অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ সফল ওয়েবসাইট বানানো আজকের দিনে খুব একটা কঠিন নয়। আর একারণেই অ্যাফিলিয়েশন হাল সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং পেশাগুলির মধ্যে একটি। এর মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম জেনারেট করা যায় বলে অন্যান্য ফ্রিল্যান্সিং এর দিক থেকে এটি একধাপ এগিয়ে রয়েছে।
আপনি যদি আপওয়ার্ক, ফাইভার বা অন্য কোন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে ইতিপূর্বে কাজ করে থাকেন, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে এখানে আপনি ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজ পাওয়ার আগে কিছুই করতে পারবেন না। আপনাকে নিয়মিত বিড করে যেতে হবে, কায়েন্টের কাছে ইন্টারভিউ দিতে হবে এবং চুক্তিভিত্তিকে কাজটি সম্পাদন করতে হবে। যেখানে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে এর কোনটিই করার প্রয়োজন হয় না।
আপনি যদি একটি সফল অ্যাফিলিয়েট সাইটের মালিক হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি যদি ঘুমিয়েও থাকেন, তবুও আপনার ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম জেনারেট হতে থাকবে। অনলাইনে এমন অনেক কাজ আছে যাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই আয় করা যায়। যার মানে আপনি কাজ করছেন না কিংবা অন্য কাজে ব্যস্ত রয়েছেন, কিন্তু আপনার সাইট থেকে আয় আসা বন্ধ হচ্ছে না, চলছেই।
তবে, তার মানে এই নয় যে আপনি একটি সাইট বানালেন আর ইনকাম শুরু হয়ে গেলো। একটি অ্যাফিলিয়েট সাইট থেকেও কাঙ্খিত অর্থ উপার্জন করার জন্য পর্যাপ্ত পরিশ্রম করতে হয়। এখন নিজেকেই প্রশ্ন করে দেখুন যে আপনার পক্ষে কতটুকু পরিশ্রম করা সম্ভব।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ সফল ওয়েবসাইট
মানুষ হিসেবে আমরা খুব সহজেই অন্যের সফলতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকি। সফল কোম্পানীগুলোকে দেখে আমরা নিজেরাও সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখি এবং এটা দোষের কিছু নয়। সফল ব্যক্তিরাও কোন একজনকে তাদের আদর্শ মেনেই বিভিন্ন কাজ করে থাকেন আর অ্যাফিলিয়েশনও তার ব্যতিক্রম নয়।
কিন্তু সমস্যাটা তখন হয়, যখন আমরা কোন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ সফল ওয়েবসাইটের শুধুমাত্র সফলতাকে দেখে নিজেরাও সেটা করতে নেমে পড়ি। আমাদের বুঝতে হবে যে পৃথিবীতে অসংখ্য অ্যাফিলিয়েট ওয়েবসাইট থাকলেও তাদের সবাই সফল নয়।
তাই আমরাও যদি একটি সফল ওয়েবসাইট তৈরী করতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাদের এইসব ওয়েবসাইটের কাজ করা কৌশলগুলি সম্পর্কে জানতে হবে। আসলে আপনি যে ধরণের এফিলিয়েটই করেন না কেন, আপনাকে এফিলিয়েট থেকে আয় করার কৌশল জানতে হবে। তাই চলুন আজকে জেনে নিই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ সফল কিছু ওয়েবসাইটের পেছনের গল্প।
Consumer Search
ইন্টারনেটে যারা বিভিন্ন পণ্য কিনে থাকেন, তাদের বেশিরভাগ মানুষই কোন পণ্য কেনার আগে তার রিভিউ দেখে নিতে ভুল করেন না। আর মানুষের এই প্রবণতাকে কাজে লাগিয়েই এই ওয়েবসাইটটিকে বিভিন্ন পণ্যের রিভিউ দিয়ে সাজিয়ে নিয়েছে। এই ওয়েবসাইটটি তাদের ভিডিজটরদের কাছ থেকে কোন ধরনের সাবস্ক্রিপশন ফি গ্রহণ করে না। এর পরিবর্তে তারা তাদের ওয়েবসাইটে আগত ভিজিটরদের তাদের চাহিদা অনুযায়ী অ্যামাজনে থাকা বিভিন্ন পন্যের গুণগত মান সম্পর্কে অবগত করে।
তাদের রিভিউ পড়ার মাধ্যমে কোন ভিজিটর যখন ওই ওয়েসাইটে থাকা লিংকে ক্লিক করে অ্যামাজন থেকে কোন পণ্য ক্রয় করে, তখন তার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন এই ওয়েবসাইটটি লাভ করে থাকে। অ্যামাজন এর পণ্যের রিভিউ করে এমন ওয়েবসাইটের সংখ্যা কম না হলেও এই ওয়েবসাইটটি তাদের মানসম্পন্ন কন্টেন্ট এর কারণে অন্যদের থেকে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে থাকে।
ওয়েবসাইটি তৈরীর খুব কম সময়ের মধ্যেই এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। যার ফলে এর প্রতিষ্ঠাতা এটিকে নিউ ইয়র্ক টাইমস নামক প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩৩ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে বিক্রী করে দেয়।
কনজুমার সার্চ এটা খুব ভালোভাবেই জানে যে, অ্যামাজনে কয়েক মিলিয়নেরও বেশি পণ্য রয়েছে। এইসব পণ্যের মধ্য থেকে তারা শুধুমাত্র সেই পণ্যগুলিকেই বেছে নেয় যেগুলি সবচেয়ে ভালো। গুণগত মানসম্পন্ন পণ্যের রিভিউ থাকার কারণে এই ওয়েবসাইটের রিভিউগুলি মানুষের অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
রিভিউ করার জন্য পণ্য বাছাই করার ক্ষেত্রে তারা ১ এবং ৫ ষ্টার রিভিউ প্রাপ্ত পণ্যগুলিকে বাদ দিয়ে মধ্যবর্তীয় পণ্যগুলিকে বেছে নেয়। এর কারণ তারা বিশ্বাস করে যে সবচেয়ে খারাপ এবং সবচেয়ে ভালো পণ্যের বদলে মধ্যবর্তী পণ্যের অনেক সৎভাবে রিভিউ করা সম্ভব হয়। কারণ এতে পণ্যটির ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় বিষয় নিয়েই কথা বলা সম্ভব হয়। এটাই তাদের ব্যবসায়ীক কৌশল যা তাদেরকে আজকের এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।
TripAdvisor
ছুটিতে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার কথা ভাবছেন? কিন্তু কোথায় যাবেন বা কেমন খরচ হতে পারে আপনার এই তথ্যগুলিকে জানার আগ্রহকেই কেন্দ্র করে ট্রিপ অ্যাডভাইজার ওয়েবসাইটটি পরিচালিত হয়। কোন নির্দিষ্ট স্থানে ট্রাভেলিং এর জন্য বিশ্বের সবচেয়ে স্বনামধন্য কোম্পানীগুলোর মধ্যে কে কতটার মধ্যে কি কি সুবিধা দিয়ে থাকে, তার তুলনামূলক বিবরণ এই ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়।
ফলে এই ওয়েবসাইটের ভিডিজটরা খুব সহজেই সবচেয়ে সাশ্রয়ী রেটে তাদের কাঙ্খিত স্থানে ট্রাভেল করার সুযোগ পান। আর এর জন্য ট্রিপ অ্যাডভাইজার তাদের ভিজিটরদের কাছ থেকে কোন ধরনের ফি গ্রহণ করেন না।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যদি ভিজিটররা এই ওয়েবসাইটে ফ্রি সেবা পেয়ে থাকেন, তাহলে এই ওয়েবসাইটটি কিভাবে ইনকাম করে। মার্কেটিং সম্পর্কে একটা ইংরেজী প্রবাদ রয়েছে- “If you’re not paying for the product, then you’re the product”
পৃথিবীর বড় বড় ট্রাভেল কোম্পানীর সাথে ট্রিপ অ্যাডভাইজার ওয়েবসাইটটির অ্যাফিলিয়েট পার্টনারশীপ রয়েছে। যেহেতু এই ওয়েবসাইটটি ভিজিটরদের কখনও ভুল তথ্য দিয়ে কোন নির্দিষ্ট কোম্পানীর কাছ থেকে সেবা গ্রহণের জন্য প্রলুব্ধ করে না, সেহেতু তার সকলের কাছ থেকেই গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছেন।
অনেক ভিজিটর এটা অনুমানই করতে পারেন না যে এটা একটা অ্যাফিলিয়েট ওয়েবসাইট। কিন্তু সত্য এটাই যে, পৃথিবীর অনেক বড় কোম্পানীই তাদের প্রতিনিয়ত কমিশন দিয়ে যাচ্ছে।
ট্রিপ অ্যাডভাইজার তাদের অ্যাফিলিয়েশন এর চাইতে ভিজিটরদের সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আর একারণে এই ওয়েবসাইটটিতে প্রচুর পরিমানে ভিজিটর আসে, যার ফলে অ্যালেক্সা র্যাংকিং এ তাদের স্থান ৮১। একটি হিসাব অনুযায়ী এই ওয়েবসাইটটি প্রতি মাসে ১১৬ মিলিয়নের বেশি মানুষ ভিজিট করে থাকে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ সফল ওয়েবসাইট এবং তাদের কৌশল সম্পর্কে তো জানলেন। এবার সময় এসেছে কিছু করে দেখানোর। আপনিও যদি একজন সফল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হতে চান, তাহলে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে চলুন। আর এ ধরনের আরো কিছু সফল কোম্পানীর ব্যবসায়ীক নীতি এবং কৌশল সম্পর্কে ধারণা গ্রহণ করুন এবং একটি মানসম্মত ওয়েবসাইট তৈরী করে প্যাসিভ ইনকামের যাত্রা শুরু করে দিন।
Leave a Reply