র্যানডম অ্যাক্সেম মেমরী বা র্যাম হচ্ছে ডেক্সটপ কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, স্মার্টফোন এবং গেমিং কনসোল এর এমন একটি অংশ, যেটি ছাড়া এই ডিভাইসগুলোর কথা কল্পণা করাটাও অসম্ভব। র্যাম যেভাবে কাজ করে সেই প্রক্রিয়া ছাড়া এই জাতীয় ডিভাইসগুলির সিস্টেম ও অন্যান্য কার্যাবলী এত পরিমাণ ধীর গতির হয়ে পড়ে, যা আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না। তাই, জেনে রাখুন র্যাম কি? র্যাম কিভাবে কাজ করে?
আপনি যদি অতি অল্প পরিমাণেরও অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করেন, তারপরেও আপনার সিস্টেমে র্যাম থাকা অতি আবশ্যক। কারণ, র্যাম ছাড়া এগুলি আপনার কম্পিউটারে রান করবে না। শুধু কম্পিউটার নয়, স্মার্টফোনেও র্যামের অপরিহার্যতা রয়েছে। যারফলে, এখনকার স্মার্টফোন কোম্পানীগুলো র্যামের প্রাচুর্জতা নিয়েও প্রতিযোগীতা করে থাকে।
তবে জেনে নিতে পারেন যে, আপনার কম্পিউটার ও মোবাইলের জন্য কতটুকু র্যাম দরকার। আশা করি, জেনে এসেছেন এবং বুঝতেও পেরেছেন। এবার র্যাম কি সে সম্পর্কে একটু ধারণা নেয়া যাক-
র্যাম কি?
একটি কম্পিউটারে র্যামই হল সেই বিশেষ মেমরী ডিভাইস যেখানে অপারেটিং সিস্টেম ইনষ্টল থাকা যাবতীয় অ্যাপ্লিকেশন, প্রোগাম এবং সাম্প্রতিক প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জমা করে রাখে। যাতে সেটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রসেসরে প্রক্রিয়াকরণের জন্য পাঠানো যায়।
র্যাম মূলত কম্পিউটার কিংবা স্মার্টফোনের ডাটা সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম যার পূর্ণ রূপ হচ্ছে Random Access Memory। কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে আমরা যা কিছু ইনস্টল করি, যা কিছু ব্যবহার করি তার সবই গিয়ে র্যামে জমা হয়ে থাকে। আর যে কোনও সময়ই আমরা সেই সব ডাটা অ্যাক্সেস করতে পারি। এ কারণেই স্মার্টফোন ও কম্পিউটারের এই বিশেষ অংশটির নাম র্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমোরি।
র্যাম কিভাবে কাজ করে?
র্যামকে একটি কম্পিউটার বা তদসংক্রান্ত ডিভাইসের প্রধান মেমরী বা স্মৃতি বলা হয়ে থাকে। কারণ, এটি অন্যান্য স্টোরেজ ডিভাইস যেমন হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ, সলিড ষ্টেট ড্রাইভ এবং যে কোন অপটিক্যাল ডিভাইসের তুলনায় অনেক কম সময়ের মধ্যে ডাটা রিড ও রাইট করতে সক্ষম।
কম্পিউটারের র্যাম
র্যানডম অ্যাক্সেস মেমরী হল একটি ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি। এর মানে হল কম্পিউটার যত সময় চালু থাকবে, শুধুমাত্র ততক্ষনই এতে তথ্য সংক্ষিত থাকবে। একবার কম্পিউটার বন্ধ করা হলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হারিয়ে যায়। কম্পিউটার যখন আবার রিবুট করা হয়, তখন অপারেটিং সিস্টেম তার প্রয়োজনীয় ফাইলগুলি হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ থেকে তথ্য নিয়ে পুনরায় তা র্যামে সংরক্ষণ করেন।
কম্পিউটারের র্যাম হার্ড ডিস্ক, সিডি, ডিভিডি, ম্যাগনেটিক টেপস্সহ অন্যান্য ডিভাইস থেকে ডাটা রিড করে এবং কমান্ড অনুযায়ী সেই ডাটা স্টোর করে রাখে। এ-সব ডাটা রিড কিংবা রাইট করার জন্যে র্যাম দুই ধরণের পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। একটি মাল্টিপ্লেক্সিং আর অন্যটি ডি-মাল্টিপ্লেক্সিং।
স্মার্টফোনের র্যাম
কম্পিউটারের মতো স্মার্টফোনেও র্যামের প্রয়োজনীয়তা আছে এবং প্রতিটি স্মার্টফোনেই বিল্ট-ইন র্যাম দেয়া থাকে। মোবাইলে স্টোর করা ডাটাগুলো স্মার্টফোন সরাসরি স্ক্যান করে না বা করার প্রয়োজন হয় না যা কম্পিউটারে সিসি বা পুরনো ক্যাসেট কিংবা হার্ড ড্রাইভ দিয়ে করা হয়। স্মার্টফোনের জন্যে এটা ইনস্ট্যান্ট অ্যাক্সেস।
আজকালকার স্মার্টফোনের সাধারণ স্টোরেজই হল র্যানডম অ্যাক্সেস বা র্যাম। কারণ, এটি ছোট স্পিনিং ডিস্কের চেয়ে ইএমএমসি চিপস্ দিয়ে কার্য্য সম্পাদন করে থাকে। ফোনের ডাটা ধারণ করা এবং সেগুলোকে দ্রুত অ্যাক্সেস করার কাজে র্যাম স্মার্টফোনকে সহযোগীতা করে থাকে।
যখনই আমরা মোবাইলে কোন অ্যাপ ডাউনলোড করি এবং সেটিকে রান করি, তখন মূলত ব্যাক-ইন্ডে র্যামের কার্য্যক্রম চলতে থাকে। র্যাম যদি ঠিক মতো কাজ না করে, তবে স্মার্টফোনে ডাটা অ্যাক্সেস করা থেকে শুরু করে অ্যাপ চালানো, কোনটাই সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে না।
যে কারণে র্যাম ব্যবহার করা হয়
র্যাম ব্যবহৃত হয় এর ক্ষণস্থায়ী তথ্য ধারণ ক্ষমতার জন্য। র্যানডম অ্যাক্সেস মেমরী স্থায়ীভাবে কোন তথ্য সংরক্ষন করতে পারে না। এটিকে একজন মানুষের শর্ট টার্ম মেমরীর সাথেও তুলনা করা যায় যেখানে হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ হল একজন মানুষের লং টার্ম মেমরী।
শর্ট টার্ম মেমরী আমাদের বর্তমান কাজের দিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং এটি সাম্প্রতিক কাজের মাত্র কয়েকটি বিষয়ের ভিতরেই মনোযোগ দিয়ে থাকে। যখন এটি পূর্ণ হয়ে যায়, তখন মস্তিষ্কের লং টার্ম মেমরীতে থাকা তথ্যের সমন্বয়ে এটি নিজেকে সতেজ রাখে।
একটি কম্পিউটারও ঠিক একইভাবে কাজ করে। যদি র্যাম তথ্য দ্বারা পূর্ণ হয়ে যায়, তবে প্রসেসর হার্ড ডিস্ক থেকে পুরাতন তথ্যের সাথে র্যামে সংরক্ষিত থাকা তথ্যের সমন্বয় করে কাজ করে থাকে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার ফলে কম্পিউটারের কাজ করার গতি কিছুটা ধীর গতির হয়ে যায়। তবে, কম্পিউটারের গতি বাড়ানোর ১০টি উপায় রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে কম্পিউটারকে পরিপূর্ণরূপে সচল করে তোলা যায়।
একটি কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক তথ্য ধারণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ হতে পারে, এমন অবস্থায় ওই ডিভাইসটি পুরাতন তথ্য মুছে না ফেলে আর নতুন তথ্য ধারণ করতে পারে না। কিন্তু র্যামের সাথে এমনটা হয় না। তাই একটি অপারেটিং সিস্টেমকে স্বক্রিয় রাখতে এই দুই ধরনের মেমরীরই প্রয়োজন রয়েছে।
র্যাম যেভাবে কাজ করে
র্যাম এর ক্ষেত্রে র্যানডম অ্যাক্সেস কথাটির মানেই হলো যে, তথ্য যেখানেই সংরক্ষণ করা থাকুক না কেন, এটি সরাসরি সেটি অ্যাক্সেস করতে সক্ষম। র্যামের সকল কার্যাবলীই সেন্টাল প্রসেসিং ইউনিট এর সাথে সম্পৃক্ত। তাই র্যামেকে যদি ক্ষণস্থায়ী স্মৃতি বলা হয়, তাহলে সিপিইউ হল কম্পিউটারের ব্রেইন। প্রসেসর র্যাম থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ গ্রহণ করে থাকে এবং প্রেরিত নির্দেশ অনুযায়ী তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করে এবং মাদারবোর্ডের মাধ্যমে নির্ধারিত স্থানে প্রেরণ করে। বাড়তি পাওনা হিসেবে জেনে নিতে পারেন মাদারবোর্ড কি আর মাদারবোর্ড কিভাবে কাজ করে।
যাইহোক, একটি সিপিইউ’তে র্যাম যোগ করার উদ্দেশ্যই হলো যাতে এটি দ্রুত সময়ের মধ্যে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে পারে। আপনি হয়তো বিভিন্ন সফট্ওয়্যার বা গেমস ক্রয় করা সময় দেখে থাকবেন যে, সেটির বক্স এর উপরে সিস্টেম রিকোয়ারমেন্ট লেখা থাকে।
কখনও ভেবে দেখেছেন যে, এর কারণ কি? কারণটা হলো, প্রত্যেক অ্যাপ্লিকেশনেরই নিজেকে রান করানো জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অস্থায়ী স্মৃতির প্রয়োজন হয়, যাতে এটি কোন প্রকার বাধা ছাড়াই সাবলিলভাবে নিজের কাজ সম্পন্ন করতে পারে। অবশ্য সাধারণ অ্যাপ্লিকেশনের তুলনায় যে ধরনের অ্যাপ্লিকেশনে গ্রাফিক্স এর প্রয়োজন থাকে, তাতে অধিক পরিমাণে র্যাম ব্যবহৃত হয় এবং ভাল গ্রাফিক্স কার্ড বা অনেক বেশি পরিমাণ র্যাম ছাড়া এগুলি কাজ করতে পারে না।
আপনি একটি অ্যাপ্লিকেশন এর মাধ্যমে যে কাজই করেন না কেন, র্যাম সেটি সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ মেমরী সরবরাহ করে থাকে। এক সাথে একাধিক অ্যাপ্লিকেশনে কাজ করার ক্ষেত্রে সিপিইউ এবং র্যামের মধ্যে তথ্য প্রেরণ এবং মেমরী সরবরাহ কমতে থাকে। এ কারণে অনেক কাজ একসাথে করতে গেলেই কম্পিউটারে কিছুটা ধীর গতি লক্ষ্য করা যায়।
একটি কম্পিউটারে র্যামের গুরুত্ব
র্যাম আপনার ডেক্সটপ, ট্যাবলেট বা স্মার্টফোনের জন্য একারণেই গুরুত্বপূর্ণ যাতে এটি কোন কাজের সময় ধীর গতির না হয়ে যায়। অনেক বেশি পরিমাণে র্যাম থাকলে কম্পিউটার পূর্বের তুলনায় ভালো গতিতে কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক, তবে সব সময় এমনটা নাও হতে পারে।
শুধুমাত্র র্যামের উপর নির্ভর করেই কম্পিউটারের সকল কাজ করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে আপনি যদি ভিডিও এডিটিং বা কোন হাই গ্রাফিক্স এর গেম খেলার কথা চিন্তা করেন, তাহলে র্যাম একা আপনার প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হবে না। আপনার সিস্টেমকে দ্রুতগতির রাখতে হলে আপনার অবশ্যই র্যামের পাশাপাশি ভালোমানের মাদারবোর্ড এবং গ্রাফিক্সকার্ডও ব্যবহার করতে হবে।
আমরা সকলেই কম্পিউটার ক্রয়ের সময় এটাই ভেবে বসে থাকি যে, আমরা যে কম্পিউটারটি ক্রয় করছি সেটা যেহেতু আপডেটেড, তাই অবশ্যই এটি অনেক বেশি দ্রুতগতি সম্পন্ন হবে। হ্যাঁ, কথাটি পুরোপুরি ভুল নয়। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, একটি সুপার ফাস্ট কম্পিউটার কোন নির্দিষ্ট একটি হার্ডওয়্যারের উপর ভিত্তি করে কাজ করে না।
কম্পিউটার ক্রয়ের সময় প্রথমেই সেটির কনফিগারেশন সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হয়ে নিন। ভালো মানের প্রসেসরের সাথে সাথে ভালো মাদারবোর্ড, দ্রতগতি সম্পন্ন হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ, র্যাম যেভাবে কাজ করে তার পরিমাণ ইত্যাদির সমন্বয়েই একটি সুপার ফাস্ট কম্পিউটার তৈরী হয়।
আপনার যদি এ সম্পর্কে ধারণা না থাকে, তাহলে বিশেষজ্ঞ কারো পরামর্শ গ্রহণ করুন। আপনি আপনার কম্পিউটারে যে ধরনের কাজগুলি করতে চান, তার উপর নির্ভর করে কত পরিমাণ র্যাম প্রয়োজন সেটি নির্ধারণ করুন। প্রয়োজনে র্যামের পাশাপাশি গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করুন।
Leave a Reply