যদিও ক্রিকেট ব্যাটসম্যানের খেলা হিসেবে পরিচিত, তবুও এমন কিছু ফাস্ট বোলার আছে যারা এই খেলাটিকে দীর্ঘ সময় ধরে শাসন করছে।
ক্রিকেটের বেশিরভাগ নিয়ম ব্যাটসম্যানদের পক্ষে থাকার পরও এই ফাস্ট বোলাররা ব্যাটসম্যানদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে দেননি।
কখনো কখনো ব্যাটসম্যানদের উপর এরাই আধিপত্য বিস্তার করেছেন। ব্যাটসম্যানের জন্য সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বল হাতে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সের জন্য ক্রিকেট ইতিহাসে তারা আজীবন স্বরণীয় হয়ে থাকবেন।
আসুন, ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা গতির কিছু ফাস্ট বোলার সম্পর্কে জেনে নিই যারা নিজ নিজ দেশের হয়ে আধিপত্য বিস্তার করেছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের উপর।
এই বোলাররা টেস্ট ক্রিকেটে ১৫০ বা তারও বেশী উইকেট শিকার করেছেন।
সর্বকালের সেরা দশ ফাস্ট বোলার
জেমস আন্ডারসন
জেমস মিচেল আন্ডারসন জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮২ সালের ৩০ জুলাই। ২২ মে, ২০০৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেকের পর থেকেই সর্বকালের অন্যতম সেরা পেসার হিসেবে নিজেকে পরিচিত করেছেন।
সুইং বোলার হিসেবে খ্যাতি থাকা এই বোলার প্রত্যেক ব্যাটসম্যানের কাছেই এক আতঙ্কের নাম। জেমস আন্ডারসন ১৪৩ টেস্টে ২৬.৮৪ গড়ে সংগ্রহ করেন ৫৬৪ টি উইকেট।
গ্লেন ম্যাকগ্রা
১৯৭০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এই অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার।
১৯৯৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত যে সময় অস্ট্রেলিয়া শাসন করছিল বিশ্ব ক্রিকেটকে সেই সময় “ব্যাগি গ্রিন” এর অন্যতম একজন সদস্য ছিলেন তিনি।
১২৪ টেস্টে ২১.৬৪ গড়ে ৫৬৩ টি উইকেট সংগ্রহ করেছেন এই কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার।
ডেল স্টেইন
আধুনিক যুগের অন্যতম সেরা দ্রুতগতির বোলারদের একজন ডেল স্টেইন জন্মগ্রহ্ণ করেন ১৯৮৩ সালের ২৭ জুন। “স্টেইন গান” নামে খ্যাতি পাওয়া এই বোলারের গড় টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা।
২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত রেকর্ড ২৬৩ সপ্তাহ আইসিসি বোলারদের র্যাংকিংযের শীর্ষে ছিলেন ডেল স্টেইন।
৮৮ ম্যাচে ২২.৬৪ গড়ে ৪২১ উইকেট পেয়েছেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ফাস্ট বোলার।
ওয়াসিম আকরাম
১৯৬৬ সালের ৩ জুন জন্মগ্রহণ করেন ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল বাঁহাতি এই ফাস্ট বোলার। ওয়াসিম আকরাম পাকিস্তান জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ১০৪ টি টেস্ট।
বাঁ হাতি এই ফাস্ট বোলার বলকে যেকোন কন্ডিশনেই সুইং করানো ও বলের মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণ করাতে পারদর্শী ছিলেন। আকরাম ছিলেন রিভার্স সুইংযের অন্যতম পথিকৃতদের একজন।
১৯৮৫ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত খেলা এই ফাস্ট বোলার ১০৪ টেস্টে ২৩.৬২ গড়ে তুলে নেন ৪১৪ উইকেট।
রিচার্ড হ্যাডলি
নিউজিল্যান্ড কিংবদন্তি স্যার রিচার্ড জন হ্যাডলি ১৯৫১ সালের ৩ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ফাস্ট বোলার ও অলরাউন্ডারকে আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই।
১৯৭৩-১৯৯০ পর্যন্ত ৮৬ টেস্ট ম্যাচে ২২.২৯ গড়ে ৪৩১ উইকেট নিয়েছেন রিচার্ড হ্যাডলি।
মূলত ক্রিকেটের “লম্বা সংস্করণ”এ তিনিই প্রথম বোলার যিনি ৪০০ উইকেটের মাইলফলক অতিক্রম করেছিলেন।
হ্যাডলি, প্রথাগত সুইংযের মাস্টার, পাশাপাশি করেছিলেন ২৭.১৬ গড়ে ৩,১২৪ রান যার মধ্যে ছিল ২ সেঞ্চুরি ও ১৫ হাফ-সেঞ্চুরি।
ওয়াকার ইউনিস
সর্বকালের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলারদের একজন ওয়াকার ইউনিস জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭১ সালের ১৬ নভেম্বর।
দ্রুত গতির সাথে রিভার্স সুইং করানোর অবিশ্বাস্য ক্ষমতা ছিল এই ফাস্ট বোলারের।
ওয়াকার, ওয়াসিম আকরাম একসাথে দীর্ঘদিন যাবৎ পাকিস্তানি বোলিং আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দ্রুতগতির সাথে সুইং, রিভার্স সুইং করতে পারার কারণে ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে কার্যকরী বোলিং জুটির অন্যতম ছিল ওয়াকার ইউনিস-ওয়াসিম আকরাম বোলিং জুটি।
১৯৯০ এর শেষের দিকে এই বোলিং জুটি পাকিস্তানকে অনেক ম্যাচে জয় পেতে সাহায্য করেছিল। ১৯৮৯-২০০৩ পর্যন্ত ৮৭ টেস্টে ২৩.৫৬ গড়ে ৩৭৩ টি উইকেটের মালিক হন এই পাকিস্তানি কিংবদন্তি।
কার্টলি অ্যামব্রোস
কার্টলি অ্যামব্রোস, একজন কিংবদন্তি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলার, জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। তিনি প্রথমে একজন বাস্কেটবল খেলোয়াড় হতে চাইলেও পরবর্তীতে একজন ফাস্ট বোলার হন।
অন্যদের চেয়ে একটু দেরীতে ক্রিকেট খেলা শুরু করলেও খুব দ্রুতই নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হন। ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার কারণে তিনি এমন উচ্চতায় বাউন্স তুলতে পারতেন যা ব্যাটসম্যানের জন্য অস্বস্তিকর হত।
১৯৯৩ সালে তিনি ১ রানে ৭ অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠিয়েছিলেন। ১৯৮৮-২০০০ এই সময়ে ৯৮ টেস্টে ২০.৯৯ গড়ে অ্যামব্রোস পেয়েছিলেন ৪০৫ উইকেট।
ডেনিস লিলি
১৯৪৯ সালের ১৮ জুলাই জন্মগ্রহণ করা এই ফাস্ট বোলার ক্যারিয়ারজুড়ে পরিচিত ছিলেন তার অগ্নি-মেজাজের জন্য।
লিলি তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন একজন অত্যন্ত দ্রুতগতির বোলার হিসেবে।
১৯৭০-১৯৮৩ পর্যন্ত এই ১৩ বছরে তিনি ৭০ টেস্টে ২৩.৯২ গড়ে সংগ্রহ করেন ৩৫৫ উইকেট।
লিলি ১৯৭৫-১৯৮৩ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রথম তিন বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন।
কোর্টনি ওয়ালস
১৯৬২ সালের ৩০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করা ওয়ালস ১৯৮৪-২০০১ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্যুতি ছড়ান। কোর্টনি ওয়ালস ও কার্টলি অ্যামব্রোস মিলে অনেক বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে বোলিংযে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
এই দু’জন মিলে ৪৯ ম্যাচে ৪২১ উইকেট ভাগাভাগি করেছেন। যা অনন্যসাধারণ এক বোলিং জুটির স্বাক্ষ্য দেয়। ওয়ালস, সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অধিনায়ক ১৩২ ম্যাচে ২৪.৪৪ গড়ে ৫১৯ উইকেট সংগ্রহ করেন।
ইমরান খান
১৯৫২ সালের ৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করা ইমরান খান পাকিস্তান ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়দের অন্যতম।
ক্যারিশম্যাটিক এই অলরাউন্ডার পাকিস্তানকে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন একাই। তিনি শুধু ৩৬২ উইকেটই নেননি, ক্রিকেটের দীর্ঘতম সংস্করণে করেছেন ৩,৮০৭ রানও।
তিনি পাকিস্তানের হয়ে ৮৮ ম্যাচে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, বোলিং করেছেন ২২.৮১ গড়ে। দুই দশকের ক্যারিয়ারে ৫ উইকেট নিয়েছেন ২৩ বার, ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন ৬ বার।
এই ছিল সর্বকালের সেরা দশ ফাস্ট বোলারের তালিকা। ভাল লাগলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন।
মিরসরাই প্রতিদিন says
লেখাটি পড়ে সর্বকালের সেরা কিছু বোলার সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। তবে, আমার মতে, পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরামই সর্বকালের সেরা বোলার; আমার দেখা সেরা পেস বোলার তিনিই।