সিকিউরিটি বা হ্যাকিং নিয়ে যারা পড়াশুনা করেন, তাদের অনেকেই হয়তো কি-লগারের নাম শুনেছেন। একেবারে সোজা বাংলায় বলতে গেলে, কি-লগার হল এমন একটি ম্যালওয়ার, যেটা আমাদের প্রেস করে প্রতিটা কি-স্ট্রোক রেকর্ড করে আগে থেকে সেট করা অন্য কোন ইমেইল এড্রেসে পাঠিয়ে দেয়। অন্যান্য ম্যালওয়্যারও সাধারণত ইন্টারনেটের মাধ্যমেই ডাটা পাচার করে থাকে। তাই, ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়াই যে ডাটা চুরি করবে ফ্যানসমিটার – এমনটা সাধারণত আমরা চিন্তা করি না।
কিন্তু সত্যি কথা হল, ইসরাইলের বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল রিসার্চার এমনই একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যা এয়ারগ্যাপে থাকা কম্পিউটার থেকেও ডাটা হাইজ্যাক করতে সক্ষম। মূলত, এক্ষেত্রে তারা একটি ভাইরাস আবিষ্কার করেছেন ফ্যানসমওয়ার নামে। এই ভাইরাসই এয়ারগ্যাপে থাকা কম্পিউটার থেকে রিমোট কোন কম্পিউটারে ডাটা পাঠাতে সক্ষম।
ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়াই ডাটা চুরি করবে ফ্যানসমিটার
এখন প্রথম প্রশ্ন হল, এয়ারগ্যাপ বলতে আমরা কি বুঝি? এয়ারগ্যাপে থাকা কম্পিউটার বলতে বুঝায় ইন্টারনেট বা এমন অন্য কোন নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা কোন কম্পিউটার।
স্বাভাবিকভাবেই আমার পিসির ডাটা অন্য পিসিতে পাঠাতে চাইলে আমার পিসিকে কোন না কোন নেটওয়ার্কে কানেক্টেড থাকতে হবে বলেই মনে হয় আমাদের কাছে। কিন্তু, ফ্যানসমিটার আপনার পিসিকে অন্য কোন নেটওয়ার্কে কানেক্টেড করা ছাড়াই ডাটা নির্দিষ্ট ডেস্টিনেশনে পাঠাতে সক্ষম।
ফ্যানসমিটার কিঃ
এখন প্রথমেই আমাদেরকে জানতে হবে, ফ্যানসমিটার কি? ফ্যানসমিটার হল এমন একটা মালওয়ার যা আপনার ডেস্কটপ বা ল্যাপটপের ইন্টারনাল কুলিং ফ্যানকে কন্ট্রোল করতে পারে। এখন, আপনার মনে হতেই পারে, ফ্যানকে নিয়ন্ত্রণ করার সাথে ডাটা পাস করার কী সম্পর্ক। চলুন তাহলে দেখে নেই, এই ফ্যানকে নিয়ন্ত্রন করেই কীভাবে দূরবর্তী কম্পিউটারে ডাটা পাঠায় ফ্যানসমিটার।
ফ্যানসমিটার কাজ করে কীভাবে?
এম.আই.টি টেকনোলজি রিভিউ-এর একটা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্যানসমিটার ভাইরাসটি আপনার পিসির ফ্যানের রোটেশন স্পীডকে কন্ট্রোল করতে পারে। ডিজিটাল ডাটার ক্ষেত্রে খুব ব্যাসিক একটা জ্ঞান আমাদের সবারই আছে। আর তা হল, একটা খুব ছোট্ট কয়েক বাইটের লগ ফাইল থেকে শুরু করে কয়েক জিবির ভিডিও পর্যন্ত যে কোন প্রকার কম্পিউটার ডাটাই হল মূলত বাইনারী সংখ্যা। অর্থাৎ, ১ আর ০-এর সমষ্টি। এই খুব ব্যাসিক জ্ঞানটাকেই ব্যবহার করে এই ফ্যানসমিটার।
যে ডাটাটি পাস করতে হবে, সেখানে কোন বিটে ০ পেলে ফ্যানের রোটেশন ০-তে নামিয়ে আনে ফ্যানসমিটার। আর ১ পেলে ফ্যানের রোটেশন ৩০০০ বা তারও বেশি রোটেশন পার মিনিটে নিয়ে যায় এটি। এতে করে ইন্টারনাল কুলিং ফ্যান ঘোরার শব্দের তারতম্য সৃষ্টি হয়।
এখন যেই রুমে আপনার পিসি আছে, সেই রুমেই যদি মোবাইল বা অন্য কোন রেকর্ডিং ডিভাইস রাখা যায়, যা ফ্যানের এই রোটেশনের শব্দকে রিসিভ করে পাওয়া ডাটাকে রিমোট কোন ডেস্টিনেশনে পাঠিয়ে দিতে পারবে। তাহলেই কিন্তু আপনার কম্পিউটারকে কোন ইন্টারনেট কানেকশন বা ল্যান নেটওয়ার্কে কানেক্ট করা ছাড়াই হাইজ্যাক হয়ে গেল আপনার কম্পিউটারের ডাটা।
সুতরাং, আপনার কম্পিউটারকে ল্যান নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেটের আওতামুক্ত রাখলেই যে আপনার কম্পিউটারটির ডাটা নিরাপদ থাকবে, এমনটি ভাবার কোন কারণ নেই। ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়াই সামান্য কুলিং ফ্যানকে নিয়ন্ত্রন করেই দূরবর্তী কম্পিউটারে ডাটা পাঠিয়ে দিতে পারবে ফ্যানসমিটার।
Leave a Reply