হ্যাকিং নামটি শুনলেই কেমন একটা জানার ইচ্ছা করে, হ্যাকিং কি – তাই না? সত্যিই তো জানতে ইচ্ছে হবারই কথা। কে চায় না সাধারণ মানুষের থেকে একটু আলাদা কিছু জেনে নিজেকে সবার মাঝে, বিশেষত বন্ধুদের মাঝে জাহির করতে।
তবে, আপনি যদি ভেবে থাকেন দুই একটা ইউটিউব টিউটোরিয়াল বা কোন রিকোভার সিস্টেমের নিয়ম জেনে আপনি হ্যাকিং জেনে গেছেন এবং আপনি হ্যাকার হয়েও গেছেন, তবে এই ভুল চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
আবার যদি ভেবে থাকেন, হ্যাকিং খুব খারাপ কাজ, তবে আপনার জানা দরকার যে-সব কারণে ইথিক্যাল হ্যাকিং শেখা অত্যন্ত জরুরী। আশা করি, এটি জানার পর আপনি আর হ্যাকিংকে খারাপ চোখে দেখবেন না।
হ্যাকিং বিষয়টা নিয়ে যেহেতু আমাদের সবার জানার ইচ্ছে, তাই চলুন আজকে এই হ্যাকিং বিষয়টা নিয়ে সামান্য আলোচনা করা যাক।
হ্যাকিং কি?
সহজ ভাষায় যদি আমরা হ্যাকিংকে সজ্ঞায়িত করতে চাই তাহলে বলতে হয়, হ্যাকিং হচ্ছে এমন এক ধরনের বেআইনী প্রচেষ্টা যার মাধ্যমে একজন ব্যাক্তি গোপনীয় তথ্যকে তার অনিচ্ছা এবং অজ্ঞতাসারে হাসিল করা।
আপনি হয়ত ভাবছেন বিষয়টা কতটা মজার হতে পারে! যদি আপনি সিষ্টেমটা জানতেন, তবে হয়ত আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে অনেক মজা করতে পারতেন। আপনার হয়ত ধারণাই নেই যে এই বিষয়টা কতটা ভয়ানক হতে পারে। হ্যাকিং যতটা কঠিন বিষয় ঠিক ততটাই মারাত্বক হতে পারে একজন মানুষ, প্রতিষ্ঠান বা দেশের জন্য।
আপনি হয়ত জানতেও পারবেন না যে একজন হ্যাকার আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের সকল তথ্য নিয়ে যাচ্ছে যেখানে থাকতে পারে আপনার ব্যাংক একাউন্ট ডিটেইল। থাকতে পারে কোন অন্তরঙ্গ ছবি বা আরো অনেক কিছু যা হয়ত আপনি অন্য যে কাউকে দেখাতে বা জানাতে ভয় পান।
হ্যাকার কাকে বলে?
হ্যাকার হল এমন ব্যক্তি যে অ্যাক্সেস পাওয়ার জন্য কম্পিউটার সিস্টেম অথবা নেটওয়ার্কগুলির দুর্বলতা খুঁজে পায় এবং তাদের কাজে লাগায়। হ্যাকাররা সাধারণত কম্পিউটার সুরক্ষার জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ কম্পিউটার প্রোগ্রামার। সাইবার জগতে বাংলাদেশী এক হ্যাকারের গল্প আপনাকে অবাক করে দেবে।।
যাইহোক, হ্যাক এবং হ্যাকার সম্পর্কে যতদূর সহজ ভাষায় হোক ধারণা দিতে পেরেছি। এর থেকে নিশ্চিত আপনি বুঝতে পারছেন সাধারণ মেধা সম্পন্ন কোন ব্যাক্তি এই হ্যাকিং জগতে বিরাজ করতে পারে না। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, একজন হ্যাকার কি কি বিষয়ে পারদর্শী হয়ে থাকে।
হ্যাকিং এর জন্য কি কি জানতে হয়?
১. প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ (Programing Language) সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান: একজন হ্যাকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার প্রোগ্রামিং ভাষা সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান থাকতে হবে। যার মাঝে রয়েছে আয়ের দিক থেকে ৫টি হায়েস্ট পেইড প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। একজন হ্যাকারের জন্য প্রোগ্রমিং ল্যাংগুয়েজ বলতে পারেন সব থেকে বেশি জরুরি। কেননা, এর সাহায্য ছাড়া সে প্রসেসরকে পড়ার ক্ষমতাই রাখে না।
২. ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে জ্ঞান: একজন হ্যাকারকে ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কে ভাল জ্ঞান রাখতে হয়। অর্থাৎ, তথ্য সংগ্রহের জন্য কীভাবে কার্যকরীভাবে সার্চ ইঞ্জিনগুলো ব্যবহার করা যায় তা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তাকে অবশ্যই জানতে হয়ে যে, সার্চ ইঞ্জিন কি এবং এটি কিভাবে কাজ করে আর বিশ্বের সেরা সার্চ ইঞ্জিন কি কি।
৩. একটি লিনাক্স-ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম এবং প্রতিটি লিনাক্স ব্যবহারকারীর জানা উচিত এমন বেসিক কমান্ডগুলি জানতে হয়।
৪. কার্যকর হ্যাকার হওয়ার জন্য প্রোগ্রামিং দক্ষতা, নেটওয়ার্ক দক্ষতা, SQL দক্ষতা অপরিহার্য।
হ্যাকিং কখনও সহজ কাজ ছিল না। কখনই নয়। তবে এখন প্রচুর কম্পিউটার ফ্রিক্স হ্যাক্যার হতে চায়। হ্যাকার হওয়া হয়ত সহজ; যা কঠিন, তা হ’ল একটি ভাল মানের হ্যাকার হওয়া। এখানে আমি ভাল হ্যাকারদের কিছু স্কিল বলছি। কম্পিউটার দক্ষতা যে কতটা জরুরি হয়ত তা আপনি এতক্ষনে টের পেয়ে গেছেন, তাই আলাদা করে তা এবার অ্যাড করব না।
১. সফটওয়্যার মার্কেটের সাথে কানেকশন রাখা। হ্যাকিং কাজে সহায়তা করতে পারে এমন সকল সফটওয়্যারের খোজ রাখা।
২. ধৈর্য্য একজন ভাল হ্যাকারের অনেক বড় গুণ। কেননা আপনি হয়ত অনেক সোসিয়াল মিডিয়াতে শুনেছেন দুই মিনিটে হ্যাক করে দেয়া হ্যাকারের নাম। কিন্তু একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, দুই মিনিটে শুধু ম্যাগী নুডুলস তৈরি হতে পারে। কোন প্রোফাইল বা কোন ওয়েব হ্যাক নয়। কোন কোন প্রোফাইল হ্যাক করতে কয়েক সপ্তাহ আবার কোন কোন ওয়েব হ্যাক করার জন্য একাধিক হ্যাকার মিলে কয়েক মাস যাবৎ পরিশ্রম করে। তাই ধৈর্য্য হ্যাকারদের অনেক বড় একটি গুন।
৩. একজন ভাল হ্যাকার একজন ভাল পর্যবেক্ষক হয়ে থাকে। সে তার টার্গেটকৃত বিষয়টি খুব নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করে তার দূর্বল স্থানটি বের করে।
৪. একজন ভাল হ্যাকার এমন সবকিছু খেয়াল করে যা আপনার কাছে তুচ্ছ মনে হয়। আর যা আপনি ভেবেও দেখেননি।
৫. একজন ভাল হ্যাকার কখনও তার লক্ষবস্তুকে ছোট করে দেখে না। যার ফলে সে তার সবটুকু মেধা খাটাতে পারে।
হয়ত উপরের আলোচনায় হ্যাকিং সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা দিতে পেরেছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে হ্যাকিং শিখবেন কিভাবে? হুম, হ্যাকিং শেখার ৩টি ফ্রি ওয়েবসাইট আছে যেগুলো থেকে আপনি ফ্রিতে ইথিক্যাল হ্যাকিং শিখতে পারেন।
ইথিক্যাল হ্যাকিং এ কারণে বলছি যে, হ্যাকিং বিষয়টা যে শুধু খারাপ কাজে ব্যবহার হয় এমন ধারণা পোষণ করা মানুষ হয়ত আমাদের সমাজে বেশি। তবে, হ্যাকিংকে কাজে লাগিয়ে যেমন খারাপ কিছু করা সম্ভব, ঠিক তেমনি ভাল কিছুও সম্ভব।
Rishat360.com says
হ্যাকিং সম্পর্কে সুন্দর একটি লেখা যা পড়ে অনেক ভালো লাগলো।