ফেসবুক বর্তমান সময়ের সবচাইতে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া। খুঁজলে এমন অনেক মানুষ পাওয়া যাবে, যারা দিনের অধিকাংশ সময় ফেসবুকে ব্যয় করে। ৩০ই জুন ২০১৭ সালের এক জরিপে দেখা যায়, ফেসবুকে প্রতিদিন প্রায় ১ বিলিয়ন ব্যবহারকারী অ্যাক্টিভ থাকে।
Nielsen এর দেয়া তথ্য মতে, আমেরিকানরা ফেসবুকে বিভিন্ন মাধ্যমে গড়ে ১০ ঘন্টা ৩৯ মিনিট সময় ব্যয় করে। আর এর মধ্যে শুধু মোবাইলের মাধ্যমে ফেসবুকে প্রতিদিন ৫ ঘন্টা সময় ব্যয় করে সেখানকার মানুষেরা।
তবে মজার ব্যাপার হলো এত জনপ্রিয়তার মাঝেও এমন অনেক দেশ আছে, যেসব দেশে ফেসবুক বন্ধ। অর্থাৎ সে দেশের নাগরিকরা চাইলেও ফেসবুক ব্যবহার করতে পারে না। তবে কেন ফেসবুক ব্যবহার করতে পারে না, এসব কারণ জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। ফেসবুক সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় জানার পাশাপাশি চলুন জানি যে ৩টি দেশে ফেসবুক ব্যবহার করা যায় না।
যে সব দেশে ফেসবুক ব্যবহার নিষিদ্ধ
১. চীন
চীনে প্রথম ফেসবুক ব্লক করা হয় ২০০৯ সালের জুলাই মাসে। বিশেষ করে উইঘুর দাঙ্গার ঘটনাকে কেন্দ্র করে, চীন সরকার ফেসবুক ব্লক করে দেয়। চীন সরকার ধারণা, জিনজিয়াংরা দাঙ্গা ছড়ানোর জন্য মানুষ যোগাযোগ এবং পরিকল্পনা করতো ফেসবুক ব্যবহার করে।
পরবর্তীতে চীনের কমিউনিস্ট সরকার আরও বেশী উগ্র হয়ে ওঠে। তারা আক্রমণাত্মকভাবে ফেসবুক এবং পুরো ইন্টারনেটকে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে। তারা নিয়মিত পোস্ট মুছে ফেলা এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্লক করা শুরু করে দেয়।
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ফেসবুকের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তবে মজার ব্যাপার হল এটা কেবল সাংহাইয়ের ১৭ বর্গ মাইলের ট্রেড জোনের ভিতরে এবং কেবল বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ফেসবুক ব্যবহার করতে পারতো।
বর্তমানে চীনে স্বাধীনভাবে কেউ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে না। কারণ তাদের প্রতিটি কার্যকলাপে চীন সরকার নজরদারি করে। চীনের কমিউনিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যায়, এমন সব ওয়েবসাইট চীনে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। আর তার মাঝে অন্যতম ফেসবুক।
২. উত্তর কোরিয়া
২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে উত্তর কোরিয়া ফেসবুক ব্লক করা শুরু করে। অনলাইনে তথ্য বিস্তার এবং নিজেদের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে উত্তর কোরিয়া এ উদ্যোগ নেয়।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের মতে, উত্তর কোরিয়ান সরকারের বিশেষ অনুমতি ছাড়া কেউ ফেসবুকে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। উত্তর কোরিয়ার নাগরিকরা অন্যদের থেকে আলাদাভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। উত্তর কোরিয়ায় কেবল বিদেশী ভিজিটরদের জন্য থ্রিজি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারে। তবে নাগরিকদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
আরও মজার ব্যাপার হল পিয়ংইয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী এবং অধ্যাপকগণের একটি বিশেষ ল্যাব থেকে সীমিত সংখ্যক ওয়েবসাইটে অ্যাক্সেস করতে পারে। তবে বাইরের বিশ্বের ভয়ের কারণে সেটাও তেমন ব্যবহার করা হয় না।
তাই বলা যায়, উত্তর কোরিয়া নিশ্চিতভাবেই অন্য কোনও দেশের চেয়ে, স্যোশাল মিডিয়া ব্লক করার জন্য গিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড জিততে পারে!
৩. ইরান
ইরানের ২০০৯ সালের নির্বাচনের পর, সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগঠিত হওয়ার ভয়ে ফেসবুক সহ বেশ কিছু স্যোশাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
ইরানে যদিও রাজনৈতিক নেতারা স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে। এমনকি রাষ্ট্রপতি হাসান রুহানিরও নিজস্ব টুইটার অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যদিও দৃশ্যত তিনি নিজে টুইট লিখেন না। তবে এই অ্যাকাউন্টগুলিতে অ্যাক্সেস কেবল প্রক্সি সার্ভারের মাধ্যমেই করা যায়।
শেষ কথা
উপরে উল্লেখিত তিনটি দেশ ছাড়া এমন অনেক দেশ আছে, যারা সাময়িকভাবে ফেসবুক বন্ধ রাখে বা বন্ধ রেখেছিল। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ইসরায়েল, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, ইউকে, তাজিকিস্তান, ভিয়েতনাম, সিরিয়া, মরক্কো, মালয়েশিয়া, জার্মানি, মিশর।
Leave a Reply