ব্যবসার বিকাশ, হারানো প্রিয়জনকে ফিরে পাওয়াসহ ফেসবুকের পজিটিভ দিক রয়েছে হাজার হাজার। সেই সাথে আত্মহত্যা আর খুনের মত নেগেটিভ দিকও রয়েছে প্রচুর। ফেসবুকের অতিরিক্ত ব্যবহার, কাউকে উদ্দেশ্য করে স্টেটাস দেয়া কিংবা কারো পোস্টে টিটকারীমূলক কমেন্ট করাসহ নানা কারণে এ যাবৎ অনেক খুন হয়েছে।
ফেসবুকের কারণে সেই সব অনাংখিত খুনের ঘটনা থেকে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হল আজকের পোস্টে।
ফেসবুকের কারণে খুন
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফেসবুককে কেন্দ্র করে অনেক খুনের ঘটনা ঘটেছে এ যাবৎ। সেই সব খুনের খবর ও ঘটনা নিয়ে সাজানো এই পোস্টটি পড়তে পারেন। আর সেই সাথে নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি, ফেসবুক ব্যবহারে অন্যদেরকেও সচেতন করায় উৎসাহিত করতে পারেন।
গার্লফ্রেন্ডকে Poke মারায় বন্ধুকে খুন
ফেসবুক ব্যবহার করতে গিয়ে আপনি নিশ্চয়ই কখনো না কখনো কাউকে পোক দিয়েছেন কিংবা কারো কাছ থেকে পোক পেয়েছেন। পোক ফেসবুকের একটি ছোট্ট ফিচার যা দিয়ে মূলত কাউকে হ্যালো বলা হয়। কিন্তু এই হ্যালো বলাতেই ইংল্যান্ডে খুন হয়েছে একজন।
Scott Humphrey নামের ২৭ বছরের এক যুবক তার ঘনিষ্ঠ্য বন্ধু Richard Rovetto এর গার্লফ্রেন্ডকে ফেসবুকে নিয়মিত পোক দিয়ে আসছিল। ঘটনা জানতে পেরে রিচার্ড এতই উত্তেজিত হয়ে পড়ে যে, প্রাইভেট কারের উপরে ফেলে উপর্যপুরি ঘুষি মারতে থাকে স্কটকে। আর চিৎকার করে বলতে থাকে, তুই আমার এত ভাল বন্ধু হয়েও আমার গার্লফ্রেন্ড পোক দিচ্ছিস! ঘুষি খেতে খেতে এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে Scott Humphrey।
ম্যারেড থেকে সিঙ্গেল লিখে রিলেশন স্টেটাস আফডেট দেয়ায় স্ত্রী খুন
সাইভার জেলাসি যে কত মারাত্মক হতে পারে তার প্রমাণ সারাহ নামের তরুণীর মৃত্যু। ফেসবুক ব্যবহার করতে করতে একদিন হঠাৎ কী মনে করে সারাহ তার রিলেশন স্টেটাস আফডেট দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আগের রিলেশন স্টেটাসে ম্যারেড থেকে চেঞ্জ করে সিঙ্গেল লিখে আফডেট দিয়ে দেয়। আর এটাই তার মৃত্যু ডেকে আনে।
সারাহ এর স্বামী এডওয়ার্ড রিচার্ডসনের সঙ্গে তখন ব্রেক আপ চলছিল, তবে পুরোপুরি ছাড়া-ছাড়ি হয়ে যায়নি। তাই, স্ত্রীর এই রিলেশন স্টেটাস আফডেট দেখে মারত্মক ক্ষিপ্ত হয়ে ওয়ে স্বামী। স্ত্রী ফেসবুকে এই সামান্য পরিবর্তণকে বিগ ডিল মনে না করলেও, স্বামী এটাকে অনেক বড় ইস্যু হিসেবে নিয়ে নেয় এবং স্ত্রীকে ঘুমের মধ্যে খুন করে ফেলে।
টিটকারি করে পোস্ট দেয়ায় বন্ধুকে খুন
ইন্ডিয়ার বেঙ্গালুরুর এক ২৪ বছর বয়সী যুবক বন্ধুদের সাথে চ্যাট করতে করতে ফেসবুকে Hi Shishya লিখে স্টেটাস দেয়। শিষ্য শব্দটির মানে তো খারাপ না। কিন্তু তবু এটা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক লেগে যায়। বিশেষ করে, কাকে শিষ্য বলা হয়েছে, এই নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে ২ বন্ধু আর তাদের পক্ষে বিপক্ষে যোগ দেয় অন্য বন্ধুরা।
আর এ ঝামেলার জের ধরে এক সপ্তার মাথায় খুন হয় অরুণ রায় নামের বন্ধুটি। অরুণের পোস্টটি নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে বন্ধুদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ চলতে থাকে। বিশেষ করে অরুণের ঘনিষ্ঠ্য বন্ধু সন্দীপ, যার সঙ্গে স্টেটাস দেয়ার সময় চ্যাট করছিল অরুণ, সন্দীপ ধরে নেয় যে অরুণ তাকেই শিষ্য বলেছে। তাই সে ক্ষেপে যায় এবং অন্য বন্ধুদের ক্ষেপিয়ে তোলে।
অবস্থা বেগতিক দেখে অরুণের মা অরুণকে সেভ করার জন্যে তামিল নাডুতে খালার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। কিছু দিন পর অরুণ ফিরে এলে বন্ধুরা সবাই তার সঙ্গে দেখা করতে আসে এবং কথা বলার জন্যে তাকে ডেকে বাইরে নিয়ে যায়। আর ওখানেই আবার অনেক বড় সড় তর্ক-বিতর্ক লেগে যায়। অরুণের ফিরতে দেরী হওয়া অরুণের মা অমরাবতী ছুটে গিয়ে দেখে অরুণ মৃত। বাকিটা জানুন সোর্স রিপোর্ট থেকে।
ফ্রেন্ডকে আনফ্রেন্ড করায় দম্পত্তি খুন
খুনের দৃশ্যটি অনেকটাই হরর মুভির মত। যুক্তরাজ্যের মাউন্টেন সিটির এক তরুণ দম্পত্তির দু’জনই নিজ বাসায় খুন। আর তাদের বুকের উপর জীবিত শুয়ে চিৎকার করে কাঁদছে তাদের ৮ মাসের বাচ্চা। বিলি জিন ও বিল পেইনি নামের এই দম্পত্তি জেনেলি পটার নামের তাদের এক বন্ধুকে আনফ্রেন্ড করায় এই খুনের ঘটনা ঘটে।
দম্পত্তির সঙ্গে তাদের এই বন্ধুর সম্পর্ক অনেক দিন ধরেই ভাল যাচ্ছিল না। কিন্তু যে দিন দু’জনে মিলে এক সঙ্গে তাকে আনফ্রেন্ড করে দেয়, সেদিন রাতেই বন্ধুটি চুপিচুপি তাদের বাসায় ঢুকে পড়ে দুইজনকেই এক সঙ্গে খুন করে ফেলে। একজনকে গুলি করে আর আরেকজনের গলায় চুরি বসিয়ে।
খুন হওয়ার আগে তরুণ স্বামীটি তার রুমে শুয়ে ছিল আর তরুণীটির শুয়েছিল বাচ্চাটার রুমে। খুনি প্রথমে স্বামীর রুমে গিয়ে তাকে খুন করে, পরে স্ত্রীর রুমে এসে বাচ্চাটাকে সরিয়ে মাকে খুন করে চলে যায়।
স্বামীকে উদ্দেশ্য করে স্টেটাস দেয়ায় স্ত্রী খুন
এক্স হাজব্যান্ড অ্যাডাম ম্যানকে উদ্দেশ্য করে স্ত্রী লিসা ভেভারলি ফেসবুকে স্টেটাসে লেখেন, এখন দেখো কে হাসে আর কে কাঁদে। চাইল্ড সাপোর্ট এজেন্সীর লোকদের সঙ্গে তুমি একটা দারুণ দিন কাটাতে যাচ্ছো, অভিনন্দন। জেনে রাখো, তোমার সন্তান তোমাকে ঘৃণা করে, ঘৃণা করি আমিও।
স্টেটাস পড়ে স্বামী যায় ক্ষেপে। ওই দিনই আগের বাসায় এসে স্ত্রীকে হাতুড়ি দিয়ে মেরে পুলের কাছে ফেলে রেখে চলে যায়। ৫ বছরের সন্তান পুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে পানিতে রক্ত আর পাশে তার মায়ের মৃত শরীর দেখে নানুকে ফোন করে জানায়।
ছেলে হয়ে মেয়ের নামে অ্যাকাউন্ট খোলায় ছেলে খুন
Abaeze নামের এক নাইজেরিয়ান ছেলে Zealander Natalia Burgess নামে ফেসবুকে একটি মেয়ের অ্যাকাউন্ট খোলে। এই অ্যাকাউন্ট থেকে সে শুধু ছেলেদেরকেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলে। ছেলে হয়েও স্রেফ মজা করার জন্যেই মেয়ে সেজে সে অন্যান্য ছেলেদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে থাকে।
এভাবে অসংখ্য ছেলের সঙ্গে সে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। অন্য কোন স্বার্থ না থাকলেও, মজা করতে গিয়েই এক সময় সে চরম বিপদে পড়ে যায়। Enofe নামের নাইজেরিয়ার এক সন্ত্রাসী টাইপের ছেলে Zealander Natalia Burgess নামের এই মেয়েটির প্রেমে এতই হাবুডুবু খেতে শুরু করে যে, মেয়েটির সঙ্গে দেখা করার জন্যে সে পাগল হয়ে উঠে। যেহেতু, Natalia আসলে মেয়ে নয়, তাই কিছুতেই দেখা করতে রাজী হয় না।
প্রায় ৩ বছর ভার্সুয়াল প্রেম করার পর Enofe এর পীড়াপীড়িতে Natalia একদিন দেখা করতে রাজী হয়। সে ভেবেছিল, Enofe কে সবকিছু খুলে বলবে আর ক্ষমা চেয়ে নেবে এবং তারা আজীবন বন্ধু হিসেবে থেকে যাবে। কিন্তু সব ঘটনা শুনেই Enofe পকেট থেকে চুরি বের করে সোজা Natalia এর কলিজ বরাবর ঢুকিয়ে দেয়।
ফেসবুকে প্রোপাইল খোলায় স্ত্রী খুন
না, ঠিক প্রোপাইল খোলার জন্যে স্ত্রী টুম্পাকে খুন করেননি স্বামী সুরজিৎ। প্রোপাইল খোলার পরই স্বামী দেখেন যে স্ত্রী সারাক্ষণ ফেসবুক নিয়েই পড়ে থাকছে, সংসারে মনোযোগ নেই। এদিকে স্ত্রীর মোবাইলে নানা রকম ফোন আসছে। স্বামীর বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না যে ফোনগুলো আসছে স্ত্রীর ফেসবুক বন্ধুদের কাছ থেকেই। ফেসবুকের মাধ্যমে অনেক পুরুষের সঙ্গেই বাড়তি সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন স্ত্রী। আর স্বামী সেটা মানতে না পেরেই খুন করেছেন স্ত্রীকে।
পুলিশকে দেয়া ভাষ্য থেকে জানা যায়, ইন্ডিয়ায় বসবাসরত এই দম্পত্তি ১২ বছর দারুণ সুখে সংসার করে আসছিলেন। কিন্তু স্ত্রী হঠাৎই ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পড়ায় স্বামী সেটা মানতে পারছিলেন না। সেই সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে অন্য পুরুষদের সাথে স্ত্রীর সম্পর্ক তৈরি হওয়ায়ও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন স্বামী।
ফেসবুকের কারণে খুন হয়েছেন আরো অনেক লোক। তবে, সরাসরি ফেসবুকের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় বলে সেগুলো নিয়ে আর লিখলাম না। আশা করি, এই লেখাটি পড়ে আপনাদের ভাল লেগেছে এবং ফেসবুক ব্যবহারে আপনাদের মাঝে কিছুটা হলেও সচেতনতা কাজ করবে।
Leave a Reply