আমাদের জীবনের বন্ধুত্ব এবং পরিবার দুইটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিছু বন্ধু এমনও হয় যারা একসময় পরিবারেরই অংশ হয়ে ওঠেন। স্কুল জীবন থেকে শুরু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষ বন্ধুত্ব স্থাপন করতে থাকে। বন্ধুত্ব এমন একটি সম্পর্ক যেখানে আমরা সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস, আস্থা এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজেদের যে কোন কথা শেয়ার করতে পারি। আবেগ আর অনুভুতিগুলো বিনিময় করার মধ্য দিয়ে কিছু মানুষের ভিতরে কখন যে তার বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়ার লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে তা অনেকে হয়তো টেরও পান না।
মানুষের জীবনে প্রেম এমন একটি জিনিস যা কখনো চিন্তা ভাবনা করে হয় না। ঠিক কোন বয়সে কার সাথে আপনি প্রেমে পড়বেন তা নিশ্চিতভাবে কখনোই বলা সম্ভব নয়। প্রেম যে কোন বয়সে যে কোন মানুষের সাথে হওয়া সম্ভব। আর সেই মানুষটি যদি হয় আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড, তবে এটি নিশ্চিতভাবে আপনার জন্য সুসংবাদ।
বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়ার লক্ষণ
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি জীবনসঙ্গী হিসাবে একজন বেস্ট ফ্রেন্ডের কোন তুলনাই হয় না। জীবনসঙ্গী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যে-সব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে, সেগুলো বেস্ট ফ্রেন্ডকে জীবনসঙ্গী হিসাবে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সহজেই নিশ্চিত হওয়া যায়। কিন্তু পরোক্ষভাবে একজন মানুষ আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার মানেই যে সে আপনার জীবনসঙ্গী হবে বা আপনি তার প্রেমে পড়ে যাবেন তা নয়। কিছু কিছু লক্ষণ বলে দেয় যে নিজের অজান্তেই আপনি আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়ে গেছেন।
সব সময় আপনার তাকে ম্যাসেজ করতে মন চাইবে:
বন্ধুত্বের মধ্যে যোগাযোগ থাকা বা একে অন্যের সাথে কম বেশি কথা বার্তা হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু আপনার বন্ধুদের মধ্যে যদি এমন কেউ থেকে থাকে, যাকে আপনি ঘুম থেকে উঠেই আগে সোস্যাল মিডিয়াতে ম্যাসেজ করেন বা কল করেন।
আর শুধু সকাল না, এমনকি যথারিতী দুপুর, বিকাল, সন্ধ্যা আর রাতের অনেকটা সময় জুড়েই আপনি তার সাথে কলা বলেন বা বলতে ভালোবাসেন, তাহলে বুঝে নিন তার সংষ্পর্শে থাকাটা আপনার জন্য আনন্দদায়ক।
তার দিকে আপনি গুরুত্ব দিতে শুরু করবেন:
আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের জন্য যদি এমন কিছু করতে ইচ্ছা করে যা আপনি অন্য কারো জন্য করেন না, তাহলে তার প্রতি আপনার আকর্ষণের বিষয়টি পরিষ্কার। একটা সময় উপলব্ধি করবেন যে, আপনার সেই বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রতিটি কাজ কর্ম, যেমন সে কিভাবে কথা বলে, কিভাবে চলাফেরা করে, কেমন খাবার পছন্দ করে ইত্যাদি প্রতিটি জিনিসের ব্যাপারেই আপনি লক্ষ্য রাখতে শুরু করেছেন।
তার উপস্থিতি, কথাবার্তা, হাসি-ঠাট্টা, সেই যাই করুক, তা যদি আপনার ভালো লাগার অংশ হয়ে থাকে এবং এমন কিছু করতে ইচ্ছা জাগে যাতে হয়তো তারও ভালো লাগবে, তাহলে আর দেরি না করে সর্ম্পকে এক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান।
তার সাথে দেখা করা আপনার জন্য প্রয়োজন হয়ে দেখা দেবে:
কারণে অকারণে আপনার শুধু তাকে দেখতে ইচ্ছা করবে এবং যত বেশি সময় সম্ভব তার সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগতে শুরু করবে। তার সাথে দেখা করার জন্য আপনি কোন কারণের অপেক্ষা করতে পারবেন না। যদি কারণ নাও থাকে, তবুও কোন না কোন বাহানায় আপনি তাকে নিজের কাছে আনার চেষ্টা করবেন অথবা নিজেই তার কাছে চলে যাবেন।
যে সময়গুলোতে সচরাচর তার সাথে আপনার দেখা হয়ে থাকে, কোন কারণে সেটি না হলে আপনার মধ্যে ব্যাকুলতা দেখা দেবে এবং এক ধরনের অস্থিরতায় ভুগতে শুরু করবেন। তার কোন বিপদ আপদ হলো কিনা এমন ভাবনায় আপনার মন চিন্তিত হয়ে উঠবে।
আর যখন তার সাথে দেখা হবে বা কথা হবে, প্রথমেই তাকে বকা দিতে শুরু করবেন তার অনুপস্থিতির জন্য। যদিও স্বাভাবিক বন্ধুত্বের মধ্যেও কেয়ারিং জিনিসটা কাজ করে, কিন্তু আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে এই অনুভুতিটা একটু আলাদা।
আপনার জীবনের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকবে:
আপনার জীবনে যদি এমন কোন ফ্রেন্ড থাকে যে আপনার প্রতিক্ষণের প্রত্যেকটি কাজ সম্পর্কে অবগত। যাকে আপনি সারাদিন কি কি করলেন তা অবলীলায় বলে থাকেন।
আপনার প্রতিদিনের কাজ কর্মের প্রত্যেকটি ছোট্ট থেকে ছোট্ট ঘটনা, আপনার মন ভালো থাকা বা না থাকা প্রত্যেকটি বিষয় যদি আপনি তার সাথে শেয়ার করেন, তাহলেও বোঝা যাবে যে আপনি তার মানে আপনা বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়েছেন।
সে যদি আপনার দিনের একটি বড় অংশ জুড়ে আপনার মনে নিজের জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়, তাহলে আপনি যে আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়ে গেছেন এটি কোন সন্দেহ ছাড়াই বলে দেওয়া যায়।
আপনার জন্য সকল সমস্যার সমাধান হয়ে উঠবে:
আপনার ভালো মন্দ সব অবস্থাতেই আপনার বিশ্বাস যে আর কেউ থাকুক আর না থাকুক সে আপনার পাশে থাকবে। আপনার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং আপনাকে সমস্যা থেকে বের করে আনতে সবচেয়ে উপযুক্ত পরামর্শটি দেবে।
যদি এমন কিছু হয় যে, তার কোন কাজের দ্বারা আপনি সমস্যা থেকে বের হতে পারবেন, তবে আপনি মুখ দিয়ে বলার আগেই সে সেটি করবে। এমনকি, বিনিময়ে আপনার কাছ থেকে কোন প্রতিদান আশা করবে না।
যখনই আপনি সমস্যায় পড়বেন বা আপনার কারো পরামর্শের প্রয়োজন হবে, তখন তাকে কাছে পাওয়া বা শুধুমাত্র তার ফোন কলের অপেক্ষাতে আপনি ব্যকুল হয়ে উঠতে থাকবেন।
আপনাকে তার সাথে মানাচ্ছে তো?
জানি, এটা খুবই হাস্যকর একটা ব্যাপার কিন্তু যদি আপনি আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়ে যান তাহলে হঠাৎ করেই আপনাকে কেমন দেখায়, অন্য ছেলে বা মেয়েদের থেকে আপনি কতটা সুন্দর, তার সাথে আপনাকে কেমন দেখায় ইত্যাদি বিষয়ে আপনি ভাবতে শুরু করবেন।
যেভাবে থাকলে আপনি মনে করেন যে, তার সাথে মানাবে সেইভাবেই থাকার চেষ্টা শুরু করবেন। এছাড়া সে আপনাকে যেভাবে দেখতে পছন্দ করে বা আপনার যে ধরনের ফ্যাশনের প্রসংশা করে, বেশির থেকে বেশি, তাই পরিধান করা চেষ্টা করবেন।
আপনি কি হিংসুটে স্বভাবের?
জানি উত্তরে বেশিরভাগ মানুষই ‘না’ বলবেন এবং না বলাটাই স্বাভাবিক। আমি মেনেও নিচ্ছি যে আপনি হিংসুটে নন। কিন্তু লক্ষ্য করে দেখুন তো আপনি ব্যতীত যখন অন্য কেউ আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে এবং হঠাৎ করেই বেশি সময় কাটায়, তখন আপনি হিংসুটেদের মত আচরণ করতে শুরু করেন কিনা।
বিশেষ করে, সেই ব্যক্তিটি যদি আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের বিপরীত লিঙ্গের হয়ে থাকেন, আর আপনি যদি সত্যিই তার প্রেমে পড়ে থাকেন, তাহলে আপনারা রীতিমত ঝগড়া বাঁধিয়ে দেবেন এবং যতক্ষণ সে আপনাকে এটি না বলবে যে আর কখনো এমন হবে না, ততক্ষন পর্যন্ত আপনি শান্ত হতে পারবেন না।
আপনার মধ্যে যদি বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেমে পড়ার লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই নিজেকে সৌভাগ্যবান অথবা সৌভাগ্যবতী ভাবতে শুরু করুন। কারণ, আপনি এমন একটি মানুষকে অজান্তে ভালোবেসে ফেলেছেন যে জীবনের সেই সময়গুলোতেও আপনার পাশে থাকবে যা অন্য কারো পক্ষে থাকাটা কঠিন। সে আপনার সম্পর্কে সবকিছু আগে থেকেই জানে, ফলে আপনার বলা ছাড়াই আপনার ভালো লাগা না লাগার বিষয়গুলির প্রতি সে গুরুত্ব দেবে। তাই যদি এমনটা হয়েই থাকে, দেরি হয়ে যাওয়ার আগে এখনই তাকে আপনার অনুভুতির কথা জানান।
Leave a Reply