মানুষের মেধাকে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত উপহার বলা যেতে পারে। সবার মেধা সমান কিনা সেটা নিয়ে অনেকেরই দ্বিমত রয়েছে। তবে দ্বিমত থাক আর যাই থাক, মানুষের মেধা আর পরিশ্রম এর মিলিত শক্তিই যে আজকে পৃথিবীকে উন্নতির এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে সেটা সবাই একবাক্য স্বীকার করবেন। পৃথিবীর সেরা মেধাবী মানুষ নিয়েই আজকের আলোচনা।
মেধাবী মানুষের মধ্য যারা পরিশ্রম করে মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত রাখেন, তাঁরাই সমস্যা সমাধান আর জটিল কোন ব্যাপারকে সহজভাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে মানবজাতির উন্নয়নে নেতৃত্ব দেন। বুদ্ধিমত্তা বা মেধা যাচাই এর একটি চমৎকার পদ্ধতি হচ্ছে আইকিউ টেস্ট। দাবী করা হয়, যার আইকিউ যতো বেশি, তিনি ততবেশি বুদ্ধিমান।
আইকিউ স্কোর কম হলে তিনি নির্বোধ কিনা সেটি নিয়ে বিতর্ক করা যেতে পারে। তবে যাঁদের আইকিউ স্কোর তুলনামূলক বেশি, তাঁরা কখনও ব্যর্থ বা নির্বোধ প্রমাণিত হয়েছেন এরকম নজির নেই। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নিই, ২০১৮ সালের পৃথিবীর এরকম ১০ জন সেরা মানুষ সম্পর্কে।
পৃথিবীর সেরা মেধাবী মানুষ
বর্তমান পৃথবীতে অসংখ্য মেধাবী মানুষ রয়েছেন। কেউ বিজ্ঞানে মেধাবী, কেউ টেকনোলোজিতে, কেউ গণিতে কিংবা ইতিহাসে। তবে, সব মেধাবীরাই কিন্তু এক জায়গায় এসে নিজেদের অবস্থান জানান দেন আর তা হচ্ছে আই কিউ স্কোর। এই আই কিউ স্কোর দিয়েই অনেক সময় মেধাবীদের বিবেচনা করা হয়। যাইহোক, এখানে ১০ জন অত্যন্ত মেধাবী মানুষ সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
১০. স্টিফেন হকিং
সদ্য প্রয়াত ব্রিটিশ এই বিজ্ঞানীর নাম সবার কাছেই সুপরিচিত। জীবদ্দশায় দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও বেশ অনেকবার তিনি তাঁর তীব্র বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ দিয়েছেন। আইকিউ টেস্টে তাঁর পয়েন্ট ছিলো ১৬০।
২০১৮ সালের স্মার্ট এবং মেধাবী মানুষদের মধ্য স্টিফেন হকিং এরকম একজন যে কিনা একই সাথে বিজ্ঞান এবং মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্বে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। তবে তাঁর আইকিউ পয়েন্ট ১৬০ হলেও সেরা ১০ জন মানুষের তালিকার নিচেই অবস্থান করছেন তিনি।
০৯. জুডিস পোলগার
জুডিস পোগলারকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিভাবান নারী দাবাড়ু হিসেবে। ১৯৭৬ সালে হাঙ্গেরি-তে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শৈশবে বাবার কাছে তাঁর দাবা খেলার হাতেখড়ি। এরপর ১৫ বছর বয়সে গ্রান্ডমাস্টার। এমনকি দাবার জগতের আরেক দিকপাল গ্যারি কাসপারভ এর বিপক্ষেও জয় অর্জন করেন এই প্রতিভাবান দাবাড়ু।
তবে তুখোড় দাবাড়ুই জুডিস পোগলার এর একমাত্র পরিচয় নয়, বুদ্ধিমত্তার আইকিউ স্কেলে ১৭০ পয়েন্ট নিয়ে তিনি অবস্থান করছে স্টিফেন হকিং এর একধাপ উপরে!
০৮. অ্যান্ড্রু ওয়াইলস
দশজন সেরা মানুষের তালিকায় এবারের ব্যাক্তি অ্যান্ড্রু ওয়াইলস। ব্রিটিশ এ গণিতবিদ জন্মগ্রহণ করেন 1953 সালে। Fermat’s Last Theorem প্রমাণ করায় তিনি সুপরিচিত। এর জন্য তিনি ২০১৬ সালে গণিতের নোবেল নামে খ্যাত Abel পুরস্কার গ্রহণ করেন।
রয়েল সোসাইটির এই মেধাবী গবেষক এর আইকিউ স্কোর ১৭০। অ্যাবেল ছাড়া গণিতের তাঁর অবদানের জন্য “রয়েল মেডেল” সহ একাধিক সম্মানজনক ও গুরুত্বপূর্ণ পুরষ্কার লাভ করেন। অধ্যপনা করেছেন, প্রিন্সটন এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে।
০৭. পল গার্ডনার অ্যালেন
পল গার্ডনার অ্যালেন এর নামটি হয়ত বেশ অপরিচিত। তিনি একজন আমেরিকান সফল বিজনেসম্যান, বিনিয়োগকারী এবং সমাজসেবী। তবে এর চেয়ে সহজ পরিচয় হচ্ছে, তিনি মাইক্রোসফট এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৩ সালে ১৫ বিলিয়ন ডলার সম্পদের মালিক হিসেবে বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় তাঁর অবস্থান ছিল ৫৩।
শুধু সম্পদের দিক থেকেই নয়, মেধার দিক থেকে তিনি রয়েছেন এগিয়ে। ১৭০ আইকিউ পয়েন্ট নিয়ে পল গার্ডনার রয়েছেন ২০১৮ সালের বিশ্বের সেরা দশজন মানুষের তালিকায় সপ্তম অবস্থানে।
০৬. ম্যাগনাস কারসন
তালিকার এবারের মানুষটিও একজন দাবার গ্রান্ডমাস্টার। ১৯৯০ সালে নরওয়েতে জন্মগ্রহণ করেন দাবার বর্তমান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কারসন। শিশুকালেই তাঁর এই বিস্ময়কর প্রতিভার উন্মেষ ঘটে। গ্যারি কাসপারভ এর পরে তিনিই সবচেয়ে কমবয়সী দাবা চ্যাম্পিয়ন।
দাবা খেলার দক্ষতা যাচাই এর বিশেষ এক ধরণের রেটিং সিস্টেমে (Elo rating system) ম্যাগনাস কারসন এর পয়েন্ট ২৮৮২। যা এ যাবত কালের মধ্যে অর্জিত সর্বোচ্চ পয়েন্ট! তবে এরকম প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও তিনি তাঁকে জিনিয়াস বলাটা মোটেও পছন্দ করেন না। এই চমৎকার মেধাবীর আইকিউ ১৮৬ পয়েন্ট!
০৫. গ্যারি কাসপারভ
উপরের আলোচনায় অন্যদের কথা বলতে গিয়ে ইতিমধ্যই এই নামটি চলে এসেছে। রাশিয়ান-ক্রোয়েশিয়ান এই গ্রান্ডমাস্টারকে দাবার ইতিহাসে সর্বকালের সেরা দাবাড়ু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০১৩ সালে কেবলমাত্র ম্যাগনাস কারসন তাঁর রেকর্ড ভাঙতে সক্ষম হন।
১৯৮৬ থেকে ২০০৫ সালে অবসর নেওয়া পর্যন্ত ২২৮ মাসের মধ্য ২২৫ মাসেই তিনি তাঁর প্রথম অবস্থানটি ধরে রেখেছিলেন। তাঁর আইকিউ জানতে নিশ্চয়ই আগ্রহ হচ্ছে? হ্যাঁ, আইকিউ টেস্টে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ১৯০ পয়েন্ট।
০৪. কিম উন-ইয়ং
নাম দেখে হয়ত স্বৈরশাসক কিম জন-উন এর নাম মনে আসতে পারে! তবে ভায় পাবার কিচ্ছু নেই। একই দেশের নাগরিক ছাড়া কিম জন উনের সাথে তাঁর কোন ধরণের সম্পর্ক নেই। ১৯৬২ সালে সাউথ কোরিয়ায় জন্ম নেওয়া পদার্থবিজ্ঞানের এই প্রফেসর সুপরিচিত বিরল শিশু প্রতিভাধর হিসেবে।
মাত্র এক বছর বয়সেই কোরিয়ান সব বর্ণমালা এবং ১০০০ চাইনিজ বর্ণমালা শিখে ফেলেন। তিন বছর বয়সে শেখেন ক্যালকুলাস। কোরিয়ান ও চাইনিজ ভাষায় দক্ষতা ছাড়াও জার্মান, ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজি ভাষাতেও তিনি সুদক্ষ। এসব ভাষাতে মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই তিনি কথা বলা শিখে যান।
বর্তমানে তিনি ২০১৮ সালের সেরা দশজন মানুষের মধ্যে ৪র্থ স্থানে অবস্থান করছেন অবিশ্বাস্য আইকিউ স্কোর ২১০ পয়েন্ট নিয়ে। মাত্র আট বছর বয়সে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে অধ্যয়ন করার জন্য তিনি ইউনিভার্সিটি অব কলরেডো ভর্তি হন এবং সফলভাবে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে নাসায় কর্মরত হন। তবে দশ বছর সেখানে কাজ করার পর তিনি চাকরি ছেড়ে নিজের দেশ কোরিয়াতে ফিরে আসেন।
০৩. ক্রিস্টোফার হিরাতা
ক্রিস্টোফার হিরাতা আরেকজন আমেরিকান পদার্থবিদ। ১৯৮২ সালে জন্মগ্রহণ করা ক্রিস্টোফারকেও বিরল শিশু প্রতিভা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ১৩ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড’১৯৯৬ এ স্বর্ণপদক অর্জন করেন।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি নাসার মঙ্গলগ্রহ সংক্রান্ত মিশনে কাজ করেন। ১৮ বছর বয়সে ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলোজি (ক্যালটেক) থেকে গ্রাজুয়েশন এবং ২২ বছর বয়সে প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। আইকিউ স্কোর ২২৫ পয়েন্ট! বর্তমানে তিনি ক্যালটেকে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স এ অধ্যাপনা করছেন।
০২. টেরেন্স টাও
অস্ট্রেলিয়ান গণিতবিদ টেরেন্স টাও জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭৫ সালে। বর্তমান সময়ের একজন অন্যতম মেধাবী মানুষ হিসেবে তাঁর আইকিউ স্কোরটিও ভিমড়ি খাওয়ার মতো। ২৩০ পয়েন্ট।
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে ২০ বয়সে পিএইচডি সম্পন্ন করেন টেরেন্স টাও। ২৪ বছর বয়সে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী প্রফেসর হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি হারমোনিক অ্যানালাইসিস, র্যান্ডম ম্যাট্রিক্স থিওরি এবং অ্যানালিটিক নাম্বার থিওরির উপর কাজ করছেন।
০১. গ্রেগরী পেরেলম্যান
সেরা দশজন মানুষের তালিকায় একদম শুরুর মানুষটির নাম গ্রেগরী পেরেলম্যান। বিখ্যাত এই গণিতবিদের নাম অনেকের কাছেই সুপরিচিত লাগতে পারে। আজকের পৃথিবীতে তুখোড় বুদ্ধিমত্তা আর সবচেয়ে মেধাবী এই মানুষটির আইকিউ স্কোর ২৩৮ পয়েন্ট।
তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯৬৬ জন্ম নেন পেরেলম্যান। গণিতে তাঁর বিখ্যাত অবদান হচ্ছে, Thurston’s geometrization conjecture এর প্রমাণ। যার ফলে Poincaré conjecture এর সমাধান সম্ভব হয়। যেটাকে ১৯০৪ সাল থেকে গণিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কঠিন একটা অনুকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
পরাগ খান says
পৃথিবীর সেরা কিছু মেধাবী মানুষ সম্পর্কে জেনে খুব ভালো লাগলো।