ধূমপান ত্যাগ করার উপায় খুঁজতে গিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়েছেন? অন্য অনেকের মতো অনেক চেষ্টা করেও ছাড়তে পারছেন না? আপনিও কি এখনো তাদের দলেই রয়েছেন যারা মনে করেন ধুপমান ত্যাগ করা সহজ নয়? যদি তাই হয়, তবে এবার আপনার জন্যে রয়েছে ধূমপান ছাড়ার চ্যালেঞ্জিং উপায়।
ধূমপান আপনার স্বাস্থের পক্ষে কতটা বিপদজনক তা নতুন করে বোঝাবার মতো কিছু নেই। তবু, ধূমপানের কারণে ঘটিত কয়েকটি স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা না বললেই নয়-
- ফুসফুসের ক্যান্সার,
- খাদ্যনালী ক্যান্সার,
- ওরোফারিঞ্জিয়াল ক্যান্সার,
- ক্রনিক ব্রংকাইটিস,
- হার্টের সমস্যা,
- হঠাৎ স্ট্রোক,
- অর্টিক অ্যানিউরিজম,
- চোখের ছানি পড়া, ইত্যাদি।
এছাড়াও, যে ১০টি খাবার পুরুষের যৌন জীবন ধ্বংশ করে দেয় তার মাঝে ধূমপান একটি।
শুরুতে নতুন অভিজ্ঞতার অনুসন্ধানের খোঁজ করতে যেয়ে অনেকেই ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়েন। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আসক্তির পরিমাণ এতটাই বেড়ে যায় যে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের হাজার মানা করা স্বত্বেও আমরা এই বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে পারি না।
ধূমপান ত্যাগের ব্যাপারে কাউকে জিজ্ঞাসা করা হলেই অনেকেই বলেন যে, তারা আসলে ধূমপান ত্যাগ করতে আগ্রহী এবং ধূমপান ত্যাগের কৌশল ও অন্যান্য বিষয়গুলিকে তারা মেনে চলার চেষ্টা করেন। কিন্তু, কয়েকদিন ধূমপানের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকলেও এক সময় না এক সময়ে তারা আবার ধূমপানের মায়াজালে আটকা পড়ে যান।
মনে রাখতে হবে যে, আপনি ধূমপান ত্যাগ করবেন শুধুমাত্র এটি ভাবলেই কাজ হবে না। কারণ প্রকৃতপক্ষে এটি যুদ্ধের আরম্ভ মাত্র। আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে যে, কোন কোন বিষয়গুলি মেনে চললে আপনার পক্ষে ধুমপান ত্যাগ করে থাকা সহজ হবে।
আর একারণেই আমি আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করতে চলেছি এমন কিছু কার্যকরি পদ্ধতি যা আপনাকে ধূমপান থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করবে নিশ্চিতরূপে।
ধূমপান ত্যাগ করার উপায়
ব্যক্তিগতভাবে আমি মোটেও ধূমপানের মত ভয়ঙ্কর একটি বদঅভ্যাস ত্যাগের বিষয়টিকে সহজভাবে দেখি না। আমার দেখা মতে, অন্যান্য নেশাজাত দ্রব্যের চাইতেও একজন ব্যক্তির উপর ধূমপান বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এর প্রভাব এতটাই বেশি যে প্যাকেটের গায়ে ধূমপান আমাদের জন্য নিশ্চিত মৃত্যু বয়ে আনছে জেনেও আমরা নির্দিধায় সেটি ক্রয় করে থাকি।
নিম্ন আয়ের কিংবা সাধারণ মানুষের মাঝে অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, আয়ের প্রায় অর্ধেকটাই ব্যয় হয়ে যায় ধূমপানের পেছনে। অনেক সাধারণ বা নিম্ন আয়ের মানুষও দামী সিগারেট খেয়ে থাকেন। উল্টো দিকে, যারা ধনী তাদের মাঝেও এমন অনেকেই রয়েছেন যারা পৃথিবীর সবচেয় দামী সিগারেট খেতে ইতস্তত করেন। কারণ, এই অহেতুক খাবারটির পেছনে তারা বেশি ব্যয় করতে চান না। এমনকি, এ-সব ধনী ব্যক্তিরাও ধূমপান ত্যাগ করতে চান।
ধূমপান ত্যাগকে কোন একটি দিনের সিদ্ধান্ত ভাবলেও ভুল হবে। আপনি এটিকে এমন একটি যাত্রার সাথে তুলনা করতে পারেন যাতে লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য আপনাকে বিভিন্নভাবে এবং পর্যায়ক্রমে পথ অতিক্রম করে যেতে হবে। তবে আপনি যদি এই সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকেন, তবে অবশ্যই সেটি আগে আপনার নিজের জন্য নেবেন। পরিবার বা অন্য কারো জন্য নয়।
কারণ, যখন থেকে আপনি ধুমপান ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন, ঠিক সেই মুহুর্ত থেকেই আপনি আপনার জন্য দীর্ঘায়ু ও এবং একটি সুস্থ জীবন যাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফেললেন। তাই আজকে থেকেই নিচের বিষয়গুলির দিকে লক্ষ্য রাখুন আর ধূমপান ত্যাগের পথে আপনার যাত্রা শুরু করে দিন।
১. একটি তালিকা তৈরী করুন:
কাগজ কলম নিন, এবার কাগজের ঠিক মধ্যখানে একটি রেখা টেনে দিন। একপাশে ধুমপানের ব্যাপারে কোন বিষয়গুলি আপনাকে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী করে তোলে সেগুলি লিখুন। অর্থাৎ আপনি কোন সময়ে বা কেমন পরিস্থিতিতে ধুমপান করতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন, ধুমপানের সময় আপনি কেমন অনুভব করেন এবং কেন আপনি ধুমপান করেন তা লিখুন।
অপরদিকে ঠিক এর উল্টোটা মানে ধুমপানের বিষয়ে কি কি আপনার অপছন্দ, ধুমপানের ফলে আপনার উপর কি কি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে বলে আপনি মনে করেন এবং কেন আপনি ধুমপান ত্যাগ করতে চান, সেগুলি ক্রমান্বয়ে লিখে ফেলুন।
যদি আপনি একজন সাহসী ব্যক্তি হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার পরিবার এবং কাছের মানুষদের কাছ থেকে তাদের মতামত গ্রহণ করুন যে আপনার ধুমপানের বিষয়ে তারা কেমন মনোভাব পোষন করেন এং তার কারণ কি।
যদি আপনি দেখেন যে ধুমপান করার চাইতে সেটি ত্যাগ করার কারণই আপনার তালিকায় বেশি, বুঝে নিন আপনি ধুমপান ত্যাগের জন্য পুরোপুরি তৈরী।
২. ধূমপান ত্যাগের সিদ্ধান্ত অবচেতন মনে পৌঁছে দিন
আমরা অনেকেই ধূমপান ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেই কিন্তু সেই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারি না। কারণ, আমাদের অবচেতন মনে সেটা পৌঁছোতে পারে না। মানুষ হিসেবে আমরা ৩ ধরণের চেতনার মাঝে বাস করি অর্থাৎ আমাদের মন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ৩টি ভিন্ন অবস্থানে থাকে।
- ১. চেতন – যখন আমরা জাগ্রত থাকি, কাজ করি, আড্ডা দেই।
- ২. অবচেতন – যখন আমরা চোখ বন্ধ করে থাকি, ঘুমোতে যাই এবং ঘুম ও জাগরণের মাঝামাঝি থাকি।
- ৩. অচেতন – যখন আমরা পুরোপুরি ঘুমিয়ে পড়ি।
ধূমপান ত্যাগের জন্যে এই ৩টি অবস্থার মাঝে দ্বিতীয়টিকে গুরুত্ব দিন। অর্থাৎ আপনার অবচেতন মনে এই খবরটি পাঠিয়ে দিন যে, আপনি ধূমপান ত্যাগ করতে চাইছেন। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, অবচেতন অবস্থায় মন মানুষের কথা সবচেয়ে বেশি শুনে থাকে, সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। কাজেই, মনকে আপনার কথা শোনার, আপনার কথার গুরুত্ব দেয়ার জন্যে তৈরি করে নিন। কিভাবে করবেন?
প্রতিদিন ঘুমোতে গিয়ে, বিশেষ করে যখন আপনার ঘুম ধরছে ধরছে অবস্থা তৈরি হয়, তখন মনে মনে বারবার বলুন, ‘আমি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছি, আমি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছি। ধূমপান আমার জন্যে ক্ষতিকর, ধূমপান আমার জন্যে ক্ষতিকর। উল্লেখ্য, ধূমপান ছেড়ে দেবো না বলে ছেড়ে দিয়েছি বলবেন। তাতে, আপনার অবচেতন মন এটাকে বেশি গুরুত্ব দেবে।
মনকে এই মেসেজ দেয়ার পাশাপাশি আরেকটি কাজ করুন। মনে মনে ভাবুন, আপনি একটা সিগারেটে ধরিয়ে টানছেন। ভাবুন বা মনে মনে দেখার চেষ্টা করুন, সিগারেটের ধোঁয়াগুলো কিভাবে আপনার গলা দিয়ে ফুসফুসে যাচ্ছে। ফুসফুসে গিয়ে ধোঁয়াগুলো কিভাবে ফুসফুসকে ক্ষতির মুখে ফেলে দিচ্ছে। শুধু ফুসফুস নয়, ভাবুন সিগারেটের ধোঁয়া কিভাবে আপনার রক্তের শিরায় শিরায় প্রবেশ করছে।
অর্থাৎ, সিগারেট টানার পর সিগারেটের ধোঁয়া শরীরে প্রবেশ করার পুরো প্রক্রিয়াটি কল্পণায় দেখার চেষ্টা করুন। এতে আপনার অবচেতন মন সিগারেটের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে হঠাৎ সচেতন হয়ে উঠবে। আর সেই সেই সাথে আপনার সিগারেট ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্তটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। ফলে, আপনার সিদ্ধান্ত পাকপোক্ত হয়ে যাবে যা আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করার উপায় হিসেবে প্রথম কার্য্যকরী পথে নিয়ে যাবে।
৩. একটা বিশেষ দিন নির্ধারণ করুন
ধূমপান ত্যাগ করার জন্যে একটা বিশেষ দিন নির্ধারণ করে নিন। সেটা হতে পারে যে কোনও দিন, হতে পারে কোন একটা শুক্রবার, হতে পারে চলতি মাসের শেষ দিন কিংবা সামনের মাসের প্রথম দিন। সবচেয়ে ভাল হয় যদি সেটা হয় আপনার জন্মদিন কিংবা আপনার গার্লফ্রেন্ড বা স্ত্রীর জন্মদিন অথবা আপনাদের ম্যারেজ ডে। অর্থাৎ একটা বিশেষ দিন ঠিক করুন যে-দিন থেকে আপনি সিগারেট আর খাবেন না।
একটা বিশেষ দিন ঠিক করা থাকলে আপনার মাথার মধ্যে প্রতিদিনই ওই দিনটির কথা মনে পড়বে। এতে করে দিনটির জন্যে আপনার মাঝে একটি অপেক্ষা তৈরি হবে, প্রস্তুতির মতো কিছু ব্যাপার চলে আসবে। সর্বোপরি, আপনি দিনটির জন্যে আপনার মন আপনাকে পুরোপুর সচেতন করে তুলবে এবং সেই বিশেষ দিনটিতে আপনি সত্যিই সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিতে পারবেন।
৪. সবাইকে জানিয়ে দিন
আপনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবং অবচেতন মনকেও আপনি তৈরি করে ফেলেছেন। এমনকি, ধূমপান ত্যাগ করার দিন হিসেবে আপনি একটি বিশেষ দিন নির্বাচন করেছেন। এবার আপনার ধূমপান ত্যাগ করার সিদ্ধান্তটি সবাইকে জানিয়ে দিন। আপনার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, ক্লাসমেট, সহকর্মী ইত্যাদি যত পরিচিত ব্যক্তি রয়েছে, সবাইকে জানিয়ে দিন যে আগামী অমুক দিন থেকে আপনি আর সিগারেট পান করবেন না।
বিশেষ করে, যাকে আপনি সবচেয়ে বেশি কেয়ার করেন, যার মনে কষ্ট দিলে আপনার নিজের মনেই কষ্ট লেগে যায়, তাকেই সবার আগে জানিয়ে দিন যে আপনি আর সিগারেট খাচ্ছেন না। এতে আপনার যে সুবিধা হবে সেটা হল, আপনার অবচেতন মনে সিগারেট ত্যাগের বিষয়টি পুরোপুরি গেঁথে যাবে যা আপনাকে ধূমপান ত্যাগ করার উপায় হিসেবে দারুণ সাহায্য করবে।
৫. মনোযোগ দিয়ে ধূমপান করুন
আমরা সবচেয়ে বেশি ধূমপান করি কাজের সময়, আড্ডার সময়, গল্পের সময়। আর এতে করেই আমাদের ধূমপানের মাত্রাটা বেশি হয়ে থাকে। বিষয়টাকে পাল্টে দিন, মনোযোগ দিয়ে ধূমপান করুন। অর্থাৎ, এখন থেকে আপনি যখন ধূমপান করবেন, তখন আর অন্য কোন কাজ করবেন না। ধূমপান করার জন্যে কাজ করা থেকে কিছুক্ষণের জন্যে অবসর নিয়ে নিন।
এরপর নিরিবিল একটা জায়গায় যান, সিগারেট ধরান আর সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে সিগারেট টানুন। কিভাবে সিগারেটের ধোঁয়া আপনার শরীরে প্রবেশ করছে তা খেয়াল করুন। প্রতিটি টানের সাথে আপনার শরীরে যা যা ঘটছে তা ভাবার চেষ্টা করুন।
আপনি যদি কোন আড্ডায় থাকেন, আড্ডার অন্য বন্ধুদের বলে দিন যে, আপনি খুব আয়েস করে সিগারেটটি খেতে চাইছেন। তাই, কেউ যেন এ সময় আপনার সাথে কথা না বলে। হ্যাঁ, আপনি আয়েস করেই সিগারেটটি খান। মাঝে মাঝে সিগারেট টানার সময় চোখ বন্ধ করে ফেলুন, সুযোগ থাকলে শুয়ে পড়ুন, পূর্ণ আয়েসে সিগারেট টানুন আর মনে মনে দেখার চেষ্টা করুন সিগারেটের ধোঁয়া কিভাবে আপনারে গলার ভেতর দিয়ে শরীরে এবং ফুসফুসে প্রবেশ করছে।
৬. হিসেব রাখুন দিনে কয়টা খাচ্ছেন
যখন সিগারেট টানবেন, মনোযোগ দিয়েই টানবেন কিন্তু হিসেবটাও রাখবেন। অর্থাৎ প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ঘুমানো পর্যন্ত আপনি মোট কতটি সিগারেট খান, সেই হিসেবটা রাখুন। এটা আপনার স্মার্টফোনেই করতে পারেন। একটা সিগারেট জ্বালিয়েই মোবাইলের কোথাও টুকে রাখুন। আর ঘুমোতে যাওয়ার আগে দেখে নিন কয়টা খেলেন।
৭. সিগারেট না জ্বালিয়ে টানতে থাকুন
শুনতে একটু বেখাপ্পা লাগলেও ধূমপান ত্যাগ করার উপায় হিসেবে এটি দারুণ কার্য্যকর। আপনার যখনই সিগারেট খেতে মন চাইবে তখনই হাতে একটি সিগারেট নিন। আর সিগারেটটি না জ্বালিয়ে মুখে নিয়ে টানতে থাকুন। প্রথম প্রথম একটু কেমন কেমন লাগলেও আপনি অবাক হয়ে দেখবেন যে, আপনার সিগারেটের তৃষ্ণা মিটে যাচ্ছে। না, পুরোপুরি মিটবে না। তবে, দীর্ঘক্ষণ আপনি সিগারেট না খেয়ে থাকতে পারবেন।
এ উপায়টি সবচেয়ে বেশি কাজে দেবে যারা কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে আনমনেই একটার পর একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেলেন। আসলে আগেই বলেছি, কাজের সময় আমরা সবচেয়ে বেশি সিগারেট জ্বালিয়ে থাকি। এখন, কাজের সময়ই যদি সিগারেট না জ্বালিয়ে টানা যায় তো সিগারেট খাওয়া অনেক কমে আসবে। এই পদ্ধতিতে মূলত মনকে ধোকা দেয়া হয়। মন বুঝতে পারে না যে, আসলে সিগারেট খাওয়া হচ্ছে না।
৮. চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন:
আপনি নিজেও জানেন যে ধুমপান ত্যাগ আপনার জন্য মোটেও সহজ কোন কাজ হবে না। এটি আপনার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ যেখানে আপনাকে যে কোন মূল্যে জয়ী হতেই হবে। যতগুলি কারণে আপনি ধুমপানের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন এবং যে-সব কারণে ধুমপানের অভ্যাস ত্যাগ করা আপনার জন্য কষ্টকর তার বিপরীতে একটি উপায় দাঁড় করান।
উদাহরণ স্বরুপ, আপনার কারণ যদি হয় যে নিকোটিন একটি আসক্তিকর নেশা, সেক্ষেত্রে আপনার জন্য উপায়টি হতে পারে যে কোন একটি নিকোটিন প্রতিরোধকারী ঔষধ ব্যবহার করা। আবার যদি আপনি ভাবেন যে, যখন আপনি অবসাদগ্রস্থ থাকেন, তখন ধুমপান আপনাকে কিছু স্বস্তি দেয়, তাহলে আপনি বিপরীতে কিছু সময় হাটাহাটি করা বা কোথাও ঘুরে আসার মত উপায়গুলি খুঁজে বের করতে পারেন।
আপনার ধুমপানে আগ্রহী হওয়ার বিষয়গুলির বিপক্ষে আপনি যতগুলি উপায় খুঁজে বের করতে পারবেন, আপনার জন্য চ্যালেঞ্জে জয়ী হওয়ার ব্যাপারটিও ততটাই সহজ হয়ে যাবে। বুঝতেই পারছেন, ধূমপান ত্যাগ করার উপায় হিসেবে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করাটাও জরুরী।
৯. খারাপ সঙ্গ থেকে দুরে থাকুন
গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেশির ভাগ ধুমপায়ী শুরুর দিকে বন্ধু বান্ধব বা কোন ব্যক্তির দ্বারা ধুমপান করতে প্রলুব্ধ হয়ে থাকেন। আবার যখন আপনি ধুমপান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন, তখন আবার সেই একই ধরনের মানুষগুলো আপনার ধুমপান ত্যাগের সংকল্পের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
আপনি যাদের সাথে সব সময় চলাফেরা করেন তারা যদি ধুমপায়ী হয়ে থাকেন, তাহলে তারা আপনার সামনে ধুমপান করার সময় আপনারও ধুমপান করতে ইচ্ছা করবে। কিছু কিছু সময় তারা আপনাকে পুনরায় ধুমপান করতেও বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
তাই আপনি যখন ধুমপান করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, তখন আপনাকে অবশ্যই এ ধরনের সঙ্গ পরিত্যাগ করতে হবে। তার পরিবর্তে আপনি পরিবার বা অন্যান্য কাছের মানুষগুলোর সাথে সময় কাটানো শুরু করুন যাদের কাছে আপনার ধুমপান করা মোটেও পছন্দনীয় নয়।
১০. আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন
ধুমপান ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাথে সাথে ধুমপান না করা আপনার জন্য যতটা জরুরী ঠিক ততটাই আপনার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করাটাও জরুরী হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, প্রেম-ভালোবাসা কিংবা পারিবারিক অশান্তির কারণে অনেকেই ধুমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। রাগ, অসস্তি, দুঃখ ইত্যাদি কিছু কিছু আবেগ রয়েছে যা একজন ধুমপায়ীকে ধুমপান করতে উদ্বুদ্ধ করে।
এমনকি, আপনি যদি ধুমপানের সংকল্পও করে থাকেন, তারপরেও এ ধরনের পরিস্থিতিতে অনেক বড় একটা সম্ভাবণা রয়েছে যে, আপনি আবার ধুমপানের জালে আটকা পড়ে যাবেন। এজন্য আপনাকে অবশ্যই আবেগ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেষ্ট থাকতে হবে। আপনি যাতে খুব সহজে কোন কিছুতে রেগে না যান বা খুব তাড়াতাড়ি অবসাদগ্রস্থ না হয়ে পড়েন, সেদিকে খেয়াল রেখে চলবেন। যথা সম্ভব শান্ত থাকার চেষ্টা করুন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
১১. শেষ ধুমপান থেকে বিরত থাকুন
ধুমপায়ীদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট হলো তারা কখনো একবার ধুমপান করে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন না। একবার ধুমপান করলে ঐ পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেই তারা আবার ধুমপান করেন। আর ধুমপানের ক্ষেত্রে সিগারেট এমন একটি জিনিস যা কখনো ধুমপায়ীদের কাছে প্যাকেট বা একাধিকের নিচে থাকে না।
অনেকে আবার ধুমপান ত্যাগের আগে শেষ বারের মত একবাধ ধুমপানের স্বাদ গ্রহণ করতে চান। কিন্তু আপনি যদি কোনভাবেই এই শেষবারের ইচ্ছা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে না পারেন, তাহলে আপনি যে পুরোপুরিভাবে ধুমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে পারবেন তার সম্ভাবনা খুবই কম। কাজেই, ধূমপান ত্যাগ করার উপায় হিসেবে শেষ সিগারেট খাওয়া থেকে বিরত থাকা বাঞ্চণীয়।
১২. নিকোটিন চুইংগাম চিবান
সিগারেট ছাড়ার পর সবচেয়ে বেশি যে সমস্যাটি হয়, সেটি হচ্ছে শরীর ম্যাজম্যাজ করা। এটি হয় মূলত রক্তে নিকোটিনের অভাবে। আসলে, সিগারেট খেতে খেতে আমাদের শরীরে নিকোটিনের একটি নির্দিষ্ট্য চাহিদা তৈরি হয়ে যায়। আর শরীর যখন ওই নিকোটিন থেকে বঞ্চিত হয়, তখন নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখায়।
শরীরকে বুঝ দেয়ার জন্যে নিকোটিনের রিপ্লেসমেন্ট করে দিতে পারেন। বাজারে, বিশেষ করে বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে নিকোটিনযুক্ত নানা রকম চকলেট ও চুইংগাম পাওয়া যায়। কয়েকটি কিনে রাখুন আর যখনই দেখবেন শরীর একটু কেমন কেমন করছে, তখনই একটি চাবাতে শুরু করুন।
১৩. ব্যায়াম করুন
ধূমপান ত্যাগ করার পর মনকে ভুলিয়ে রাখার জন্যে ব্যায়াম করুন। ধূমপান ছাড়ার ফলে শরীরে যে-সব প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে, ব্যায়ামের কারণে সেগুলোর সবই ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া, ব্যায়ামের ফলে, আপনার শরীর সুস্থ্য ও সুন্দরভাবে কাজ করবে।
উপরে উল্লেখিত ধূমপান ত্যাগ করার উপায় নিয়ে আপনার মনে যদি কোন সংশয় থাকে, তবে সেটি দূর করার চেষ্টা করুন। কারণ, এ উপায়গুলো পালন করলে আপনি নিশ্চিতরূপে ধূমপান ত্যাগ করতে পারবেন। আর যদি শুধু ধুমপান ত্যাগের কৌশল জেনেই মনে করে থাকেন যে, আপনি খুব সহজেই এটি ত্যাগ করতে পারবেন, তাহলে আপনি ভুল করছেন।
পরিসংখ্যান বলছে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ ও সেই মোতাবেক চলার অভ্যাস গড়ে তোলার আগ পর্যন্ত অনেক কম সংখ্যক মানুষই ধুমপান থেকে নিজেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে হাজার চেষ্টার পরেও সেটি সফল হয়ে ওঠে না। এমনটি যদি আপনার সাথেও হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই অভিজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
Leave a Reply