অনেকের মতেই হিন্দি রোমান্টিক চলচ্চিত্র হচ্ছে পৃথিবীর সেরা রোমান্টিক চলচ্চিত্র। সেটা হোক বা না হোক, রোমান্টিক সিনেমার সব সময়ই একটি অনন্য আবেদন রয়েছে।
একটু বয়স হওয়ার পর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ, হোক সে সিঙ্গেল, ডাবল, ম্যারিড কিংবা ছ্যাঁকা খাওয়া পাবলিক; রোমান্টিক সিনেমা সবার জন্যই। ভালোবাসার মানবিক এই জায়গাটি যেহেতু সবার মাঝেই কমন, তাই এর দর্শকও প্রচুর।
রোমান্টিক সিনেমার আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, যে ভাষারই হোক না কেন বুঝতে আসলে কোন অসুবিধা হয় না, তবে ভাষাটি সহজ হলে সেই সিনেমার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়ে যায়।
সহজ ভাষা এবং ভারত পার্শ্ববর্তী দেশ হওয়ায় হিন্দি সিনেমার প্রচুর দর্শক রয়েছে আমাদের দেশে। পাশাপাশি প্রযুক্তির কল্যাণে অন্য ভাষার সিনেমা সহজলভ্য হওয়ায় হিন্দি সিনেমা দেখেনি, এরকম মানুষেরও অভাব এখন একেবারেই নেই। মূলত তাদের জন্যই আজকের এই হিন্দি রোমান্টিক চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা।
হিন্দি রোমান্টিক চলচ্চিত্র
বলিউডে এতো বিপুল সংখ্যক ভালো ভালো রোমান্টিক চলচ্চিত্র রয়েছে যে সেখান থেকে সেরা ৫টি হিন্দি রোমান্টিক চলচ্চিত্র খুঁজে বের করা আসলে অসম্ভব। তাই দর্শক সমালোচকের দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি আমি এখানে সাহায্য নিয়েছি নিজের অভিজ্ঞতার। আশা করছি, সবারই এই হিন্দি ছবিগুলো অত্যান্ত ভালো লাগবে।
Barfi!
১৯৭০ সালের প্রেক্ষাপটে নির্মিত বারফি সিনেমাটি আমার দেখা অন্যতম একটি সেরা চলচ্চিত্র। বাক ও শ্রবণ শক্তিহীন বারফির নানারকম মজার কান্ডকারখানার পাশাপাশি অসম্ভব মিষ্টি একটি ভালোবাসার গল্পে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি।
প্রথমদিকে বোঝা একটু কঠিন হয়ে যায়, গল্প কোথায় থেকে কোথায় যাচ্ছে। তবে তাতে মজা কমবে না একটুও। মুভিটি দেখতে দেখতে যেমন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবেন, তেমনি চোখও ভিজে যাবে আপনার অজান্তেই। আগাগোড়া টুইস্টে ভরপুর এই মুভিটি শেষ হওয়ার দুই মিনিট আগেও বলতে পারবেন না, আসলে কী ঘটল। তাই গল্প নিয়ে বেশি কিছু বলতে গেলে স্পয়লার দেওয়া হয়ে যাবে।
বারফি চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রনবীর কাপুর এবং ঝিলমিল চরিত্রে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। এদের অভিনয় দক্ষতা বিশেষ করে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার নিখুঁত অভিনয় নতুন করে আপনাকে বারবার চমৎকৃত করে তুলবে।
২ ঘন্টা ৩০ মিনিটের চমৎকার এই মুভিটি পরিচালনা করেছেন অনুরাগ বসু। ২০১২ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর এটি ভারতে মুক্তি পায়। রনবীর কাপুর ও প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ছাড়াও ছবিটিতে অভিনয় করেছেন, ইলিয়ানা ডি’ক্রুজ, আশিষ বিদ্যার্থী, জিসু সেনগুপ্ত, রুপা গাঙ্গুলিসহ আরও অনেকে। ৪০ কোটি রুপি খরচ করে তৈরী করা এই মুভিটি আয় করে ১৭৫ কোটি রুপিরও বেশি।
মন খারাপ থাকলে দ্বিতীয়বার চিন্তা না করে এখনই মুভিটি দেখে ফেলুন, অসম্ভব সুন্দর একটি সময় কাটবে।
Veer-Zaara
ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের স্কোয়াড্রন লিডার Veer, যে চরিত্রটিতে অভিনয় করেছে শাহরুখ খান। এবং Zaara পাকিস্থানের সম্ভ্রান্ত রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে, যে ভূমিকায় অভিনয় করেছে প্রীতি জিন্তা।
Veer যখন তার প্রতি Zaara’র ভালোবাসার কথাটি জানতে পারে, তখন ইন্ডিয়ায় চাকরি ছেড়ে সে চলে আসে পাকিস্থানে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মিথ্যে একটি মামলায় জড়িয়ে তাকে পাঠানো হয় পাকিস্থানের কারাগারে। দীর্ঘদিন কারাবাসের পর রানী মূখার্জি অর্থাৎ পাকিস্থানি উকিলের সহায়তায় মেলে মুক্তি। ছবিটি বেশ কয়েকটি টুইস্ট রয়েছে, যা অন্যরকম একটি থ্রিল এনে দেয়।
বিখ্যাত পরিচালক ইয়েশ চোপড়ার পরিচালিত এই ছবিটি ২০০৪ সালের ১২ই নভেম্বর এটি ভারতে মুক্তি পায়। ৩ ঘন্টা ১৬ মিনিটের বেশ লম্বা একটি ছবি এটি। ব্যবসাসফল এই ছবিটির মোট আয় ৯৮ কোটি রুপি যেখানে এর নির্মাণ ব্যয় ছিলো মাত্র ২৩ কোটি রুপি।
Jab We Met
কারিনা কাপুর এবং শাহিদ কাপুরের একসাথে অভিনিত চতুর্থ ছবি এটি। হতাশায় নিমজ্জিত বিজনেসম্যান আদিত্যের জীবনের নতুন আলো খুঁজে পায় উচ্ছল তরুণী গীত-এর সাথে পরিচিয় হবার পর। কিন্তু গীত-এর বয়ফ্রেন্ডের কথা জানার পর নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয় আদিত্য। কিন্তু ঘটনা চক্রে আবার দু’জনের একত্র হওয়ার সুযোগ হয়। এবারে হতাশায় আক্রান্ত গীত এবং শান্তনা প্রদানকারী আদিত্য।
Jab we met ছবিটি একটু হালকা ধরণের অর্থাৎ রোমান্টিক কমেডি ধারার একটি ছবি।
ছবিটি পরিচালনা করেছেন, বলিউডের স্বনামধন্য পরিচালক ইমতিয়াজ আলী। Rockstar, Love Aaj Kal, Cocktail এর মতো বেশ কিছু সেরা এবং ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে তার পরিচালনায়।
ছবিটির দৈর্ঘ্য ২ ঘন্টা ২২ মিনিট; মুক্তি পেয়েছে, ২০০৭ সালের ২৬ শে অক্টোবর, ভারতে। তবে অন্য ছবিগুলোর তুলনায় বক্স অফিসে খুব বেশি ভেলকি দেখাতে পারে নি, Jab we met. ১৭ কোটি রুপির এই মুভিটি সব মিলিয়ে আয় করেছে ৩০ কোটির একটু উপরে।
Hum Dil De Chuke Sanam
নন্দিনী, সামীর এবং ভনরাজের একটি স্টেরিওটাইপিক গল্প এটি। যেখানে নন্দিনী ভালোবাসে সামীরকে। কিন্তু নন্দিনীর বাবার সেটি পছন্দ না হওয়ায় তিনি নন্দিনীর বিয়ে ঠিক করেন প্রতিষ্ঠিত উকিল ভনরাজের সাথে। এদিকে ভনরাজ বিয়ের আগে নন্দিনীর সাথে কথা বলে সামীরের কথা জানতে পারে এবং সামীরের আর নন্দিনীর সম্পর্কটির একটি সাপোর্ট হয়ে দাঁড়ায়।
এরকম পরিস্থিতে নন্দিনীর দ্বিধা চলে আসে, দুজনের মধ্য কে বেশি যোগ্য সেটি নিয়ে। একদিকে যাকে সে ভালোবাসে সেই সামীর, অন্যদিকে যে তার ভালোবাসার মূল্যায়ন করতে জানে সেই ভনরাজ; এদের মধ্য থেকে কাকে বেছে নেবে সে?
চমৎকার অভিনয়শৈলি আর গল্পের মাদকতায় আপনি হারিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারেন মুভিটি দেখার আগে। সালমান খান, ঐশ্বরিয়া রায় সহ অন্যান্য সহশিল্পীদের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট বলা হয় এই মুভিটিকে।
বলিউডের আরেক খ্যাতিমান পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালির পরিচালনায় নির্মিত হয়েছে এই মুভিটি। কয়েকদিন আগে রিলিজ হওয়া পদ্মাবতসহ বাজিরাও মাস্তানি, গুজারিশ, দেবদাস ইত্যাদি মুভি নির্মান করে সঞ্জয় লীলা ইতিমধ্যে অনেক জনপ্রিয়তা এবং দর্শক, সমালোচকদের প্রচুর প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
“হাম দিল দে চুকে সনম” মুভিটি ১৯৯৯ সালের ১৮ই জুন ভারতে মুক্তি পায়। ১৬ কোটি রুপি বাজেটের এই মুভি সারা পৃথিবীজুড়ে ৫২ কোটির রুপিরও বেশি আয় করে।
Rockstar
আবারও রনবীর কাপুর! মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ও বেড়ে ওঠা জনার্দানের একটাই স্বপ্ন, একদিন নামকরা রক সঙ্গীত শিল্পী হবে। কিন্তু কপালে অবহেলা আর ব্যাঙ্গ ছাড়া কিছুই জোটে না। এরকম অবস্থায় একসময় তার মনে হয়, বড় কোন সাফল্য পেতে চাইলে জীবনে কিছু সত্যিকারের ট্র্যাজেডী থাকতে হবে। তার যেহেতু কোন রকম ট্র্যাজেডী নেই, তাই সাফল্য ধরা দিচ্ছে না।
তাই সে সিদ্ধান্ত নেয়, প্রেমে ছ্যাঁকা খেতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ; প্রেম করা শুরু করে। তারপরের কাহিনীটুকু জানার জন্য দেখে ফেলুন ছবিটি। রোমান্টিক ছবি হলেও কমেডি, ট্র্যাজেডীর উপদান বেশ ভালোভাবেই আছে এতে।
১১/১১/১১ তে, অর্থাৎ ২০১১ সালের ১১ই নভেম্বর ভারতে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটির পরিচালকের নাম আগেই বলেছি, ইমতিয়াজ আলী। এবং এর সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন এ আর রহমান। যার ফলে অসাধারণ কিছু গান রয়েছে ছবিটিতে।
ছবিটির বাজেট ছিলো ৬৬ কোটি রুপি এবং পৃথিবীজুড়ে এটি আয় করে ১০৯ কোটি রুপির কিছু বেশি। ২ ঘন্টা ৫৯ মিনিটের এই ছবিতে রনবীর কাপুরের পাশাপাশি অভিনয় করেছেন, নারগিস ফাখরি, শাম্মি কাপুর, মৌফিদ আজিজ সহ আরও অনেকে।
আলোচনা এই পর্যন্তই; এখান থেকে কোন মুভিটি দেখে কেমন লাগল কিংবা কোনটা কোনটা ইতিমধ্যই আপনি দেখে ফেলেছেন কমেন্টে সেটি আমাদের জানিয়ে দিন। আমরা এর আগে চাইনিজ রোমান্টিক মুভি, জাপানিজ রোমান্টিক মুভি এবং ২০১৮ সালের সেরা কিছু ইংলিশ রোমান্টিক মুভি নিয়ে লিখেছিলাম।
সেই ধারাবাহিতাতেই হিন্দি রোমান্টিক চলচ্চিত্র নিয়ে এই লেখা। উদ্দেশ্য, মুভি দেখার আগে আপনি যেন আপনার পছন্দের ভাষা, ক্যাটাগরি অনুযায়ী সেরা কিছু মুভির বর্ণনা বাংলাতেই পেয়ে যান। তাই আমাদের কমেন্ট করে জানান, পরবর্তীতে কোন ভাষার কোন ক্যাটাগরির মুভি নিয়ে আলোচনা দেখতে চান; আমরা অবশ্যই সেটি করার চেষ্টা করব।
Leave a Reply