বাজারে ফোন কিনতে গিয়ে আমরা রীতিমতো দ্বিধায় পড়ে যাই যে কোন ফোনটা ছেড়ে কোন ফোনটা নিব। শাওমি নিব, নাকি হুয়াওয়ে নিব; নোকিয়া নিব নাকি স্যামসাং নিব ইত্যাদি ভাবনায় আমাদের পেয়ে বসে। এর প্রধান কারন মোটামোটি সব ব্র্যান্ডই প্রতিনিয়ত আপডেট ফোন নিয়ে আসছে, ফলে কোন ফোনের চেয়ে কোনটা নেওয়া ভাল হবে বুঝতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। তবে যারা মধ্যম বাজেটের মধ্যে উন্নতমানের ফোন কিনতে চান, তাদের জন্য পরামর্শ হলো নির্দ্বিধায় স্যামসাং গ্যালাক্সি জে৭ ম্যাক্স বেছে নিতে পারেন।
স্যামসাং গ্যালাক্সি জে৭ ম্যাক্স রিভিউ
আগেই জানিয়ে রাখছি ফোনটি রিলিজ হয়েছে যে অনেক দিন হয়ে গেল, সেই ২০১৭ এর জুন মাসে। তবে ফোন রিলিজ হওয়ার পর অনেক দিন পার হয়ে গেলেও এর ফিচারগুলো বর্তমানে রিলিজ হওয়া ফোনগুলোর সাথে কোনভাবেই পিছিয়ে নেই। বরং বর্তমানের সাথে তাল মিলিয়েই চলছে, এমনকি এখনকার কোন কোন ফোন থেকেও ভাল। মূলত সে কারণেই আপনাদের সাথে শেয়ার করছি পুরনো এই স্মার্টফোনটি। চলুন ফোনটির অসাধারণ সব ফিচার দেখে আসা যাক-
স্যামসাং গ্যালাক্সি জে৭ ম্যাক্স ফুল স্পেশিফিকেশন
- ৫.৭ ইঞ্চি ফুল এইচডি ডিসপ্লে
- ৪ জিবি র্যাম
- ৩২ জিবি রম
- অ্যান্ড্রয়েড ৭.০ নোগাট
- ব্যাক ক্যামেরা ১৩ মেগাপিক্সেল, ফ্রন্ট ক্যামেরা ১৩ মেগাপিক্সেল
- ৩৩০০ এমএএইচ ব্যাটারি
- মিডিয়াটেক এমটি ৬৭৫৭ হেলিও পি২০ প্রসেসর
- ফিঙ্গারপ্রিন্ট, এক্সেলেরোমিটার, জাইরোস্কোপ, প্রক্সিমিটি এবং কম্পাস সেন্সর
ডিসপ্লে
প্রথমেই আসি স্যামসাং গ্যালাক্সি জে৭ ম্যাক্স এর ডিসপ্লের কথায়। অসাধারন এই ফোনটিতে রয়েছে ৫.৭ ইঞ্চিযুক্ত ফুল এইচডি আইপিএস ডিসপ্লে যার রেজুলেশন ১০৮০*১৯২০ পিক্সেল এবং অনুপাত ১৯:৬। ফোনটির পেছনের দিকে অ্যালুমিনিয়াম এবং চারপাশে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে।
ফোনের ডান পাশে রয়েছে পাওয়ার বাটন, বাম পাশে রয়েছে ভলিউম বাটন এবং উপরের দিকে রয়েছে ৩.৫ মিলিমিটার ইয়ারফোন জ্যাক। এছাড়াও ডিসপ্লের নিচে বাটন রয়েছে যা একসাথে হোম বাটন এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর হিসেবে কাজ করে। এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ব্যবহার করে ফোন লক করাসহ বিভিন্ন অ্যাপ লক করতে পারবেন।
ক্যামেরা
স্যামসাং-এর আগের ফোনগুলোর ক্যামেরা তেমন একটা পছন্দসই না হলেও এই ফোনের ক্যামেরাটি অত্যান্ত আকর্ষণীয়। ব্যাক এবং ফ্রন্ট দুই ক্যামেরাতেই ১৩ মেগাপিক্সেল ব্যবহার করা হয়েছে। তবে দুটি ক্যামেরাই ১৩ মেগাপিক্সেল হলেও ব্যাক ক্যামেরার অ্যাপাচার ফ/১.৭, যা অটোফোকাস সাপোর্টেড এবং এলইডিভিত্তিক স্মার্ট গ্লো ফ্ল্যাশ সংযুক্ত।
অন্যদিকে, ফ্রন্ট ক্যামেরার অ্যাপাচার ফ/১.৯ এবং এর সাথে এলইডি সিঙ্গেল টোন ফ্ল্যাশ রয়েছে। এছাড়াও লো লাইট ক্যামেরা হওয়ায় রাতেও অল্প আলোর উপস্থিতিতে বেশ ঝকঝকে ছবি তোলা যায়। এতে হাই ডেফিনেশন ভিডিও করা যায়।
চিপসেট
এতে ব্যবহার করা হয়েছে মিডিয়াটেকের এমটি৬৭৫৭ হেলিও পি২০ প্রসেসর, যা গেমিং-এর জন্য অন্যান্য ফোনগুলোর তুলনায় অনেক ভালো।
নেটওয়ার্ক
টুজি, থ্রিজি এবং ফোরজি সাপোর্টেড।
ব্যাটারি
এ ফোনটিতে রয়েছে তিন হাজার তিনশ এমএএইচযুক্ত নন-রিমুভেবল ব্যাটারি, যা আপনি সারাদিন একটানা চালাতে থাকলে ৫-৬ ঘন্টা নির্বিঘ্নে ব্যবহার করতে পারবেন। আর অতিরিক্ত সময় ফোন ব্যবহার না করলে অর্থাৎ স্বাভাবিকভাবে ব্যবহার করলে ২ দিন পর্যন্ত চলে যায়। ফলে আপনি সুদূর ভ্রমনে গেলেও চার্জ শেষ হবার সম্ভাবণা খুব কম।
সেন্সর
প্রায় সব ধরনের সেন্সর থাকলেও সবচেয়ে আকর্ষণীয় সেন্সর হলো জাইরোস্কোপ সেন্সর। অনেকেই হয়তো ইতিমধ্যে এ সেন্সরের ব্যাপারে জেনে গেছেন। এ সেন্সরের মাধ্যমে ৩৬০° ভিডিও উপভোগ করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, ৩৬০° ছবিও তুলতে পারবেন। এজন্য অবশ্য গুগল প্লে ষ্টোর থেকে স্ট্রীট ভিউ অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিতে হবে।
এছাড়াও এক্সেলেরোমিটার সেন্সরের কারণে ফোন এর অরিয়েন্টেশন বুঝতে পারে, প্রক্সিমিটি সেন্সরের কারণে কথা বলার সময় ফোনের ডিসপ্লে বন্ধ হয়ে যায়। ডিরেকশন, দিক নির্ণয়সহ গেমের বিভিন্ন কাজে কম্পাস সেন্সর ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
বর্তমানে এ ফোনটির বাজার মূল্য ২৫,৯৯০ টাকা। এ স্মার্টফোনটি কালো ও সোনালি দুইটি রং-এ পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও সোশ্যাল সাইটে একাধিক অ্যাকাউন্টে লগিন করার জন্য ফোনে আগে থেকেই ডুয়েল ম্যাসেঞ্জার বিল্ট-ইন রয়েছে। তাছাড়াও এতে অ্যাডাপ্টিড ওয়াই-ফাই নামে একটি নতুন ফিচার দেওয়া হয়েছে, যার ফলে ডাটা কম খরচ হবে। এটি ওয়াই-ফাই সংযোগকে স্মরন রাখে এবং সেগুলো আশপাশে থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযুক্ত করে, রেঞ্জের বাইরে গেলে আবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
অসুবিধা
যদি আপনি সাধারন (গান শোনা, মুভি দেখা, ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, ওয়েব ব্রাউজিং কিংবা ইউটিউব) ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চিন্তে ফোনটি কিনতে পারেন। তবে আপনি যদি একজন হার্ডকোর গেমার হয়ে থাকেন, তবে ফোনটি আপনার না নেওয়ায় ভাল হবে। তাছাড়া আর যে-সব ত্রুটি সাধারনত চোখে পড়ে তা হলো ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এবং ক্যামেরা একটু ধীরগতি সম্পন্ন। তাছাড়া প্রায় সবকিছুই ঠিক আছে।
সানজিদা জামান says
লেখাটা তথ্যবহুল হয়েছে, লেখককে অভিনন্দন!
শামিম আহমেদ says
অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ! এটিই আমার লিখা প্রথম আর্টিকেল…