বর্তমান সময়ে পারসোনাল কম্পিউটার থেকে শুরু করে সুপার কম্পিউটার যেটাই বলুন না কেন হার্ড ড্রাইভ ছাড়া কল্পনা করা যায় না। হার্ড ড্রাইভ সম্পর্কে মজার তথ্য আছে অনেক যেগুলো আপনাকে অবাক করে দেবে, আপনার তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞানকে আরো সমৃদ্ধ করবে।
কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম, সফটওয়্যার নানা রকম ডাটা মজুদ থাকে হার্ড ড্রাইভে। বিপুল পরিমাণ তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে হার্ডড্রাইভের কোন বিকল্প নেই। এর পুরো নাম হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ বা সংক্ষেপে এইচডিডি।
হার্ড ড্রাইভ সম্পর্কে এ তথ্যগুলো আপনার জানা থাকলেও এর বাইরে অনেক কথা আছে সেগুলো জেনে আপনি দারুনভাবে অবাক হবেন। হার্ড ড্রাইভ সম্পর্কে সেরকমই চমকপ্রদ ১২ টি তথ্য আজকে আমরা জানব এই লেখাটি থেকে। মূল লেখায় প্রবেশ করার আগে বা পরে জেনে নিতে পারেন HDD নাকি SSD নাকি SSHD কোনটা আপনার জন্যে বেস্ট।
হার্ড ড্রাইভ সম্পর্কে মজার তথ্য
১. সর্বপ্রথম হার্ডডিস্ক 350 Disk Storage Unit তৈরী করা হয়েছিলো আইবিএম কম্পিউটারের পার্টস হিসেবে। জেনে অবাক হবেন হার্ডডিস্কটি রিলিজ পায় আজ থেকে অর্ধশতাব্দীরও আগে। সেই ১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে!
২. ১৯৫৮ সালে আইবিএম বাণিজ্যিকভাবে তাদের এই অসাধারণ স্টোরেজ ডিভাইসটি বিভিন্ন কোম্পানিতে বিক্রি করা শুরু করে। তবে সেটি বহন করা মোটেও কোন সহজ কাজ ছিলো না। পৃথিবীর সর্বপ্রথম হার্ড ড্রাইভটির সাইজ ছিলো একটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেফ্রিজেটরের সমান। সাথে ওজনটা একটনের কম নয়।
৩. বর্তমানে ৮ টেরাবাইট একটি হার্ড ড্রাইভ কিনতে আপনাকে মোটামুটি ২০০ ডলারের মতো খরচ করতে হবে। যেটা আইবিএমের প্রথম হার্ডড্রাইভের এর তুলনা ৩০০ মিলিয়ন বা প্রায় ত্রিশ কোটিগুন সস্তা। ১৯৬০ সালের বাজারে এই পরিমাণ স্টোরেজ কেনার জন্য আপনাকে খরচ করতে হতো ৭৭.২ বিলিয়ন ইউ এস ডলার। যা কিনা সমগ্র যুক্তরাজ্যের এক বছরের জিডিপির চেয়েও বেশি।
৪. আইবিএম এর এই দৈত্যাকার, বিপুল দামের হার্ডড্রাইভের স্টোরেজ কতো ছিলো, সেটা নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে! হ্যাঁ, এই হার্ড ড্রাইভটির ধারণ ক্ষমতা ছিলো মাত্র ৪ মেগাবাইট! গড়পড়তা একটি অডিও গান যতখানি জায়গা নেয় আর কি!
৫. বর্তমানে বাজারে এর থেকে বহুগুণ বেশি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হার্ড ড্রাইভ পাওয়া যায়। ২০১৫ সালে স্যামসাঙ ১৬ টেরাবাইট হার্ড ড্রাইভ তৈরী করে রেকর্ড সৃষ্টি করে। তবে বাজারে ৮ টেরাবাইটের হার্ডডিক্সই এখন পর্যন্ত কমন।
৬. ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, জনপ্রিয় অনলাইন স্ট্রিমিং প্লাটফরম নেটফ্লিক্সে মুভি, টিভি সিরিজ ইত্যাদি রাখার জন্য প্রয়োজন হয় ৩.১৪ পেটাবাইট (যেটা কিনা প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন গিগাবাইটের সমান) হার্ড ড্রাইভ স্টোরেজের।
৭. নেটফ্লিক্সের অবস্থা দেখে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কারণ, ফেসবুকের সব ডাটা রাখার জন্য প্রয়োজন হয় ৩০০ পেটাবাইটের হার্ড ড্রাইভ স্টোরেজ। এটা ২০১৪ সালের মাঝামাঝির দিকের অবস্থা, এখন নিশ্চয়ই এ সংখ্যা পার হয়ে অনেক দূর গেছে।
৮. শুধু স্টোরেজ ক্যাপাসিটিই দিনদিন বাড়ছে তা নয়, কমছে হার্ড ড্রাইভের সাইজও। এখন এক মেগাবাইট স্টোরেজের জন্য যে ফিজিক্যাল স্পেসের প্রয়োজন হয় তা ’৫০ এর দশকের তুলনায় ১১ বিলিয়ন গুন কম। একবার কল্পনা করুন, আপনি পকেটে করে ৩২ গিগাবাইটের যে স্মার্টোফোন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, ১৯৫৮ সালে এই পরিমাণ স্টোরেজের জন্য যে পরিমাণ ফিজিক্যাল স্পেসের প্রয়োজন হতো তা প্রায় অলিম্পিকের ৬টি সুইমিং পুলের সমান।
৯. হার্ডডিক্সের মধ্য থাকা ম্যাগনেটিক ডিক্সটি বেশ দ্রুত ঘোরে। সাধারণত হার্ড ড্রাইভ ভেদে এটা মিনিটে ৫৪০০ থেকে ৭২০০ বার ঘুরে থাকে। ফাইল ট্রান্সফারের গতি অনেকটাই নির্ভর করে হার্ডড্রাইভের এই ডিক্স কতবার ঘুরছে। এই মুভিং পার্টের বেশ ভালোই তাপ উৎপন্ন হয়ে থাকে। এ কারণে যেসব ল্যাপটপে হার্ডডিক্স থাকে সেসব ল্যাপটপ এসএসডি ল্যাপটের চেয়ে একটু বেশি গরম হয়ে থাকে, ব্যাটারী বেশি খরচ হয়। এই ৮টি উপায় ব্যবহার করে ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপ বাড়িয়ে নিতে পারেন।
১০. বর্তমানে বাজারে হার্ডড্রাইভের পাশাপাশি সলিড স্টেট ড্রাইভ বা এসএসডি পাওয়া যায়। যার ভিতরে কোন মুভিং পার্ট থাকে না। সেকারণে এটি হার্ডডিক্সের চেয়ে বেশি টেকসই। এসএসডিকে একটি বড় আকারের ফ্লাশ ড্রাইভ (ফোনের মেমরি কার্ড) বলতে পারেন। খুব দ্রুতই এটি হার্ডডিক্সের স্থান দখন করে নিচ্ছে।
১১. যেভাবে প্রতিনিয়ত বিশাল ডিজিটাল স্টোরেজকে অল্প জায়গার মধ্য ধরে ফেলা হচ্ছে, তাতে হয়ত অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এগুলো কী সারাজীবনই এভাবে ছোট করে ফেলা যাবে? দুঃখের বিষয় হচ্ছে, না, সারাজীবনই ইচ্ছেমতো ফিজিক্যাল স্পেস কমানো যাবে না। খুব জায়গা জায়গার মধ্য বিশাল পরিমাণ তথ্য রাখা গেলেও এর একটি সীমা আছে। জায়গাটা যখন আরও ছোট করে ফেলবেন তখন বস্তুর স্বাভাবিক ধর্মটাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটাকে বলা হয় SuperParaMagnetism.
১২. সেই কারণে ভবিষ্যতে বিপুল পরিমাণ ডাটা সংরক্ষণের জন্য এখন থেকে হার্ড ড্রাইভ বা ফ্ল্যাশ ড্রাইভের বিকল্প খোঁজা হচ্ছে। থ্রিডি স্টোরেজ, হলোগ্রাফিক স্টোরেজ, ডিএনএ স্টোরেজের মতো যে বিষয়গুলো এতোদিন সায়েন্স ফিকশনের মাঝে সীমাবদ্ধ ছিলো, সেগুলো তৈরী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। হয় অদুর ভবিষ্যতেই ডিজিটালি তথ্য সংরক্ষণ করার জন্য নতুন ধরণের স্টোরেজ আমরা দেখতে পাব।
প্রসঙ্গত বলে রাখা যায় যে, বেশি স্টোরেজের হার্ড ড্রাইভ বা যাই বলি না কেন, এগুলো যে শুধু আমাদের বিপুল পরিমাণ জিনিস রাখার ব্যবস্থা করে দেয় তাই না, নতুন নতুন অনেক কাজের ক্ষেত্রও তৈরী করে। বর্তমান পৃথিবীর যে কোন টেক জায়ান্ট কোম্পানি গুলোর দিকে তাকালেই কথাটির সত্যতা বুঝতে পারবেন। বিপুল পরিমাণের ডিজিটাল স্টোরেজ ছাড়া গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজনের মতো কোম্পানি কল্পনা করা সম্ভব না।
হার্ড ড্রাইভ সম্পর্কে মজার তথ্য গুলো জানলেন। আশা করি, জেনে চমৎকৃত হয়েছেন। হার্ড ড্রাইভ সম্পর্কে আরও কোন কিছু জানতে চাইলে কিংবা তথ্যের মধ্য কোন অসঙ্গতি দেখলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।
Leave a Reply