অন্যদের সাথে সংযুক্ত থাকার বা নিয়মিত যোগাযোগ রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল সেল ফোন বা মোবাইল ফোন। আমরা আমাদের সখের স্মার্টফোনটি কথা বলার পাশাপাশি মুভি দেখা, গেম খেলা, এমন কি অফিসের কাজেও ব্যবহার করি। দৈনন্দিন জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকা এই স্মার্টফোনের সঠিক যত্ন নেয়ার কথা হয়ত আমাদের মাথায় আসেই না, তাই অনেকের পক্ষেই স্মার্টফোন দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয় না!
একটি স্মার্টফোনের স্থায়িত্ব অনেকটাই নির্ভর করে আপনার যত্নের উপর। সঠিক যত্ন নেয়ার মাধ্যমে স্মার্টফোনকে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব। তাই আজকে আমি আলোচনা করবো স্মার্টফোনের এর সঠিক যত্ন নিতে কয়েকটি টিপস নিয়ে।
স্মার্টফোনের সঠিক যত্ন নেয়ার টিপস্
একটি স্মার্টফোনের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে যেমন এর ব্যাটারি, ডিসপ্লে ইত্যাদি। এই অংশগুলোর বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। এছাড়াও আপনার সখের স্মার্টফোনটিকে টেকশই করতে পানি এবং ধুলা-বালি থেকে রক্ষা করা জরুরি। স্মার্টফোনের এর সঠিক যত্ন সম্পর্কে নিন্মলিখিত টিপসগুলো ফোনের সুরক্ষায় অনেক কার্যকর।
কেনার আগেই ভালোমত খোঁজ নিন
বাজারে নিত্যনতুন ডিভাইস আসতেই আছে। স্পেশিফিকেশনের উপর নির্ভর করে তাদের দামেরও রয়েছে রকমফের। কিন্তু আমার পরামর্শ হল ফোন কেনার আগেই ভালো মত খোঁজ খবর করে নেয়া। এই বিষয়ে আমার ‘স্মার্টফোন কেনার গাইডলাইন-সঠিক ফোনটি কিনুন’ শিরোনামের আর্টিকেলটি পড়ে কিছু দিক নির্দেশনা পেতে পারেন। আসলে কেনার সময়ই যদি আপনি একটি সঠিক ফোন নির্বাচন করতে পারেন, তাহলে সেটা টেকশই হওয়ার সম্ভাবনাও বেশী থাকে।
শুরুতেই স্ক্রিন প্রটেকটর কিনুন
আজকাল অনেক ফোনেই স্ক্রিনের সুরক্ষার জন্য করনিং গোরিলা গ্লাস দেয়া থাকে। এতে স্ক্র্যাচ পড়ার সম্ভাবনা থাকে না। তবে আপনার ফোনে যদি এই সুবিধাটি না থাকে, তাহলে ফোন কেনার সাথে সাথেই স্ক্রিন প্রটেকটর কিনে নিন। এতে একদিকে যেমন স্ক্রিন নিরাপদ থাকবে, অপরদিকে ভুলে বা অসচেতনতায় যদি হাত থেকে পড়েও যায় তারপরও এর ডিসপ্লে অনেকটাই নিরাপদ থাকবে।
ভালো মানের কভার ব্যবহার করুন
স্ক্রিন প্রটেক্টর আপনার ফোনের স্ক্রিন এর সুরক্ষা তো করবে কিন্তু ফোনের বাকি অংশের কি হবে? এই জন্য চাই ভালো মানের কভার। খোলা অবস্থায় অডিও জ্যাক অথবা চার্জার পয়েন্টের মধ্য দিয়ে ধুলাবালি ঢুকে ফোনটিকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। এই কারণে, প্রায় পুরোটা ঢেকে যাবে এমন কভার ব্যবহার করতে পারলে ভালো। এই ধরনের কভার শুধু ধুলাবালি থেকেই রক্ষা করবে না, অনাকাঙ্ক্ষিত আঘাত থেকেও আপনার ফোনকে অনেকটা নিরাপদে রাখবে।
ব্যবহার না করা হলে নিরাপদ স্থানে ফোনটি রাখুন
আপনি যখন ফোন ব্যবহার করবেন না, তখন সেটিকে একটি নিরাপদ স্থানে রাখুন। যেমন কোনও সেলফ বা উঁচু তাক ইত্যাদি। এতে পরিবাবের ছোট সদস্যদের নাগালের বাইরে থাকবে। তবে সুইচ অফ না করে ফোন দীর্ঘ সময়ের জন্য বদ্ধ কোন জায়গায় যেমন পার্সে, ড্রয়ারে, ব্যাগের ভেতর রাখা উচিৎ নয়।
পানি থেকে দূরে রাখুন
বৃষ্টি হলে খোলা আকাশের নিচে ফোনে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। নদী, পুকুর বা পানির কাছাকাছি স্থানে ভ্রমনের সময় আপনার ফোনটিকে নিরাপদে রাখুন। এছাড়া ঘর্মাক্ত অবস্থায়ও কথা বলা ঠিক নয়। বিশেষ করে আপনার ফোনের স্পীকারটি যদি ফ্রন্ট ফেসিং হয়, তবে আপনার শরীর থেকে নির্ঘত ঘাম ফোনের ভেতরে ঢুকে স্পীকারের ক্ষতি করতে পারে।
আপনার ফোনটি নিয়মিত পরিচ্ছন্ন রাখুন
আপনার স্মার্টফোনের এর সঠিক যত্ন নিতে ফোনটি পরিষ্কার রাখুন নিয়মিত। ফোনের বাইরের অংশ পরিষ্কারের জন্য শুকনো টিস্যু পেপার বা এলকোহল ওয়াইপ্স ব্যবহার করুন। পানি, বেবি ওয়াইপ্স বা অন্য কোন ক্লিনার ব্যবহার করবেন না। কারণ এগুলো ব্যবহারে আপনার ফোনে আদ্রতা আটকাতে পারে।
নিয়মমাফিক ব্যাটারি চার্জ করুন
ব্যবহার না হলে কোন কোন ফোনের ব্যাটারি এক সপ্তাহও চলে আবার কোন কোন ফোনে প্রতিদিনই বা একদিন পর পরই চার্জ দেয়ার প্রয়োজন হয়। আপনি যদি ফোনে অনেক বেশি কথা বলেন বা অন্য কোন কাজে যেমন মুভি দেখেন বা গেমিং এ ব্যবহার করেন তাহলে ব্যাটারির চার্জ আরো দ্রুত শেষ হবে। আপনার ফোনের ব্যাটারিটিকে দীর্ঘস্থায়ী করতে ৪০% থেকে ৮০% এর মধ্যে চার্জ রাখার চেষ্টা করুন। আর এখান থেকে স্মার্টফোনের ব্যাটারি দ্রুত চার্জ করার উপায় জেনে নিন। কোন কারণে যদি আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারি চার্জ হওয়া বন্ধ হয়ে যায়, তবে দেখে নিন সেক্ষেত্রে আপনার করণীয়।
স্লো হয়ে যাওয়া রোধ করুন
আমরা যখন কোন ফোন কিনি তখন সেটা অনেক ফাস্ট থাকে কিন্তু কিছুদিন ব্যবহার করতে করতেই ধীরে ধীরে স্লো হয়ে যেতে থাকে। এর কারন কি বলুন তো? নতুন অবস্থায় ফোনটি হালকা থাকে, এতে কোন অতিরিক্ত এপ্লিকেশন থাকে না। কিন্তু ব্যবহার করতে যেয়ে আমরা নিত্যনতুন সফটওয়্যার, এপ্লিকেশন দিয়ে ফোনটিকে ভারী করে তুলি। আর এর ফলাফল হল স্লো হয়ে যাওয়া। এই কারণে যে এপ্লিকেশনগুলো প্রয়োজন, শুধু সেগুলোই ইনস্টল করুন। ইন্টারনাল স্পেস যতটা সম্ভব ফাঁকা রাখার চেষ্টা করুন।
ফোনটিকে ভাইরাস এটাক থেকে দূরে রাখুন
এন্ড্রোয়েড ফোন ব্যবহারের একটি বড় সমস্যা হল ভাইরাসের আক্রমন। আপনার ফোনটিকে তাই নিরাপদে রাখতে সেরা ২টি অ্যান্ড্রয়েড এন্টিভাইরাস অ্যাপ থেকে যে কোনটি ব্যবহার করতে পারেন। ফোনের বাইরের সুরক্ষার পাশাপাশি এর অভ্যন্তরীণ সুরক্ষাও অনেক জরুরি।
আপনার প্রিয় স্মার্টফোনের সঠিক যত্ন নিতে আজ খুব সহজ কিছু টিপস শেয়ার করলাম। এই টিপসগুলো অনুসরন করলে আশা করি প্রিয় ফোনটি দীর্ঘদিন আপনাকে সঙ্গ দিতে পারবে। তবে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে, ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের কোন ভরসা নেই। একটি মাঝারি মানের ডিভাইসও অনেক দিন চলতে পারে আবার অনেক দামি ডিভাইসও অল্প কিছু দিনে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এটা পুরোপুরি ভাগ্যের ব্যাপার। তবে সচেতন থাকতে দোষ কি, তাই না?
Leave a Reply