স্মার্টফোন দিয়ে আয় করার প্রসঙ্গে যাবার আগে আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে চাই। সত্যি করে বলুন তো, আপনি প্রতিদিন কত সময় আপনার স্মার্টফোনের পেছনের ব্যায় করেন?
সংখ্যাটা মনে হয় খুব কম হবে না। শুধু আপনি একা নন, আপনার মত এমন অনেকেই আছেন যারা তাদের স্মার্টফোনের প্রতি এতটাই আসক্ত যে, দিনের অধিকাংশ সময়ই তারা তাদের ফোন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। আর শুধু দিনে বললে ভুল বলা হবে। গভীর রাত অবদি ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
যাদের ল্যাপটপ বা কম্পিউটার রয়েছে তারা প্রয়োজনের কাজগুলি সেটি দিয়ে শেষ করার পরেও বিছানায় স্মার্টফোন নিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত পড়ে থাকেন। এমনকি, ঘুমানোর সময় স্মার্টফোন সাথে নিয়েই ঘুমান। কারণ, এদের অনেকেই স্মার্টফোনের কাছাকাছি ঘুমানোর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানেন না।
একটি ইংরেজী প্রবাদ আছে “মানুষের দুবর্লতাই তার সবচেয়ে বড় শক্তি”। আমি এখনও বলবো আপনার নিঃসন্দেহে স্মার্টফোন ব্যবহারের পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেওয়া উচিৎ। কারণ, শুধুমাত্র বিনোদন লাভ করা ছাড়া এটি আপনার বাস্তবিক জীবনে কোন কাজেই আসছে না।
তবুও যদি আপনার দ্বারা সেটি সম্ভব না’ই হয়, তবে এমন কোন উপায় ভাবুন যার মাধ্যমে আপনি আপনার এই আসক্তিকেও কাজে লাগিয়ে নিজের জীবন গড়ে তুলতে পারবেন। অনেকেই হয়তো ভাবছেন যে, এটা কিভাবে সম্ভব। হ্যাঁ, অবশ্যই সম্ভব। আর সম্ভাবনার সেই দিকগুলিই আজকে আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
স্মার্টফোন দিয়ে আয়
আপনি যদি সারাদিন ধরেও ফেসবুক বা ইন্টাগ্রামে পোষ্ট করেন আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেন, তাহলে সেটি আপনার কোন কাজেই আসবে না। কিন্তু এই একই ধরনের কাজের জন্য ইন্টারনেটে বহু অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট রয়েছে, যারা আপনাকে এই কাজগুলোর জন্যেই পারিশ্রমিক দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
আপনি যখন যেখানেই থাকুন না কেন, চাইলেই এগুলিকে আপনার স্মার্টফোন দিয়েই ব্যবহার করতে পারবেন। আপনার যদি সত্যিই ইন্টারনেটে ব্যয় করার মত সময় হাতে থেকে থাকে, তাহলে সেই সময়টিকে টাকা উপার্জনের জন্য ব্যবহার না করে শুধু আড্ডা আর বিনোদনে ব্যয় করায় কতটুকু লাভ রয়েছে তা একবার ভেবে দেখুন।
আর যদি আমার মত আপনিও ভেবে থাকেন যে, এখন থেকে আপনি আপনার স্মার্টফোনটিকেই একটি মানি মেকিং মেশিনে পরিবর্তিত করবেন, তাহলে আপনার জন্য থাকলো স্মার্টফোন দিয়ে আয় করার এই ২টি স্মার্ট কৌশল।
ছবি বিক্রি করুন:
ভয় পাবেন না, আমি আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত সেলফি বিক্রয়ের কথা বলবো না। আমাদের অনেকেরই ফটোগ্রাফি করার ইচ্ছা থাকে। কিন্তু ডিএসএলআর ক্যামেরার অভাবে আমাদের শখ শেষ পর্যন্ত শখই থেকে যায়।
কিন্তু বর্তমানে স্মার্টফোনের ক্যামেরাতে এত বৈপ্লবিক পরিবর্তণ আনা হয়েছে যে, আপনি চাইলে আপনার ফোন দিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য, শহরের ব্যস্ততার ছবি বা কোন খাবার ইত্যাদির সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে সেগুলিকে অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন।
ভাবছেন, আমার ছবি কিনবে কে! যদি আপনার এমনই মনে হয়ে থাকে, তবে অনলাইনে ছবি বিক্রি করে ইনকাম করার সেরা ১০টি ওয়েবসাইট থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
আইফোন ফটোগ্রাফি স্কুল এর প্রতিষ্ঠাতা রব ড্যান্সফোর্ড এর মতে, বর্তমান সময়ে ডিএসএলআর ক্যামেরায় তোলা ছবির সাথে পাল্লা দিয়ে স্মার্টফোনে তোলা ছবির চাহিদাও দ্রুত গতিতে বেড়ে চলছে। এছাড়া ছবির মান উন্নয়ন এবং বিভিন্ন ধরনের ইফেক্ট সংযোজনের জন্যে অ্যাপল ষ্টোর এবং গুগল প্লে ষ্টোরে রয়েছে অসংখ্য অ্যাপ যা আপনার ছবিতে নতুন একটি মাত্রা যোগ করবে।
একই সাথে আপনি সেখানে এমন অ্যাপও পাবেন যেখানে আপনি এ-সব ছবি বিক্রয় করতে পারবেন। স্মার্টফোনে ছবি তুলে ঘরে বসে আয় করার এমনই একটি অ্যাপ সম্পর্কে জানুন। আর এখনই আপনার ফোন নিয়ে বের হয়ে পড়ুন স্মার্টফোন ফটোগ্রাফির নতুন যাত্রায়।
ছোট ছোট কাজ করে আয় করুন:
আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন যে, আপনি যখন কোন গেম খেলেন বা অন্য কোন অ্যাপ চালান, তখন মাঝে মাঝেই বিভিন্ন বিজ্ঞাপন সামনে আসে। আপনার এখন যদিও এতে বিরক্তি লাগাটাই স্বাভাবিক, কিন্তু কেমন হবে যদি এই কাজের জন্যই আপনাকে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।
কি চমকে গেলেন! অবাক হবার মতো হলেও আপনি খুঁজলেই এমন অসংখ্য অ্যাপ পাবেন যেখানে আপনাকে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দেখার জন্য টাকা দেওয়া হবে। বিষয়টি কিছুটা পিটিসি এর কাজের মতই। এ ধরনের কাজে আপনি যত বেশি বিজ্ঞাপন দেখবেন তত বেশি আপনার আয়ও হবে।
আবার কিছু অ্যাপ এমনও আছে যেখানে অন্য একটি অ্যাপ ইনষ্টল করা এবং সেগুলিকে চালানোর পরিবর্তে পারিশ্রমিক দেওয়া হয়। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে, এধরনের কাজের জন্য কেন আপনাকে কেউ টাকা দেবে?
উত্তরটা একদম সোজা। বিভিন্ন কোম্পানী রয়েছে যারা নিজেদের অ্যাপ সম্পর্কে ব্যবহারকারীর মতামত জানতে চায় বা অ্যাটিতে কোন সমস্যা রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করে। পরোক্ষভাবে আপনি ওই কোম্পানীর হয়েই এসব অ্যাপে কাজ করেন, যার বিনিময়ে তারা আপনাকে টাকা দিয়ে থাকে।
আমি এটা বলবো না যে, আমি যেসব উপায়ের কথা বলেছি তা আপনাকে রাতারাতি বড়লোক বানিয়ে দেবে। এমন অনেক অ্যাপ রয়েছে যা অনেক কম পরিমাণে টাকা দিয়ে থাকে। আবার এমনও অনেক অ্যাপ রয়েছে যা থেকে সময়ের সাথে সাথে আস্তে আস্তে ইনকামও বাড়তে থাকবে।
অনলাইনে ঘরে বসে আয় করা আজকের দিনে অনেকের কাছেই শুধুই স্বপ্ন। অনেক বেশি ইনকামের জন্য অনেক বেশি পরিমাণে দক্ষতাও থাকা প্রয়োজন। কিন্তু যাদের দক্ষতা বা অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে এবং যাদের ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য ল্যাপটপ বা কম্পিউটার কেনার মত আপাতত সামর্থ নেই, তারা এই উপায়ে স্মার্টফোন থেকে আয় করতে পারেন।
স্মার্টফোন দিয়ে আয় শুরু করার পূর্বে অবশ্যই আপনি কোন অ্যাপ বা ওয়েবসাইটকে বেছে নিয়েছেন সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিন। সেগুলির নিয়ম কানুন এবং পেমেন্ট পদ্ধতি সম্পর্কে খুব ভালোভাবে অবগত হয়ে তারপরই কাজ শুরু করুন।
আপনি চাইলে একাধিক ভাবেও কাজ করতে পারেন, তবে সেটা অবশ্যই আপনার সময় এবং ধৈর্য্য দুইয়ের উপরই নির্ভর করবে। আপনি যতটা পরিশ্রম করবেন, ততবেশি আয়ও করতে পারবেন। তাই দেরি না করে উপরের উপায়গুলি থেকে আপনার জন্য প্রযোজ্য উপায়টিকে বেছে নিন। আর হয়ে উঠুন স্মার্টফোনের স্মার্ট ইউজার।
Leave a Reply