাউন্ডক্লাউডে আপনার কম্পোজিশন পোষ্টিং এর মাধ্যমে আপনি অডিও বিক্রয়ের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পীদের সাথেও নেটওয়ার্কিং এর সুযোগ পাবেন, যা আপনার জন্য আরো অনেক সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে।
গান বিক্রি করার ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে কম্পোজিশন বিক্রির প্রক্রিয়াটি বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এর কারণ হলো, একজন শিল্পী দীর্ঘদিনের সময়ের পরিশ্রম এবং অর্থের বিনিময়ে একটি অ্যালবাম প্রকাশ করে। কিন্তু দেখা যায় অ্যালবাম প্রকাশের কিছু সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সেগুলি ফ্রি ডাউনলোড করার জন্য আপলোড করে দেওয়া হয়।
এতে একদিকে যেমন শিল্পীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়, অন্যদিকে তারা পরবর্তীতে অ্যালবাম বা মিউজিক কম্পোজিশনের উপরও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। আর এ কারণেরই বর্তমানে অধিকাংশ শিল্পীই গতানুগতিক পদ্ধতির পরিবর্তে অনলাইনে গান ও মিউজিক বিক্রয় করতে আগ্রহী। আপনিও তাদের সাথে যোগ দিন।
আজিজ says
গান বিক্রি করতে চাই। উপরোক্ত সাইটগুলোতে বিক্রি করা যাবে?