লোগো একটি কোম্পানির ব্রান্ড আইডেন্টিটি। একটি জুতা থেকে শুরু করে রকেট কোম্পানিরও লোগো থাকে। খুব ছোট সাইজের একটি লোগোর মধ্যে বিশাল সাইজের কোম্পানির সম্মান নির্ভর করে। সুন্দর ডিজাইনের একটি লোগো আপনার ব্যবসায়ের বিক্রি এবং সুনাম দুটোই বৃদ্ধি করতে সক্ষম। তাই কোম্পানি, সংস্থা কিংবা ব্যবসাকে শক্তিশালী এবং ব্রান্ড আইডেন্টিটি দিতে হলে অবশ্যই একটি লোগো থাকা বাধ্যতামূলক।
লোগোর বিভিন্ন ধরণের প্রকারভেদ রয়েছে। প্রত্যেক প্রকারের লোগোর আলাদা বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহার উপযোগিতা রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের ব্যবসায়ের জন্য বিভিন্ন ধরণের লোগো ব্যবহার করতে হয়। লোগো ডিজাইনের পূর্বে অবশ্যই একটি সঠিক লোগোর টাইপ নির্বাচন করা জরুরি।
লোগো কত প্রকার ও কি কি
সাধারণত ৭ প্রকারের লোগো রয়েছে। প্রত্যেক প্রকার লোগোরই ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা ও সুবিধা রয়েছে। কাজেই আজকের এই লেখায় বিভিন্ন প্রকার লোগোর বৈশিষ্ট্য এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কি ধরণের লোগো ব্যবহার করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করবো।
ওয়ার্ড মার্ক
ওয়ার্ড মার্ককে অনেকে লোগো টাইপ নামে বলে থাকে। নাম দেখে আশা করি বুঝতে পারছেন এধরণের লোগোর সংজ্ঞা কি হতে পারে। ওয়ার্ড মার্ক লোগো সাধারণত টাইপোগ্রাফি ভিত্তিক হয়ে থাকে। অর্থাৎ টেক্সটের মধ্যেই কোম্পানির নাম বা ব্রান্ড নাম থাকে।
এ ধরনের লোগোতে যেহেতু শুধুমাত্র টেক্সট ব্যবহার করা হয়, তাই টেক্সটের স্টাইল, রং ইত্যাদি পরিবর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন: Google, Ebay, Coca Cola ইত্যাদি।
ওয়ার্ড মার্ক লোগো কখন ব্যবহার করা উচিত:
- যদি আপনার কোম্পানি নতুন হয়, তবে এই ধরণের লোগো ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনার কোম্পানির নাম যদি ছোটো-খাটো হয়, তবে এই ধরণের লোগো ব্যবহার করতে পারেন।
- নাম যদি আপনার ব্রান্ড হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের মনে রাখতে সুবিধা হয়। এরূপ সাধারণত ফটোগ্রাফারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
ওয়ার্ড মার্ক লোগো কখন ব্যবহার করা উচিত নয়:
- কোম্পানির নাম যদি বেশী লম্বা হয়ে থাকে, তাহলে এই ধরণের লোগো ব্যবহার না করাই ভাল।
- যদি আপনি পর্যায়ক্রমে লোগো আপডেট করতে না চান। ফন্ট সাধারণত ট্রেন্ড অনুসরণ করে। যেমন আশির দশকে বাবল বা পেঁচানো ফন্ট জনপ্রিয় ছিল। যেমনটা আমরা কোকাকোলার লোগোর মধ্যে দেখে থাকি। কিন্তু বর্তমানে মিনিমাল ফন্টের লোগো বেশ জনপ্রিয়।
লেটার মার্ক
লেটার মার্ক সাধারণত মনোগ্রাম লোগো নামে পরিচিত। এ ধরণের লোগোতে কোম্পানির নামের প্রথম অক্ষর কিংবা সংক্ষিপ্তকরণ করা হয়। যেমনটা আমরা ম্যাকডোনাল্ডস, এইচবিও, এইচপি, সিএনএন, বিবিসি ইত্যাদি কোম্পানির ক্ষেত্রে দেখে থাকি।
ম্যাকডোনাল্ডস তাদের কোম্পানির প্রথম অক্ষর এম দিয়ে লোগো তৈরি করে নিয়েছে। অপরদিকে সিএনএন কিংবা বিবিসি তাদের বিশাল আকারের কোম্পানি নাম পরিহার করে শুধুমাত্র প্রথম অক্ষর ব্যবহার করে লোগো তৈরি করেছে। আর এই ধরণের লোগোকে লেটার মার্ক লোগো বলা হয়।
লেটার মার্ক লোগো টাইপোগ্রাফি ভিত্তিক হলেও এখানে কেবল কোম্পানির নামের প্রথম অক্ষর বা সংক্ষিপ্ত রূপ বসে। এধরণের লোগো তৈরির ক্ষেত্রে বেশ সর্তক থাকতে হয়।
লেটার মার্ক লোগো কখন ব্যবহার করা উচিত:
- আপনি যদি কোম্পানির নাম এবং ভিজুয়াল আইডেন্টিটি একসাথে ব্যবহার করতে চান কিন্তু আপনার কোম্পানির নাম বেশী লম্বা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে এ ধরণের লোগো ব্যবহার করাই অধিক যুক্তিযুক্ত।
- আপনার কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যদি এমন হয়ে থাকে যেখানে সংক্ষিপ্ত নাম বেশী প্রচলিত।
লেটার মার্ক লোগো কখন ব্যবহার করা উচিত নয়:
- আপনার কোম্পানি যদি নতুন হয় তবে এ ধরণের লোগো ব্যবহার না করাই ভাল। যদি একান্তই করার ইচ্ছা হয়, তবে প্রথম দিকে লোগোর নিচের দিকে সম্পূর্ণ নাম দিয়ে দিতে পারেন।
এমব্লেম
এমব্লেম লোগো টেক্সট এবং আইকন বা সিম্বল যুক্ত করে একসাথে ডিজাইন করা হয়। এই ধরণের লোগো সাধারণত চিরাচরিত লোগোর অন্যতম উদাহরণ। ব্রান্ড লোগো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সংগঠন এবং সরকারী সংস্থা সূমহে ব্যবহার করা হয়। মধ্যযুগ থেকেই এই ধরনের লোগোর প্রচলন আছে।
লোগো কখন ব্যবহার করা উচিত:
- আপনার কোম্পানি যদি কোন ঐতিহ্যবাহী বা প্রথা ভিত্তিক হয়ে থাকে।
- কফি শপ, ফুড বা পানীয় ভিত্তিক কোম্পানির ক্ষেত্রে এই ধরণের লোগো ব্যবহার করা যেতে পারে।
লোগো কখন ব্যবহার করা উচিত নয়:
- প্রথমত আপনার মাথায় রাখতে হবে এই ধরণের লোগো দূর থেকে স্পষ্ট বোঝা যাবে না যেমন বিলবোর্ড।
- ওয়েবসাইটের তথা যেসব ক্ষেত্রে লোগোর সাইজ ছোট করার প্রয়োজন হবে সেই সময় আপনার কোম্পানির নাম অস্পষ্ট থাকবে।
মাস্ককোটস
কার্টুন, কালার ফুল ছবি অথবা ব্যঙ্গ এধরনের বৈশিষ্ট্যর মিশ্রণে যে ধরণের লোগো তৈরি হয়, তাকে মাস্ককোটস লোগো বলা হয়। মাস্ককোটস লোগো সাধারণত ইলাস্ট্রেশন ভিত্তিক হয়ে থাকে। কেএফসির লোগো হলো মাস্ককোটস লোগোর শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
মাস্ককোটস লোগো কখন ব্যবহার করা উচিত:
- যদি আপনার কোম্পানির বাচ্চা অথবা সাংসারিক গ্রাহক আকর্ষণের উদ্দেশ্য থাকে।
- আপনার কোম্পানি যদি বন্ধু ভাবাপন্ন, মিশুক, আনন্দদায়ক, মজার হয়ে থাকে, তবে এই ধরণের লোগো ব্যবহার করা উচিত।
লোগো কখন ব্যবহার করা উচিত নয়:
- গম্ভীর কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি হলে এই ধরণের লোগো পরিহার করা উচিত।
অ্যাবস্ট্রাক্ট
অ্যাবস্ট্রাক্ট লোগো সাধারণত কোম্পানির আইডিয়া, গুনাগুণকে উপস্থাপন করে। অ্যাবস্ট্রাক্ট লোগো শেপ কিংবা ছবি ভিত্তিক হয়ে থাকে। এটা হতে পারে আপেল, পাখি কিংবা ফুলের ছবি। রং এবং অনন্য স্টাইলের মিশ্রণে ডিজাইন করা হয় এই ধরণের লোগো।
অ্যাবস্ট্রাক্ট লোগো কখন ব্যবহার করা উচিত:
- আপনি আপনার লোগোতে চিত্র ব্যবহার করতে ইচ্ছুক কিন্তু খুব গুরুগম্ভীর ম্যাসেজ দিতে চান।
- সত্যিকার অর্থে যদি অন্যদের থেকে আলাদা বা অদ্বিতীয় হতে চান।
অ্যাবস্ট্রাক্ট লোগো কখন ব্যবহার করা উচিত নয়:
- বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক যুগে এই ধরণের লোগো ডিজাইন করা বেশ কঠিন। তাই আপনাকে আগে বুঝতে হবে গ্রাহকদের আপনি কি ধরণের অনুভূতি দিতে চান।
লোগো সিম্বল
আইকন ভিত্তিক লোগোকে সাধারণত সিম্বল/ ব্রান্ড/ পিক্টোরিয়াল লোগো বলা হয়। আপনার কোম্পানির জন্য সুনির্দিষ্ট আইকন নির্বাচন করবেন যার দ্বারা সহজেই মানুষ আপনার কোম্পানিকে চিহ্নিত করতে পারবে।
কখন লোগো সিম্বল কখন ব্যবহার করা উচিত:
- আপনার ব্রান্ডকে আলাদা পরিচয় দিতে চাইলে এই ধরণের লোগো ব্যবহার করতে পারেন।
লোগো সিম্বল কখন ব্যবহার করা উচিত নয়:
- ট্র্যাডিশনাল কোম্পানিতে এই ধরনের লোগো পরিহার করা জরুরি।
কম্বিনেশন মার্ক
পৃথিবীর সব কিছুই সাদা কালো নয়। আপনার কেবল এক ধরণের লোগো নির্বাচন করা সুযোগ নেই। এমন পরিস্থিতি হতে পারে যেখানে উপরের কয়েক রকম লোগোর মিশ্রণ করা প্রয়োজন হতে পারে। এই ধরণের লোগোকে কম্বিনেশন মার্ক বলা হয়।
কম্বিনেশন মার্ক লোগো কখন ব্যবহার করা উচিত:
- আপনার কোম্পানি যদি বহুমুখী, অদ্বিতীয় হয়ে থাকে তবে এই ধরণের লোগো নির্বাচন করতে পারেন।
কম্বিনেশন মার্ক লোগো কখন ব্যবহার করা উচিত নয়:
- মিনিমাল এবং সহজ সরল ডিজাইনের উদ্দেশ্য থাকলে এই ধরণের লোগো পরিহার করা উচিত।
শেষ কথা
লোগো ডিজাইনের বাঁধা-ধরা কোন নিয়ম নেই। তবে উপরে উল্লেখিত নিয়ম আপনাকে সঠিক লোগো নির্বাচন করতে সহায়তা করবে। লোগো আপনার ওয়েবসাইট, ব্যানার, বিলবোর্ড, লিফলেট, ফ্লায়ার, বিজনেস কার্ড সহ আরও অনেক জায়গায় ব্যবহার করা প্রয়োজন হবে। তাই লোগো ডিজাইনের ক্ষেত্রে এসব বিষয় মাথায় রাখা জরুরি।
লোগো সম্পর্কিত এই দারুণ পোস্টটির জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু আমি কিছু আইডি কার্ড খুঁজছি।
ধন্যবাদ, Ripon Biswas। আপনি ঠিক কি ধরণের আইডি কার্ড খুঁজছেন, কি ধরণের প্রতিষ্ঠানের জন্যে ব্যবহার করবেন, তা জানালে ভাল হতো। অফিস আর স্কুল-কলেজের জন্যে ১০টি আইডি কার্ড ফ্রি ডিজাইন টেমপ্লেট দেখে নিতে পারেন। আশা করি, এখান থেকে আপনার দরকারী আইডি কার্ডটি পেয়ে যাবেন।
লোগোর ব্যপারে জানতে গিয়ে আপনাদের এই আর্টিকেলটি পেলাম। অনেক সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। খুব ভালো লেগেছে। আমি অন্যান্য পোস্টগুলোও পড়লাম সেই সাথে লক্ষ্য করলাম আপনাদের এই সাইটের নিজেদেরই লোগো নেই। একটি আকর্ষণীয় লোগো দেখতে চাই আপনাদের এই “হৈচৈ বাংলা” তে। ধন্যবাদ।
আমাদের ওয়েবসাইটের এই লেখাটি আর কিছু পোস্ট পড়ার জন্যে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, Dinar Minhaj। আপনি ঠিকই ধরছেন, আমাদের নিজেদের সাইটেরই লোগো নেই। আসলে আমাদের এই সাইটটি আগে আমাদেরই একটা ইংরেজী সাইটের সাব-ডোমেইনে ছিল, তখন লোগোও ছিল। পরবর্তীতে এটিকে আমরা নতুন এই ডোমেইনে নিয়ে আসি। কিন্তু নতুন করে আর লোগো তৈরি করা হয়নি। শীঘ্রই তৈরি করবো। বিষয়টি ধরিয়ে দেয়ার জন্যে আপনাকে আবারও ধন্যবাদ।
লোগোর প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনে খুব ভাল লাগলো। বুঝতে পারলাম কোন ধরণের কোম্পানী বা অর্গানাইজেশনের জন্যে ঠিক কোন টাইপের লোগো দরকার।
কাপড়ের দোকানের নাম, “কোয়ালিটি বস্ত্রালয়”। এইটার লগো ডিজাইন করে দিতে পারবেন?