এটা অ্যান্ড্রয়েডের যুগ, ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে একটি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনই হতে পারে আপনার নিজের এবং পরিবারের সুরক্ষার কাজে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। অ্যান্ড্রয়েডের জন্য রয়েছে অসাধারণ কিছু হোম সিকিউরিটি অ্যাপস্ যেগুলো ব্যবহার করে আপনি কোন সিকিউরিটি ক্যামেরা ছাড়াই আপনার বাসা-বাড়িকে চোরের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন। অনাকাঙ্খিত লোকের আগমন ঠেকাতে পারবেন।
এমনকি, একটা সিকিউরিটি অ্যাপকে আপনি আপনার শক্র পক্ষের জন্য সতর্ক পাহারা হিসেবেও ব্যবহার করতে পারবেন।
আপনি নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আপনার বাসা-বাড়ি, বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান কেউ-ই সম্পূর্ণ নিরাপদ নয় চোর, বাটপার, ছিনতাইকারি, সন্ত্রাসী কিংবা ওঁত পেতে থাকা শক্রুর হাত থেকে। এমনকি, নিরাপদ নয় আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও।
বাসা কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যেখানেই হোক, যে কোন সময় যে কোন দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আপনি হয়তো অন্য অনেকের মত সব সময়ই এমন কোনও আশংকায় ভুগেও থাকেন।
মাঝে মাঝেই হয়তো সিকিউরিট ক্যামেরা কিংবা আরো অধিক কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা ভাবেন। আবার অতিরিক্ত খরচের কথা চিন্তা করে নিজেকে সামলে নেন। অথচ আপনার হাতেই রয়েছে আপনার বাসা-বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সেটি আপনার স্মার্টফোন। দরকার শুধু একটি হোম সিকিউরিটি অ্যাপ।
হোম সিকিউরিটি অ্যাপস্
অন্যের উপর নজরদারি করতে চাইলে আপনি যেমন আমাদের ৫টি ফ্রি অ্যান্ড্রয়েড স্পাই অ্যাপ থেকে যে কোনটি ব্যবহার করতে পারেন, তেমনই বাড়ির উপর নজর দিতে হলে ব্যবহার করতে পারেন সিকিউরিটি অ্যাপ।
বিভিন্ন ওয়েবসাইটের রিভিউ পড়ে এবং গুগল প্লে-স্টোর ঘেঁটে-ঘুটে আপনার জন্য সেরা ৫টি সিকিউরিটি অ্যাপ এক জায়গায় ঝড়ো করেছি আমি। এই অ্যাপগুলোকে একরকম অভিভাবকের মতো কাজে লাগাতে পারেন আপনি।
এগুলো কাজ করে স্মার্টফোনের ক্যামেরা ও এলার্মের মাধ্যমে। এখানকার যে কোন সিকিউরিটি অ্যাপস হতে পারে আপনার বাড়ির সার্বক্ষণিক অতন্দ্র প্রহরী। বাড়ির আশে-পাশে ভূতের অবস্থান জানার জন্যে গোস্ট অ্যাপ রয়েছে, তেমনই চোর-ডাকাত সম্পর্কে টের পাওয়ার জন্যে রয়েছে নিম্নের সিকিউরিটি অ্যাপ।
AtHome Camera
তালিকার প্রথমেই থাকছে At Home Camera, এই অ্যাপটি প্লে-স্টোরে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এর সবচেয়ে বড় ফিচার হচ্ছে এটি কয়েকটা প্লাটফর্মে কাজ করতে পারে। এটি মোবাইলের ক্যামেরার সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করে। এর মাধ্যমে আপনার ক্যামেরার আওতাধীন এলাকা মনিটরিং করতে পারবেন সহজেই।
টাইম লেপস রেকর্ডিং রয়েছে এতে। চারটি মোবাইলের ক্যামেরাকে একসাথে কানেক্ট রেখে এটি কাজ করতে পারে। আরও রয়েছে রিমোট মনিটরিং ও চেহারা সনাক্তকরণ ফিচার। এছাড়াও এতে রেকর্ড হয় হাই ডেফিনেশন ভিডিও। নিচের ডানপাশের বাটনে ক্লিক করে AtHome Camera অ্যাপটি একদম ফ্রি ডাউনলোড করতে পারেন গুগল প্লে-স্টোর থেকে। আর বামপাশের বাটনে ক্লিক করে ইউটিইব ভিডিও দেখে শিখে নিতে পারেন কিভাবে অ্যাপটি ব্যবহার করবেন।
Alfred Home Security Camera
দ্বিতীয় অ্যাপটি হলো Alfred Home Security Camera. এটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের জন্য একটি অত্যন্ত আলোচিত হোম সিকিউরিটি অ্যাপ। এই অ্যাপটি আপনাকে আপনার ফেলে রাখা পুরোনো স্মার্টফোনকে সিকিউরিটির কাজে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে। এর ভালো ফিচারগুলোর মধ্যে থাকছে রিমোট কন্ট্রোল, লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং, কিছু ক্লাউড স্টোরেজ, ওয়াকি টকির মতো মজাদার ফাংশন। সিসি টিভি ক্যামেরার মতোই কাজ করে Alfred Home Security Camera।
Alfred Home Security Camera ব্যবহার করে মোশন সেন্সরের মাধ্যমে কারোর উপস্থিতি পেয়ে আপনি ওয়াকি টকি ফিচারের সাহায্যে অপরিচিত কাউকে ভয় পাইয়ে দিতে পারেন। লাইভ ভিডিওগুলো এখানকার যে কোন ক্লাউড স্টোরেজে সেভ করে রাখতে পারেন, তাহলে ফোনের স্টোরেজ কমে যাওয়ার ভয় থাকবে না। ভালো কোয়ালিটির ভিডিও রেকর্ড হয় এতে। এই ফ্রি অ্যাপ টি ডাউনলোড করতে পারবেন নিচের লিংক থেকে।
IP Webcam
তিন নম্বরে থাকছে IP Webcam যা অন্যতম সেরা একটি হোম সিকিউরিটি অ্যাপস্ এবং যা কাজ করে টোটাল সিকিউরিটি কন্ট্রোলার হিসেবে। এই অ্যাপ টি আপনার মোবাইলকে রিমোট ক্যামেরায় রূপান্তরিত করবে। এটি ভিডিও চ্যাট ফিচারযুক্ত। ওয়াইফাই এরিয়ার মধ্যে এটি সরাসরি লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং করে। ভিডিওর মধ্যে রেকর্ডিং এর তারিখ এবং সময় উল্লেখ করা থাকবে। বিজ্ঞাপন দেখাতে পারে কিন্তু এই অ্যাপটি সম্পূর্ণ ফ্রি।
WardenCam
WardenCam নামের মধ্যেই সিকিউরিটির একটা ভাব আছে। WardenCam 3G, 4G এবং ওয়াইফাই এরিয়ায় কাজ করে। কয়েকটা মোবাইল ক্যামেরা একসঙ্গে কানেক্ট করতে পারা যায় এই অ্যাপের মাধ্যমে। মোশন ডিটেকশন এলার্ট ছাড়াও টু-ওয়ে অডিও সাপোর্ট রয়েছে এতে। হাই ডেফিনিশনে অত্যন্ত ক্লিয়ার ভিডিও রেকর্ডের ফিচার ও রয়েছে।
যদি আপনার পুরনো কোন স্মার্টফোন, ট্যাবলেট পড়ে থাকে, তাহলে এখনই সময় এগুলোকে প্রহরীর মতো কাজে লাগানোর। সবগুলো এক সঙ্গে করে আপনার বাড়ির কোনায় কোনায় সেট করে ফেলুন WardenCam এর সাহায্যে। নজর রাখুন সব কিছু উপর। বাড়ি ফিরে ক্লাউড স্টোরেজ হতে ভিডিওগুলোতে দেখে নিন আপনার অবর্তমানে কি কি হয়েছে বাড়িতে।
Surveillance & Security – TrackView
তালিকার একেবারে শেষে নেমে এসেছি, পাঁচ নম্বর অ্যাপটি হলো Surveillance & Security – TrackView. এটিও অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি হোম সিকিউরিটি অ্যাপ। এর অত্যন্ত সুন্দর একটি ইন্টারফেস রয়েছে। ভিডিও স্ট্রিমিং এর সাথে সাথে আপনি এতে পাচ্ছেন জিপিএস ট্রেকিং এর সুযোগ।
এই অ্যাপটি মোবাইলের ব্যাকগ্রাউন্ডেও চলে। সহজভাবে ইনস্টল করেই আপনি এটির ব্যবহার শুরু করতে পারেন। রিমোট কন্ট্রোল এর সাথে টু-ওয়ে অডিও ফিচার ও পাওয়া যাবে এই অ্যাপে। যে কোনো দূরত্ব থেকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন trackview কে।
এই ৫টি অ্যাপস্ এর সমাহার থেকে আশা করি আপনি আপনার হোম সিকিউরিটি আরো উন্নত ও সুবিধাজনক ভাবে উপভোগ করতে পারবেন। হোম সিকিউরিটি অ্যাপস্ এখনকার ইন্টারনেটের সময়ে একদমই সহজলভ্য। সিসি টিভি ক্যামেরার বদলে নিজের স্মার্টফোনকে কাজে লাগিয়ে অনায়াসে নিজের নজরদারির কাজ চালিয়ে নেওয়া যাবে এই হোম সিকিউরিটি অ্যাপগুলো দিয়ে। এগুলো ট্রাই করুন এবং মতামত জানাতে একদম ভুলবেন না। ফ্রেন্ডদের সাথে, যাদের হোম সিকিউরিটি প্রয়োজন, আর্টিকেলটি শেয়ার করতে পারেন।
Leave a Reply