থ্রিডি ফুড প্রিন্টারের খাবার বানানোর আর্টিকেলটা অনেকেই হয়তো দেখেছেন। যদি না দেখে থাকেন, তাহলে এখনই দেখে নিতে পারেন। মজার ব্যাপার হল, খাবারের মত ছোট-খাট জিনিস নয়, এমন কি বাড়িও ডাউনলোড করা যাবে থ্রিডি প্রিন্টার ব্যবহার করে। আর খাবারের মত এক্সপেরিমেন্টাল লেভেলে নেই ব্যাপারটা। এরই মধ্যে পুরোদমে বাড়ি বানানোর কাজও শুরু করে দিয়েছে থ্রিডি প্রিন্টার।
আমরা সবাই জানি, আমাদের সবচেয়ে ব্যাসিক চাহিদা হল শিক্ষা ও চিকিৎসার পাশাপাশি, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান। শিক্ষার অনেক উপকরণ তো ইদানীং টুডি প্রিন্টার ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। বস্ত্রেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এই প্রিন্টিং। চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অনেক টুল এখন বানানো যায় থ্রিডি প্রিন্টারে। কিন্তু, খাবারের মত সেন্সিটিভ জিনিস প্রিন্ট করা বা বাসস্থানের মত বিশাল জিনিস প্রিন্ট করা একেবারে অকল্পনীয় ব্যাপার। কিন্তু, সেখানেও সাফল্যের সাথে অবদান রাখছে থ্রিডি প্রিন্টার।
বাড়িও ডাউনলোড করা যাবে
WRI (World Resource Organization) –এর গত বছরেই বের হওয়া একটা রিপোর্টে দেখা গেছে, পুরো পৃথিবীতে ৩৩০ মিলিয়ন পরিবার থাকার জন্য একটা ডিসেন্ট বাসস্থান এফোর্ড করতে পারে না। আর জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও প্রকট হচ্ছে এই সমস্যা। আর এই সমস্যা সমাধানে এতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে দুইটি নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন – টেক্সাসের অস্টিনের রোবটিক্স কোম্পানি ‘আইকন’ এবং সান ফ্রান্সিস্কোর কোম্পানি ‘নিউ স্টোরি’। চলুন জেনে নেই তাদের সম্পর্কে।
আইকন এবং নিউ স্টোরিঃ
আলাদাভাবে আইকন এবং নিউ স্টোরি উদ্যোগটা হাতে নিলেও, এই বছরের মার্চ থেকে তারা কাজ করছে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। আইকনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটটা ভিজিট করলেই সবার আগে দেখতে পারবেন, অসাধারণ একটা লেখা, “What if you could download a home in 24 hours for half the cost.” অর্থাৎ, কেমন হবে, যদি আপনি একটা বাড়ি ডাউনলোড করে ফেলতে পারেন একদিনের ভিতরে, অর্ধেক খরচে!
হ্যাঁ, আপনি যেটার কথা চিন্তা করাটাও পাগলামী ভাবছেন, সেটা এরই মধ্যে সম্পূর্ণ বাস্তব। এর মধ্যেই মাত্র ১০০০০ ডলার খরচে অস্টিনে মাত্র ৪৮ ঘন্টায় বাড়ি বানাতে সক্ষম হয়েছে আইকন এবং নিউ স্টোরি।
আইকন তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দাবি করেছে, তাদের এই প্রোজেক্টে এনার্জি খরচ খুব কম, তাপ সাশ্রয়ী, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর উপর প্রভাব কমাবে, এফোর্ডেবল এবং দৃষ্টিনন্দন।
কো-ফাউন্ডারদের মতামত
নিউ স্টোরির কো-ফাউন্ডার ম্যাথ্যু মার্শাল বলেছেন, তারা প্রমাণ করতে চান, প্রযুক্তির সম্পূর্ণ ক্ষমতা আছে নিরাপদ আর শক্তিশালী বাড়ি তৈরি করার, যা হারিকেন বা ভূমিকম্পকেও মোকাবিলা করতে পারবে।
আইকনের কো-ফাউন্ডার জেসন বালার্ড বলেন, কন্সট্রাকশনের পদ্ধতি এত বছর ধরে অপরিবর্তিত আছে, যে মনে হচ্ছে যেন মানুষ চিন্তা করতেও ভুলে গেছে যে কীভাবে অন্য কোন উপায়ে কাজ করা যায়।
জেসন বালার্ড আরও বলেন, আপনি এল সাল্ভাডরে বাড়ি বানান অথবা সান ফ্রান্সিস্কোতেই বাড়ি বানান না কেন, আমাদের কথা হল, আপনি আপনার বাড়ি থ্রিডি প্রিন্টিং-এর মাধ্যমে বানান, যদি আপনি খরচ, টেকশই হওয়া এবং মানুষের মঙ্গলের ব্যাপারে কেয়ার করেন, তাহলে।
ভালকান
নিশ্চয়ই এখন ভাবছেন, ভালকান কি? ভালকানই হল সেই ক্রেনের মত দেখতে সেই লাইট ওয়েট থ্রিডি প্রিন্টার, যা এরই মধ্যে বাড়ি প্রিন্ট করতে সক্ষম হয়েছে। এটি অন-সাইট প্রিন্ট করে। অর্থাৎ, যেখানে বাড়ি বানানো প্রয়োজন, সেখানে প্রিন্টারটা নিয়ে যেয়ে প্রিন্ট করা হয়।
যদিও ভালকানের তৈরি করা বাড়ির খরচ ছিল ১০০০০ ডলার এবং সময় নিয়েছিল ৪৮ ঘন্টা। তবে, নিউ স্টোরি তাদের সাইটে বলেছে, প্রথমবার বাড়ি বানানোর সময় ভালকানের ক্ষমতার অর্ধেকও ব্যবহার সম্ভব হয়নি। এই বাড়ি বানানোর খরচ ৪০০০ মার্কিন ডলারে নামিয়ে আনা, সময় ১২ থেকে ২৪ ঘন্টায় নামিয়ে আনা এবং কোয়ালিটি ইম্প্রুভ করা সম্ভব।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
ভবিষ্যতের প্রিন্টিং কোয়ালিটি আরও উন্নত করতে এবং সময় ও খরচ আরও কমিয়ে আনতে নিউ স্টোরি আরঅ্যান্ডডি (রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) এর জন্য ছয় লক্ষ ডলার ফান্ড গঠনের চেষ্টা করছে। আর বর্তমানেও এল সালভাডরে খুব সাধারণ কিন্তু আবহাওয়া সহনশীল মজবুত বাড়ি তৈরি করার জন্য চার লক্ষ ডলারের ফান্ড গঠন করার চেষ্টা করছে।
তাদের এই ফান্ডে চাইলে আপনিও ডোনেশন করে সাহায্য করতে পারবেন, নিউ স্টোরির ওয়েবসাইটে গিয়ে। এমন কি আপনি যদি ডোনেশনের ব্যাপারে বা ডোনেশনের পূর্বে তাদের সাথে কথা বলতে চান, সেই সুযোগও দিতে প্রস্তুত তারা।
ব্লকেবল
নতুন প্রশ্ন, ব্লকেবল কি? এরমধ্যেই আপনারা জেনে গেছেন যে, আইকন আর নিউ স্টোরির এই প্রজেক্ট তো অন সাইট হাউস বিল্ডিং করছে। আর ব্লকেবল নামে আরেকটা আমেরিকান কোম্পানি অফ সাইট হাউস বিল্ডিং-এর আইডিয়া এনেছে। এক্ষেত্রে, তারা পুরো বাড়ি একবারে তৈরি না করে, বাড়ির ইউনিট তৈরি করে পৌঁছে দিতে পারবে আপনার লোকেশনে। ব্লকেবলের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে চাইলে ক্লিক করতে পারেন এই লিংকে।
যাই হোক, তো এই ছিল আজকের মত আলোচনা। দেখতেই পাচ্ছেন, থ্রিডি প্রিন্টার দিয়ে এখন সত্যিকার অর্থেই বাড়িও ডাউনলোড করা যাবে । সত্যি কথা বলতে, প্রযুক্তি যে আমাদেরকে কোত্থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা ভাবতেও অবাক লাগে! যা চিন্তা করতেও অবাস্তব মনে হয়, তা সত্যিকার দুনিয়াতেই বাস্তবতা পাচ্ছে। সামনে এমন আরও অনেক অবাক করা প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ, ততক্ষন পর্যন্ত বিদায়।
Leave a Reply