ছোটবেলা থেকে ১জি নেটওয়ার্ক কখন ছিল, তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। সর্বপ্রথমই অনেকেই আমরা পরিচিত হই ২জি নেটওয়ার্কের সাথে। ৩জি নেটওয়ার্কের সাথে পরিচয়ই বোধ হয় হল কয়েকদিন আগে। আর এরপর গত বছর থেকেই মোবাইল কোম্পানিগুলোর ৪জির প্রচারণা শুরু হয়। আর ইদানীং তো বাংলাদেশে ৫জি-ও চলে আসার খবর দেখতে পাওয়া যায়। আজকের পোস্টে মূলত ১জি-৫জি নেটওয়ার্ক নিয়েই আলোচনা করব।
ওহ, প্রথম কথা হল, আমাদের পরিচিত হওয়া বলতে আমি বুঝাচ্ছি আমাদের দেশে নেটওয়ার্কটা অ্যাভেইলেবল হওয়া। যারা টেকনোলজির সাথে নিয়মিত আপ টু ডেট থাকেন, তারা হয়তো আমাদের দেশে ৪জি আসার অনেক আগেই ৫জি টেকনোলজি সম্পর্কে জানতেন। কিন্তু, সে ব্যাপারে আমি এখানে বলছি না।
১জি-৫জি নেটওয়ার্ক
আমাদের মোবাইল কোম্পানিগুলোও কিন্তু ব্যাপকভাবে ৩জি, ৪জি নেটওয়ার্কে বিজ্ঞাপণ দিচ্ছে। কিন্তু, তারা আসলে নামে মাত্র এই সার্ভিসগুলো দিচ্ছে, নাকি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তারা তাদের কোয়ালিটি মেইনটেইন করতে পারছে, সে ব্যাপারে অবশ্য আমি কোন প্রকার কমেন্ট করব না। কিন্তু, আমার মনে হয় একজন টেক সচেতন নাগরিক হিসেবে সবারই ১জি-৫জি নেটওয়ার্ক জিনিসটা কি, বা এদের মধ্যে মূল পার্থক্য কি, সে ব্যাপারে জানা উচিত।
১জি নেটওয়ার্কঃ
১ম জেনারেশনের নেটওয়ার্ক। ১জি নেটওয়ার্কে ব্যাসিক্যালি রেডিও সিগন্যালকে এনালগ ফর্মে ট্রান্সমিট করা হত। ১জি নেটওয়ার্ক দিয়ে একদম ব্যাসিক ফোন কল আর এসএমএস করা ছাড়া আর কিছুই করা যায় না। কিন্তু, এর চেয়ে আরও বড় অসুবিধা ছিল যে এই নেটওয়ার্কের এরিয়া লিমিটেশন ছিল। দেশের বাইরে এই নেটওয়ার্ক দিয়ে ডাটা পাঠানো সম্ভব ছিল না।
৯০ এর দশকে আর ২০০০ সালের পরও কয়েক বছর পর্যন্ত অনেক ফোন দিয়ে দেশের বাইরে কল করা যেত না, এটা অনেকেরই মনে থাকার কথা। কারণ, ওগুলো ১জি ফোন ছিল। যাই হোক, ১জি নেটওয়ার্কের এক্সপেক্টেড স্পীড হল ২৮ কেবিপিএস থেকে ৫৬ কেবিপিএস পর্যন্ত।
২জি নেটওয়ার্কঃ
একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেই আমাদের দেশে ২জি নেটওয়ার্ক জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। কিন্তু, ২জি ব্যাপারটা মানুষের মাথার উপর দিয়ে যাবে বিবেচনা করেই হয়তো তখনকার মোবাইল কোম্পানীগুলো ২জি নেটওয়ার্ক উল্লেখ করে বিজ্ঞাপণ না বানিয়ে বরং মোবাইল টু মোবাইলের দিন শেষ বা বাইরের দেশে ফোন করা যাবে – এমন বার্তা দিয়ে ২জি নেটওয়ার্কগুলোকে পরিচিত করানোর চেষ্টা করে আমাদের কাছে।
১জি নেটওয়ার্কের সাথে ২জি নেটওয়ার্কে প্রধান পার্থক্য হল এই দ্বিতীয় জেনারেশনের নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিট হয় ন্যারো ব্যান্ডের ডিজিটাল সিগন্যাল দিয়ে। এতে করে, ফোন কলের কোয়ালিটি যেমন উন্নত হয়, তেমন সেমি গ্লোবাল রোমিং সিস্টেমে পুরো পৃথিবীতেই ডাটা ট্রান্সমিট করা সম্ভব হয়।
২.৫জি নেটওয়ার্কঃ
২জি-এর পর আর ৩জি আসার আগের সময়ে পরিচিত করানো হয় ২.৫ জি নেটওয়ার্ক। এতে করে মোবাইল ফোনগুলোর ইন্টারনাল স্ট্রাকচার দেখার মত লেভেলে পরিবর্তিত হয় এবং মোবাইলগুলো আগের চেয়ে হালকা আর স্লিম করা সম্ভব হয়। আর নেটওয়ার্কে রেডিও ওয়েভ ট্রান্সমিশনও অনেক কমে আসে। ২.৫ জি নেটওয়ার্ক জিপিআরএস (জেনারেল প্যাকেট রেডিও সার্ভিস – GPRS) সিস্টেম ইউজ করত।
জিপিআরএস এ এক্সপেক্টেড স্পীড ছিল ৫০কেবিপিএস, যদিও প্র্যাক্টিক্যালি ৪০কেবিপিএস পাওয়া যেত। আর এইজ (Enhanced Data rates for GSM Evolution – EDGE) মূলত ১জি থেকে ২জি এর পরিবর্তণ স্পীডে তেমন একটা না হলেও, উন্নত টেকনোলজি, উন্নত নেটওয়ার্ক কোয়ালিটি, এরিয়া লিমিটেশন দূর করার মত অনেক পরিবর্তণ আসে ২জি নেটওয়ার্কে।
৩জি নেটওয়ার্কঃ
২জি আর ৩জি নেটওয়ার্কের মধ্যে মূল পার্থক্যই হল স্পীড। ২জি এর ৫০ কেবিপিএস স্পীড এর বদলে ৩জি আনে ৩৮৪ কেবিপিএস থেকে ২ এমবিপিএস পর্যন্ত স্পীড। আর এই প্রচন্ড স্পীডের কারণেই ৩জি নেটওয়ার্কে কল এর পাশাপাশি একই সময়ে ইন্টারনেটও ব্যবহার করা সম্ভব হয়। যার ফলে ভিডিও কলিং, অন-লাইন গেইমিং, সব সম্ভব হয় ৩জি নেটওয়ার্কে।
৩জি এর চেয়েও আরও ফাস্টার টেকনোলজির সাথে আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয় ৩.৫ জি। ৩.৫জি এইচএসডিপিএ (High Speed Downlink Packet Access – HSDPA) টেকনোলজি ব্যবহার করে। আর ৩.৫জি এর এক্সপেক্টেড স্পীড ১.৮ এমবিপিএস থেকে ৩.৫ এমবিপিএস পর্যন্ত। আর এরপর আসে ৩.৭৫। ৩.৭৫জি নেটওয়ার্কের এক্সপেক্টেড স্পীড ১৪.৪ এমবিপিএস পর্যন্ত হতে পারে।
৪জি নেটওয়ার্কঃ
২জি আর ৩জি নেটওয়ার্কের মূল পার্থক্যই যেমন স্পীড, তেমন ৩জি আর ৪জি নেটওয়ার্কেরও মূল পার্থক্যই হল স্পীড। আপনার ব্যবহার করা ৪জি মোবাইলে আপনি যেমন স্পীডই পান না কেন, সত্যিকথা হল, ৪জি নেটওয়ার্কের এক্সপেক্টেড স্পীড ধরা হয় ১০০ এমবিপিএস থেকে ১জিবিপিএস পর্যন্ত। যদিও নাসার ইন্টারনাল ইন্টারনেট স্পীড (৯২ জিবিপিএস!!!) থেকে এটা অনেক কম, তবুও এটা আমাদের চিন্তা-ভাবনার অনেক বাইরে।
৫জি নেটওয়ার্কঃ
৫জি নেটওয়ার্ক বা পঞ্চম জেনারেশনের নেটওয়ার্ক ৪জি এর চেয়ে মূলত স্পীডের দিক থেকে প্রায় ১০গুন বেশি গতি সম্পন্ন। অর্থাৎ, ১০জিবিপিএস পর্যন্ত সাপোর্ট করতে পারবে ৫জি। কিন্তু, ৫জি নেটওয়ার্ক মূলত কাজ করেছে সেইম টাওয়ারের আন্ডারে আরও বেশি ইউজারকে সেইম স্পীডে সেইম কোয়ালিটির নেটওয়ার্ক দেয়ার ব্যাপারে। ৪জি এর চেয়ে ৫জি নেটওয়ার্কের ইউজার কাভারেজ প্রায় দশগুন বেশি। যা নেটওয়ার্কিং সেক্টরে বিশাল পরিবর্তণ আনতে পারে।
যাই হোক, এই ছিল আজকের মত ১জি-৫জি নেটওয়ার্ক নিয়ে আলোচনা। আশা করি, ৫জি নেটওয়ার্ক চলে আসলে মোবাইল কোম্পানিগুলো যখন আরও বেশি ইউজার সাপোর্ট দিতে পারবে, তখন যদি তারা প্রকৃতপক্ষেই কোয়ালিটি মেইন্টেইন করে, তাহলে হয়তোবা আমাদের ইন্টারনেট স্পীড এবং নেটওয়ার্ক নিয়ে যেসব অভিযোগ তা অনেকটাই কমে আসবে।
Leave a Reply