প্রযুক্তির অগ্রগতিতে পৃথিবীর প্রায় সকল ইলেকট্রোনিক্স ডিভাইসই স্মার্ট ডিভাইসে রূপ নিয়েছে। বাদ যায়নি গরমের অস্বস্তি কাটিয়ে স্বস্তি দেওয়ার দারুণ যন্ত্র এয়ারকন্ডিশন বা এসিও।
পুরনো দিনের বাটন এসির জায়গা এক সময় দখল করেছে রিমোর্ট কন্ট্রোল এসি। আর রিমোর্ট এসির স্থান এখন ধীরে ধীরেই চলে যাচ্ছে স্মার্ট এসির দখলে। কিন্তু স্মার্ট এসি কি আর এর মাঝে কি ধরণের ফিচার থাকে তা কি আমরা সবাই জানি?
স্মার্ট এসি কি?
যে এসিকে স্মার্টফোন দিয়ে কন্ট্রোল করা যায়, তাকে স্মার্ট এসি বলে। এটি হচ্ছে স্মার্ট এসির সবচেয়ে সরল ও সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা। আপনার ঘর বা অফিসের টেম্পারেচারকে আপনি স্মার্টফোন দিয়ে কন্ট্রোল করতে পারছেন।
এটি হতে পারে একটা অ্যাপের মাধ্যমে যা আপনার স্মার্টফোনে ডাউনলোড ও ইনস্টল করে নিতে হবে। এমনকি, ভয়েস অ্যাসিসটেন্টের মাধ্যমেও স্মার্ট এসিকে কন্ট্রোল করতে পারবেন।
সহজ কথায়, এয়ার কন্ডিশন বা এসিকে বিভিন্ন উপায়ে কন্ট্রোল করার জন্যে যেসব এসি ইন্টারনেট এবং ওয়াইফাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে, সেসব এসিকে স্মার্ট এসি বলে।
আপনি রুমে থাকুন আর না থাকুন, ইন্টারনেটের সাহায্যে আপনার রুমের এসিকে কন্ট্রোল করার সুবিধা সমৃদ্ধ এসিই হচ্ছে স্মার্ট এসি।
এর আগের একটি পোস্টে আমরা স্মার্ট টিভি কি ও এর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছিলাম, আজ জানবো স্মার্ট এসি সম্পর্কে।
যেসব ব্র্যান্ড স্মার্ট এসি তৈরি করেছে
যদিও অসংখ্য ইলেকট্রোনিক্স কোম্পানী রয়েছে, তবে সবাই এখনো স্মার্ট এয়ার কন্ডিশন তৈরি করেনি। বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে যারা স্মার্ট এসি বাজারে এনেছে, সেগুলোর অন্যতম হলো-
- স্যামসাং
- মিতসুবিশি
- ফুজিতসু জেনারেল
- এলজি, ইত্যাদি।
- স্মার্ট এসির যত ফিচার
স্মার্ট এসির ফিচার
এসি কেনার আগে যে সকল বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন, সেগুলোর মাঝে অন্যতম হলো ফিচার, এবার সেটা সাধারণ এসিই হোক আর স্মার্ট এসিই হোক। সুতরাং, আসুন জেনে রাখি স্মার্ট এসির কিছু স্মার্ট ফিচার সম্পর্কে।
১. জিও লোকেশন
জিও লোকেশন যে কোনও বস্তুর ভৌগলিক অবস্থান চিহ্নিত করতে সাহায্য করে। যেমন, আপনার মোবাইল ফোন যা ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত।
আপনার স্মার্ট এসিকে যখন জিও লোকেশন অ্যাক্সেস দেবেন, তখন এটি আপনার সঠিক অবস্থান শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারবে। এমনকি, আপনি কোথায় আছেন তার উপর ভিত্তি করে অপারেশন ট্রিগার করতে পারবেন। দারুণ না বিষয়টা!
মনে করুন, আপনি বাইরে যাওয়ার সময় ঘরের এসি বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছেন। এক্ষেত্রে, আপনি জিও লোকেশন ফিচার ব্যবহার করে আপনার এসিকে অটোমেটিকভাবে বন্ধ করার অপশন চালু করে দিতে পারেন। অর্থাৎ, এসিতে যদি স্মার্টফোনের জিও লোকেশন অ্যাক্সেস থাকে, তবে এসির এই ফিচারটি যখনই ডিটেক্ট করে ফেলবে যে, আপনি ঘরে নেই, তখনই সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেকে নিস্ক্রিয় করে নেবে।
২. স্মার্ট উইকলি শিডিউলিং
স্মার্ট এসির স্মার্ট উইকলি শিডিউলিং ফিচারটি অন্য যেকোনো স্মার্ট হোম ডিভাইসের মতো আপনাকে শিডিউল নির্ধারণ করার সুযোগ দিচ্ছে। এটি আপনার সপ্তাহ শুরু করার একটি বুদ্ধিমান উপায় হতে পারে। কারণ, এটি দিয়ে আপনি সপ্তাহের অনেকগুলো বিষয়ের শিডিউল তৈরি করতে পারবেন।
আপনি যদি কাজ শেষে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাড়িতে পৌঁছান, তাহলে আপনি এসি চালু করার একটা শিডিউল সেট করে রাখতে পারেন। এমনকি, আপনি যদি একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠতে চান, তবে স্মার্ট এসিতে আপনি অ্যালার্ম সেট করে রাখতে পারেন। এমনকি, আপনি এসির এই Smart Weekly Scheduling ফিচারটি দিয়ে কুলিং মুড, ফ্যানের স্পিড ও Vane ডিরেকশনও শিডিউল করে রাখতে পারেন।
Smart Weekly Scheduling ফিচারটির সবচেয়ে ভাল দিক হল ওয়াই-ফাই কন্ট্রোলিং। কারণ, আপনার শিডিউল কিন্তু, বই-পত্র বা খাতা কলমে হচ্ছে না, এটি হচ্ছে আপনার স্মার্টফোনে এবং আপনার স্মার্ট এসিতে। সুতরাং, যে কোনও সময় আপনি এটি পজ করে রাখতে পারেন কিংবা পরিবর্তণ করে নিতে পারেন।
৩. স্মার্ট হোম ইন্টিগ্রেশন
স্মার্ট এসি যে শুধুমাত্র স্মার্টফোনের সাথে কানেক্ট করা যায়, তা কিন্তু নয়। বরং, এটি আপনাকে আপনার ঘরে থাকা আরো অনেক হোম সিস্টেমের সাথেই ইন্টিগ্রেট করার সুবিধা দিচ্ছে। এমনকি, আপনি সেটি আপনার ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণও করতে পারবেন। গুগল অ্যাসিসটেন্স, সিরি ও অ্যালেক্সা হচ্ছে এমনই কয়েকটি হোস সিস্টেম যা এসির সঙ্গে কানেক্ট করা যায়।
স্মার্ট হোম সিস্টেম ব্যবহার করা, আপনার হিটিং এবং কুলিং অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসের পাশাপাশি চালানো যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, গরমের দিনে আপনার স্মার্ট হোম সিস্টেমটি আপনার স্মার্ট ব্লাইন্ডগুলি নামিয়ে আনতে পারে। আবার, স্মার্ট লাইটের আলো কমিয়ে দিতে পারে। এমনকি, আপনার স্মার্ট ফ্যানটি চালু করতে পারে। এমনকি, আপনার এসিতে বিদ্যুৎ কম সেটিংয়ে রাখতে পারে।
স্মার্ট এসির Smart Home Integration ফিচারটি আপনাকে রুটিন সেট করার সুবিধা দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার কুলিং সিস্টেম আপনার পছন্দের সেটিংস হিসাবে “গুড মর্নিং” বা “গুড নাইট” রুটিন চালু করতে পারে, ঠিক আপনার অন্যান্য স্মার্ট হোম ডিভাইসের সাথে পেয়ার তৈরি করার মাধ্যমে।
৪. ইন্টেলিজেন্ট ট্রিগার্স এন্ড স্মার্ট মোডস্
সাধারণত, সমস্ত এসিতেই বিভিন্ন ধরনের মোড থাকে। যেমন কুল, ড্রাই, ফ্যান, হিট কিংবা ইকো, ইত্যাদি। কিন্তু, স্মার্ট এসি এগুলোর পাশাপাশি আরো কিছু অতিরিক্ত ফিচার ও আরাম প্রদানের জন্য বাড়তি কিছু মোডের সমন্বয় করে থাকে। এই অতিরিক্ত মোডগুলির মূল উদ্দেশ্য অতিরিক্ত আরাম এবং সুবিধার জন্য অটোমেশন প্রদান করা।
প্রতিটি স্মার্ট এয়ার কন্ডিশনারের জন্য ইন্টেলিজেন্ট ট্রিগার্স এন্ড স্মার্ট মোডস্ প্রয়োজনীয় নয়। কারণ, কিছু কেবল ওয়াই-ফাই সংযোগ প্রদান করেই অনেক মোডের কাজ সমাপ্ত করতে পারে। তবে, বাড়তি সুবিধা প্রদানের লক্ষে এমন অনেক ট্রিগারস্ এ মোডস্ যুক্ত করা হয়।
উদাহরণ স্বরূপ, স্মার্ট এসির এমন একটি মোড হল comfy মোড যা আপনার প্রোগ্রামেবল এসি, কন্ট্রোলার বা থার্মোস্ট্যাটের একটি অংশ হতে পারে। এই মোডের সাহায্যে, আপনি আপনার ঘরে নিজের পছন্দ মতো তাপমাত্রা সেট করতে পারবেন। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, যদি জলবায়ু পরিবর্তিত হয়, তবে আপনার এসি Intelligent Triggers and Smart Modes ফিচারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের সেটিংস ম্যাচ করে নেবে।
৫. ইউজেস ডিটেইলস
কেমন মজা হয়, যদি আপনার এসির ইউজেস হিস্ট্রি আপনার চোখের সামনে থাকে! আপনি অবশ্যই Usage Details ফিচারটি ব্যবহার করে যখন খুশি তখনই সকল ডিভাইসের সেটিংস্ দেখে নিতে পারবেন। এটি আপনাকে আপনার এসির কুলিং ও হিটিং কনজাম্পশন দেখা ও পরিমাপ করার সুযোগ দিয়ে থাকে। এমনকি, এই ফিচার দিয়ে আপনি আপনার এয়ার কন্ডিশনের দৈনিক বিদ্যুৎ খরচও বের করে দেখতে পারবেন।
Usage Details ফিচারের মাধ্যমে করা কনজাম্পশন আপনাকে এনার্জি সেভিং ও বিলের পরিমাণ কমানোতে সাহায্য করতে পারে। মূলত, আপনার ইউজেসের পরিমাণ জানা থাকলে আপনি বুঝতে পারবেন, সেটিংস্ এ কী কী পরিবর্তণ করা প্রয়োজন।
স্মার্টফোন সম্পর্কে আমরা জানি। আজ জানলাম স্মার্ট এসি সম্পর্কে। আশা করি, আমাদের এই জানাটা আমাদেরকে জ্ঞান অর্জণের দিক থেকে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। আর চাইলে আমরা আমাদের জ্ঞানকে আরেকটু বাড়িয়ে নিতে পারি এসি বিস্ফোরণের বিশেষ বিশেষ কারণ জানার মাধ্যমে।
Leave a Reply