স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় রয়েছে অনেক। তবে কার্য্যকরী ১২টি বৈজ্ঞানিক উপায় সম্পর্কে জেনে রাখুন যেগুলো আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়ানোতে ভাল ভূমিকা রাখবে। হঠাৎই কোন কিছু ভুলে যাওয়া কিংবা কিছুক্ষণ আগের কথা মনে করতে না পারার সমস্যা দূর করার পাশাপাশি এ উপায়গুলো আপনার ব্রেনের কার্য্যক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
আমরা অনেকেই প্রায়ই স্মৃতিবিভ্রম এর শিকার হয়ে থাকি। কেউ কেউ আগে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা মনে করতে পারেন না, কেউ বা আবার কিছুক্ষণ আগের ঘরের চাবি বা মোবাইল কোথায় রেখেছিলেন তাও ভুলে যান। যদি আপনার সাথেও এটি হয়ে থাকে, তাহলে ভয় পাওয়ার মত কিছু নেই। এটি অধিকাংশ মানুষের সাথেই হয়ে থাকে।
কিছু কিছু জিনিস ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক হলেও যদি অতিরিক্ত হারে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়, তাহলে সেটি অবশ্যই আপনার ভবিষ্যতের জন্য ভালো কোন লক্ষণ নয়। নিজস্ব প্রয়োজনেই আমাদের প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ তথ্য গ্রহণ এবং তা স্মৃতিতে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন হয়। দরকারের সময় যদি সেটি মনে না পড়ে, তাহলে আমরা প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে যাই। তাই যাদের এ ধরনের সমস্যা প্রবল তাদের জন্য স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করা অতীব জরুরী।
স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায়
শক্তিশালী স্মৃতি সুস্থ মস্তিষ্কের প্রতীক। স্মৃতিশক্তি বলতে এমন একটি ক্ষমতাকে আমরা বুঝি, যাকে কাজে লাগিয়ে আমরা যে কোন ধরনের তথ্য আমাদের মস্তিষ্কে সংরক্ষণ করে রাখতে পারি এবং প্রয়োজনের সময় তা পুনরায় ব্যবহার করতে পারি। কিছু তথ্য এমন আছে যা আমাদের দীর্ঘদিন মনে রাখার প্রয়োজন হয়। যেমন কারো মোবাইল নাম্বার বা ঠিকানা ইত্যাদি।
আবার কেউ যদি কষ্ট দেয়, তাহলে আমরা সেটি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি। মনে রাখা বা ভুলে যাওয়া দুইটি জিনিসই আমাদের মস্তিষ্কে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। স্মৃতিশক্তিকে বৃদ্ধি করার জন্য আমাদেরকে এই প্রক্রিয়াগুলির উন্নতি সাধনের জন্য কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন হয়। তাই দেরি না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত।
১. খাবারের দিকে নজর দিন
খাবারের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে মস্তিস্কের। শারীরিক বৃদ্ধির জন্যে যেমন বিশেষ খাবার রয়েছে, মস্তিস্কের বৃদ্ধি কিংবা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির বিশেষ কিছু খাবার রয়েছে। পুষ্টিকর, প্রোটিন, মিনারেল ও ভিটামিন যুক্ত খাবার মস্কিস্কের জন্য প্রয়োজনীয়।
Mediterranean diet গুলি বিশ্বব্যাপি সবচেয়ে স্বাস্থকর খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যে সমস্ত মানুষ Mediterranean diet গ্রহণে অভ্যস্ত তাদের স্মৃতিশক্তি অন্যান্য মানুষের তুলনায় অনেক বেশি সবল। একই সাথে এটি বয়সের সাথে সাথে আপনার স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার সম্ভাবনাকে ৫৩ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দেয়।
যে-সব খাবার মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়-
- ওগেমা-৩ ফ্যাটি এসিড (সামুদিক মাছ ও ক্যানোলা অয়েলে পাওয়া যায়)
- তৈলাক্ত মাছ (ট্রাউট, স্যামন, সার্ডিন, বাইন, )
- কফি (কফিতে ক্যাফেইন আছে আর ক্যাফেইন ব্রেন চাঙ্গা করে, অবসাদ দূর করে)
- ব্লুবেরি (বিশেষ করে মেয়েদের ব্রেনের জন্যে দারুণ কার্যকরী, ইনফ্লেমেশন ও কর্নারস্টোন থেকে রক্ষা করে)
- হলুদ (ব্রেনের ইনফ্লেমেশন কমাতে সাহায্য করে)
- ব্রোকলি (সালফারোফেন সমৃদ্ধ)
- কুমড়োর বিচি (জিংক ও মিনারেল সমৃদ্ধ)
- বাদাম (ব্রেনের পুষ্টি পলিফেনল সমৃদ্ধ)
- কমলালেবু (অ্যাসকর্বিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ)
- ডিম (ব্রেনের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ কোলেস্টোরেল সমৃদ্ধ)
- পলিফেনল (আখরোটে পাওয়া যায়, বাদামেও)
- সবুজ শাক, বিশেষ করে পালং শাক (ভিটামিন কে, ফ্লোয়েট ও লুটেইন সমৃদ্ধ)
- ডার্ক চকলেট (প্রচুর পরিমাণে ব্রেনের জন্যে প্রয়োজনীয় পলিফেনল রয়েছে)
- গ্রিন টি (ব্রেনের নিউরোন ভাল রাখে)
- আভাকাডো (ব্রেন সেলে চর্বি জমানো প্রটেক্ট করে)
স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় হিসেবে অবশ্যই আপনার খাবারের দিকে নজর দেয়া উচিৎ এবং উপরোক্ত খাবারগুলো খাওয়া উচিৎ।
২. ব্যায়াম করুন নিয়মিত
স্মৃতিশক্তিকে কার্যক্ষম করে তোলার জন্য নিয়মিতভাবে ব্যয়াম করার অভ্যাস করুন। ব্যয়াম করার ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং এর ফলে আপনার স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি অবসাদ, কান্তি ইত্যাদি দুর হয়। ব্যয়াম করার ক্ষেত্রে অবশ্যই এমন কিছু ব্যয়াম নির্ধারণ করে নিন যা শরীরে রক্ত সঞ্চালনের গতিকে বৃদ্ধি করে।
ব্রেনের কর্মদক্ষতা এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে যে-সব এক্সারসাইজ করতে পারেন-
- অ্যারোবিক এক্সারসাইজ: অ্যারোবিক এক্সারসাইজ শুধু হার্টকেই ভাল রাখে না, ব্রেনকেও সচল রাখে। এ ধরণের এক্সারসাইজ ব্রেনের ফাংশন পরিচালনায় সাহায্য করে, ডেমেজ হয়ে যাওয়া ব্রেন সেলগুলোকে রিপেয়ার করে। অ্যারোবিক এক্সারসাইজ ব্রেন সেলে থাকা ডোপামাইনকে কার্য্যকর করে তোলে, ফলে নার্ভাস সিস্টেমও ইমপ্রুভ হয়।
- ইয়োগা ও মেডিটেশন: ব্রেনের ফ্লেক্সিবিলিটি বাড়াতে দারুণভাবে সাহায্য করে ইয়োগা। যখন ইয়োগা ও মেডিটেশন এক সঙ্গে করা হয়, তখন সেটি ব্রেনের ফোকাস করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া, মেডিটেশন স্ট্রেস দূর করে বলে ব্রেনের ফাংশনালিটি পাওয়ার বেড়ে যায়।
- হাঁটা: যদিও হাঁটা খুবই সাধারণ একটি এক্সারসাইজ, কিন্তু এটি ব্রেনের জন্যে অসাধারণ উপকারি। হাাঁটার ফলে ব্রেনের বিভিন্ন এরিয়ার যোগাযোগ ক্ষমতা বাড়ে। নিয়মিত হাাঁটার ফলে ব্রেনের নিউরাল কানেকশনের উন্নতি ঘটে। যারফলে, মানুষের পরিকল্পণা তৈরি, কাজের স্ট্র্যাটেজি সাজানো, প্রায়োরিটি সেট করাসহ নানা কাজে ব্রেনের ক্ষমতা বেড়ে যায়।
এগুলো ছড়াও আরো অনেক সাধারণ এবং অ্যাডভান্সড্ লেবেলে এক্সারসাইজ রয়েছে যেগুলো ব্রেনের জন্যে, স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্যে দারুণ উপকারি ও কার্য্যকরী।
৩. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর অভ্যাস করুন
মস্তিষ্কের স্মৃতিভান্ডারকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে অবশ্যই আপনাকে প্রয়োজন মাফিক ঘুমাতে হবে। প্রাপ্তবয়ষ্ক একজন মানুষের স্মৃতিবিভ্রম এবং তদজনিত সমস্যা এড়াতে কমপক্ষে প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষই রাতের বেলায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে অভ্যস্ত। অধিক রাত পর্যন্ত জেগে থাকার ফলে তাদের স্মৃতিশক্তি, সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতার মধ্যে ঘাটতি দেখা দিতে শুরু করে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে আপনার ব্রেনে যে-সব সমস্যা হতে পারে-
- স্মৃতিশক্তি লোপ পায়: ঠিক মতো ঘুম না হলে ব্রেনের ভেতর স্মৃতিগুলো ঝাপসা হতে শুরু করে। যে কোন স্মৃতি মনে করা কঠিনতর হয়ে যায়। মেমোরি সেন্টারে গন্ডগোল শুরু হয়ে যায়।
- ফলস্ মেমোরি তৈরি হয়: ভাল ঘুম না হলে, ব্রেন এমন কিছু স্মৃতি কল্পণা করে যা সত্যি বলে বিশ্বাস করতে ব্যক্তিকে বাধ্য করে। যেমন, স্বপ্নে দেখা কোন ঘটনাকে সত্যি ভেবে বসে থাকে ব্রেন। সেক্ষেত্রে, কোনটা যে সত্যি আর কোনটা যে মিথ্যা সেটাকে ব্রেন সেপারেট করতে পারে না।
- রাগের পরিমাণ বেড়ে যায়: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আবেগ কন্ট্রোলিং পাওয়ার কমে যায়। ব্রেনের উপর যে প্রেশার পড়ে তাতে অল্পতেই মানুষ রেগে যায়। আর রাগ ব্রেনের জন্যে সবচেয়ে খারাপ দিক যা মেমোরি লস থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্যা তেরি করতে শুরু করে।
সুতরাং, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় সঠিক পরিমাণে ঘুমানো। আশা করি, যারা ঠিক মতো ঘুমান না কিংবা অহেতুক কাজে না ঘুমিয়ে সময় ব্যয় করেন, তারা এখন থেকে ঘুমের ব্যাপারে সচেতন হবেন।
৪. একাধিক কাজ একসাথে করা থেকে বিরত থাকুন
প্রতিযোগিতার এই সময়ে মানুষ কম সময়ে বেশির থেকে বেশি কাজ করতে চায়। কিন্তু অবাক করার মত ব্যপারটি হচ্ছে, একসাথে একাধিক কাজ বা মাল্টিটাস্কিং প্রকৃতপক্ষে আপনার কাজ দ্রুত সমাধান করার পরিবর্তে ধীর গতির করে দেয়। একই সাথে এটি আপনার মস্কিষ্ককে কোন তথ্য স্মৃতিতে সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়াতে বাধা সৃষ্টি করে।
গবেষণায় দেখা যায়, যে কোন তথ্যকে স্মৃতিতে সংরক্ষণ করার জন্য আমাদের মস্তিষ্কের ৮ সেকেন্ডের মত সময় লাগে। এর মানে হলো যদি আপনি কোন গ্রোসারি সুপার শপে পণ্য নির্বাচন করার সময়ে ফোনে কথা বলতে থাকেন, তাহলে আপনার কি কি শপিং করা প্রয়োজন তা আর আপনি মনে করতে পারবেন না।
৫. নিয়মিত শেখাটা চালিয়ে যান
প্রাতিষ্ঠানিক পড়া-শুনা শেষ করার পর আমরা আর পড়তে চাই না, ব্রেনকে অলস করে রাখি। ব্রেনকে অলওয়েজ অ্যাকটিভ রাখার জন্যে বিভিন্ন ধরণের পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। আমরা জানি, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে বহু ধরণের পড়াশুনা রয়েছে।
উদাহরণ স্বরূপ, আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন কিংবা অ্যাপ ডিজাইন শিখতে পারেন। ফ্রিতে গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে পারেন। ওয়েব ডিজাউন শেখারও ওয়েবসাইট রয়েছে অনেক। এছাড়া, অনলাইনে নানা ধরণের আইটি কোর্স করতে পারেন, ফ্রিতে আইটি কোর্স করারও অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে।
৬. ব্রেইন গেমস খেলুন
আপনি যদি প্রতিনিয়ত আপনার মস্তিষ্ককে নতুন নতুন অবস্থায় ফেলে তার সমাধান খোঁজার চেষ্টা না করেন, তাহলে এটি ক্রমশই ধীর গতির হয়ে পড়বে। মস্তিষ্ককে এ ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ব্রেইন গেমস একটি কার্যকরী উপায়। বর্তমান সময়ে অনলাইনে এমন প্লে-স্টোরে এমন অনেক ব্রেন গেমস্ রয়েছে যেগুলো খেলার মাধ্যমে আপনার স্মৃতিশক্তির কার্যক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে পারেন।
ব্রেন গেমস্ খেলার উপকারিতা-
- ১. ব্রেন গেম স্মৃতিশক্তি বাড়ায়
- ২. ব্রেন গেম ব্রেনের রি-অ্যাকশন টাইম বৃদ্ধি করে
- ৩. ব্রেন গেম দ্রুত চিন্তা করতে সাহায্য করে
- ৪. ব্রেন গেম চেতনা শক্তি বৃদ্ধি করে এবং আন্ডাস্ট্যান্ডিং পাওয়ার বাড়ায়
- ৫. ব্রেন গেম একাগ্রতা বৃদ্ধিতে সহায়ক
- ৬. ব্রেন গেম স্বাধীনভাবে পরিকল্পণা ও স্ট্র্যাটেজি তৈরিতে সহায়তা করে।
অনলাইনে নানা ধরণের ব্রেন গেম রয়েছে যেগুলোর কোনটি কম্পিউটারে, আবার কোনটি মোবাইলে খেলা যায়। তবে, আপনার সহায়হার জন্যে যে ধরণের গেমগুলো ব্রেনের জন্যে উপকারি সেগুলো নিচে দেয়া হল-
- কার্ড গেম: ব্রেনকে সতেজ ও কর্মক্ষম রাখার জন্যে কার্ডগেমগুলোই সেরা। প্রতিটি কার্ড গেমের স্ট্র্যাটেজি ও প্যাটার্ন মনে রাখার মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
- বোর্ড গেম: দাবা, ড্রাফট্ ও স্ক্র্যাবল টাইপের বোর্ড গেমগুলো ব্রেনের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে ভাল উপায়।
- পাজল গেম: প্রবলেম সলভিং পাজল গেমগুলো, যেমন সুডুকু ব্রেনের জন্যে ব্যায়াম স্বরূপ। এ ধরণের গেমগুলো ব্রেনকে কঠিন চিন্তায় ফেলে দিয়ে সমাধান বের করতে সাহায্য করে।
আশা করি, বুঝতে পেরেছেন স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় হিসেবে ব্রেন গেম খেলা কতটা কার্যকরী। তাই, ব্রেনকে ব্রিলিয়ান্ট বানাতে উপরে আলোচিত গেমগুলো খেলুন।
৭. উল্টো থেকে চিন্তা করুন
১০০ থেকে ১ কিংবা ৫০০ থেকে ১ পর্যন্ত উল্টো করে চিন্তা করুন। আপনার মোবাইল নাম্বারটি কিংবা আপনার বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডের মোবাইল নাম্বারটি উল্টো পাশ থেকে বলার চেষ্টা করুন। বাজার করবেন বলে একটা লিস্ট করেছেন, এবার লিস্টটির শেষেরটি থেকে প্রথমটি পর্যন্ত অর্থাৎ উল্টো থেকে আইটেমগুলো মনে করার চেষ্টা করুন। এভাবে আরো অনেক কিছুই আপনি উল্টো শুরু করতে পারেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, উল্টো থেকে চিন্তা করা, কোন কিছু মুখস্থ করা এবং আবার মনে করার চেষ্টা করা ব্রেনের পাওয়ার বাড়িয়ে দেয় এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
৮. ক্রসওয়ার্ড সমাধান করুন
বিভিন্ন পত্রিকায় ক্রসওয়ার্ডের ছক দেখেছেন নিশ্চয়ই। এটি খুব মজার এবং ব্রেনের জন্যে দারুণ ব্যায়াম। সুতরাং, মাঝে মাঝে ক্রসওয়ার্ডের সমাধান করুন। হতে পারে সেটি বাংলা কিংবা ইংরেজী, প্রথমআলো কিংবা ডেইলি স্টারের ক্রসওয়ার্ড। ক্রসওয়ার্ড ব্রেনকে ডিম্যানশিয়া রোগ থেকে রক্ষা করে, এটি গবেষনার ফল।
৯. হাত বদল করে কাজ করুন
যারা ডান হাতে কাজ করেন, তারা এবার কিছু কাজ বাম হাতে করুন। আর যারা বিভিন্ন কাজ বাম হাতে করে থাকেন, তারা সেগুলো ডান হাতে করার চেষ্টা করুন। এ প্রক্রিয়াটি মাসে অন্তত একবার করতে পারেন। এটিও ব্রেনকে নতুন করে ফাংশন প্রসেস করতে সাহায্য করে এবং ব্রেনের শক্তি বাড়ায়। সুতরাং, মাঝে মাঝে হাত বদল করে কাজ করাটাও স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় হিসেবে দারুণ কাজের।
১০. নতুন কিছু করুন
আমাদের প্রায় প্রত্যেকের জীবনই একঘেঁয়েমিতে ভরা। প্রতিদিন একই ধরনের কাজ করি এবং সেগুলো করিও সেই একইভাবে। না, ব্রেনকে আপনার নতুন কাজ দেয়া দরকার, নতুন করে চিন্তা করার সুযোগ দেয়া উচিৎ। তাই, দৈনন্দিন রুটিন থেকে বেরিয়ে এসে প্রতিদিন অন্তত একটি নতুন কাজ করুন। কিংবা, প্রতিদিনের কাজগুলোর কোন কোনটি একটু অন্যভাবে করার চেষ্টা করুন। যেমন, প্রতিদিন যে রাস্তা দিয়ে ভার্সিটি কিংবা অফিসে যান, একদিন সে রাস্তাটি পাল্টে ফেলুন। চেনা বা অচেনা কোন রাস্তা ধরে গন্তবে যান। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় হিসেবে দারুণ কাজে দেবে।
১১. নৈতিবাচক চিন্তা বাদ দিন
ব্রেনের জন্যে নি:সন্দেহে নৈতিবাচক চিন্তা অত্যন্ত খারাপ, তাই নৈতিবাচক চিন্তা করা বাদ দিন। সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করার অভ্যেশ করুন, ব্রেন দেখবেন দারুণভাবে কাজ করছে। আমরা সাধারণত টেনশনের সময় অনেক বেশি নৈতিবাচক চিন্তা করে থাকি। আর ব্রেন তখন উত্তেজিত হয়ে পড়ে যা ব্রেনের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে ফেলে। তাই, যে কোন পরিস্থিতিতে শান্ত থাকুন এবং ইতিবাচক ও গঠনমূলক চিন্তা করুন।
১২. চুইংগাম চাবান
কি, চুইংগাম চাবানোর কথা শুনে হাসি পেল? হ্যাঁ চুইংগাম চাবানোর ফলে আপনার স্মৃতিশক্তি পূর্বের তুলনায় অধিক কার্যকরভাবে কাজ করতে শুরু করে। একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা চুইংগাম চাবানোতে অভ্যস্ত, তারা সাধারণ অংশগ্রহণকারীদের চাইতে মেমরি টেষ্ট পরীক্ষায় ২৫ শতাংশ বেশি ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হয়েছেন।
এছাড়া একটি কার্যকরী স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর উপায় হচ্ছে নিয়মিত লেখার অভ্যাস। আপনি যে তথ্যটি মনে রাখতে চান সেটিকে একটি খাতায় লিখে রাখুন। এর মানে এই নয় যে পরবর্তীতে আপনার অবার সেই খাতাটি পড়ে তথ্যটি মনে করার প্রয়োজন রয়েছে।
লেখার অভ্যাসের কারণে স্মৃতিশক্তির উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উন্নতি সাধনের প্রমাণ গবেষণায় পাওয়া যায়। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার শিক্ষার্থীদের উপর একটি গবেষণায় দেখা যায়, ল্যাপটপে টাইপ করে নোট লিখে রাখা শিক্ষার্থীদের তুলনায় হাতে নোট লিখে রাখা শিক্ষার্থীরা অধিক পরিমাণে যে কোন তথ্য মনে রাখতে সক্ষম।
তাই হঠাৎ করেই কোন কিছু ভুলে যেয়ে অশান্তিতে ভোগার হাত থেকে রেহাই পেতে উপরের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করুন আর ভুলে যাওয়াও সমস্যাকেই ভুলে যান।
Leave a Reply