প্রোগ্রামিং শব্দটা শুনেছেন এবং এটি শেখার প্রতি এক ধরণের আগ্রহ বোধ করছেন; কিন্তু কীভাবে শুরু করবেন বুঝতে পারছেন না, এরকম মানুষদের জন্যই আজকের আলোচনা। আপনি যেহেতু প্রোগ্রামিং শেখার উপায় জানতে এসেছেন, তাই ধরে নিচ্ছি প্রোগ্রামিং ব্যাপারটা কী সে ব্যাপারে আপনার কিছুটা হলেও ধারণা রয়েছে।
যদি না থাকে, তাহলে জেনে নিন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ আসলে কি এবং কেন আপনার প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শেখা উচিৎ?
আশা করি, লেখাটি পড়ে আসার পর প্রোগ্রামিং সম্পর্কে আপনার ধারণা সম্পূর্ণ ক্লিয়ার হয়ে গিয়েছে। সেই সাথে, আপনি এটাও বুঝে ফেলেছেন, আপনার আসলেই প্রোগ্রামিং শেখা উচিৎ।
তাই, আজকের আলোচনায় প্রোগ্রামিং কী বা এর গুরুত্ব কেমন সেটি নিয়ে আমি আর কথা বলব না, বরং আজকে শুধু কথা বলব প্রোগ্রামিং শেখার উপায় নিয়ে।
প্রোগ্রামিং শেখার উপায়
এখানে আলোচিত প্রোগ্রামিং শেখার উপায় গুলো একদমই ফ্রি। অর্থাৎ প্রোগ্রামিং শেখার জন্য এই পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করতে চাইলে আপনাকে একদমই কোন টাকা পয়সা খরচ করতে হবে না। শুধুমাত্র একটি মোবাইল ফোন কিংবা একটি কম্পিউটার ও একটুখানি ইন্টারনেট হলেই প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করে দিতে পারবেন। চলুন, আর কথা না বাড়িয়ে দেখে নিই, কীভাবে ফ্রিতে প্রোগ্রামিং শেখা যাবে।
০১. কেন প্রোগ্রামিং শিখতে চান?
অন্য যে কোন কাজের চেয়ে প্রোগ্রামিং শুরু করার ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটির উত্তর জানা বেশি জরুরী। আপনার লক্ষ্যটা যদি দ্রুত প্রোগ্রামিং শিখে টাকা উপার্জন করা হয়; তাহলে শুরুতেই দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, প্রোগ্রামিং আপনার জন্য নয়।
হ্যাঁ, একজন ভালো প্রোগ্রামার অবশ্যই অনেক অনেক টাকা উপার্জন করতে পারে; এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু টাকা উপার্জনই যদি আপনার মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে, তাহলে কখনোই ভালো প্রোগ্রামার হতে পারবেন না।
এখানে প্রথমদিকে আপনাকে প্রচুর সময়, শ্রম, মনোযোগ আর ধৈর্য দিয়ে একটি সমস্যা সমাধান করতে হবে। আর সে জন্য শুধুমাত্র প্রয়োজন, সমস্যা সমাধানের প্রতি আপনার দুর্বার আগ্রহ।
প্রোগ্রামিং কেন শিখতে চান এর উত্তর যদি হয়, “সমস্যা সমাধান করতে আমার ভালো লাগে”, তাহলে কোন চিন্তা নেই। আপনি অবশ্যই খুব ভালো একজন প্রোগ্রামার হতে পারবেন এবং টাকাও উপার্জণ করতে পারবেন।
০২. যে কোন একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বেছে নিন
প্রোগ্রামিং শেখার শুরুতেই একজন মানুষ সবচেয়ে বেশি সমস্যাটিতে পড়ে সেটি হলো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বেছে নেওয়া! অনেক অনেক ল্যাঙ্গুয়েজ রয়েছে প্রোগ্রামিং এর জন্য, এর মাঝে প্রমিনেন্ট প্রোগ্রামিং ল্যাংঙ্গুয়েজ রয়েছে ৬টি। এখন অনেকেই এর মাঝে কোনটা শিখব, কোনটা সহজ, কোনটার চাহিদা বেশি, এসব প্রশ্নের মুখে পড়ে দিশা হারিয়ে ফেলেন।
এক্ষেত্রে যে কোন ভালো প্রোগ্রামারের সাজেশন থাকে, আপনি আপনার পছন্দ মতো একটি বেছে নিন; একটি শিখে ফেলুন, অন্যগুলো এমনিতেই পারবেন। কেননা সব প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজই একই যুক্তি মেনে চলে, শুধু কোড লেখার কায়দাটি ভিন্ন। প্রোগ্রামিং এর বেসিক বা নিয়ম কানুন সব ল্যাঙ্গুয়েজের জন্যই এক।
আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহায্যার্থে বলি, পৃথিবীজুড়ে প্রায় সব প্রোগামারেরই প্রোগ্রামিং শেখার ল্যাঙ্গুয়েজটি হয়— সি, পাইথন কিংবা জাভা। কম্পেইলারের সহজলভ্যতা এগুলোর জনপ্রিয়তার একটি অন্যতম কারণ। তাই প্রোগ্রামিং শুরু করার আগে বেছে নিতে পারেন এই তিনটির মধ্য থেকে যে কোন একটি ল্যাঙ্গুয়েজ।
০৩. শুরু করতে পারেন অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকে
আপনার বেছে নেওয়া ল্যাঙ্গুয়েজটি যদি C হয়, তাহলে আপনি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই পুরোপুরি বিনামূল্য প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করতে পারেন।
কীভাবে সেটা করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত একটি লেখা লিখেছিলাম, তাই এখান থেকেই জেনে নিন কীভাবে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল দিয়ে ফ্রিতে প্রোগ্রামিং শিখবেন। এছাড়াও ফ্রিতে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখার জন্য ৫টি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ থেকে যে কোনটি কিংবা একাধিক অ্যাপ আপনার মোবাইলে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
০৪. প্রোগ্রামিং শেখার ফ্রি বই সংগ্রহে রাখুন
শেখার মাধ্যম হিসেবে বই সব সময়ই সবচেয়ে কার্যকরী উপায়, প্রোগ্রামিং বেলাতেও তাই। প্রোগ্রামিং শেখার জন্য ইংরেজিতে প্রচুর ফ্রি ইবুক রয়েছে। শুধু কোন ভাষায় প্রোগ্রামিং শিখছেন সেটি লিখে পাশে ফ্রি ইবুক লিখে গুগল করলেই সেগুলোর সন্ধান পেয়ে যাবেন। যেমন, Java programming free ebook লিখলেই জাভা সংক্রান্ত ফ্রি ইবুকগুলোর ওয়েবসাইট দেখতে পাবেন, সেখানে গিয়ে ডাউনলোড করে নিলেই হয়ে গেল।
যাদের ইংরেজি ভাষা বুঝতে একটু সমস্যা হয়, তাদেরও চিন্তার কোন কারণ নেই। প্রোগ্রামিং শেখার জন্য বাংলাতেও প্রচুর পরিমাণ চমৎকার চমৎকার বই রয়েছে। তবে এখানে যেহেতু ফ্রিতে প্রোগ্রামিং শেখার উপায় নিয়ে আলোচনা করছি, তাই বই কেনার জন্য টাকা খরচের কথা বলা উচিত হবে না।
এক্ষেত্রে সি প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করার জন্য তামিম শাহরিয়ার সুবিন ভাইয়ের লেখা সি প্রোগ্রামিং বইটির অ্যাপ ভার্সন ফ্রিতেই নামিয়ে নিন আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে। অসাধারণ এই বইটি প্রোগ্রামিং এ একদম বিগিনারদের জন্য একেবারে আদর্শ। এছাড়াও প্লে স্টোর ও অনলাইনে সি, পাইথন বা জাভা শেখার জন্য অনেক বাংলা অ্যাপ বা ইবুক রয়েছে, প্রয়োজনমতো সেগুলো সংগ্রহ করে সেখান থেকে শিখতে থাকুন।
০৫. প্রোগ্রামিং শিখতে পারেন ব্লগ বা ইউটিউব থেকে
বাংলাতে প্রোগ্রামিং শেখার সবচেয়ে চমৎকার উপায়টি হচ্ছে, ব্লগ বা ইউটিউব দেখে শেখা! প্রোগ্রামিং এর উপর প্রচুর পরিমাণ মানসম্পন্ন বাংলা টিউটোরিয়াল ব্লগ এবং ইউটিউব ভিডিও রয়েছে।
যেমন ব্লগের মধ্যঃ
- তামিম শাহরিয়ার সুবিন এর কম্পিউটার প্রোগ্রামিং (সি)
- জাকির হোসেন এর পাইথন, সি প্রোগ্রামিং এবং জাভা প্রোগ্রামিং
- হাউটুকোড এর বিভিন্ন কোর্স ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ইউটিউবে দেখতে পারেনঃ
- তামিম শাহরিয়ার সুবিন এর সি প্রোগ্রামিং ও পাইথন প্রোগ্রামিং টিউটোরিয়াল
- আনিসুল ইসলামের জাভা প্রোগ্রামিং ইত্যাদি।
০৬. অনলাইনে প্রোগ্রামিং কোর্স করুন
এখন যুগটাই যেহেতু মুক্ত তথ্যের, সেখানে পড়াশোনা যে অনলাইন কেন্দ্রিক হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। প্রোগ্রামিং সেখার জন্য অনলাইনে প্রচুর পরিমাণে কোর্স রয়েছে; যেগুলোর মধ্য কিছু আছে একদম ফ্রি!
সেরকম একটি কোর্স হচ্ছে, হার্ভাড ইউনিভার্সিটি পরিচালিত edX এর CS-50. পুরোপুরি ফ্রি এই কোর্সটি করতে পারবেন আপনার কম্পিউটার, এমনকি অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকেই! (অ্যান্ড্রয়েডের জন্য আপনাকে edX অ্যাপটি ইনস্টল করতে হবে।) এছাড়া বাংলাতে এধরণের কোর্স করার জন্য উপরের পয়েন্টে উল্লেখিত HowToCode ওয়েবসাইটটি রয়েছে।
০৭. কোড পড়ুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন
প্রোগ্রামিং শেখার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস হচ্ছে, কোড পড়া। যে কোন জায়গায় একটি প্রোগ্রাম দেখলেন, তখনই সেটা পড়ে বোঝার চেষ্টা করুন। না বুঝতে পারলে কম্পেইলারে সেটি লিখে রান করে দেখুন। তারপর কোডের বিভিন্ন অংশ পরিবর্তণ করে বার বার চালিয়ে দেখুন।
একটি কোডের পড়া শুরু করলে সেটির কাজ পুরোপুরি না বোঝা পর্যন্ত লেগে থাকুন। একটু অন্যরকম শোনালেও প্রোগ্রামিং শেখার জন্য এটি দারুণ একটি উপায়। আর এ ধরণের কোড অনলাইনে বিভিন্ন ব্লগ বা ওয়েবসাইটে একটু খুঁজলেই পেয়ে যাবেন। যেমন, এখানে পাবেন সি প্রোগ্রামিং বিভিন্ন প্রোগ্রামের উদাহরণ।
০৮. ছোটদের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলো ব্যবহার করুন
বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় MIT কর্তৃক ডেভেলপ কৃত ছোটদের জন্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ হচ্ছে, স্ক্র্যাচ। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যেন খেলার ছলে সত্যিকারের প্রোগ্রামিং এ দক্ষ হয়ে ওঠে সেই উদ্দেশ্যে ২০০৭ সালে প্রথম এটি রিলিজ করা হয়।
শুধুমাত্র একটি ব্রাউজার আর ইন্টারনেট থাকলেই এদের ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি খুবই সহজে শিখতে পারবেন প্রোগ্রামিং এর বেসিক বিষয়গুলো। সেই সাথে গেম বা গ্রাফিকাল প্রোজেক্ট করার সুবিধাটি তো রয়েছেই।
বর্তমানে স্ক্র্যাচের জনপ্রিয়তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। স্ক্র্যাচ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার জন্য মুনির হাসান স্যার ও অন্যদের লেখা “স্ক্র্যাচ দিয়ে প্রোগ্রামিং শুরু” বইটি পড়ে ফেলতে পারেন কিংবা ইউটিউব থেকে দেখে নিতে পারেন সুবিন ভাইয়ের এই ভিডিওগুলো।
আনন্দ নিয়ে বা পুরোপুরি গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেসের মাধ্যমে কোন কিছু শিখতে যদি আপনার ভালো লাগে, তাহলে প্রোগ্রামিং শেখার জন্য আপনার ক্ষেত্রে স্ক্র্যাচের উপর কিছু নেই।
০৯. প্রোগ্রামিং গেম খেলুন
গ্রাফিকালি প্রোগ্রামিং শেখার আরও একটি চমৎকার উপায় হচ্ছে, গেমিং! কম্পিউটার এবং মোবাইলে এসব গেম খেলেও শিখে নিতে পারেন প্রোগ্রামিং এর বেসিক বিষয়গুলো।
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গেমঃ
- Coding Games for Kids (অ্যান্ড্রয়েড)
- LightBot: Code Hour (অ্যান্ড্রয়েড)
- Codding Planet (অ্যান্ড্রয়েড)
- RoboCode (উইন্ডোজ)
- Codingame (উইন্ডোজ) ইত্যাদি।
১০. সরাসরি একজন প্রোগ্রামার বন্ধু খুঁজে নিন
আপনার কোন প্রোগ্রামার বন্ধু আছে? না থাকলে আজকেই সেরকম কারো সাথে বন্ধুত্ব করে নিন, ফেসবুকের এই যুগে সেটি কোন সমস্যাই নয়। একজন জলজান্ত মানুষ আপনাকে যেভাবে ইন্সট্রাকশন দিতে পারবে, অন্য কোন পদ্ধতি সেভাবে হয়ত আপনাকে শেখাতে পারবে না।
ফেসবুকে প্রোগ্রামিং গ্রুপগুলোতে নিয়মিত যাওয়া-আসা করলেই এরকম অনেক বন্ধু আপনার জুটে যাবে। অনলাইন বা অফলাইনে তাদের থেকে দিক নির্দেশনা নিয়ে প্রোগ্রামিং শিখতে পারবেন চমৎকারভাবে। একজন মিশুক প্রকৃতির মানুষ হয়ে থাকলে আপনার জন্য এটিই হবে সেরা উপায়।
ফ্রিতে প্রোগ্রামিং শেখার উপায় আজকের মতো এতটুকুই। কম্পিউটারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে আগ্রহী হয়ে থাকলেই আজকে থেকেই প্রোগ্রামিং শুরু করে দিন, ভালো একজন প্রোগ্রামার হতে পারলে আগামীর দিনগুলো আপনার অপেক্ষাতেই রয়েছে।
প্রোগ্রামিং বিষয়ক যে কোন প্রশ্ন আপনি কমেন্টে জানাতে পারেন, কোন সমস্যা হলে জিজ্ঞেস করতে পারেন প্রোগ্রামাবাদের মতো সমৃদ্ধ ওয়েবসাইট কিংবা ফেসবুকের চমৎকার সব প্রোগ্রামিং শেখার গ্রুপগুলোতে।
Leave a Reply